Site icon The Bangladesh Chronicle

১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষ থেকে যে শিক্ষা পাওয়া যায়

১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষ থেকে যে শিক্ষা পাওয়া যায়

নাওমি হোসেন

কোনো বিপর্যয় সম্পর্কে কেউ কথা না বললে সেখান থেকে শিক্ষা নেওয়া কঠিন। এ বিষয়ে কোনো চলচ্চিত্র নেই, উপন্যাসও কম; আর অমর্ত্য সেনের বিখ্যাত প্রবন্ধটি ছাড়া এমন একটি ঘটনা নিয়ে গবেষণাও খুবই কম। অথচ এ ঘটনায় বিশ্বের নবীনতম একটি দেশে বিপুল সংখ্যাক মানুষ মারা গিয়েছিল।

শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন ১৯৪৩-৪৪ সালের দুর্ভিক্ষের সময় তাঁর কাঠ-কয়লা দিয়ে আঁকা ছবিগুলোর জন্য বিখ্যাত হয়েছিলেন। তখন পূর্ববঙ্গ ছিল ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের শাসনাধীন; কিন্তু ১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষ নিয়ে আমি তাঁর কেবল একটি স্কেচ পেয়েছি।

এই স্কেচের শৈলী ও বিষয়বস্তু—উপুড় হয়ে পড়ে থাকা একজন অনাহারী মানুষের অবয়ব; ১৯৪৩ সালের দুর্ভিক্ষের ছবির সঙ্গে যেটির অদ্ভুত মিল। সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের ওপর নেমে আসা এই দুর্ভিক্ষের একমাত্র ভাষ্য যেন এই ছবি।

১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষ নিয়ে কেউ কথা বলে না। অথচ এটি ছিল বাংলাদেশের জন্য একটি মোড় পরিবর্তনের মুহূর্ত। ১৯৭৪ সালের পর রাষ্ট্র বদলে গিয়েছিল।

ঘূর্ণিঝড় এবং অনাহারের মতো ঘটনায় দেশ বিপর্যস্ত। রাষ্ট্রের কিছু অংশ কোনোভাবে মানুষের টিকে থাকা আর পরিবেশগত সংকট মোকাবিলা করাকে অগ্রাধিকার দিতে শুরু করেছিল। নিয়েছিল দুর্যোগের পুনরাবৃত্তির চক্র বন্ধ করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ।

বাংলাদেশ যে বাজার, দাতা সংস্থা ও বেসরকারি সংগঠনগুলোর জন্য দ্বার উন্মুক্ত করেছিল, তাঁর একটি কারণ ছিল এই দুর্ভিক্ষ। বাংলাদেশ তার মানুষের ওপর বিনিয়োগ শুরু করল। ধীরে ধীরে দেশ স্থিতিশীল হলো। অগ্রসর হতে লাগল।

হয়তো এমন দুর্যোগ ছাড়াই তা ঘটতে পারত; কিন্তু সেই সময়ের নীতিমালা এবং রাজনীতির উৎসে আমরা দেখতে পাই এই দুর্ভিক্ষের প্রভাব। ক্ষমতাধর ব্যক্তিদের উদ্দেশ্য এবং কার্যকলাপে সেই দুর্ভিক্ষের ছাপ ছিল স্পষ্ট।

অনেক বছর ধরে মানুষ ১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষ নিয়ে কথা বলেনি। কারণ, এ ইতিহাসকে মনে করা হতো রাজনৈতিকভাবে মারাত্মক রকম ‘স্পর্শকাতর’। শেখ হাসিনার দীর্ঘ ও ক্রমে দমনমূলক হয়ে ওঠা শাসনামলে এই ‘অগৌরবজনক’ বিষয়টি ভালো চোখে দেখা হয়নি। আর সেই সময় এ নিয়ে কথা বলার সুযোগও ছিল খুব কম।

