bonikbarta.net
নিজস্ব প্রতিবেদক
যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় অনুযায়ী মঙ্গলবার রাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে (সাবেক টুইটার) এক টুইট বার্তা পোস্ট করেন সাবেক মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন। একই বক্তব্য নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজেও শেয়ার করেন তিনি। এতে বলা হয়, ‘মহান মানবতাবাদী ও নোবেল পুরস্কারজয়ী মুহাম্মদ ইউনূসের প্রয়োজনের মুহূর্তে সমর্থন দেয়ার জন্য আমিসহ ১৬০-এর বেশি বিশ্বনেতা পাশে এসে দাঁড়ান।’
এ বিষয়ে পরদিন মঙ্গলবার সাম্প্রতিক দক্ষিণ আফ্রিকা সফর নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশের বিচার বিভাগ সম্পূর্ণ স্বাধীন এবং সবকিছু আইন মতো চলে। আর এ দেশে বিচারাধীন বিষয়ে আমরা কথা বলি না। তাছাড়া আমি কে মামলা প্রত্যাহার করার?’
তিনি বলেন, ‘কেউ যদি ট্যাক্স না দেয় আর শ্রমিকের অর্থ আত্মসাৎ করে এবং সেই শ্রমিকের পক্ষে শ্রম আদালতে মামলা হলে আমাদের কি হাত আছে যে সে বিচার বন্ধ করে দেব?’
সংবাদ সম্মেলনে এ-সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমার খুব অবাক লাগছে। অপরাধ করেননি, ভদ্রলোকের যদি এতটাই আত্মবিশ্বাস থাকত তাহলে তিনি আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিবৃতি ভিক্ষা করে বেড়াতেন না।’
অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে এখন একাধিক মামলা চলমান রয়েছে। আজই তার বিরুদ্ধে শ্রম আইন লঙ্ঘনের মামলার বিচারিক কাজ শুরু হওয়ার কথা রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে হঠাৎ করেই আলোচনায় এসেছেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
ড. ইউনূসকে নিয়ে আলোচনা ব্যাপকতা পায় গত রোববার। ওইদিন নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে তাকে লেখা সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার একটি চিঠি শেয়ার করেন ড. ইউনূস। ১৭ আগস্ট তারিখ দেয়া ওই চিঠিতে ওবামা তাকে উদ্দেশ করে লেখেন, ‘আমার প্রত্যাশা এ মুহূর্তে এ কথাটুকু আপনাকে শক্তি জোগাবে যে যাদের ভবিষ্যতের ওপর আপনি বিনিয়োগ করেছেন এবং আমাদের মধ্যে যারা সবার জন্য আরো ন্যায়সংগত ভবিষ্যতের প্রত্যাশা করি; তারা সবাই আপনার কথা ভাবছি। এবং আমি আশা করছি, আপনি আপনার গুরুত্বপূর্ণ কাজ চালিয়ে যাওয়ার স্বাধীনতা পাবেন।’
রোববারেই গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে সরকারের প্রতি ড. ইউনূসকে হয়রানি বন্ধের আহ্বান জানিয়ে বক্তব্য রাখেন ৩৪ বিশিষ্ট নাগরিক। এর পরদিনই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্দেশে চিঠি প্রকাশ করেন ১৬০ নোবেলজয়ী ও বিশ্বনেতা। পরে এতে স্বাক্ষরকারীর সংখ্যা আরো বেড়ে বর্তমানে ১৮০ ছাড়িয়েছে।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও মঙ্গলবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ড. ইউনূসকে ‘জাতির সূর্যসন্তান’ অভিহিত করে তাকে ‘হেনস্তা করা বন্ধের’ আহ্বান জানান। বিএনপির সহদপ্তর সম্পাদক মুহম্মদ মুনির হোসেন স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে করা সব মামলা অবিলম্বে প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘ওনাকে যারা ছোট করতে চান, অপমান করতে চান, তারা আরেকবার জন্ম নিলেও ওনার সমান উচ্চতায় যেতে পারবেন না। এ অনিবার্য সত্য মেনে নিয়ে ওনাকে হেনস্তা বন্ধ করুন। এসব মামলাবাজি বন্ধ করুন।’
অধ্যাপক ইউনূসের বিপক্ষে চলমান মামলা নিয়ে বিতর্কে যুক্ত হয়েছেন ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের নেতারাও। দলের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক যোগাযোগ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের গতকাল সচিবালয়ে এক অনুষ্ঠানে বলেন, ‘যারা ড. ইউনূসের মামলা স্থগিত করতে বলেন, মামলা কীভাবে স্থগিত হবে? মামলার কাগজপত্র, দলিল-দস্তাবেজ ঠিক আছে কিনা দেখুন। হাওয়ায় একটি বিবৃতি ছেড়ে দিলেন! আবার এর সঙ্গে অবাধ-সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবি! তারা বাংলাদেশের নির্বাচনকে বানচাল করতে চান। বাংলাদেশে নির্বাচনের শান্তিপূর্ণ পরিবেশকে ভণ্ডুল করতে তারা নতুন প্লাটফর্ম করতে চান। পরিষ্কার বলতে চাই, বাংলাদেশের মাটিতে এ অশুভ খেলা আমরা খেলতে দেব না।’
মামলা প্রসঙ্গে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘নোবেল পেয়ে অপরাধ করেও অব্যাহতি পেয়ে যাবেন, এটা কোন দেশের আইনে আছে? শ্রমিকের অর্থ আত্মসাৎ করেন যিনি, তার মতো নোবেল বিজয়ী শ্রেষ্ঠ সন্তানের আমাদের প্রয়োজন কী? নোবেল বিজয়ীরা যে বিবৃতি দিয়েছেন, সেই বিবৃতির স্পেস কিনতে ২ মিলিয়ন ডলার লাগে। এ অর্থ কোথা থেকে এল?’
প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন অ্যাটর্নি জেনারেল আবু মোহাম্মদ আমিন উদ্দিনও। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট মিলনায়তনে গতকাল জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ আইন সমিতি আয়োজিত তথ্যচিত্র প্রদর্শনী ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠানে বিবৃতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘কোনো দেশের বিচার ব্যবস্থা নিয়ে অন্য দেশ হস্তক্ষেপ করতে পারে না। আমার মতে, তারা প্রকৃত সত্য জানেন না। প্রকৃত সত্য জানলে তারা কখনো এমন বিবৃতি দিতেন না। এটা এক ধরনের ষড়যন্ত্র।’
তিনি বলেন, ‘যে মামলা সুপ্রিম কোর্ট থেকে চলতে বাধা নেই বলা হয়েছে সেই মামলা নিয়ে এমন বিবৃতি বিস্ময়কর। আমাদের বিচারাধীন মামলার বিরুদ্ধে তারা বিবৃতি দেয়, এটা তো হতে পারে না।’