Site icon The Bangladesh Chronicle

১০ ব্যাংকেই খেলাপি ঋণের ৬৩ শতাংশ

দেশে এখন ব্যাংক রয়েছে ৬১টি। তবে পুরো ব্যাংক খাতের মোট খেলাপি ঋণের ৬৩ শতাংশের বেশি  ১০টি ব্যাংকে। এ তালিকায় রয়েছে পাঁচটি বেসরকারি এবং পাঁচটি সরকারি ব্যাংক। একসময় কেবল সরকারি ব্যাংকের খারাপ অবস্থা নিয়ে আলোচনা হতো। এখন বেসরকারি ব্যাংক নিয়েও আলোচনা হচ্ছে। মূলত কয়েকটি ব্যাংক থেকে ভুয়া ও বেনামি ঋণ নিয়ে পাচারের অভিযোগসহ বিভিন্ন কারণে এ আলোচনা।

সংশ্লিষ্টরা জানান, মাঝে কয়েক বছর সরকারি ব্যাংকের এমডি কে হবেন, কাকে চেয়ারম্যান করা হবে– এসব ঠিক করছিলেন ব্যাংকগুলোর বড় ঋণগ্রহীতারা। তবে বর্তমান গভর্নর গত বছরের জুলাই মাসে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে সেই রেওয়াজে ভাটা পড়েছে। এখন বাংলাদেশ ব্যাংকের পরামর্শে সরকার এসব ব্যাংকের এমডি নিয়োগ দিচ্ছে। যে কারণে ব্যাংকগুলোতে আগের মতো ঢালাও অনিয়মের খবর শোনা যাচ্ছে না। তবে বেসরকারি ব্যাংকে অনিয়ম ও  জালিয়াতি বেড়েছে। এ কারণে কিছু ব্যাংকের খেলাপি ঋণও বাড়ছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, জনতা ব্যাংকের খেলাপি ঋণ আগের প্রান্তিকের তুলনায় ১১ হাজার কোটি টাকা কমেছে। এর প্রভাবে পুরো ব্যাংক খাতের খেলাপি ঋণ পরিস্থিতির উন্নতি দেখা যাচ্ছে। যদিও বেশির ভাগ ব্যাংকের খেলাপি বেড়েছে। সামগ্রিক ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ ৬৪২ কোটি টাকা কমে সেপ্টেম্বর শেষে ১ লাখ ৫৫ হাজার ৩৯৭ কোটা টাকায় নেমেছে। মোট ঋণের যা ৯ দশমিক ৯৩ শতাংশ। সরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ ৮ হাজার ৬৫৭ কোটি টাকা কমে ৬৫ হাজার ৭৯৭ কোটি টাকায় নেমেছে। এসব ব্যাংকের মোট ঋণের যা ২১ দশমিক ৭০ শতাংশ। আর বেসরকারি খাতের ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ৭ হাজার ৮৩ কোটি টাকা বেড়ে ৮১ হাজার ৫৩৭ কোটি টাকা হয়েছে।

শীর্ষে কারা

পরিমাণের দিক দিয়ে খেলাপি যাদের বেশি, শতাংশ বা হারে তারাই বেশি তেমন নয়। জনতা ব্যাংকে খেলাপি ঋণ সাড়ে ১১ হাজার কোটি টাকার বেশি কমার পরও পরিমাণের দিক দিয়ে এখনও শীর্ষে রয়েছে ব্যাংকটি। গত সেপ্টেম্বর শেষে জনতার খেলাপি ঋণ দাঁড়িয়েছে ১৭ হাজার ১ কোটি টাকা।

পরিমাণের দিক দিয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা অগ্রণী ব্যাংকের খেলাপি ১৬ হাজার ৮৭৪ কোটি টাকা। পর্যায়ক্রমে সোনালীর ১৩ হাজার ৯৯৩ কোটি, ন্যাশনালের ১৩ হাজার ৫১৫ কোটি এবং রূপালীর ৮ হাজার ৭২৯ কোটি টাকা খেলাপি ঋণ রয়েছে। এ ছাড়া শীর্ষ ১০ ব্যাংকের তালিকায় থাকা বেসিক ব্যাংকে ৮ হাজার ২০৯ কোটি, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশে ৭ হাজার ৮৪ কোটি, এবি ব্যাংকে ৫ হাজার ৯৪১ কোটি, পদ্মা ব্যাংকে ৩ হাজার ৬৭৩ কোটি ও ইউসিবিতে ৩ হাজার ৩২৫ কোটি টাকা খেলাপি ঋণ রয়েছে।

