Site icon The Bangladesh Chronicle

হেফাজতের দশা হবে বিএনপির

 

দেশ রূপান্তর

পাভেল হায়দার চৌধুরী | ২৯ অক্টোবর, ২০২২

বিএনপির সরকারবিরোধী আন্দোলন প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিএনপি শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করলে বাধা দেওয়া হবে না। তবে আন্দোলনের নামে নৈরাজ্য সৃষ্টি করলে ২০১৩ সালের ৫ মে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশকে যেভাবে দমন করা হয়েছিল, বিএনপিকেও সেভাবে দমন করা হবে।

তিনি বলেন, ২০১৪ ও ’১৫ সালে বিএনপির আন্দোলন কর্মসূচির সময় জ্বালাও-পোড়াওয়ের ঘটনা সাধারণ মানুষের মাঝে প্রচার করতে হবে। বিএনপি সহিংসতা করলে শক্ত জবাব দেওয়া হবে। অশান্তি করলে ছাড় দেওয়া হবে না।

গতকাল শুক্রবার বিকেলে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের রুদ্ধদ্বার সভায় বিএনপির সরকারবিরোধী আন্দোলন প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা এমন বার্তা দেন। তাকে উদ্ধৃত করে বৈঠকে উপস্থিত থাকা একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা দেশ রূপান্তরকে এ তথ্য জানিয়েছেন।

তারা আরও জানান, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন প্রসঙ্গেও আওয়ামী লীগ সভাপতি কথা বলেছেন। শেখ হাসিনা বলেছেন, ওই নির্বাচনে তিনি দলীয় প্রার্থীদের পাস করাবেন এ ধারণা নিয়ে বসে থাকলে হবে না। এবারের নির্বাচনে সবাইকে নিজের যোগ্যতায় জিতে আসতে হবে। দলের সংসদ সদস্যদের নিজ নিজ এলাকায় কার কী অবস্থান তা জানতে জরিপ চলছে জানিয়ে দলীয় সভাপতি বলেন, ‘এমপিরা কর্মগুণে মনোনয়ন পাবেন। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতে আসা এমপিরা নির্বাচন কী তা বোঝেন না, তাদের বুঝতে হবে।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী ফোরামের এ বৈঠক বিকেল ৪টার পর শুরু হয়ে রাত ১০টায় শেষ হয়। সভায় সাংগঠনিক কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করা হয় এবং তা বাস্তবায়নের তাগিদ দেওয়া হয়। চলতি বছরের ডিসেম্বর থেকে জেলা সফর শুরু করার কথা জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেছেন, প্রত্যন্ত অঞ্চলে জনসভা করবেন তিনি। ডিসেম্বরে যশোর, নড়াইল ও চট্টগ্রামে জনসভা করবেন। সভায় আগামী ২৪ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগের ২২তম জাতীয় সম্মেলন সম্পন্ন করতে ১১টি উপকমিটি গঠন করা হয়।

গতকালের সভায় উপস্থিত একাধিক নেতা জানান, আলোচনার শুরুতেই আগামী ২৩ ও ২৪ ডিসেম্বর দলের দুই দিনব্যাপী সম্মেলনের তারিখের বিষয়ে কথা হয়। এ সময় বৈশ্বিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফরউল্লাহ এক দিনেই সম্মেলন শেষ করার প্রস্তাব করেন। বৈঠকে উপস্থিত কয়েকজন নেতা এতে সমর্থন জানান। যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিমসহ কয়েকজন জাঁকজমকপূর্ণভাবে সম্মেলন করার

কথা বলেন। তখন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা সবাইকে কৃচ্ছ্রসাধনের কথা বলছি। আমরা জাঁকজমকপূর্ণ সম্মেলন করলে সমালোচনা হবে। তাই তা করা হবে না।’

