Site icon The Bangladesh Chronicle

স্বাস্থ্যসেবার বেহাল দশা

  • অধ্যাপক ডা: শাহ মো: বুলবুল ইসলাম
স্বাস্থ্য বিভাগের দীর্ঘ দিনের বেহাল দশা সামলানোর ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর বক্তব্য প্রশংসনীয়। এ বিভাগের নানা অনিয়ম সম্পর্কে তিনি যথেষ্ট অভিজ্ঞ। আশা করা যায়, দীর্ঘ চিকিৎসাজীবনের অভিজ্ঞতার আলোকে তিনি পথ চলবেন, স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়ন ও অগ্রগতিতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করবেন। তিনি ঘোষণা দিয়েছেন, রোগীদের স্বাস্থ্যসেবার দায় তার, একই সাথে চিকিৎসক সমাজেরও। তিনি চিকিৎসকদেরকে রোগীর প্রতি সংবেদনশীল হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। পাশাপাশি দুর্নীতি বন্ধে অনুমোদনহীন ও মানহীন চিকিৎসাকেন্দ্রগুলোতে হাত দিয়েছেন। জানা গেল, সারা দেশে প্রাথমিক হিসাবে প্রায় এক হাজার ২০০ অনুমোদনহীন চিকিৎসাকেন্দ্র রয়েছে।

অস্বীকারের উপায় নেই, এসব চিকিৎসাকেন্দ্রের সাথে কিছু চিকিৎসক সম্পৃক্ত। এসব চিকিৎসাকেন্দ্রের নিয়ন্ত্রণ ও দেখভালের দায়িত্ব যাদের ওপর তারা যথারীতি দায়িত্ব পালন করছেন কি না সেটি খতিয়ে দেখা এবং প্রতিবিধান দরকার। শুধু হাসপাতাল বা ক্লিনিক বন্ধ করলেই চিকিৎসাসেবার মান বাড়বে না বরং রোগীদের ভোগান্তি বাড়বে।

চিকিৎসাসেবার সাথে শুধু চিকিৎসকরাই জড়িত নন; এর সাথে সেবক-সেবিকা, বিভিন্ন ধরনের সহায়ক জনশক্তি, ল্যাবরেটরি, ওষুধ প্রস্তুতকারী কোম্পানি ও ওষুধ ব্যবসায়ীসহ বিশাল এক জনশক্তি সম্পৃক্ত। চিকিৎসাসেবার উন্নয়নে ভূমিকা ও কর্মপরিধির ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা প্রয়োজন। সারা দেশে অসংখ্য মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে, প্রয়োজনীয় শিক্ষক ও চিকিৎসা অবকাঠামো ছাড়াই। ফলে এসব প্রতিষ্ঠান থেকে যারা চিকিৎসক হয়ে বেরুচ্ছেন তারা ভবিষ্যতে চিকিৎসা ব্যবস্থাকে কোথায় নিয়ে যাবেন তা ভেবে দেখার প্রয়োজন।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী চিকিৎসকদেরকে রোগীর প্রতি আরো যত্নবান ও দায়িত্বশীল হওয়ার তাগিদ দিয়েছেন। আমাদের চিকিৎসা শিক্ষাসূচিতে চিকিৎসকের আচরণগত শিক্ষার অভাব রয়েছে। স্বল্পসংখ্যক শিক্ষক দিয়ে মেডিক্যাল কলেজগুলোতে গুচ্ছ আকারে শিক্ষা দেয়া যায় কি না ভাবা প্রয়োজন। অবসরে যাওয়া কর্মক্ষম শিক্ষকদের সাময়িকভাবে চুক্তিবদ্ধ করা যেতে পারে। এতে সরকারি কোষাগারে খুব কম-ই চাপ পড়বে। অন্য দিকে দেশও উপকৃত হবে।

যেসব বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক সরকারি চাকরিতে নিযুক্ত তাদের বড় অংশ বিভিন্নভাবে বছরের পর বছর প্রেষণে ঢাকায় অথবা আশপাশে আছেন। এতে রাজধানীর বাইরের রোগীরা তাদের সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। সুষ্ঠু চিকিৎসাসেবার স্বার্থে এটি বন্ধ হওয়া দরকার।

পত্রপত্রিকার বরাতে জানা যায়, উল্লেখযোগ্যসংখ্যক বিদেশী চিকিৎসক রেজিস্ট্রেশন ছাড়াই দেশের বিভিন্ন স্থানে চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন যা প্রচলিত আইনের পরিপন্থী। এ ব্যাপারে বিএমডিসি নামক প্রতিষ্ঠানটি দায়বদ্ধতা এড়াতে পারে না। দেশের বিভিন্ন জেলায় বিদেশী চিকিৎসকরা রীতিমতো ঢাকঢোল পিটিয়ে পোস্টার-ব্যানার লাগিয়ে রোগী দেখছেন, ব্যবস্থাপত্র দিচ্ছেন- এটি কিভাবে চলছে বোধগম্য নয়! আবার বিভিন্ন জায়গায় এসএসসি বা এইচএসসি পরীক্ষা পাস করেই কেউ চিকিৎসক পরিচয়ে রোগী দেখছেন, ব্যবস্থাপত্র দিচ্ছেন; অনেকে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক হিসেবে চেম্বার খুলে বসেছেন। এদের ব্যাপারে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন।

ওষুধ প্রস্তুতকারক কোম্পানিগুলো চিকিৎসাসেবার সহায়ক শক্তি। দেশে প্রস্তুতকৃত ওষুধ এখন বিদেশে রফতানি হয়। এটি আমাদের শ্লাঘার বিষয়। একই সাথে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে গজিয়ে ওঠা অসংখ্য কোম্পানি মানহীন-নকল ওষুধ তৈরি ও বাজারজাত করছে। এসব ওষুধ উপকারের চেয়ে অপকারই বেশি করছে। মানহীন ওষুধ সেবনের ফলে কিডনি ও অন্যান্য অসুখ অজান্তেই শরীরে বাসা বাঁধছে, যা ভয়াবহ রূপ নিতে পারে। ওষুধ ব্যবসায়ের সুনির্দিষ্ট নীতিমালার বাস্তব প্রয়োগই এসব মানহীন ও নকল ওষুধের কারখানা বন্ধ করতে পারে। পাশাপাশি নিশ্চিত করতে পারে স্বাস্থ্যসেবার মান।

আরেকটি দুঃখজনক অভিজ্ঞতা হচ্ছে স্বাস্থ্যসেবার বিভিন্ন যন্ত্রপাতির যথাযথ ব্যবহার না হওয়া। অনেক যন্ত্রপাতি বাক্সবন্দী অবস্থায়ই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এ ব্যাপারে দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। চিকিৎসাব্যবস্থার আরেকটি দুর্বল দিক হলো নির্দিষ্ট তথ্যভাণ্ডার ও গবেষণার অভাব। স্বাস্থ্যমন্ত্রীর কাছে প্রত্যাশা, তিনি চিকিৎসাসেবার সার্বিক দুরবস্থা চিহ্নিত করে কার্যকর ব্যবস্থা নেবেন। চিকিৎসাব্যবস্থার সাথে জড়িত সবপক্ষকে সাথে নিয়ে এগোতে পারলে অবস্থার উন্নতি সম্ভব।

Nayadiganta

Exit mobile version