Site icon The Bangladesh Chronicle

সোহ্‌রাওয়ার্দী উদ্যানে জামায়াতের বিশাল সমাবেশ

স্টাফ রিপোর্টার

২০ জুলাই ২০২৫, রবিবার

রাজধানীতে বিশাল সমাবেশ করেছে জামায়াতে ইসলামী। ৫ই আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর এটিই দলটির বৃহৎ রাজনৈতিক কর্মসূচি। ঐতিহাসিক সোহ্‌রাওয়ার্দী উদ্যানে প্রথম বারের মতো বড় সমাবেশ করে নিজেদের শক্তিমত্তার জানান দিয়েছে দলটি। সারা দেশ থেকে আসা কয়েক লাখ নেতাকর্মী এই সমাবেশে অংশ নেন। মাসব্যাপী প্রস্তুতির পর বড় বাজেটের এই সমাবেশে দলীয় নেতারা ছাড়াও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতারা বক্তব্য রাখেন। সমাবেশ থেকে তারা জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠা, সংস্কার, গণহত্যার বিচার এবং সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন ব্যবস্থা প্রবর্তনের দাবি জানান। একইসঙ্গে বক্তৃতা বিবৃতিতে রাজনৈতিক সহনশীলতা চর্চারও আহ্বান জানানো হয়। সমাবেশে সভাপতির বক্তব্য দেয়ার সময় অসুস্থ হয়ে পড়ায় জামায়াত আমীর তার পূর্ণাঙ্গ বক্তব্য দিতে পারেননি। তিন দফায় দাঁড়িয়ে ও বসে তিনি বক্তব্য শেষ করেন।

জাতীয় ঐক্যের নামে অহংকার, তুচ্ছতাচ্ছিল্য আর অরাজনৈতিক ভাষা ব্যবহারকারীদের প্রতি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান বলেন, আবু সাঈদরা যদি বুক পেতে না দিতো, হয়তো আজকের বাংলাদেশ আমরা দেখতাম না। অনেকের জীবন হয়তো ফ্যাসিবাদীদের হাতে চলে যেতো। আজকে যারা বিভিন্নভাবে দাবি-দাওয়া তুলে ধরছেন, তখন তারা কোথায় থাকতেন? সুতরাং অহংকার করে, তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে কাউকে ছোট করে কথা না বলি। না হলে আমরা বুঝে নেবো, স্বৈরাচারের বীজ তাদের মনে বাসা বেঁধেছে। তিনি বলেন, জাতীয় ঐক্যের বীজতলা রক্ষা করতে হবে। এ পর্যন্ত বক্তব্য দেয়ার পর ৫টা ২২ মিনিটে জামায়াত আমীর ডা. শফিকুর রহমান আকস্মিক অসুস্থ হয়ে পড়ে যান। তখন মঞ্চে থাকা নেতারা তাকে ধরাধরি করে তোলেন। মিনিটখানেক অপেক্ষা করে তিনি আবার বক্তব্য শুরু করেন। কিন্তু ফের অসুস্থ হয়ে পড়ে যান। এরপর মঞ্চে থাকা দলের নেতারা তাকে ধরে বসান। তখন জামায়াতের নায়েবে আমীর ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, গরমের জন্য আমীরে জামায়াত সামান্য অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। চিকিৎসকরা বলেছেন, তার আর বক্তব্য দেয়া ঠিক হবে না। তবে, খানিকটা সময় অপেক্ষা করে না দাঁড়িয়ে মঞ্চে ডায়াসের পাশে পা মেলে বসেই বক্তব্য দেন ডা. শফিকুর রহমান। এ সময় তার পাশে চিকিৎসকদেরও দেখা যায়। এই অবস্থায় প্রায় ১০ মিনিট বক্তব্য দেন জামায়াত আমীর। তিনি বলেন, জীবন থাকা পর্যন্ত এদেশের জন্য কাজ করে যাবো। তিনি বলেন, বাংলাদেশে আর কোনো চাঁদাবাজি হবে না, দুর্নীতি হবে না। চাঁদা আমরা নেবো না, চাঁদা আমরা দেবো না। জুলাই অভ্যুত্থানের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, আমার দুর্ভাগ্য আমি আন্দোলনে শহীদ হতে পারিনি। আগামীতে যে আন্দোলন হবে, আল্লাহ যেন সেখানে আমাকে শহীদ হিসেবে কবুল করেন। তিনি বলেন, এখন থেকে বাংলাদেশে পুরোনো কোনো কিছুই থাকবে না। পুরোনো এই বস্তাপচা জিনিস যদি এই দেশে থাকে, তাহলে কেন এতো লোক জীবন দিলো। জামায়াত আমীর আরও বলেন, জাতীয় ঐক্যকে ধারণ করুন। অহংকার নয়, সংযম দেখান। অতীতে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে আমাদের লড়াই ছিল। সেই লড়াইয়ে আমরা জিতেছি। এখন আগামীর বাংলাদেশে আরেকটা লড়াই হবে দুর্নীতির বিরুদ্ধে। দুর্নীতির মূলোৎপাটনে আমরা ঐক্যবদ্ধ থাকবো। জামায়াতে ইসলামী সেই লড়াইয়ে ছিল, থাকবে এবং জয়লাভ করবে ইনশাআল্লাহ।