অনেক কারণেই মানুষ দুর্ভিক্ষের বিভীষিকা ভুলে যেতে চাইতে পারে। বাংলাদেশে এরপর আর কোনো ঘটনা এ বিপর্যয়ের ধারেকাছেও যায়নি। ইউটিউবে পাওয়া ভিডিও ফুটেজ দেখুন। লাখ লাখ অনাহারে কাতর মানুষ অপেক্ষা করছেন, তাঁদের চোখেমুখে এক আশ্চর্য অভিব্যক্তি।

তাঁরা সাহায্যের জন্য অপেক্ষা করছেন এমন একটি সরকারের কাছে, যার হাতে ছিল না নগদ অর্থ, ছিল না খাদ্য, না ছিল কার্যকর কর্তৃত্ব; এমনকি ছিল না আন্তর্জাতিক সহানুভূতি। এই দৃশ্য একবার দেখলে চিরকাল আপনার মনে গেঁথে থাকবে।

এ এক ভয়াবহ অবস্থা। অথচ এই দুর্ভিক্ষ ঘটেছিল স্বাধীনতার ঠিক তিন বছর পর, যখন বাংলাদেশের সব শ্রেণির মানুষ নয়া ঔপনিবেশিক এক শাসনের শৃঙ্খল ভেঙে মুক্তির মহৎ সংগ্রামে ঐক্যবদ্ধ হয়েছিল।

অনেক বছর ধরে মানুষ ১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষ নিয়ে কথা বলেনি। কারণ, এ ইতিহাসকে মনে করা হতো রাজনৈতিকভাবে মারাত্মক রকম ‘স্পর্শকাতর’। শেখ হাসিনার দীর্ঘ ও ক্রমে দমনমূলক হয়ে ওঠা শাসনামলে এই ‘অগৌরবজনক’ বিষয়টি ভালো চোখে দেখা হয়নি। আর সেই সময় এ নিয়ে কথা বলার সুযোগও ছিল খুব কম।

স্বাধীনতার ৫০ বছর পর জনপরিসরে যেসব একাডেমিক আলোচনা হয়েছে, সেগুলো মুক্তিযুদ্ধ-পরবর্তী সেই সময়কাল নিয়ে ‘কিছু একটা বলে’ দ্রুত এড়িয়ে গেছে। এ ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ তার প্রাপ্য গুরুত্ব পেয়েছে খুব কম। প্রকাশকেরাও এ বিষয় নিয়ে বই প্রকাশ করতে অনিচ্ছুক ছিলেন।

সংবেদনশীলতাগুলো ছিল খোলামেলা, কখনো বা গোপন। শেখ মুজিবের আওয়ামী লীগ সরকার স্পষ্টতই এই দুর্ভিক্ষের জন্য দায়ী ছিল। কারও শাসনামলে যখন কোনো দুর্যোগ ঘটে, তখন সেই সরকারকে তার দায় নিতে হয়; যদিও ১৯৭৪ সালের মতো পরিস্থিতিতে তাদের প্রতিক্রিয়া জানানোর সুযোগ খুবই সীমিত ছিল। কিন্তু ব্যর্থতার তো কোনো ক্ষমা নেই। তবে লক্ষণীয় যে ১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষ ব্যতিক্রম। কারণ, এটি এমন একটি শাসনের অধীনে ঘটেছিল, যাদের হাতে এটি প্রতিরোধ করার প্রবল প্রেরণা ছিল।

১৯৭৩ সালে হাইলে সেলাসি ইথিওপিয়ার অনাহারীদের জন্য ইউনিসেফের সাহায্য প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। কারণ, দুর্ভিক্ষের খবর সংবাদমাধ্যমে ছাপা হলে তা হবে তাঁর জন্য বিব্রতকর। লাখ লাখ কৃষক অনাহারে মারা যাচ্ছিলেন; কিন্তু মাও সে–তুংয়ের সরকার ‘গ্রেট লিপ ফরোয়ার্ড’ সংস্কার থামায়নি। মাইক ডেভিসের বিখ্যাত রচনায় বর্ণিত ‘লেট ভিক্টোরিয়ান হলোকাস্ট’-এর সময় সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলো দক্ষিণ গোলার্ধে দুর্ভিক্ষের মাধ্যমে নির্বিচার গণহত্যা চালিয়েছিল।