সাপ্তাহিক ছুটির দিন শনিবার সম্মেলনের তারিখ নির্ধারণের কারণ হিসেবে যানজট এড়ানোর বিষয়টি উল্লেখ করা হয়। এ ছাড়াও সম্মেলনের আগে দলীয় গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, দলের জাতীয় কমিটির বৈঠক করা হবে বলে সভায় জানানো হয়। সেখানে দলের সম্মেলনের ব্যয়ের বাজেট তৈরি করা হবে।

বৈঠকে আওয়ামী লীগ সভাপতি দেশজুড়ে সফরের সিদ্ধান্ত নেতাদের জানান বলে জানা গেছে। তিনি বলেন, এখন থেকে দেশের বিভিন্ন জায়গায় সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড উদ্বোধনের পাশাপাশি সরকারি বিভিন্ন কর্মসূচিতে যোগ দিতে যাবেন। সেখানে সকালে রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠান করে বিকেলে দলীয় জনসভা করা হবে। এরই অংশ হিসেবে আগামী ৪ ডিসেম্বর চট্টগ্রামে যাবেন। সেখানে বিকেলে পলোগ্রাউন্ড মাঠে জনসভা করবেন। এরপর নড়াইল ও যশোরে জনসভা করবেন। অবশ্য ওই দুই জনসভার তারিখ এখনো চূড়ান্ত হয়নি। এ ছাড়াও দলীয় সভাপতি দেশের ৬৪টি জেলাই সফরে যাবেন। এ ক্ষেত্রে প্রথমে যেসব জেলায় দীর্ঘদিন যাননি সেগুলো এবং পরে প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলো অগ্রাধিকার পাবে। যা আগামী বছর থেকে শুরু করবেন।

জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে আওয়ামী লীগ বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠনের সঙ্গে নিয়মিত বৈঠক করবে বলে সভায় সিদ্ধান্ত হয়। যার মধ্যে থাকবে প্রকৌশলী, চিকিৎসক, আইনজীবী, সাংবাদিক, সরকারি কর্মচারীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার সংগঠন। এ ছাড়া আওয়ামী লীগের শরিক ১৪ দলীয় জোটের সঙ্গে বৈঠক করা হবে। এ জোটকে সক্রিয় করার পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের আরও রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বৈঠক করা হবে। করোনা পরিস্থিতিতে দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করার পরিসর সীমিত রয়েছে। কিন্তু এখন থেকে তিনি নিয়মিত সাক্ষাৎ দেবেন বলে জানান বৈঠকে।

সভায় উপস্থিত নেতারা জানান, ছাত্রলীগসহ মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটির সহযোগী সংগঠনগুলোর সম্মেলন আগামী নভেম্বরের মধ্যে সম্পন্ন করার উদ্যোগ নিতে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ওবায়দুল কাদের ছাত্রলীগসহ অন্য সহযোগী সংগঠনগুলোর নেতাদের সঙ্গে আগামীকাল রবিবার দলীয় সভাপতির ধানম-ির রাজনৈতিক কার্যালয়ে আলোচনা করে সম্মেলনের তারিখ জানাবেন।

গতকালের বৈঠকে বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকাকালীন সময়কার আওয়ামী লীগ নেতাদের বিষয়ে কিছু তথ্য তুলে ধরেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু যখন জেলে থাকতেন, নেতারা বঙ্গবন্ধুর বাসায় আসতেন না। পরিবারের খোঁজখবর নিতেন না। কিন্তু বঙ্গবন্ধু জেল থেকে ছাড়া পেলে সবাই আসতেন। বঙ্গমাতা ফজিলাতুন নেছা মুজিব একবার বঙ্গবন্ধুকে বলেছিলেন, ‘তুমি যখন জেলে থাক তখন নেতারা আসে না। মাঠের কর্মীরা খোঁজখবর নিতে আসত। এখন ছাড়া পেয়েছ, তারা আসতেছে। চকচকে নেতারা বিপদে পড়লে থাকে না।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আব্বা জেলে থাকতে নেতারা আমাদের বাসার সামনে দিয়ে গেলেও তাকত না। মাটির দিকে তাকিয়ে থাকত। জামাল (শেখ হাসিনার প্রয়াত ভাই) খুবই দুষ্টু ছিল, সে নেতাদের চাচা বলে ডাক দিত। কিন্তু তারা তাকাত না। এখনো তেমন চকচকে নেতারা বিপদে পড়লে থাকবে না, কিন্তু ত্যাগী, তৃণমূলের পোড় খাওয়া নেতারা বিপদে থাকে। তাই তাদের মূল্যায়ন করতে হবে।’

