Site icon The Bangladesh Chronicle

২০ শতাংশের কম জনসমর্থন নিয়ে ৮৯ জন উপজেলা চেয়ারম্যান

BTV reporter creates fake voter queue to ‘shoot live in advance’

উপজেলা নির্বাচন

ভোটার উপস্থিতি কম হওয়ায় এবার বেশির ভাগ উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নির্বাচিত হচ্ছেন খুব কম ভোট পেয়ে। দ্বিতীয় ধাপের উপজেলা নির্বাচনে নির্বাচনী এলাকার মোট ভোটারের ২০ শতাংশের কম জনসমর্থন নিয়ে চেয়ারম্যান পদে জয়ী হয়েছেন অন্তত ৮৯ জন। এই ধাপে গত মঙ্গলবার ১৫৬টি উপজেলায় ভোট হয়। নির্বাচন কমিশন (ইসি) থেকে পাওয়া ভোটের ফলাফল বিশ্লেষণ করে এই চিত্র পাওয়া গেছে।

এর আগে প্রথম ধাপের ১৩৯টি উপজেলার মধ্যে ৮১টিতে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন তাঁদের নির্বাচনী এলাকার মোট ভোটারের ২০ শতাংশের কম ভোট পেয়ে। অবশ্য প্রদত্ত ভোটের হিসাবে তাঁদের ভোটের হার আরও বেশি।

গত জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও এই পরিস্থিতি দেখা গিয়েছিল। সে নির্বাচনে ৭২ জন সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন নির্বাচনী এলাকার মোট ভোটারের ২০ শতাংশের কম ভোট পেয়ে।

এবার চার ধাপে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। গত মঙ্গলবার দ্বিতীয় ধাপের ভোট হয়। গতকাল বুধবার নির্বাচন কমিশন সচিবালয় সব উপজেলার ফলাফল সমন্বয় করে। তাতে দেখা যায়, দ্বিতীয় ধাপে ভোট পড়ার হার ৩৭ দশমিক ৫৭ শতাংশ। এর আগে প্রথম ধাপের নিবাচনে ভোটের হার ছিল ৩৬ দশমিক ১ শতাংশ, যা গত দেড় দশকের মধ্যে উপজেলা নির্বাচনে সর্বনিম্ন।

৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের চার মাসের মাথায় সারা দেশে স্থানীয় সরকারের এই নির্বাচন হচ্ছে। সেখানে প্রথম দুই ধাপে সংসদ নির্বাচনের চেয়েও ভোটের হার কমেছে। সংসদ নির্বাচনে ভোটের হার ছিল ৪১ দশমিক ৮ শতাংশ।

এবারের উপজেলা নির্বাচনের দ্বিতীয় ধাপে যাঁরা ২০ শতাংশের কম সমর্থন নিয়ে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন, তাঁদের একজন গাইবান্ধার পলাশবাড়ীর এ কে এম মোকছেদ চৌধুরী। তিনি গাইবান্ধা জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য। ইসি সূত্র জানায়, এই উপজেলায় মোট ভোটার ছিলেন ২ লাখ ২৩ হাজার ২০৯ জন। এর মধ্যে ভোট দিয়েছেন ৬৭ হাজার ২৯৩ জন। মোকছেদ চৌধুরী চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন ১৯ হাজার ৫৯৫ ভোট পেয়ে। অর্থাৎ তিনি তাঁর নির্বাচনী এলাকার মোট ভোটারের মাত্র ৮ দশমিক ৭৭ শতাংশের ভোট পেয়েছেন।

চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলা নির্বাচনে মোট ভোটার ৩ লাখ ৫৭ হাজার ৪৪৮। এর মধ্যে ৩৫ হাজার ৯৭৭ জনের ভোট পেয়ে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন ইউনুস গনি চৌধুরী। তিনি পেয়েছেন তাঁর নির্বাচনী এলাকার মোট ভোটারের ১০ শতাংশের ভোট। ইউনুস গনি চৌধুরী চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক।