এর বিপরীতে শেখ মুজিব জাতিসংঘের কাছে সাহায্যের আবেদন জানিয়েছিলেন। তিনি জানতেন, এই দুর্ভিক্ষ তাঁর বৈধতার অবসান ঘটাবে। দুর্ভিক্ষ ছিল আওয়ামী লীগের জনপ্রিয়তা হ্রাসের কারণগুলোর মধ্যে একটি। এ ছাড়া দুর্নীতি, রক্ষীবাহিনীর বর্বরতা, নেতৃত্বের ঔদ্ধত্য এবং নাগরিক স্বাধীনতা হরণের বিরুদ্ধে জনরোষ তো ছিলই। দুর্ভিক্ষ হয়তো অন্যতম একটি বিষয়, যে কারণে ১৯৭৫ সালে শেখ মুজিব ও তাঁর পরিবারের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের পর জনগণের মধ্যে কোনো রকমের শোক দেখা যায়নি। এ হত্যাকাণ্ড দুর্ভিক্ষের ঘটনাটিকে আরও সংবেদনশীল করে তুলেছিল।

শ্রেণি–রাজনীতি নিয়েও গোপন সংবেদনশীলতা রয়েছে। একজন বন্ধুর সেই সময়ের ঘটনা মনে করার মতো বয়স তখন তাঁর ছিল। তিনি আমাকে বলেছিলেন, তারা মরেছিল, কারণ আমরা বেঁচে ছিলাম।’

তাঁর কথার অর্থ হলো যে খাদ্যসাহায্য দেশে এসেছিল, তা শহরের বা মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষ, সরকারি কর্মচারী এবং রাষ্ট্র পরিচালনার
জন্য অপরিহার্য হিসেবে বিবেচিত অন্যান্যের কাছেই পৌঁছেছিল।

বন্যায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত ছিলেন গ্রামীণ ভূমিহীন দরিদ্র মানুষেরা। অন্যরা নেওয়ার পর যদি কিছু অবশিষ্ট থাকত, তাদের ভাগ্যে সেটিই জুটত। সেই সময় এমনকি মধ্যবিত্তরাও প্রচণ্ড কষ্টে ছিল; কিন্তু তারা হাজারে হাজারে মারা যায়নি।

হাজার হাজার মানুষ মারা গিয়েছিলেন সেই সময়, যাঁদের বেশির ভাগই ছিলেন নিম্নবিত্ত। তাঁদের বেদনা ও যন্ত্রণা সম্পর্কে আমরা খুব কমই জানি। সেই সময়ের ভয়াবহতা অনেকাংশে অলিখিতই রয়ে গেছে। সেই সময়ের কথা যাঁদের মনে আছে, তাঁদের বয়স এখন ৭০ বছরের আশপাশে হবে।

এই দুর্যোগ থেকে দৃষ্টি সরিয়ে রাখার অনেক কারণ আছে। তবে এর থেকে শিক্ষা গ্রহণের প্রয়োজন আরও বেশি। বাংলাদেশের অসাধারণ অগ্রগতি হয়েছে। এক ম্যালথাসীয় ‘ঝুড়ি’ থেকে এই দেশ এখন তুলনামূলকভাবে অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের সফল গল্পে রূপান্তরিত হয়েছে। এসব অনেকাংশেই ১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষের শিক্ষা থেকে পাওয়া।

বাংলাদেশ অচিরেই স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে নিজের উত্তরণ ঘটাবে। কীভাবে তা সম্ভব হচ্ছে? এর ব্যাখ্যা করতে গিয়ে অভিজ্ঞ বিশ্লেষকেরা এখন প্রায়ই বাংলাদেশের দ্রুত বর্ধনশীল ‘ফাস্ট ফ্যাশন’ শিল্প এবং উদ্ভাবনী সামাজিক সংগঠনগুলোর দিকে ইঙ্গিত করেন। তাঁরা ভুলে যান যে ৫০ বছর আগে হাজারো বাংলাদেশি অনাহার আর এর সঙ্গে সম্পর্কিত নানা শারীরিক ও সামাজিক সমস্যায় মারা যাচ্ছিলেন।