বক্তব্যের শুরুতে তিন নেতাকর্মীর মৃত্যুর খবর দিয়ে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, আজকের সমাবেশে অংশ নিতে গিয়ে আমাদের তিন ভাই ইন্তেকাল করেছেন। আল্লাহ তাদের জান্নাত দিন। পরিবারকে ধৈর্য ধরার তাওফিক দিন। তিনি বলেন, জাতির সামনে আমাদের অনেক করণীয়। অতীতে বুক পেতে দিয়ে জামায়াত শহীদ হয়েছে। আজ যারা নতুন কথা বলছেন, তাদের অতীতের অবস্থান ইতিহাসে নেই। সুতরাং আমরা জাতীয় ঐক্য চাই। কিন্তু জাতিকে কারও ছোট করে কথা বলার অধিকার নেই। কোনো নির্দিষ্ট শ্রেণির মুক্তির জন্য এই লড়াই নয়। ইনসাফের ভিত্তিতে একটি সমাজব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা জন্য আমাদের এই লড়াই।

আজকে আমি জামায়াত আমীর হয়ে কথা বলতে আসিনি, এসেছি ১৬ কোটি মানুষের একজন হয়ে কথা বলতে। আমি শিশুদের বন্ধু, আমি যুবকদের ভাই, আমি বয়স্কদের সহযোদ্ধা, আমি বোনদের ভাই। সুতরাং, তাদের মুক্তির জন্য আজকে দায়িত্ব নিয়ে দাঁড়িয়েছিলাম। রাস্তার একজন পরিচ্ছন্নতাকর্মী, গায়ের ঘাম ঝরানো ভাইরা তাদের জন্য কথা বলতে এসেছি। কোনো অভিজাত শ্রেণির হয়ে কথা বলতে আসিনি।

তিনি বলেন, আল্লাহ যতদিন হায়াত দিয়েছেন জনগণের জন্য লড়াই অব্যাহত থাকবে। আল্লাহ আমাদের যদি সুযোগ দেন তাহলে মালিক হবো না, সেবক হবো। আমরা নির্দেশনা দিচ্ছি, জামায়াত থেকে আগামীতে যারা সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হবেন, তারা কোনো সরকারি উপহার গ্রহণ করবেন না। তারা ট্যাক্সবিহীন গাড়িতে চড়বেন না। নিজ হাতে টাকা চালাচালি করবেন না।

