- by নিজস্ব প্রতিবেদক
আবারো আলোচনায় বিএনপি নেতা ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সচিব আবুল হারিছ চৌধুরী ওরফে হারিছ চৌধুরীর নাম। মাস তিনেক আগে তার মৃত্যু হয়েছে বলে গতকাল বুধবার খবর বের হলে তা নিয়ে রহস্যের ধূম্রজাল তৈরি হয়েছে। এ নিয়ে এবার মুখ খুলেছেন তার ছোট ভাই কামাল চৌধুরী।
গতকাল হারিছ চৌধুরীর চাচাতো ভাই সিলেট জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি আশিক চৌধুরী জানান, লন্ডনের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত বছরের সেপেম্বর মাসে মারা গেছেন হারিছ চৌধুরী। সে বছরের আগস্টে তার করোনা শনাক্ত হয়েছিল। তবে পরিবারের পক্ষ থেকে তার মৃত্যুর খবর গোপন রাখা হয়।
হঠাৎ উধাও হয়ে যাওয়া হারিছ চৌধুরীর মৃত্যুর তথ্য, স্থান, সময়, কারণ ও দাফন নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু প্রকাশ না করায় ধূম্রজালের সৃষ্টি হয়েছে। একেক সূত্র একেক তথ্য দেয়ায় এ নিয়ে রীতিমতো রহস্যের সৃষ্টি হয়েছে, যেমন হয়েছিল তার আত্মগোপনে থাকা নিয়ে।
এ ব্যাপারে গতকাল বিএনপির সিলেট জেলা কমিটির সদস্য আবদুল কাহের শামীম জানান, হারিছ চৌধুরী ঢাকায় মারা গেছেন, দাফনও হয়েছে ঢাকায়। একই তথ্য দিয়েছেন হারিছ চৌধুরীর জন্মস্থান সিলেটের কানাইঘাটের আওয়ামী লীগ নেতা আলী হোসেন কাজল।
তবে বিএনপির একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা বলছেন, ঢাকায় নয়, লন্ডনে হয়েছে হারিছ চৌধুরীর মৃত্যু ও দাফন। তবে তেমনটি হলে তা গোপন থাকার কথা নয় বলে মনে করেন দলটির প্রভাবশালী অপর কয়েকজন নেতা। এ নিয়ে গতকাল সারাদিন নানা ধরনের খবর বের হলে রাতে মুখ খোলেন হারিছ চৌধুরীর ছোট ভাই কামাল চৌধুরী।
সিলেটের কানাইঘাটের দিঘিরপাড় পূর্ব ইউনিয়নে থেকে গৃহস্থালীর কাজ করেন ৫৫ বছর বয়সী কামাল চৌধুরী। তাদের ৫ ভাইয়ের মধ্যে জীবিত আছেন দুই জন, হারিছ চৌধুরী বাদে। বেঁচে থাকা অপর ভাই আবদুল মুকিত চৌধুরী থাকেন ইরানে।
অনলাইন নিউজপোর্টাল বাংলা ট্রিবিউনকে দেয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে কামাল চৌধুরী জানান, ফেসবুক ও গণমাধ্যমে অন্যদের মতোই হারিছ চৌধুরীর মৃত্যুর খবর শুনেছেন। এ বিষয়ে বিস্তারিত কিছু না জানালেও তার কথায় মৃত্যুর বিষয়টি অনেকটা ‘নিশ্চিত’ বলেই মনে হয়েছে।
তিন মাস আগে হারিছ চৌধুরীর আরেক ভাই এমরান হোসেন চৌধুরী সেলিমের মৃত্যু হয়। এ নিয়ে ৫ ভাইয়ের মধ্যে ৩ ভাইয়ের মৃত্যুর তথ্য এবং দুই ভাই জীবিত থাকার কথা বলছিলেন কামাল চৌধুরী। জীবিত বাকিজন ইরানে থাকা আবদুল মুকিত চৌধুরী, সে হিসেবে হারিছ চৌধুরী মারা গেছেন।
এ ছাড়া হারিছ চৌধুরীর মৃত্যু ও দাফন ঢাকায় নয়, যুক্তরাজ্যে হওয়ার ইঙ্গিতই মিলেছে কামাল চৌধুরীর বক্তব্যে। মাস তিনেক আগে হারিছ চৌধুরী গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে তার মেয়ে বিদেশ থেকে ফোন করে অসুস্থতার কথা জানিয়েছিলেন তাকে। তার পর আর হারিছ চৌধুরীর পরিবারের কারো সঙ্গে তার যোগাযোগ হয়নি।
এদিকে, হারিছ চৌধুরীর খালাতো ভাই আব্দুস সালাম সলুইও এ বিষয়ে নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারেননি। তিনি জানান, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় দেশ ছাড়ার পর হারিছ চৌধুরীর কোনো খবর জানেন না। তার মৃত্যুর কথা লোকমুখে শুনলেও পরিবারের কারো কাছ থেকে তিনি নিশ্চিত হতে পারেননি।
বিএনপি সূত্রে জানা যায়, করোনা থেকে সুস্থ হলেও ফুসফুসের মারাত্মক ক্ষতি হওয়ায় হারিছ চৌধুরীকে আবারো হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়। অবশ্য আগে থেকেই তিনি ব্লাড ক্যান্সার এবং অন্যান্য জটিলতায় ভুগছিলেন। স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে যুক্তরাজ্যে থাকতেন হারিছ চৌধুরী। তার ছেলে জনি চৌধুরী একজন পেট্রোলিয়াম ইঞ্জিনিয়ার, মেয়ে মুন্নু চৌধুরী ব্যারিস্টার।
প্রসঙ্গত, ২০১৮ সালে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় হারিছ চৌধুরীর যাবজ্জীবন সাজা হয়। এ ছাড়া জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় একই বছরের ২৯ অক্টোবর তাকে ৭ বছরের জেল এবং ১০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।