Site icon The Bangladesh Chronicle

২০২২ সাল: যুক্তরাষ্ট্র থেকে ২৮১ কোটি ডলারের পণ্য আমদানি করেছে বাংলাদেশ

bonikbarta.net

বদরুল আলম

মে ১৭, ২০২৩

একক দেশ হিসেবে বাংলাদেশী তৈরি পোশাকের সবচেয়ে বড় বাজার যুক্তরাষ্ট্র। গত বছর দেশটি থেকে বাংলাদেশের পোশাক ও অন্যান্য পণ্যের মোট রফতানি আয় ১ হাজার ১১৭ কোটি বা ১১ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে। রফতানির মাধ্যমে মার্কিন আমদানিকারকদের কাছে বাংলাদেশী পণ্য যেমন বিক্রি হয়, তেমনি দেশটি থেকে নিয়মিত আমদানিও করছে বাংলাদেশ। গত বছর আমদানীকৃত বিভিন্ন পণ্যের অর্থমূল্য ছিল ৩ বিলিয়ন ডলার ছুঁইছুঁই। ইউএস সেনসাস ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ২৮১ কোটি ৩৯ লাখ বা ২ দশমিক ৮১ বিলিয়ন ডলারের বেশি মূল্যের পণ্য আমদানি করে বাংলাদেশ।

সেনসাস ব্যুরোর পরিসংখ্যান বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত বছর যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রতি মাসে গড়ে ২৩ কোটি ৪৪ লাখ ডলারের বেশি মূল্যের পণ্য কিনেছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান বলছে, অর্থমূল্য অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্র থেকে বড় পরিমাণে আমদানি হয় এমন পণ্যের মধ্যে রয়েছে খনিজ জ্বালানি পণ্য, লোহা ও ইস্পাত, তেলবীজ, শিল্প ও ঔষধি উদ্ভিদ, পশুখাদ্য ও তুলা।

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ বোয়িং কিনেছে। সেগুলো রক্ষণাবেক্ষণের যন্ত্র ও যন্ত্রাংশ যুক্তরাষ্ট্র থেকে কিনতে হবে। বাংলাদেশে ডাটা সেন্টার বানাতে যে প্রযুক্তি সরঞ্জাম ও অনুষঙ্গ প্রয়োজন, তার সব কেনা হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রেরই প্রতিষ্ঠান ওরাকল থেকে। এছাড়া দেশটির সিসকো, ডেল ও মাইক্রোসফটের মতো বড় প্রযুক্তি সেবা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠান থেকে বাংলাদেশ নিয়মিত পণ্য ক্রয় করে থাকে। ডিজিটাল বাংলাদেশে এ ধরনের প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ছাড়া স্মার্ট বাংলাদেশে রূপান্তর দুরূহ কাজ বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। আবার চিকিত্সাবিজ্ঞানের সেবায় রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান জিই (জেনারেল ইলেকট্রিক কোম্পানি)। এছাড়া দেশটি থেকে আমদানি হয় বাংলাদেশের সবচেয়ে শ্রমঘন পোশাক শিল্পের সুতা ও কাপড়ের কাঁচামাল তুলা। সব মিলিয়ে যুক্তরাষ্ট্র থেকে সরাসরি ও পরোক্ষভাবে বড় অর্থমূল্যের পণ্য ও সেবা ক্রয় করে থাকে বাংলাদেশ। এসব ক্ষেত্রে দেশটির গ্রহণযোগ্যতাও ভালো।

ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্য অংশীদার হিসেবে যথেষ্ট গ্রহণযোগ্য। শুধু আমদানি না, বাংলাদেশ থেকে নিয়মিত পণ্য রফতানিও হচ্ছে সেখানে। এক্ষেত্রে বাণিজ্য ভারসাম্য তুলনামূলকভাবে বাংলাদেশের অনুকূলেই রয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে রেমিট্যান্সেও মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোকে ছাড়িয়ে গেছে যুক্তরাষ্ট্র।

আমেরিকান চেম্বার অব কমার্স ইন বাংলাদেশের (অ্যামচেম) সভাপতি সৈয়দ এরশাদ আহমেদ বণিক বার্তাকে বলেন, ‘বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্পর্ক বেশ ভালো অবস্থানে রয়েছে। রাজনৈতিক সম্পর্কের সঙ্গে বাণিজ্য এবং বিনিয়োগকে না জড়ানোই ভালো। ব্যবসায়িক সম্পর্কে ক্রমেই সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। সম্প্রতি রেমিট্যান্সে সৌদি আরবকে টপকে শীর্ষে পৌঁছে গেছে যুক্তরাষ্ট্র। বাণিজ্য অংশীদার হিসেবেও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক বেশ ভালো। কয়েক বছর ধরে আমাদের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের এ সম্পর্কের যথেষ্ট উন্নতি হয়েছে। বাণিজ্য ভারসাম্য বিবেচনায় আমরা সুবিধাজনক অবস্থানে আছি। রাজনৈতিক সম্পর্ক আমাদের বাণিজ্য বিনিয়োগ তথা অর্থনৈতিক সম্পর্কের ওপর কোনো প্রভাব ফেলবে না, এমনটাই আমরা আশা করি।’

২০২১ সালের ১০ ডিসেম্বর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে বাংলাদেশের এক প্রতিষ্ঠান ও সাত ব্যক্তির ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্র। আশঙ্কা থাকলেও ওই ঘটনার পর গত দুই বছরে দেশটির সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যে বড় কোনো প্রভাব দেখা যায়নি।

গত ১৩ মে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন কোনো দেশ নিষেধাজ্ঞা দিলে তাদের কাছ থেকে বাংলাদেশ কিছু কিনবে না। তিনি বলেন, ‘একটা সিদ্ধান্ত আমি নিতে বলেছি, এখন আবার ওই স্যাংশন দেয়ার একটা প্রবণতা দেখা যাচ্ছে, যাদের দিয়ে সন্ত্রাস দমন করি তাদের ওপর স্যাংশন। আমি বলে দিয়েছি, যে দেশ স্যাংশন দেবে তাদের কাছ থেকে আমি কিচ্ছু কিনব না।’

Exit mobile version