Site icon The Bangladesh Chronicle

স্পেন-ইতালির রণ কাল

Daily Nayadiganta

আজ স্পেন-ইতালির রণ –

লক্ষ্যের দিকে যত এগিয়ে যাচ্ছে, যুদ্ধের ডামাডোল তত তীব্র হচ্ছে। কোন দল উঠছে ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে? ইতালি নাকি স্পেন? আভাস দিচ্ছে, সহজ প্রশ্নের উত্তর মিলবে কঠিন লড়াইয়ের পর। ইংল্যান্ডের বিখ্যাত ওয়েম্বলি স্টেডিয়াম সাক্ষী হতে যাচ্ছে আরেকটি ঐতিহাসিক ম্যাচের। ইউরো ২০২০-এর প্রথম সেমিফাইনালে আগামীকাল বাংলাদেশ সময় রাত ১টায় হাইভোল্টেজ ম্যাচে মুখোমুখি হচ্ছে ইতালি ও স্পেন। সনি টেন ও সনি সিক্স খেলাটি সম্প্রচার করবে।

অভিজ্ঞ দল নিয়ে ইতালির ডাগ আউটে দাঁড়িয়ে যুদ্ধের কৌশটা বাতলে রবের্তো মানচিনি। অপর দিকে তারুণ্য নির্ভর স্পেনের টাচলাইনে আছেন পাকা কারিগর লুইস এনরিকে।
খেলোয়াড়দের সামনে যখন দুই জানু কোচ। তাতে লড়াইটা সহজ হবে না, তা অনুমেয়।
ইউরোয় স্পেনের শুরুটা হয়েছিল সমালোচনার তীরে। প্রথম দুই ম্যাচই ড্র। গোল স্রেফ একটি। দৃষ্টিকটু রকমের ধারহীন ফুটবল। গ্রুপ পর্ব উতরানোই কঠিন। সেই দলটিই পরের দুই ম্যাচে স্লোভাকিয়া ও ক্রোয়েশিয়ার জালে পাঁচবার করো ১০ বার বল পাঠিয়েছে। শেষ ষোলোতে ক্রোয়েশিয়াকে ৫-৩ গোলে হারিয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে উঠেছিল দলটি। শেষ আটে সুইজারল্যান্ড বাধা পার হওয়া একটু কঠিনই ছিল। ১২০ মিনিটের খেলা যখন ১-১ গোলে ড্র, পেনাল্টি শুটআউট তখন ম্যাচের ফলাফল নির্ধারণের দায়িত্ব নেয়। টাইব্রেকারে স্পেনের গোলরক্ষক উনাই সিমনের বীরত্বে ৩-১ গোলে জিতে সেমিফাইনালে ওঠে দ্য রেড ফিউরি।

সেই ম্যাচে জয় নিশ্চিতের গোলটি করা মিকেল ওয়ারসাবাল বলেছেন, ‘প্রতিপক্ষ এখানে ইতালি, ধারাবাহিকতায় যারা দুর্দান্ত। তবে পিছিয়ে নেই আমরাও।’

অপরদিকে ইতালির ছুটে চলা যেন অপ্রতিরোধ্য। ইউরোয় পাঁচ ম্যাচের সবগুলোতেই জয় তুলে নিয়েছে তারা। প্রতিপক্ষের ১১ বার জাল কাঁপিয়ে, হজম করেছে মাত্র দু’টি গোল। আন্তর্জাতিক ফুটবলে টানা ৩২ ম্যাচ অপরাজিত ইতালি। হার নামক বিস্বাদ শেষ ২০১৮ সালের ১০ সেপ্টেম্বর পর্তুগালের বিপক্ষে ইউরোপীয় নেশনস লিগের ম্যাচে দেখেছিল তারা। মানচিনি আসার পর বদলে যায় দলের চেহারা। রাউন্ড অব সিক্সটিনে অস্ট্রিয়াকে ২-১ গোলে হারানোর পর অ্যালিয়াঞ্জ অ্যারেনায় কোয়ার্টারে র‌্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষ দল বেলজিয়ামকে হারায় ২-১ ব্যবধানে।
ইতালি ইউরোর মঞ্চে একমাত্র শিরোপা সাফল্য পেয়েছে ১৯৬৮ সালে। অপরদিকে স্পেন ১৯৬৪, ২০০৮ ও ২০১২ সালে ইউরো চ্যাম্পিয়ন হয়।

