Site icon The Bangladesh Chronicle

১৪ দলীয় বৈঠকে যা হলো

আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে ১৪ দলীয় নেতাদের মধ্যে অনুষ্ঠিত বৈঠকে আবারো একসঙ্গে কাজ করার অঙ্গীকার করা হয়েছে। পাশাপাশি জোটের অস্তিত্ব নিয়ে ওঠা প্রশ্নেরও সমাধান হয়েছে বলে বৈঠক শেষে দাবি করা হয়েছে। জোটের নেতৃত্বে থাকা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে জোটের শরিক দলগুলোকে আরও সক্রিয় হতে বলেছেন। অন্যদিকে শরিক দলগুলো জোটকে আরও  শক্তিশালী করার তাগিদ দিয়েছে। এ ছাড়া বৈঠকে দেশের সার্বিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পাশাপাশি দেশীয় রাজনীতিতে আন্তর্জাতিক মহলের ভূমিকার বিষয়টাও তিনি তুলে ধরেন। অন্যদিকে জোটের শরিক দলগুলো তাদের প্রতি আওয়ামী লীগ ও সরকারের অবহেলার প্রসঙ্গ তোলেন। অভিযোগ, অনুযোগ নিয়ে কথা বলেন। সরকারের অংশিদারিত্বে তাদের কম সুযোগ থাকার বিষয়টি নিয়েও প্রশ্ন তোলেন। ১৪ দলের নেতৃবৃন্দকে নিয়ে বৈঠকের শুরুতেই প্রধানমন্ত্রী একটি স্বাগত ভাষণ দেন।

এতে তিনি বাংলাদেশের সার্বিক পরিস্থিতি, অর্থনৈতিক সংকট, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক ইত্যাদি বিষয় তুলে ধরেন।

এরপর ১৪ দলের নেতারা একে একে তাদের বক্তব্য রাখেন। ১৪ দলের নেতাদের মুখে ছিল ক্ষোভের সুর, অবজ্ঞার বিষয় এবং অবহেলার বেদনার কথা। মূলত ১৪ দলের নেতাদের এই দুঃখ, ক্ষোভ এবং হতাশার কথায় পরিপূর্ণ হয়ে গিয়েছিল এই বৈঠক। ১৪ দলের অন্যতম শরিক দল জাসদের নেতা হাসানুল হক ইনু বৈঠকে প্রশ্ন তুলেছেন ১৪ দল আদৌ থাকবে কি থাকবে না। সেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে। ১৪ দলকে গুরুত্বহীন করা হচ্ছে, নির্বাচনে ১৪ দলের শরিকদের বঞ্চিত করা হয়েছে বলেও তিনি অভিযোগ করেন। হাসানুল হক ইনু ছাড়াও ১৪ দলের সভায় বক্তব্য রাখেন ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন। তিনি রাজশাহীর নির্বাচনে কীভাবে ফজলে হোসেন বাদশাকে হারিয়ে দেয়া হয়েছে, সেই প্রসঙ্গটি উত্থাপন করেন। ১৪ দলকে কীভাবে গুরুত্বহীন করে তোলা হয়েছে সে বিষয়ে তিনি ব্যাখ্যা দেন। তিনি প্রশ্ন তোলেন যে, ১৪ দল যদি না থাকে তাহলে আনুষ্ঠানিকভাবে সবকিছু বলে দেয়া হোক। দিলীপ বড়ুয়াও ১৪ দলকে অবহেলা, অপাঙ্‌ক্তেয় করার বিষয়টি উত্থাপন করেন। তিনি জানান, ১৪ দলের নিয়মিত মিটিং হয় না, সরকারের নীতি নির্ধারণী সিদ্ধান্তে ১৪ দলের কোনো ভূমিকা নেই।

সরকারের মন্ত্রিসভা বা সরকারের কোথাও ১৪ দলকে রাখা হয়নি। ১৪ দল তাহলে কী করবে? ১৪ দলের নিয়মিত কর্মসূচিও পালন করা হয় না বলে তিনি অভিমান করেন। বৈঠকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহাম্মদ ইব্রাহিমকে আসন ছাড় দেয়া নিয়ে প্রশ্ন তোলেন দিলীপ বড়ুয়া। জোটনেত্রীকে তিনি বলেন, আপনি আমাদের ভোট ব্যাংকের কথা বলছেন, জেনারেল ইব্রাহিমের কী ভোট আছে? তার ভোট হাটহাজারীতে থাকলেও চকরিয়ার (কক্সবাজার-১) এমপি হলো কীভাবে? এ ছাড়াও ১৪ দলের আরেক নেতা নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারীও ১৪ দলকে নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা করেন। ১৪ দলের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। ১৪ দলের শরিকদের মধ্যে থেকে একটি সুর বেশি উচ্চারিত হয়েছে তা হল দু একজন আওয়ামী লীগের নেতা ১৪ দলকে নিয়ে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করছেন। ১৪ দলকে অবজ্ঞা করছেন। এই বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর নজরে আছে কিনা তারা জানতে চান। এ বিষয়ে নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী বলেন, বৈঠকে আমাদের কথা জানতে চেয়েছেন জোটনেত্রী।