জাতীয় সমাবেশে বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য এটিএম আজহারুল ইসলাম, নায়েবে আমীর সাবেক এমপি অধ্যাপক মুজিবুর রহমান, নায়েবে আমীর সাবেক এমপি ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো. তাহের, সেক্রেটারি জেনারেল সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মহাসচিব অধ্যক্ষ ইউনুস আহমাদ, হেফাজতে ইসলামের নায়েবে আমীর মাওলানা মহিউদ্দিন রব্বানী, এনসিপি’র সদস্য সচিব আখতার হোসেন, খেলাফত মজলিসের মহাসচিব ড. আহমেদ আবদুল কাদের, গণ-অধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন, ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি জাহিদুল ইসলাম, এনসিপি’র উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম, জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান ও সাবেক এমপি ড. এএইচএম হামিদুর রহমান আযাদ, নেজামে ইসলামের মহাসচিব মুসা বিন ইযহার, ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমীর নূরুল ইসলাম বুলবুল, উত্তরের আমীর সেলিম উদ্দিন প্রমুখ। সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এড. এহসানুল মাহবুব জুবায়ের, কেন্দ্রীয় প্রচার ও মিডিয়া বিভাগের সেক্রেটারি এড. মতিউর রহমান আকন্দ, ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ ও  উত্তরের সেক্রেটারি ড. রেজাউল করিমের যৌথ পরিচালনায় জাতীয় সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন নায়েবে আমীর, সাবেক এমপি মাওলানা আনম শামসুল ইসলাম, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এটিএম মা’ছুম, মাওলানা আবদুল হালিম, এড. মোয়াযযম হোসাইন হেলাল, মাওলানা মুহাম্মাদ শাহজাহান ও কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য সাইফুল আলম খান মিলন, আবদুর রব, অধ্যক্ষ মো. শাহাবুদ্দিন, অধ্যক্ষ মো. ইজ্জত উল্লাহ, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য মোবারক হোসাইন প্রমুখ।

জামায়াতের নির্বাহী পরিষদের সদস্য এটি এম আজহারুল ইসলাম বলেন, আমাকে ফাঁসির মঞ্চে ঝুলানোর সমস্ত প্রচেষ্টা চালানো হয়েছিল। আল্লাহর অশেষ রহমতে আমি জেল থেকে মুক্ত হয়েছি। ফাঁসির মঞ্চ থেকে রাজনীতির মঞ্চে আজ হাজির হয়েছি। জুডিশিয়াল কিলিংয়ের মাধ্যমে আমাদের ১০ জনকে এবং ৫ জনকে বিনা চিকিৎসায় কারাগারে হত্যা করা হয়েছে। যারা এ সকল হত্যাকাণ্ডে জড়িত ছিলেন তাদের বিচার করতে হবে। নির্যাতন করে ইসলামকে নিশ্চিহ্ন করা যায় না। কোনো শক্তি জামায়াতে ইসলামীকে দাবিয়ে রাখতে পারেনি। শেখ হাসিনা পালিয়ে গেছে, কিন্তু আমাদের নেতাকর্মীরা পালিয়ে যায় না। মীর কাশেম আলী রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে বাংলাদেশে এসেছিল তাকে ফাঁসি দেয়া হয়েছিল। আমাদের দু’জন মন্ত্রী ছিল, ৫ বছরের শাসন আমলে তাদের বিরুদ্ধে একটি পয়সার দুর্নীতির অভিযোগ দিতে পারেনি।

জামায়াতের নায়েবে আমীর ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, এদেশে আওয়ামী লীগের পুনর্বাসনের কোনো সুযোগ নেই। যারা পুরনো কায়দায় এ দেশে শাসন করতে চায়, জনগণ তাদের সে সুযোগ দেবে না। তিনি আরও বলেন, প্রত্যেকে বলে সংস্কার মানি কিন্তু ঐকমত্য কমিশনের মিটিংয়ে বলে মানি না। পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন হলে ভোট সুষ্ঠু হবে। আপনারা কি নির্বাচনে জিতবেন নাকি আগামী পার্লামেন্ট দখল করবেন? আগামী নির্বাচনে জনগণ যাদের ভোট দিবে তারা জিতবে। জিয়াউর রহমান ১৯৭৭ সালে দু’টি অধ্যাদেশ দিয়েছিলেন, তখন গণভোট দিয়েছিলেন। এজন্য জুলাই সনদ অধ্যাদেশের মাধ্যমে দিতে হবে।