চাঁদপুরের হাজীগঞ্জে ভোট পড়েছে ১৮ দশমিক ৪২ শতাংশ। এখানে ২৬ হাজার ৫৮৮ ভোট পেয়ে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন। তিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি। তাঁর উপজেলায় মোট ভোটার ছিলেন ২ লাখ ৮৬ হাজার ৪৯০ জন। সে হিসাবে তিনি পেয়েছেন মোট ভোটারের ৯ দশমিক ২৮ শতাংশের ভোট।

ইসি সূত্র জানায়, দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে ২৫ জন নারী প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। এর মধ্যে ৪ জন জয়ী হয়েছেন। তাঁরা হলেন সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায় সেলিনা মির্জা, জয়পুরহাটের পাঁচবিবি উপজেলায় সাবেকুন্নাহার, পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলায় ওয়ানা মার্জিয়া নিতু এবং টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরে নার্গিস বেগম। এ ছাড়া কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা, ঢাকার সাভার ও জামালপুরের ইসলামপুর উপজেলায় চেয়ারম্যান হয়েছেন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায়।

সবচেয়ে বেশি ভোট পড়েছে খাগড়াছড়ির পানছড়ি উপজেলায়—৭৪ দশমিক ৯৫ শতাংশ। সবচেয়ে কম ভোট পড়েছে রাজশাহীর বাগমারা উপজেলায়—১৭ দশমিক ৯৮ শতাংশ।

ভোটের হার কম কেন

নির্বাচন কমিশন বলছে, উপজেলা পরিষদে ভোটের হার কম হওয়ার একটি বড় কারণ বিএনপির ভোট বর্জন। সেই সঙ্গে তারা ভোটারদের কেন্দ্রে যেতে নিরুৎসাহিত করছে।

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের মতো উপজেলা নির্বাচনও বর্জন করে ক্ষমতাসীনদের প্রধান রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি। এমন প্রেক্ষাপটে নির্বাচনে প্রতিযোগিতামূলক ও প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক করতে উপজেলায় দলীয় প্রতীক দেয়নি আওয়ামী লীগ। দলটির নেতারা বেশির ভাগ জায়গায় নিজেদের সঙ্গে নিজেরা লড়েছেন। কিছু জায়গায় অবশ্য বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত নেতারাও স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। এর বাইরে নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত অন্য রাজনৈতিক দলগুলোও এই নির্বাচন নিয়ে আগ্রহ দেখায়নি। ইসিতে নিবন্ধিত ৪৪টি রাজনৈতিক দলের মধ্যে প্রথম দুই ধাপে মাত্র চারটি দল দলীয় প্রতীকে প্রার্থী দিয়েছে।

অবশ্য দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচনে পার্বত্য তিন জেলার উপজেলাগুলোতে ভোটের হার তুলনামূলক বেশি দেখা গেছে। এই ধাপে সবচেয়ে বেশি—৭৪ দশমিক ৯৫ শতাংশ ভোট পড়েছে পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়ির পানছড়ি উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে। এই ধাপে তিন পার্বত্য জেলার ৮টি উপজেলায় ভোট হয়। সবগুলোতেই ভোটের হার ৪২ শতাংশের বেশি। এর মধ্যে চারটি উপজেলায় ৫০ শতাংশের বেশি ভোট পড়েছে। ইসির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, এখানে ভোট তুলনামূলক বেশি পড়ার একটি কারণ পার্বত্য এলাকাগুলোতে সেখানকার আঞ্চলিক দল ইউপিডিএফ ও জনসংহতি সমিতি প্রার্থী দিয়েছিল।

সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার প্রথম আলোকে বলেন, নির্বাচন হলো জনগণের সম্মতির সবচেয়ে বড় মাধ্যম। অতি অল্প ভোট পেয়ে যদি চেয়ারম্যানরা স্থানীয় সরকারের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব পান, তাতে হয়তো আইনগত বাধা নেই। কিন্তু নৈতিকভাবে তাঁদের কতটা বৈধতা আছে, তা নিয়ে প্রশ্ন আছে। অধিকাংশ জনগণের সমর্থন তো দূরের কথা, অধিকাংশ জনগণ ভোট দিতেই যাচ্ছেন না। একদিকে দলগুলোর নির্বাচন বর্জন, অন্যদিকে ভোটার খরা। নির্বাচন নিয়ে অনাস্থার কারণে এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।

prothom alo

Exit mobile version