পরিমাণের দিক দিয়ে এসব ব্যাংকে বেশি খেলাপি থাকলেও শতাংশ বিবেচনায় সবচেয়ে বেশি খেলাপি এখন ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তানের। গত সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ব্যাংকটির মোট ঋণের ৯৮ দশমিক ১৮ শতাংশ খেলাপি। পর্যায়ক্রমে আইসিবি ইসলামিক ব্যাংকের ৮৭ দশমিক শূন্য ২ শতাংশ, বেসিক ব্যাংকের ৬৪ দশমিক ৫৫ শতাংশ, পদ্মা ব্যাংকে ৬৩ দশমিক ৭৩ শতাংশ, বাংলাদেশ কমার্সে ৬০ দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ, বিডিবিএলে ৪৪ দশমিক ২২ শতাংশ, ন্যাশনাল ব্যাংকে ৩১ দশমিক ৯৮ শতাংশ, অগ্রণী ব্যাংকে ২৪ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ, রূপালী ব্যাংকে ২০ দশমিক ৭০ শতাংশ এবং রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের ১৯ দশমিক ৯৫ শতাংশ খেলাপি।

ব্যাংকাররা জানান, অনেক ব্যাংক এখন ডলারের পাশাপাশি টাকার সংকটে পড়েছে। কেননা, ডলার বিক্রির বিপরীতে বাজার থেকে টাকা উঠে আসছে। আবার উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে মানুষের সঞ্চয় ক্ষমতা কমেছে। এ ছাড়া আদালতে মামলাসহ বিভিন্ন কারণে ঋণের একটি অংশ আটকে আছে। এতে করে অর্থ প্রবাহ কমেছে। একই সঙ্গে আস্থাহীনতার কারণে কয়েকটি ব্যাংক থেকে অনেকে আমানত তুলে নিয়েছে। ফলে অনেক দিন ধরে বেসরকারি খাতের কয়েকটি ব্যাংক বিধিবদ্ধ নগদ জমা (সিআরআর) ও বিধিবদ্ধ তারল্য সংরক্ষণ (এসএলআর) করতে ব্যর্থ হচ্ছে। ব্যর্থতার জন্য আরোপিত জরিমানা পরিশোধের মতো অবস্থাও নেই কোনো কোনো ব্যাংকের। উল্টো ব্যাংকগুলোকে টিকিয়ে রাখতে নানা উপায়ে ধার দিচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

প্রভিশন ঘাটতির শীর্ষে ন্যাশনাল ব্যাংক

সরকারি-বেসরকারি খাতের ৯টি ব্যাংকে ২৮ হাজার ৭৫৪ কোটি টাকার নিরাপত্তা (প্রভিশন) ঘাটতি দেখা দিয়েছে। ঘাটতির শীর্ষে রয়েছে ন্যাশনাল ব্যাংক। গত সেপ্টেম্বর শেষে ব্যাংকটির ঘাটতি দেখা দিয়েছে ১৩ হাজার ৭৯০ কোটি টাকা। বিভিন্ন জালিয়াতি, অনিয়ম দুর্নীতির কারণে চরম খারাপ রয়েছে ব্যাংকটি। তালিকায় দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা বেসিকের ঘাটতি ৪ হাজার ৭৪৮ কোটি টাকা। পর্যায়ক্রমে অগ্রণী ব্যাংক ৪ হাজার ৬০০ কোটি, রূপালীর ৪ হাজার ১৯৮ কোটি, বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকের ৫৪২ কোটি, ঢাকা ব্যাংকের ৩৯৯ কোটি, এনসিসি ব্যাংকের ৩৩৫ কোটি, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের ২৩৪ কোটি এবং মধুমতি ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতি ৯০ লাখ টাকা।

সূত্র : সমকাল

Exit mobile version