এই মানুষগুলো তখন তাঁদের জীবন ও সমাজের ভিত্তিকে একের পর এক প্রাকৃতিক এবং মানবসৃষ্ট বিপর্যয়ের আঘাত থেকে টিকিয়ে রাখার জন্য সংগ্রাম করছিলেন। তাঁদের সামনে কোনো আশার আলো ছিল না। উন্নতির পথে এগিয়ে যাওয়ার আগে বাংলাদেশিদের প্রথমে বাঁচতে শিখতে হয়েছিল।

১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষের কারণ অনেক। তবে মহিউদ্দিন আলমগীরের ফেমিন ইন সাউথ এশিয়া এবং রেহমান সোবহানের পলিটিকস অব ফুড এন্ড ফেমিন-এর বিশ্লেষণসহ কিছু নির্ভরযোগ্য সূত্র থেকে চারটি ব্যাখ্যা প্রধান বলে বিবেচিত হতে পারে।

প্রথমত, ভয়াবহ বন্যায় ফসল ধ্বংস হয়েছিল। মজুরির বিনিময়ে যে শ্রমের বাজার, তা–ও বিপর্যস্ত হয়েছিল।

দ্বিতীয়ত, তেল রপ্তানিকারী দেশগুলোর সংস্থার (ওপেক) তেলের মূল্য বৃদ্ধিজনিত সংকট, মজুতদারি, চোরাচালান এবং স্থানীয় খাদ্যঘাটতির কারণে মুদ্রাস্ফীতি গিয়েছিল বেড়ে।

তৃতীয়ত, খাদ্যসাহায্য ব্যবহৃত হয়েছিল বাজেট সহায়তা এবং সরকারি কর্মচারীদের বেতনের জন্য। দুর্ভিক্ষ মোকাবিলার জন্য সে সময় যা বরাদ্দ করা হয়েছিল, তা ছিল খুবই সামান্য।

চতুর্থত, আন্তর্জাতিক মানবিক সহায়তা পাওয়ার চেষ্টা কার্যকর হয়নি। কারণ, বাংলাদেশ কমিউনিস্ট রাষ্ট্র কিউবার সঙ্গে বাণিজ্য করেছে—এই অজুহাতে যুক্তরাষ্ট্র এক বছরের জন্য খাদ্যসাহায্য আটকে রেখেছিল।

এই চার কারণের সম্মিলিত প্রভাবে ১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষ বাংলাদেশের জন্য এক ভয়াবহ বিপর্যয় নিয়ে আসে।

দুর্ভিক্ষের কারণগুলো হয়তো স্পষ্ট; কিন্তু এর প্রভাব কী ছিল?

সন্দেহ নেই যে দুর্ভিক্ষের ফলে আওয়ামী লীগ সরকারের প্রতি জনগণের অসন্তোষ এবং হতাশা বেড়েছিল ব্যাপকভাবে। পরবর্তী রাজনৈতিক সহিংসতা ও সামরিক অভ্যুত্থানকে ব্যাখ্যা করতে গেলেও এই দুর্ভিক্ষের একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে। দুর্ভিক্ষ–পরবর্তী প্রেক্ষাপটে সরকার আন্তর্জাতিক দাতাদের চাপের মুখে মুদ্রার অবমূল্যায়ন করে এবং অর্থনীতিকে বাজারমুখী করার সিদ্ধান্ত নেয়।

এই দুর্ভিক্ষ খাদ্যনিরাপত্তার বিষয়ে একটি ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি উন্মোচন করেছিল। শস্যবাজারে আরও স্বচ্ছতা আনার পাশাপাশি সবচেয়ে দরিদ্রদের জন্য সহায়তাও দেওয়া হয়। সেই থেকে বাংলাদেশ রাষ্ট্র খাদ্যনিরাপত্তার বিষয়টি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করতে শুরু করে। এ বিষয়ে বাংলাদেশের নীতিমালা তাই নিছক আদর্শগত নয়; বরং বাস্তবসম্মত।

