Site icon The Bangladesh Chronicle

১৫ ই আগষ্টের সঠিক মূল্যায়ন

রাশেদ চৌধুরী*  

  

 

 

১৫ ই অগাস্ট। অতি গুরুত্বপূর্ণ একটি দিন। একটি ঐতিহাসিক দিন। পঁচাত্তরের এই দিন একটি সেনা অভ্যুথানে বাংলাদেশের প্রথম স্বৈরশাসক শেখ মুজিবুর রহমানের পতন হয় এবং তার প্রতিষ্ঠিত এক দলীয় বাকশাল শাসনের পরিসমাপ্তি ঘটে। দুঃখজনক যদিও, সেদিনের সংক্ষিপ্ত ঘটনায় মুজিবের মৃত্যু ঘটে। কিন্তু সেই মৃত্যুতে সেদিন কারও চোখে পানি দেখা যায় নি, ছিল না কোন পরিতাপ। শোনা যায়নি ইন্নালিল্লাহ। স্বেচ্ছায় কেউ যেতে চায় নি তার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায়। দেখা গেছে শুধু আনন্দ-উল্লাস ও উৎসবের মিছিল।

 

মুজিবের পতন অনাকাঙ্ক্ষিত বা অসম্ভাবী ছিলনা, দেশের জনগণ প্রতিটি মুহূর্তে তা কামনা করেছিল। কিন্তু সরকার পরিবর্তনের কোন সাংবিধানিক সুযোগ খোলা রাখেনি মুজিব। শোষিত জনগণ শুধু আল্লাহর কাছে হাত তুলে দোয়া চাইতো মুজিবের ফ্যাসিবাদী শাসন থেকে রেহাই, একটি  শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতি থেকে মুক্তি। মহান আল্লাহ জনগণের সেই আর্জি কবুল করেছেন ১৫ই অগাস্ট ১৯৭৫। একগুচ্ছ সেনা অফিসার ও শ’পাঁচেক সৈনিক দ্রুততম সময়ের মধ্যে তা সমাধা করে। ঘটনাক্রমে মুজিব সহ দুপক্ষের ডজন দুয়েক লোক মারা পড়ে। একজন বিদেশী জজ মন্তব্য করেছিলেন, এমন একটি ঐতিহাসিক ও যুগান্তকারী ঘটনায় ২২ জন লোকের মৃত্যু বড় কিছু নয়, যেখানে প্রতিনিয়ত বিভিন্ন অঘটনে ও অবিচারে অনেক লোক মারা পড়ে।

 

দেশ বাঁচানো

 

মুজিব আমলের বাংলাদেশ যারা দেখেছেন, তাদের নিশ্চয়ই স্মরণ আছে মুজিব কীরূপ অত্যাচারী ও  জঘন্য স্বৈরশাসকে পরিণত হয়েছিলেন। সারা জীবন গণতন্ত্র ও মানুষের অধিকারের কথা বলে ক্ষমতা হাতে পেয়েই তিনি ওসব রাষ্ট্রীয় মূল্যবোধ ছুঁড়ে ফেলে দিলেন, দিয়েএকচ্ছত্র ক্ষমতা কুক্ষিগত করেন; কোন বিরোধ, বিতর্ক বা প্রতিদ্বন্দ্বীর তোয়াক্কা না করে। প্রখ্যাত ভারতীয় লেখক ও সাংবাদিক খুশবন্ত সিং তার ইলাস্ট্রেটেড উইকলিতে লিখেছিলেন, মুজিব কোন পরামর্শ নিতেন না, শত্রু রাখতেন না, ছিলেন জনগণ থেকে বিস্মৃত, বিমুখ। যারা সামনে তাকে বঙ্গবন্ধু বলতো, তারাই পেছনে গিয়ে “বঙ্গশত্রু” বলে গালাগাল করতো।

 

মুজিবের ৪৪ মাসের শাসনামলের বৃত্তান্ত, তথা গুম-খুন, জেল-জুলুম, অত্যাচার-অবিচার-ব্যাভিচার, সীমাহীন লুটতরাজ লিখতে গেলে পাহাড়সম স্তূপ হবে। প্রখ্যাত রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও “ফ্রিডম অ্যাওয়ার্ড বিজেতা” জগলুল হোসেন মুজিবকে নিয়ে লেখার কিছুটা নিচে তুলে ধরলাম:

 

“মুজিব সরকার ৩০ হাজার দেশপ্রেমিক হত্যা করে। তাদের অপশাসনে দেশে নেমে আসে নির্বিচার হত্যা, নিপীড়ন, নির্যাতন, লুণ্ঠন, দখলবাজী, সীমান্ত পাচার ইত্যাদির বিভীষিকা;…কালোবাজারী, সীমান্তপাচারের ফলে দেশে যে ‘মানবসৃষ্ট দুর্ভিক্ষ’ ঘটে তাতে সরাসরি মৃত্যু হয় ৫ লক্ষ মানুষের এবং পরোক্ষ ভাবে মৃত্যু হয় আরও ১০ লক্ষ। অন্যদিকে, মুজিব নিজে ভারতপন্থী না হলেও, মুজিব সরকার পরিচালিত হয় মূলতঃ ভারতের নির্দেশে, যারা বাকশালতন্ত্র নামক চরম স্বৈরতন্ত্র ও ফ্যাসিবাদ সৃষ্টি করে। ২৫ মার্চ ১৯৭১ মুজিব নিজের ও নিজের পরিবারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে, পরিবারের জন্য মোটা মাসিক ভাতার ব্যবস্থা করে, পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার সঙ্গে সমঝোতা করে আত্মসমর্পণ করেন।” (বস্তুত, মুক্তির সংগ্রাম থেকে পালিয়ে যান।)

 

একাত্তরে পাকিস্তানের জেলে থাকাকালে মুজিবের খানসামা রাজা আনার খান (বস্তুত একজন পুলিশ গোয়েন্দা কর্মকর্তা) ২০১৫ সালে এক সাক্ষাৎকারে বলেন যে, ২২ শে ডিসেম্বর পাকিস্তান ভাঙার খবর শুনে মুজিবের সে কি উগ্রমূর্তি, আহাজারি এবং তাজউদ্দিনকে গালাগালি !

(দেখুন:

https://southasiajournal.net/bangladesh-sheikh-mujibs-stance-on-independent-bangladesh-sensational-revelation/)

 

১৫ই আগস্ট বিপ্লবের পর, বিপ্লবী নেতাদের মনোনীত নেতা জিয়াউর রহমানের হাত ধরে, অতি শীগ্র দেশে শান্তি আসে, স্থিতিশীলতা আসে, বহুদলীয় গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা হয়, দেশ উন্নতির দিকে ধাবিত হয়, বহির্বিশ্বে সুনাম অর্জন করে।

 

সূর্য সন্তান 

 

অথচ, যারা এই অসম্ভব কাজটি সম্ভব করেছিল, সেদিনের সূর্য সন্তানেরা, তারা রয়ে গেল অবহেলিত, বঞ্চিত। ডজন খানেক অফিসারদেরকে তাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে স্থাপিত করে বিদেশের ছোট খাট, নিম্ন গুরুত্ব মিশনে নিয়োগ দেয়া হয়। অধিকাংশক্ষেত্রে তারা ছিল পাওনা পদোন্নতি ও অন্যান্য সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত।

 

১৯৯৬ সালে, কতেকটা ধোকা-চাতুরির মাধ্যমে, হাসিনা প্রধান মন্ত্রী হয়ে প্রথম যে কাজটি করেন তা হল, তার পিতৃহত্যার প্রতিহিংসা ও প্রতিশোধের কার্যক্রম। দেশে বিদেশে যেখানে যাকেই পাওয়া গেছে ধরে আনা হল। ঘটালেন একটা পাতানো রাজনৈতিক ও একতরফা দলীয় বিচারের প্রহসন। সঠিক সুযোগ ছিলনা কোন আত্মপক্ষ সমর্থনের। যেক্ষেত্রে ধরে আনা, বন্দি করে নির্যাতন করা, অনুসন্ধান, প্রসিকিউশন, বিচার ও এক্সেকিউশন একই ব্যাক্তির হাতে (Judge, jury and executioner in one hand) ফল তাই হল। হাতে পাওয়া আধা ডজন সূর্য সন্তানদের ফাঁসিতে ঝুলানো হল। বাকিদের হন্নে হয়ে খুঁজতে থাকে।

 

অগাস্ট বিপ্লবের সূর্য সন্তানদের অধিকাংশ (বিদেশে অবস্থানকালে)

Exit mobile version