আমরা আমাদের কথা বলেছি। আলোচনায় জোটের প্রয়োজনীয়তা বা প্রাসঙ্গিকতা নিয়ে যেমন কথা উঠেছে, তেমনই জোটের থাকা নিশ্চিত করেছেন নেত্রী। আমাদের আরও শক্তিশালী হতে বলেছেন। আমরাও জোটকে আরও শক্তিশালী করার তাগিদ দিয়েছি। গণতন্ত্রী পার্টির সাধারণ সম্পাদক ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, ১৪ দলের ভেতরে থাকা মান-অভিমানসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে বৈঠকে। জোটের প্রাসঙ্গিকতা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। জোটনেত্রী জোট থাকবে এবং আগামীতে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করবে বলে জানিয়েছেন। বৈঠকে দেশীয় ও অন্তর্জাতিক চাপসহ মার্কিন নিষেধাজ্ঞার হুমকি মোকাবিলায় ১৪ দলকে আরও সক্রিয় করার দাবি জানান নেতারা। তখন প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগের প্রতি ক্ষুব্ধ বা কাউকে দোষারোপ না করে নিজ নিজ দলের শক্তি বাড়ালে জোটের শক্তিও বাড়বে। আর যারা নিষেধাজ্ঞা দেবে তাদের সঙ্গে কোনো ধরনের ব্যবসা করবে না বলেও জানান তিনি। বৈঠক শেষে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, জোটের স্ব স্ব দলকে আরও সংগঠিত এবং জনগণের কাছে জনপ্রিয় করে তুলতে ১৪ দলের নেতাদের নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বৈঠকে সমসাময়িক পরিস্থিতি নিয়ে আলোকপাত করা হয়েছে বলে জানান তিনি। এ বৈঠকের পর ১৪ দলের মধ্যে যে দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে সেটা থাকবে না বলে মন্তব্য করেন ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন,  ১৪ দল নেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার প্রারম্ভিক বক্তব্যে সমসাময়িক বিষয় এবং অসাম্প্রদায়িক রাজনীতির ব্যাপারে কথা বলেছেন। সবাই এসব ব্যাপারে ঐক্যমত হয়েছেন। ১৪ দলের সবাই গাইডলাইন চেয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৪ দলকে নিজেদের দলগুলোকে আরও সংগঠিত করা এবং নিজেদের দলগুলোকে জনগণের কাছে আরও জনপ্রিয় করে তোলা…. এসব ব্যাপারে দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। তিনি বলেন, ১৪ দলকে এই মুহূর্তে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও অসাম্প্রদায়িক মানবতাবোধকে এগিয়ে নেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, ১৪ দলের নেতারা সমন্বিতভাবে আরও সুশৃঙ্খল ও সংগঠিত ঐক্য গড়ে তুলবেন, এই ব্যাপারে সবাই অঙ্গীকার করেছেন। ১৪ দলীয় জোটের প্রাসঙ্গিকতা আছে কিনা, তা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে জানতে চেয়েছেন জোটের শরিকরা। জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, প্রাসঙ্গিকতা আছে এবং এজন্যই তিনি বৈঠক ডেকেছেন। বৈঠক শেষে রাশেদ খান মেনন সাংবাদিকদের বলেন, হাসানুল হক ইনুর বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ নেতারা নির্বাচন করে তাকে হারানোর ব্যবস্থা করেছে, মাইজভাণ্ডারীর ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটেছে। এসব ক্ষেত্রে ১৪ দলের নেতাদের যদি পাশে না নেন তাহলে আমাদের ঐক্যবদ্ধতা নিয়ে এগিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে না। কিন্তু শেখ হাসিনা আমাদের আশ্বস্ত করেছেন। আমরা ঐক্যবদ্ধ ছিলাম এবং ঐক্যবদ্ধ থেকেই সামনের দিকে এগিয়ে যেতে চাই। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রায় সাড়ে ৪ মাস পর ১৪-দলীয় জোটের এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় বৃহস্পতিবার।

manabzamin

Exit mobile version