সামাজিক সম্পর্কেও পরিবর্তন আসে। এই দুর্ভিক্ষ পুরোনো অভিভাবকসুলভ নৈতিক অর্থনীতির অবসান ঘটায়। মানুষকে বিশেষ করে নারীদের জাতিরাষ্ট্রের নাগরিক হিসেবে পুনর্গঠন করা হয়। এর ফলে ব্র্যাক, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র এবং গ্রামীণ ব্যাংকের মতো নতুন ধরনের সামাজিক কর্মী ও সংস্থার আবির্ভাবের সুযোগ তৈরি হয়। নায়লা কবিরের নতুন বই রিনেগোশিয়েটিং প্যাট্রিয়ার্কিতে সেই সময়ের সামাজিক পরিবর্তনের গল্পগুলো পাওয়া যায়।

দুর্ভিক্ষের পর ৫০ বছর পেরিয়ে গেছে। এখন এসেছে রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক পরিবর্তনের সময়। এ মুহূর্তটিই হয়তো নতুন প্রজন্মের জন্য সেই দুর্ভিক্ষ থেকে শিক্ষা নেওয়ার উপযুক্ত সময়।

শাসনব্যবস্থা এবং উন্নয়নের রাজনীতির বিশ্লেষকদের জন্য এই শিক্ষাগুলো হলো পরস্পরের মধ্যে সহযোগিতা যদি অস্তিত্বের প্রশ্নে পরিণত হয়, তাহলে সবচেয়ে কঠিন পরিস্থিতিও মোকাবিলা করা সম্ভব। বাংলাদেশের রাষ্ট্রব্যবস্থা তখন সবচেয়ে জরুরি অগ্রাধিকারগুলো মোকাবিলার দিকে মনোযোগী ছিল। এরপর বিভিন্ন ধরনের সরকার এসেছে; কিন্তু আর দীর্ঘ মেয়াদে এই অগ্রাধিকারগুলোতে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ হয়নি।

জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে উদ্ভূত অস্তিত্বের সংকট এবং তা মোকাবিলার যে রাজনীতি, তার জন্য এখানে স্পষ্ট এবং গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা রয়েছে। এই দুর্ভিক্ষ নীতিনির্ধারকদের এবং সামাজিক উদ্ভাবকদের আরও শিক্ষা দিয়েছিল যে সমাজের সবচেয়ে অসহায় ও ক্ষমতাহীন মানুষদের, বিশেষত নারীদের দিকে মনোযোগ দিতে হবে। পরিবার বা সমাজ তাদের দেখভাল করবে—এই ভেবে বসে থাকা যাবে না।

বর্তমানে বাংলাদেশে এনজিও এবং সিভিল সোসাইটির সমালোচনা করা এক ফ্যাশনে পরিণত হয়েছে। তবে সন্দেহ নেই যে তারা তাদের সীমিত সামর্থ্যের মধ্যেও জননীতিকে আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের পথে এগিয়ে নিতে সহায়তা করেছে।

সবচেয়ে বড় কথা, ১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষ দেখিয়ে দিয়েছিল যে মানুষের ন্যূনতম জীবনযাত্রার সংকটের রাজনৈতিক মূল্য কতটা চড়া হতে পারে। কোনো বৈধ সরকারই দীর্ঘ সময় ধরে জনগণের জীবনযাত্রার মানের চরম অবনতি সহ্য করতে পারে না। এটিই ১৯৭৪ সালের অন্যতম শিক্ষা।

এই শিক্ষাই সাম্প্রতিক অতীতের আওয়ামী লীগ সরকার ২০২২ সাল থেকে চলমান লাগামহীন মুদ্রাস্ফীতির বিরুদ্ধে কাজে লাগাতে পারত। কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে তেমন উল্লেখযোগ্য কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। তাঁরা হয়তো ভুলে গিয়েছিলেন, ‘যদি জনগণ অনাহারে থাকে, তবে ক্ষমতায় আপনার দিন গোনা শুরু হয়ে যায়।’

  • নাওমি হোসেন অধ্যাপক, ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ, সোয়াস (এসওএএস) ইউনিভার্সিটি অব লন্ডন

    ইংরেজি থেকে অনুবাদ করেছেন জাভেদ হুসেন

  • prothom alo
Exit mobile version