হতভাগা আমেরিকানদের কপালে একজন শাহরিয়ার কবিরও জুটে নি
=======================================
পৃথিবীতে মুক্ত ও গণতান্ত্রিক দেশগুলির নেতা বা মোড়ল হিসাবে যুক্তরাষ্ট্রকে বিবেচনা করা হয় । অথচ সেখানে সেকুলারিজমের দুর্দশা দেখলে অন্তরাত্মা কেঁপে ওঠে ! সেই দেশের প্রেসিডেন্ট শপথ গ্রহন করার সময় দুই থেকে তিন দিন ধরে ওদের চার্চে গিয়ে দোয়া -কালাম পড়েন । বিষয়টি গত দুই শ বছর ধরে চলে আসলেও আমাদের নজরে পড়েছে ট্রাম্পের মত উন্মাদ কিছিমের একজন প্রেসিডেন্ট হোয়াইট হাউজে চলে আসাতে । মুসলিম বাবার ঔরসে এবং নাস্তিক মাতার গর্ভে জন্ম নিয়ে বারাক হুসেন ওবামাও এই ট্রাডিশন থেকে রক্ষা পান নি ।
‘ বিশুদ্ধ সেকুলারিজম ছাড়া গণতন্ত্র হয় না’ । এই যুক্তি দেখিয়ে যারা এদেশে বাকশাল নামক ফ্যাসিবাদ প্রতিষ্ঠায় ওকালতি করেছেন কিংবা একধরণের uneasy acceptance হিসাবে মেনে নিয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বলে মনকে প্রবোধ দিচ্ছেন , সেই শ্রদ্ধেয় সৈয়দ আবুল মকসুদ সাহেবেরও বিষয়টি নজরে এসেছে ।
মুক্তচিন্তা ও মুক্তিবুদ্ধির দেশ ইউএসএ তাদের প্রতিটি ডলারে লিখে থাকে , IN GOD WE TRUST . কিন্তু বাক্যটিকে আরেকটু সেকুলার বানানোর জন্যে কিংবা সকলের কাছে গ্রহনযোগ্য বানানোর জন্যে লিখে না – IN CREATOR WE TRUST . আমাদের মত চেতনার বি্রগেইড সেই দেশে থাকলে অবশ্য অবশ্যই খ্রীষ্টান গন্ধযুক্ত GOD বদলিয়ে সার্বজনীন CREATOR বা স্রষ্টায় অনুবাদ করে ছাড়ত ।
কাজেই এদের জন্যে আফসোস হয় , আমেরিকার মুল্লুকে একজনও শাহরিয়ার কবির নেই , একটা ৭১ টিভি নেই , একজন নবনীতা নেই যিনি বোনের মত মমতা মাখা মুখ নিয়ে শাহরিয়ার কবিরদের অজু , নামাজ নিয়ে উদ্বেগগুলি জাতির সামনে তুলে ধরবেন । ই-তে ইয়াবা লেখা দেখলে এই শাহরিয়ার কবির সাহেব যতটুকু আৎকে উঠতেন, তার চেয়েও বেশী আৎকে উঠেছেন অ তে অজু করে পাক হও লেখা দেখে; মনে হচ্ছে এতে নিখিল বিশ্বই নাপাক হয়ে পড়েছে । তিনি সিস্টার নবনীতার চরম উৎসাহের ( উস্কানী নয় , শাহরিয়ার কবিরদের উস্কানি লাগে না ) মধ্য দিয়ে শাহরিয়ার কবির যে বইটি দেখিয়েছেন, তা জাতীয় টেক্সট বুক বোর্ডের কোন বই না । কিছু প্রাইভেট স্কুলের একটি বই । যে সব মুসলিম অভিভাবক তাদের সন্তানকে ধর্মীয় শিক্ষা দিতে চান , সেই সব স্কুলে এই বইটি পড়ানো হয় । কোনও হিন্দু বা খ্রীষ্টান অভিভাবক যদি তাদের সন্তানকে কোন প্রাইভেট স্কুলে বর্ণমালা শিখানোর সময় তাদের নিজ নিজ ধর্মীয় বিশ্বাস গেঁথে দিতে চান , তবে শাহরিয়ার কবির কিংবা নবনীতার কোনও আপত্তি থাকার কথা নয় । শাহরিয়ার কবির এবং নবনীতারা তাদের মতামত সকল অভিভাবকের উপর চাপিয়ে দিতে পারেন না।
আমার ছেলে যে স্কুল থেকে international baccalaureate
( A-level ) পাশ করেছে সেটি খ্রীষ্টান মিশনারীদের স্কুল । একটা ধর্মীয় আবেগ বা জজবা থেকেই শত বছর আগে এই স্কুলটি স্থাপন করা হয়েছে । স্কুলের বিভিন্ন জায়গায় বাইবেল থেকে উদ্ধৃতি ডিসপ্লে করা রয়েছে । এই স্কুলটি IB system এ সারা পৃথিবীর মধ্যে এক নম্বরের স্কুল । এই স্কুলে ছয় বছর পড়ার কারণে আমার ছেলে খ্রীষ্টান ভাবাপন্ন হয়ে পড়ে নি । স্কুলের উদ্যাক্তাদের কাছে তাদের ধর্মীয় প্রেরণা ওদের ড্রাইভিং ফোর্স হিসাবে কাজ করেছে । কিন্তু আমার মত অভিভাবকদের কাছে এটি গণ্য হয়েছে সেকুলার প্রতিষ্ঠান হিসাবে । অভিভাবক হিসাবে আমি আমার কাঙ্খিত সেবা ও ফলাফল পেয়েছি ।
আমেরিকা সহ পৃথিবীর উন্নত দেশগুলিতে সেই দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠের বোধ বিশ্বাস কিংবা রাজনৈতিক ও ধর্মীয় ভাবনার একটা ছাপ ওদের শিক্ষাব্যবস্থায় কিংবা প্রশাসনের বিভিন্ন জায়গায় থাকবে । এগুলি নিয়ে সেসব দেশের সংখ্যালঘুরা মন খারাপ করে না বরং ডিসিপ্লিনের খাতিরে তা মেনে নেয় । এই ধরণের একটা স্বস্তিকর এডজাস্টমেন্ট সব জায়গার সংখ্যাগুরু ও সংখ্যালঘুরা করে নিয়েছে ।
কিন্তু আমাদের দেশে শাহরিয়ার কবির ও নবনীতারা সেই স্বাচ্ছন্দটুকু আমাদের কাছ থেকে কেড়ে নিতে চান । এদেশে কেউ যদি তার নিজের ছেলেমেয়েকে অজু নামাজ শেখাতে চান সেখানেও শাহরিয়ার কবির ও নবনীতারা আপত্তি করবেন, চোখ রাঙাবেন । কারণ আপনি সাম্প্রদায়িক নাকি উদারবাদী , দেশপ্রেমিক নাকি দেশদ্রোহি রাজাকার , তা সার্টিফাই করার ক্ষমতা এই নবনীতাদের হাতে । এদেরকে নাখোশ করে কেউ অসাম্প্রদায়িক ও দেশপ্রেমিক হতে পারবেন না ।
এদেশের সংখ্যাগুরুরা হয়ে পড়েছে নেহায়েত গরীবের মেয়ের মত । চেতনার স্বামীরা যেভাবে ইচ্ছা সেভাবেই কিলাইতে পারবেন । এটা দেখার কেউ নেই । বলার কেউ নেই ।