Abdur Rab Bhuttow, Colonel Md Shahid Uddin Khan, psc (Retd)

১৯৯৪ সালের ২২ সেপ্টেম্বর, রোজ – বৃহস্পতিবার শেখ হাসিনা বিমান যোগে যশোর হয়ে খুলনা এলেন এবং বিকালে শহীদ হাদিস পার্কের জনসভায় ভাষণ দিলেন। রাতে নেত্রীর চাচাতো ভাই শেখ নাসেরের বড় ছেলে শেখ হেলালের বাড়িতে খেলেন এবং থাকলেন।

পরদিন ২৩ শে সেপ্টেম্বর সকাল ৯ টার সময় উত্তরবঙ্গের উদ্দেশ্যে ট্রেন যাত্রা শুরু করলেন। বেশ লম্বা ট্রেন। অনেক সাধারণ যাত্রী আছে ট্রেনে। সাধারণ যাত্রীরা বুঝতে পারছেনা, শেখ হাসিনার রেলে সভা করতে করতে যাওয়া এই ট্রেন কবে কখন গন্তব্যে পৌছবে।

প্রতিটি স্টেশনে (প্রায় কুড়িটি) নেমে শেখ হাসিনা ভাষণ দেন। সকাল গড়িয়ে দুপুর, আর দুপুর গড়িয়ে রাত হয়৷ ট্রেনের শেষের দিকে একটি ভি ভি আই পি বগীতে শেখ হাসিনা। ঐ বগীর সামনে এবং পেছনে তার নিরাপত্তায় নিয়োজিত ঢাকা থেকে আসা স্পেশাল ব্রাঞ্চের সদস্যরা। এবং পেছনের বগীতে সাংবাদিকগণ।

রাত তখন ১১ টা বেজে ১৭ মিনিট। শেখ হাসিনাকে বহনকারী ট্রেন ঈশ্বরদী স্টেশন পৌছার কিছু সময় বাকি। এমন সময় শেখ হাসিনা বললেন, এত টাকা পয়সা খরচ করে জামাই আদর করার জন্য ঢাকা থেকে যেই সাংঘাতিকদের (সাংবাদিক) এনেছি, তারা কি সব ঘুমাচ্ছে?

জনসভায় এত লোক হচ্ছে। আমি এত বক্তৃতা করছি। সাংঘাতিকদের (সাংবাদিক) নজরে পড়ছে না তো!

তোমরা একটু সাংঘাতিকদের ঘুম ভাঙিয়ে আমার জনসভায় পাঠাও। যেন পত্র পত্রিকায় ভালো নিউজ হয়।

শেখ হাসিনার বেতন ভুক্ত ব্যাগ বহনকারী মদন মোহন দাশ (যার নামে শেখ হাসিনার লাল রঙের নিশান পেট্রোল জিপ গাড়িটি রেজিষ্ট্রেশন করা) বলল, ডাইকা ঘুম ভাঙান লাগবোনা। পিস্তল দিয়া কয় রাউন্ড গুলি কইরা দিলেই সাংঘাতিকগো ঘুম কই যাইবো। লাফাইয়া ট্রেন থাইকা নিচে পইড়া যাইবো।

আলাউদ্দিনের প্রদীপ পাওয়ার মত সঙ্গে সঙ্গে শেখ হাসিনা লাফাইয়া উঠে তার বাবার ফুফাতো ভাইয়ের ছেলে বাহাউদ্দিন নাসিমকে বললেন, দে দুই রাউন্ড গুলি করে।

আর উপস্থিত অন্যদের বললেন, তোমরা আমাকে হত্যার (শেখ হাসিনাকে) জন্য ট্রেনে গুলি করা হয়েছে বলে সাংঘাতিকদের (সাংবাদিক) মাঝে প্রচার করে দেবে।