বড় মঞ্চে স্পেন ও ইতালির লড়াইয়ের ইতিহাস বেশ সমৃদ্ধ। প্রতিপক্ষ যখন ইতালি, স্পেন কোচ লুইস এনরিকের সবার আগে মনে পড়তে পারে ১৯৯৪ বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালের কথা। ইতালিয়ান ডিফেন্ডার মাউরো তাসোত্তির কনুইয়ের গুতোয় সেদিন ভেঙে গিয়েছিল এনরিকের নাক। তার সেই রক্তাক্ত ছবি এখনো রচোখে ভাসে অনেকের। মাঠে দুই দলের বেশ কজনের হাতাহাতি শুরু হয়ে যায়। বক্সের ভেতর অমন ফাউল রেফারি ধরতে পারেননি। পেনাল্টি দেননি। ইতালি ম্যাচটি জিতে নেয় ২-১ গোলে।

সাম্প্রতিক ইতিহাস অবশ্য স্পেনের জন্যই বেশি সুখকর। ২০০৮ ইউরোতে কোয়ার্টার ফাইনালে ইতালিকে হারিয়েই স্পেন এগিয়ে যায় ট্রফি জয়ের দিকে। ২০১২ ইউরোর ফাইনালে তারা ইতালিকে উড়িয়ে দেয় ৪-০ গোলে। সেই ম্যাচে স্পেনের দাপটের সামনে ইতালি এতটাই অসহায় ছিল যে, শেষ দিকে স্পেন অধিনায়ক ইকের কাসিয়াস রেফারির কাছে আর্তি জানান ম্যাচ শেষ করে দিতে, যাতে ইতালির যন্ত্রণা শেষ হয়!

সময়ের পরিক্রমায় সেই ইতালি ঘুরে দাঁড়িয়েছে দারুণভাবে। এবারের ইউরোর সবচেয়ে ধারাবাহিক ও অনেকের চোখে, এখনো পর্যন্ত সেরা দল তারাই। তাদের অপ্রতিরোধ্য এই ছুটে চলা শুরু হয়েছে ইউরোর অনেক আগে থেকেই। এই ইতালি থামানো যে কোনো দলের জন্যই কঠিন।

তবে ইউরো কাপ ও বিশ্বকাপে স্পেনের বিরুদ্ধে ইতালির রেকর্ড ঈর্ষণীয়। ২০১৬ সালের ইউরোয় শেষ ষোলোতে ২-০ গোলে স্পেনকে হারিয়েছিল ইতালি। ইউরো কাপ ও বিশ্বকাপ মিলিয়ে ৯ বার দু’দল মুখোমুখি হয়েছে। তার মধ্যে চার ম্যাচ জিতেছে ইতালি। মাত্র একবারই তাদের হারিয়েছে স্পেন। চারটি ম্যাচ ড্র হয়েছে। এবারের সেমিফাইনাল ইউরো ও বিশ্বকাপ মিলিয়ে দু’দলের দশম সাক্ষাৎ।

ইতালি-স্পেন ১৯২০ সালে প্রথমবার একে অপরের বিপক্ষে প্রীতি ম্যাচে মুখোমুখি হয়েছিল। ২-০ গোলে শুরুর জয়টা ছিল স্পেনের। সেই থেকে এই পর্যন্ত সর্বমোট ৩৭ ম্যাচে মুখোমুখি হয়েছে দল দু’টি। ঊনিশ-বিশের মতোই ফলাফল। স্পেন জিতেছে ১৩ ম্যাচে, ১১ ম্যাচ জিতেছে ইতালি। বাকি ১৩ ম্যাচ ড্র হয়েছে।

শেষ ২০১৭ সালে ইউরোপের বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের ম্যাচে দেখা হয়েছিল রেড ফিউরি ও আজ্জুরিদের। সে ম্যাচটিও ৩-০ তে জিতেছিল স্প্যানিশরা। দু’দলের শেষ পাঁচ দেখায় দু’টিতে জেতে স্পেন, একটিতে ইতালি এবাং দুই ম্যাচ হয় ১-১ গোলে ড্র।

রবের্ত মানচিনির ইতালির দোন্নারুম্মা গোল পোস্টের নিচে দারুণভাবে স্বাক্ষর রেখে চলেছেন। লরেঞ্জো, কিয়েল্লিনি, বোনুচ্চি ও এমারসন থাকবেন রক্ষণ আগলে। জর্জিনহো, বারেল্লা, বেররাত্তি মাঝমাঠে আজ্জুরিদের আস্থা। কিয়েসা, ইমোবিলে, বেরার্দি ও ফর্মের তুঙ্গে থাকা ইনসাইনে সামলাবেন আক্রমণভাগ।

লুইস এনরিকের গোলপোস্টের নায়ক সিমনেই আস্থা। অ্যাজলেপেকুইতা, লাপোর্তে, তোরেস ও আলবা ডিফেন্স সামাল দেবেন। কোকে, বুসকেট ও পেদ্রি থাকবেন মিডফিল্ডের দায়িত্বে। ফেরান তোরেস, মোরাতা, ওলমো ও মোরেনোরা অ্যাটাকিংয়ে।

Exit mobile version