সকাল ১০টার দিকে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্যদিয়ে সমাবেশ শুরু হলেও মূল পর্ব শুরু হয় বেলা ২টায়। তবে সকাল থেকেই সোহ্‌রাওয়ার্দী উদ্যান অভিমুখে মানুষের ঢল নামে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পুরো উদ্যান কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়। এ ছাড়া উদ্যানের চারপাশ ছিল লোকে লোকারণ্য। এতে উদ্যানসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সড়কে তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়। শনিবারের সমাবেশে অংশ নিতে শুক্রবার রাতে রাজধানীর বাইরের জেলা থেকে আসা নেতাকর্মী ও সমর্থকরা সমাবেশ স্থলে জড়ো হতে থাকেন।

অন্য দলের নেতারা যা বললেন: 
জামায়াতে ইসলামীর জাতীয় মহাসমাবেশে এনসিপি, ইসলামী আন্দোলন ও গণঅধিকার পরিষদসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ও ইসলামপন্থি দলের নেতারা অংশগ্রহণ করেছেন। এ সময় বক্তারা জামায়াতের ৭ দফার সঙ্গে একমত পোষণ করেন। পাশাপাশি পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন, চাঁদাবাজি-সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো এবং জুলাই গণহত্যার বিচারের দাবি জানান।

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম বলেন, অভ্যুত্থানের এক বছর পেরিয়ে গেলেও বাংলাদেশে মুজিবাদিদের ষড়যন্ত্র শেষ হয়নি। বাংলাদেশে এখনো মুজিববাদিরা সক্রিয় রয়েছে। বিশেষ করে অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিকভাবে মুজিববাদের কোমর ভেঙে দিতে হবে। আমাদের মধ্যে রাজনৈতিক মতবিরোধ থাকতে পারে, কিন্ত মুজিববাদ ও স্বৈরাচারের প্রশ্নে অভ্যুত্থানের সকল শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশে ভারতপন্থিরা সক্রিয় হচ্ছে। এ বাংলাদেশে আর ভারতীয় আধিপত্যের জায়গা হবে না। জুলাই অভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশে খুনি হাসিনার বিচার হতেই হবে। বিচারবিভাগ এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কোনো দলের পক্ষ হয়ে কাজ করুক এটা আমরা চাই না। কেউ যদি চাঁদাবাজি, সিন্ডিকেট, দখলদারিত্ব করে তাদের বিরুদ্ধে আমরা কথা বলবো, কিন্তু ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে আমরা  ঐক্যবদ্ধভাবে লড়াই চালিয়ে যাবো।

এনসিপি’র সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেন, শুধু ক্ষমতার পালাবদলের জন্য ২৪ এর অভ্যুত্থান হয়নি। ক্ষমতার ভারসাম্য নিশ্চিত করে নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণের জন্য আমরা অভ্যুত্থানে অংশ নিয়েছিলাম। এ দেশে গণতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠা করতে হলে মৌলিক সংস্কার করতে হবে, পাশাপাশি পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন দিতে হবে। যারা পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন চায় না তারা জাতির সঙ্গে প্রতারণা করছে। তিনি আরও বলেন, বিগত সরকার ইসলাম পালনের ন্যূনতম অধিকার এদেশের মানুষকে দেয়নি। বাংলাদেশে ভবিষ্যতে যেন ফ্যাসিবাদ জন্ম নিতে না পারে, সেজন্য তাদের দোসরদের বিচার করতে হবে।