ট্রেন ঈশ্বরদী প্লাটফর্মে ঢোকার কয়েক মিনিট আগে বাহাউদ্দীন নাসিম ট্রেনের জানালা দিয়ে সাংবাদিকদের কম্পার্টমেন্ট লক্ষ্য করে পিস্তল দিয়ে তিন রাউন্ড গুলি ছুড়ল। গুলির শব্দ শুনে শেখ হাসিনার নিরাপত্তায় থাকা স্পেশাল ব্রাঞ্চের সদস্যরা ৫-৬ রাউন্ড গুলি করে।

এই সমস্ত গুলির আওয়াজ শুনে পাশের কম্পার্টমেন্টে থাকা সাংবাদিকেরা ভয়ে ট্রেনের ভেতর গড়াগড়ি শুরু করে এবং আমরা পরিকল্পনামত সাংবাদিকদের বগীতে এসে শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে গুলি করা হয়েছে বলে প্রচার করতে থাকি।

ট্রেন ঈশ্বরদী কম্পার্টমেন্টে থামলে ঈশ্বরদী রেলস্টেশনের জনসভার মঞ্চ থেকে আওয়ামীলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য আমীর হোসেন আমু শেখ হাসিনাকে হত্যার জন্য ট্রেনে গুলি করা হয়েছে বলে প্রচার চালাতে থাকেন।

পরের দিন ২৪ শে সেপ্টেম্বর ট্রেনে শেখ হাসিনাকে গুলি করা হয়েছে বলে জাতীয় পত্র পত্রিকায় সংবাদ বের হলে বগুরা সরকারি সার্কিট হাউজে ভিভিআইপি রুমে বসে শেখ হাসিনা সহ তার সফর সঙ্গীরা (যারা প্রকৃত ঘটনা জানে) হাসাহাসি করতে থাকে এবং হাসাহাসির এই পর্যায়ে গুলির এই ঘটনা থেকে হরতাল ডাকার সিদ্ধান্ত হয়।

তথ্য : আমার ফাসি চাই, পৃষ্ঠা – ৭৩
লেখক – বীর মুক্তিযোদ্ধা মতিউর রহমান রেন্টু। শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত সহকারী
/////////////////////////////////////////////////////////////////////////////

সেই নাটকের ঘটনায় ভুয়া মামলার আসামি হয়েছেন বিএনপির
স্থানীয় নেতারা। ঘটনার ২৫ বছর পর ২০২১ সালের ৩ জুলাই এক ফরমাইশি রায়ে বিএনপির ৯ নেতাকে ফাঁসি ও ২৬ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছে শেখ হাসিনার আজ্ঞাবহ আদালত।

সে দিন পাবনার অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ-১ আদালতের বিচারক মো. রোস্তম ঘোষিত রায়ে আসামী সবাই ঈশ্বরদী উপজেলা ও পৌর বিএনপি এবং এর অঙ্গ-সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মী। প্রাণদণ্ডে দণ্ডিত আসামিদের মধ্যে রয়েছেন- ঈশ্বরদীর সাবেক পৌর মেয়র ও বিএনপি নেতা মোখলেসুর রহমান, ঈশ্বরদী পৌর বিএনপির সভাপতি জাকারিয়া পিন্টু, ঈশ্বরদী পৌর বিএনপির সাবেক সভাপতি আখতারুজ্জামান প্রমুখ।

২৩ সেপ্টেম্বর দলীয় কর্মসূচিতে ট্রেনবহর নিয়ে ঈশ্বরদী রেলওয়ে জংশনে প্রবেশকালে ওই ট্রেন ও শেখ হাসিনার কামরা লক্ষ্য করে গুলিবর্ষণের নাটকীয় ঘটনার মামলা তদন্তকালে ওই সময়ে
পুলিশ কোনো সাক্ষী না পেয়ে আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন পেশ করে।

পরবর্তীতে ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করার পর
শেখ হাসিনার নির্দেশে পুলিশ মামলাটি পুনঃতদন্ত করে। তদন্তের নামে ঈশ্বরদীর শীর্ষস্থানীয় বিএনপি, যুবদল ও ছাত্রদলের নেতা কর্মীসহ ৫২ জনকে এ মামলার আসামি করে।