সভায় সাংগঠনিক সম্পাদকরা বিভিন্ন জেলার সম্মেলনের অগ্রগতি প্রতিবেদন তুলে ধরেন। এ সময় একজন সাংগঠনিক সম্পাদক তিনটি জটিল জেলার নাম বলেন এবং দলীয় সভাপতির হস্তক্ষেপ ছাড়া সে জেলাগুলোতে সম্মেলন করা সম্ভব নয় বলে উল্লেখ করেন। বিষয়টি দেখবেন বলে জানান দলের সভাপতি।

এ সময় আরেক সাংগঠনিক সম্পাদক সাখাওয়াত হোসেন শফিককে উদ্দেশ্যে করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘যাদের সাংগঠনিক সম্পাদক বানিয়েছি, তাদের মনে রাখতে হবে জেলা-উপজেলার ত্যাগী নেতারা কিন্তু বয়সেও আপনাদের চেয়ে বড়। কোনো সাংগঠনিক সম্পাদক যেন জেলা পর্যায়ের ত্যাগী নেতাদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ না করেন। এখন অনেকের চেহারা চকচক করে। কিন্তু বিপদে তারাই (ত্যাগী) পাশে থাকে।’

লালমনিরহাট জেলার প্রসঙ্গ টেনে দলীয় সভাপতি বলেন, ‘সেখানে ত্যাগী নেতা নুরুজ্জামানের সঙ্গে কথা বলে কমিটি দিয়ে আসবেন।’

বৈঠকে বিভিন্ন নির্বাচনে দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে নির্বাচন করা বিদ্রোহী প্রার্থী ও তাদের মদদদাতাদের প্রতীকী শাস্তির ব্যাপারে আলোচনা হয়। তবে যারা চিঠি দিয়ে অপরাধের জন্য ক্ষমা চাইবেন, তাদের ক্ষমা করা হবে আগামী জাতীয় নির্বাচনে দলকে ঐক্যবদ্ধ রাখার জন্য।

এর আগে সভার সূচনা বক্তব্য দিতে গিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘আওয়ামী লীগের ওপর মানুষের আস্থা আছে বলেই তিনবার ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছে। এবারও দেবে। কিন্তু যারা সন্ত্রাসী, খুনি, জনগণের অর্থ লুটপাটকারী, বোমা-গ্রেনেড হামলাকারী ও অর্থ পাচারকারী, জনগণ তাদের বিশ্বাস করে না, ভোটও দেবে না।’

তিনি বলেন, ‘যারা খুনের সঙ্গে জড়িত, অগ্নিসন্ত্রাসের সঙ্গে জড়িত, জঙ্গিবাদের সঙ্গে জড়িত, আমি জানি তারা অনেকে লুকিয়ে ছিল। এখন বিএনপি মাঠে নেমেছে, তারাও মাঠে নামবে। এসব আসামিকে কিন্তু ধরতে হবে। তাদের উপযুক্ত শাস্তি দিতে হবে। কারণ তারা মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে। জীবন্ত মানুষ হত্যা করেছে। চোখ-হাত কেটেছে, মানুষকে নির্যাতন করেছে। তাদের ছাড় নেই। আইন তার আপন গতিতে চলবে। আইন সবার জন্য সমান। এটা তাদের মাথায় রাখতে হবে। রাজনীতি করবে রাজনীতিক হিসেবে। কিন্তু সন্ত্রাসী-জঙ্গিবাদী রাজনীতি এ দেশে চলবে না। এটা মাথায় রাখতে হবে।’

Source: https://www.deshrupantor.com/first-page/2022/10/29/388676

Exit mobile version