Site icon The Bangladesh Chronicle

সৈনিকের চোখে চার দিনের ইন্দো-পাক যুদ্ধ

Daily Nayadaganta

ব্রিটিশ উপনিবেশ থেকে স্বাধীনতা পেয়ে ভারত ও পাকিস্তান দু’টি স্বাধীন রাষ্ট্রের অস্তিত্ব স্বীকৃত হওয়ার পর থেকেই তাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব-সঙ্ঘাত ও যুদ্ধ লেগেই আছে। বিভিন্ন সময়ে চারবার তারা খণ্ডযুদ্ধে অবতীর্ণ হয়। ২০২৫ সালেও দেশ দু’টি চার দিনের এক নতুন ধরনের ‘উচ্চ তীব্রতার’ যুদ্ধে মুখোমুখি হয়েছিল।

সামরিক শক্তির অনুপাত : ফোর্স রেশিও বা শক্তির অনুপাতে ভারত পাকিস্তানের চেয়ে অনেক এগিয়ে রয়েছে। ভারতের ১৫ লাখ সৈন্যের মধ্যে ১০ লাখ সেনাবাহিনী, এক লাখ ২৭ হাজার বিমানবাহিনী এবং ২৮ হাজার সৈন্য রয়েছে নৌবাহিনীতে। ২০২৪ সালে তাদের প্রতিরক্ষা ব্যয় ছিল ৭৭ বিলিয়ন ডলার। অন্য দিকে, পাকিস্তানের রয়েছে ছয় লাখ ৬০ হাজার সৈন্য। এর মধ্যে পাঁচ লাখ ৬০ হাজার সেনাবাহিনী, ৭০ হাজার বিমানবাহিনী এবং ২৩ হাজার ৮০০ সদস্য রয়েছে নৌবাহিনীতে। আর গত বছর তাদের প্রতিরক্ষা বাজেট ছিল আট বিলিয়ন ডলারের কিছু কম অর্থাৎ ভারতের এক-দশমাংশ। অস্ত্র মজুদেও ভারত এগিয়ে রয়েছে। ভারতের তিন হাজার ৭০০ মেইন ব্যাটেল ট্যাংক এবং পাকিস্তানের রয়েছে আড়াই হাজারটি। ভারতের যুদ্ধ বিমানগুলোর মধ্যে রয়েছে রাফায়েল, সুখোই এসইউ-৩০, মিগ-২৯, ২৭ ও ২১ এবং মিরেজ-২০০০। আর পাকিস্তানের রয়েছে জে-১০ সি, জেএফ-১৭, এফ-১৬, মিরেজ-৩ এস এবং মিরেজ-৫ এস বিমান। অবশ্য পারমাণবিক অস্ত্রের পরিমাণ দুই দেশেরই প্রায় দেড়শত করে মজুদ রয়েছে (দৈনিক আমার দেশ, ১২ মে ২০২৫)। কিন্তু সাইবার সক্ষমতায় পাকিস্তান অনেক এগিয়ে রয়েছে বলে সূত্রে প্রকাশ।

যুদ্ধের ধারাবাহিক ধাপগুলো : মোট ১৮ দিন যাবত এই সাম্প্রতিক সংঘর্ষ সংঘটিত হয়েছে। যুদ্ধের বয়ান তৈরি থেকে শুরু করে পাকিস্তানের পাল্টা আক্রমণ পর্যন্ত মোট আটটি ধাপে যুদ্ধ হয়েছে।

বয়ান তৈরি : প্রতিটি যুদ্ধেই একটি ন্যারেটিভ বা বয়ান দিয়ে শুরু করতে হয়। গত ২২ এপ্রিল ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মিরের পহেলগামে সন্ত্রাসীরা বন্দুক হামলা চালিয়ে ২৬ জন পর্যটককে হত্যা করে। এই হত্যাকাণ্ডের পরপরই ভারত পাকিস্তানকে দায়ী করে ভয়াবহ প্রতিশোধের ঘোষণা দেয়। পাকিস্তান অভিযোগ অস্বীকার করে এবং নিরপেক্ষ তদন্তের আহ্বান জানায়। কিন্তু ভারত একতরফা পাকিস্তানকে দোষারোপ করে বিভিন্ন প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপ নিয়ে যুদ্ধের উসকানি দিতে থাকে।

