Site icon The Bangladesh Chronicle

হতাশা নিয়েই ভোটের মাঠে আ.লীগের শরিকরা

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন

প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির মধ্যে বিস্তর ফারাক ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের শরিকদের। আসন ভাগাভাগিতে খুব একটা সুবিধা করতে পারেনি তারা। ফলে জন্ম হয়েছে ক্ষোভ এবং হতাশা। এ সত্ত্বেও দিন শেষে ভোটযুদ্ধে নেমেছেন নৌকায় ওঠা তিন শরিক দলের ছয় নেতা। তবে এবার আর ফাঁকা মাঠে গোল দেওয়ার সুযোগ নেই।

আগামী ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এর আগে ১৭ ডিসেম্বর ছিল মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন। কয়েক দফা বৈঠক শেষে আওয়ামী লীগ তাদের দীর্ঘদিনের ১৪ দলীয় জোটের তিন শরিক দলের ছয়জনকে নৌকা প্রতীকে ছাড় দেয়। এতে চরম ক্ষুব্ধ হন শরিক দলের নেতারা।

অন্যদিকে জাতীয় পার্টিসহ জোট এবং শরিকদের বাইরে নির্বাচনে আসা কয়েকটি মিত্র দলেরও প্রত্যাশা ছিল আওয়ামী লীগের সঙ্গে আসন সমঝোতার। শেষ পর্যন্ত জাতীয় পার্টিকে ২৬টি আসনে ছাড় দেওয়া ছাড়া আর কারও সঙ্গে আসন নিয়ে সমঝোতা করেনি আওয়ামী লীগ।

জাতীয় পার্টি এবং ১৪ দলের শরিকদের আসন বাড়ানোর সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার আবদারও কানে তোলেনি ক্ষমতাসীনরা। এ অবস্থার মধ্য দিয়ে সোমবার প্রার্থীদের মাঝে নির্বাচনি প্রতীক বরাদ্দ করে নির্বাচন কমিশন।

মঙ্গলবার থেকে শুরু হবে ভোটের আনুষ্ঠানিক প্রচারণা। ক্ষোভ, হতাশা এবং অসন্তোষ মাথায় রেখেই অবশেষে ভোটের লড়াইয়ে অবতীর্ণ হতে প্রার্থীরা ছুটছেন যার যার নির্বাচনি এলাকায়। তবে শরিক দলের প্রার্থীরা মনে করছেন, আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থীরাই হচ্ছে এখন তাদের মাথাব্যথার বড় কারণ।

তাদের মতে, ২০১৮ সালে একাদশ সংসদ নির্বাচনে ১৪ দলের শরিকদের ১১টি আসনে ছাড় দিয়েছিল আওয়ামী লীগ। এবার দফায় দফায় বৈঠক করেও আসন সংখ্যা বাড়াতে পারেনি, উলটো কমে প্রায় অর্ধেকে নেমে আসে। আওয়ামী লীগ জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদকে তিনটি, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টিকে দুটি এবং জাতীয় পার্টি-জেপিকে একটি আসনে ছাড় দিয়েছে। এর আগের দুই নির্বাচনে বাংলাদেশ তরীকত ফেডারেশনকে ছাড় দেওয়া হলেও এবার তাদের আসন দেয়নি ক্ষমতাসীনরা।

এর ওপর আবার আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থীরা মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা হিসাবে আবির্ভূত হয়েছেন এবারের নির্বাচনে। ফলে জোটপ্রার্থীদের প্রকারান্তরে আওয়ামী লীগের সঙ্গেই ভোটের মাঠে লড়তে হবে। জাতীয় ও বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে এটি আগামী সংসদে বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে বলে মনে করেন তারা।

শরিক দলের মধ্যে আওয়ামী লীগ জাসদকে কুষ্টিয়া-২ আসনে হাসানুল হক ইনু, বগুড়া-৪ আসনে একেএম রেজাউল করিম তানসেন এবং লক্ষ্মীপুর-৪ আসনে মোশারফ হোসেনকে ছাড় দিয়েছে। এর মধ্যে কুষ্টিয়া-২ বাদে অন্য দুটি আসনে আওয়ামী লীগ তাদের প্রার্থী প্রত্যাহার করে নিয়েছে।

এ ছাড়া ওয়ার্কার্স পার্টিকে বরিশাল-২ আসনে রাশেদ খান মেনন ও রাজশাহী-২ আসনে ফজলে হোসেন বাদশাকে ছাড় দিয়েছে। পিরোজপুর-২ আসনে জাতীয় পার্টি-জেপি আনোয়ার হোসেন মঞ্জুকে ছাড় দেওয়া হয়েছে। এসব আসনে আওয়ামী লীগ তাদের দলীয় প্রার্থী প্রত্যাহার করে নিলেও তাদের স্বতন্ত্র প্রার্থীরা মাঠে আছে।

এ প্রসঙ্গে জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু বলেন, আসন সমঝোতা নিয়ে প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির বিস্তর ফারাক সত্ত্বেও আমরা বৃহত্তর স্বার্থে এবং ঐক্য বজায় রাখতে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছি। সোমবার রাতে নির্বাচনি এলাকায় যাব। পরদিন নির্বাচনি প্রচারণা আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু করব।

আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী সম্পর্কে তিনি বলেন, আমরা তাকে মাঠ থেকে সরে দাঁড়াতে অনুরোধ করব। বাকিটা সময় এলে দেখা যাবে।

বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা এ প্রসঙ্গে বলেন, আসন বণ্টন নিয়ে অসন্তোষ তো রয়েছেই। এটা বলা খুব মুশকিল। কোনো নীতিমালা অনুসরণ করা হয়েছে বলে মনে হয়নি। শেষমেশ আমরা তিনটি আসনে ছাড় চেয়েছিলাম, দেওয়া হয়েছে দুটি। সাতক্ষীরার আসনটি নিয়ে সমস্যা হলো, যা সত্যিই দুঃখজনক।

আসন না পেয়ে বাংলাদেশ তরীকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী বলেন, জোটের নেতাদের সঙ্গে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার বৈঠকে আমার আসনে ছাড় দেওয়ার কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু পরে ছাড় দেওয়া হলো না, এটা অসম্মানজনক, অপমানজনক। জোটে আমরা অবহেলিত হয়েছি, তারপরও জোটের স্বার্থে আমরা নির্বাচনে আছি।

জাতীয় পার্টি-জেপি মহাসচিব শেখ শহীদুল ইসলাম বলেন, প্রত্যাশা অনুযায়ী আসন না পেলেও তা মেনে নিয়েই নির্বাচনে অংশ নিচ্ছি।

jugantar

Exit mobile version