খেলাফত মজলিসের মহাসচিব ড. আহমদ আব্দুল কাদের বলেন, আজকের সমাবেশ প্রমাণ করেছে এ দেশের ইসলামপন্থিরা বেঁচে আছে। জুলাই পরবর্তীতে বাংলাদেশের জনগণের মধ্যে যে আশা তৈরি হয়েছে, সে আশা আমরা বাস্তবায়ন চাই। ফ্যাসিবাদ ও তাদের দোসরদের অবিলম্বে দৃশ্যমান বিচারের দাবি জানান তিনি।

জাতীয় হিন্দু মহাজোটের মহাসচিব গোবিন্দ চন্দ্র প্রামাণিক বলেন, আমরা দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগের কাছে রাজনৈতিকভাবে বন্দি ছিলাম। বিগত সময়ে যারা এদেশ শাসন করেছে তারা হিন্দু সম্প্রদায়ের সঙ্গে প্রতারণা করেছে। আওয়ামী লীগ সরকার অন্যায়ভাবে জামায়াতের শীর্ষ নেতৃবৃন্দকে হত্যা করেছে। ২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় আসার পরে ভোলার একটা উপজেলায় ২০০ জন হিন্দু নারীকে ধর্ষণ করা হয়েছিল, তারা এসব ন্যক্কারজনক ঘটনার বিচার করেনি।

ডা. ফয়জুল হক বলেন, আগামীর বাংলাদেশে চাঁদাবাজি, সন্ত্রাস ও পাথর দিয়ে মানুষ হত্যা মেনে নেয়া হবে না। রাজাকার ট্যাগ লাগানোর দিন শেষ হয়ে গেছে। আগামীতে যারা ইসলামের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর প্রতিবাদ করা হবে।

হেফাজতের নায়েবে আমীর মহিউদ্দিন রব্বানী বলেন, ফ্যাসিস্টদের এ দেশের জনগণ চিরতরে বিদায় করেছে। সকল দলমতকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে, এর কোনো বিকল্প নেই। তা না হলে ফ্যাসিস্ট পুনরায় ফিরবে, তাহলে এর দায় দায়িত্ব আপনাদের ওপর বর্তাবে। জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশন আমরা মানবো না। গাজায় কি তারা মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছে? ইসলামী আন্দোলনের প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন বলেন, এদেশের মানুষ পরিবর্তন চায়, একটি সুখী সমৃদ্ধ বাংলাদেশ চায়। এ দেশে বিগত সময়ে অনেক শাসন হয়েছে, কিন্তু ফ্যাসিবাদ থেকে এদেশের মানুষ রক্ষা পায়নি। আওয়ামী লীগ একটা গজব, আজাব, টাকা পাচারকারী, গণহত্যাকারীর নাম। ঐক্য না থাকলে আবার ফ্যাসিস্ট ফিরে আসবে, তা না হলে পিঠের চামড়া থাকবে না।

গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর বলেন, গণ-অভ্যুত্থানে আমাদের অংশীদারদের মধ্যে একটি অংশ জালিম হয়ে উঠছে। আমরা তাদের বলতে চাই, এমন হলে শেখ হাসিনার মতো আল্লাহ আপনাদের ছাড় দিবেন না। মৌলিক সংস্কার না করে নির্বাচন করা হবে না। তিনি আরও বলেন নির্বাচনে নিরপেক্ষ প্রশাসন ও লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করতে হবে। জনগণের ভোগান্তি নিরসনে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে অবিলম্বে দিতে হবে। ডাকসুসহ সকল ছাত্র সংসদের নির্বাচন দিতে হবে। জুলাই মাসের মধ্যে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন করতে হবে। অন্যথায় আমরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে এ সোহ্‌রাওয়ার্দী উদ্যানে জুলাই সনদ ঘোষণা করবো।

জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার রাশেদ রহমান বলেন, ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা ছাত্রদের রাজাকার বলার পর তিনি দিল্লি পালাতে বাধ্য হয়েছেন। এখন নতুন করে আবার এক দলের পক্ষ থেকে রাজাকার বলা হচ্ছে। ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিতে হবে, আল্লাহ ছাড় দেন, কিন্তু ছেড়ে দেন না।

Exit mobile version