উসকানিমূলক তৎপরতা : পহেলগাম হত্যাকাণ্ডের প্রতিশোধ নেয়ার ঘোষণা দিয়ে ভারত পাকিস্তানের কূটনীতিক প্রত্যাহার, পাকিস্তানের নাগরিকদের বহিষ্কার, মিডিয়া ও ইউটিউব নিষিদ্ধকরণ এবং বিভিন্ন চুক্তি বাতিলকরণ ইত্যাদি সব ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করতে থাকে। পাকিস্তানও পাল্টা পদক্ষেপ নিতে থাকে। এই প্রক্রিয়ায় ভারত একতরফাভাবে সিন্ধু পানি চুক্তি স্থগিতের ঘোষণা দেয়। এটি ছিল ভারতের সবচেয়ে বড় যুদ্ধ-উসকানি। পাকিস্তানের কৃষির ৮০ শতাংশই সিন্ধুর পানি নির্ভর। ফলে এই চুক্তি বাতিল পাকিস্তানের জন্য জীবন-মরণ সমস্যা সৃষ্টির সম্ভাবনা দেখা দেয়।

সীমান্ত সংঘর্ষ : ২২ এপ্রিল রাত থেকেই দুই দেশের স্থলবাহিনী ‘নিয়ন্ত্রণরেখা’ বরাবর প্রতি রাতেই নিজেদের মধ্যে গুলিবিনিময় করতে থাকে। এসব গোলাগুলিতে উল্লেখযোগ্য ক্ষয়ক্ষতির খবর না থাকলেও প্রতি রাতেই এই সীমান্ত সংঘর্ষ চলতে থাকে।

অপারেশন ‘সিঁদুর’ : ৬ মে গভীর রাতে ভারতীয় বিমানবাহিনী পাকিস্তানের পাঞ্জাব ও কাশ্মিরের ৯টি স্থানে ২৪টি ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়। এর আগে পাকিস্তানি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ঘোষণা দিয়েছিলেন ৩৬ ঘণ্টার মধ্যেই ভারতীয় বাহিনী আক্রমণ করবে। একবারে ৩৬ ঘণ্টা না হলেও মোটামুটি ৭২ ঘণ্টার মধ্যেই হামলার ঘটনা ঘটে। অর্থাৎ পাকিস্তানের ‘রিয়েল টাইম’ ইন্টেলিজেন্স বা ‘প্রকৃত সময়’ তথ্য প্রক্রিয়া অত্যন্ত কার্যকরী ছিল। ফলে পাক বিমানবাহিনী ভারতের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পাঁচ মিনিটের মধ্যেই সক্রিয় হয় এবং প্রতিরক্ষা যুদ্ধ শুরু করে। ভারতের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় পাকিস্তানের মসজিদসহ কয়েকটি বেসামরিক স্থাপনা, বাড়িঘর ধ্বংস হয় এবং ৩১ জন বেসামরিক মানুষ নিহত হয়। ভারত এটিকে জঙ্গি আস্তানা ধ্বংসের ন্যারেটিভ দেয়। কিন্তু আমেরিকাসহ পশ্চিমা বিশ্ব ভারতের জঙ্গি বয়ানের পক্ষে কোনো সাড়াই দেয়নি। অন্য দিকে পাকিস্তান ভারতের সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে পাল্টা আঘাত হানে তীব্র সাহসিকতা এবং দ্রুততার সাথে। লক্ষণীয় যে, ভারতের জঙ্গি বিমানগুলো পাক আকাশসীমা লঙ্ঘন না করেই আক্রমণ চালিয়েছিল। কিন্তু পাক বিমানবাহিনী অত্যন্ত ক্ষিপ্রতার সাথে চীনা জে-১০ সি বিমান দিয়ে পাল্টা আক্রমণ চালিয়ে ভারতের তিনটি বিশ্ববিখ্যাত ‘রাফায়েল’ বিমানসহ পাঁচটি যুদ্ধ বিমান ভারতের আকাশেই ধ্বংস করে দেয়। একই সাথে পাক সেনারা নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর ভারতের একটি ব্রিগেড এবং একটি ব্যাটালিয়ন সদর দফতর ধ্বংস সাধন করে। এ সময় স্মরণকালের ভয়াবহ বিমান ‘ডগ ফাইট’ হয়। চীনা জে-১০ সির শ্রেষ্ঠত্ব এবং পাক বৈমানিকদের দক্ষতা ও সাহসিকতায় এই বিমানযুদ্ধে ভারত হতচকিত হয়ে পড়ে। অপারেশন ‘সিঁদুর’ মুখ থুবড়ে পড়ে। উল্লেখ্য যে, অভিযানের নাম সিঁদুুর দেয়া হয়েছিল হিন্দু মহিলাদের কপালের সিঁদুর সংস্কৃতি থেকে যেন উগ্র হিন্দুত্ববাদের ফায়দা হাসিল করা যায়। ভারত আরো একটি ‘ধর্মভিত্তিক’ ফায়দা তোলার জন্য একজন মুসলমান মহিলা কর্নেলকে মুখপাত্র হিসেবে হাজির করে এবং মিডিয়ায় তাকে ব্যাপকভাবে প্রচারের ব্যবস্থা করে। কিন্তু ভারতের সব চাণক্যনীতি এবং সামরিক কৌশলকে পাকিস্তানিরা তাৎক্ষণিক দ্রুত পাল্টা আক্রমণ চালিয়ে ব্যর্থ করে দেয়।

ভারতের মিডিয়া অভিযান : ভারত একই সাথে ব্যাপক মিডিয়া আক্রমণ শুরু করে। ১৯৯৯ সালের কারগিল যুদ্ধের সময় ভারত মিডিয়া অভিযানে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ব্যাপক সাফল্য পেয়েছিল। কিন্তু এবার তা বুমেরাং হয়েছে। কারণ গত ৮-৯ মাস যাবত ভারত বাংলাদেশে তাদের তাঁবেদার আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর লাগাতারভাবে বাংলাদেশবিরোধী মিথ্যা তথ্য বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে আস্থার সঙ্কটে পড়েছিল। তারা অপারেশন ‘সিঁদুুরের’ পর একইভাবে ভারতীয় বিমানবাহিনীর ভুয়া অসামান্য সাফল্যগাথা প্রচার চালিয়ে যাচ্ছিল। কিন্তু বৈশ্বিক নির্ভরযোগ্য মিডিয়ায় বিশ্ববাসী সঠিক তথ্য পেয়ে যায়। তবে ভারতের উগ্র জনগোষ্ঠী ভারতের মিডিয়ার মিথ্যা সংবাদে বিভ্রান্ত হয় এবং বিশাল বিজয়ের আনন্দে ভাসতে থাকে। কিন্তু ভারতীয় সরকার ও সশস্ত্রবাহিনী তাদের বিপর্যয় বুঝতে পেরেও যুদ্ধ চালিয়ে যেতে উগ্র গোষ্ঠীর চাপে পড়ে যায়। অথচ ভারতীয় প্রজ্ঞাবান কয়েকজন সামরিক নেতৃত্ব এ বিষয়টি আগেই অনুধাবন করে যুদ্ধের ব্যাপারে দ্বিমত পোষণ করেছিলেন। ফলে স্বয়ং ভারতের সশস্ত্র বাহিনীর নেতৃত্বের মধ্যেই ঐক্যের অভাব ছিল বলে প্রতীয়মান হয়।

অপারেশন ‘বুনইয়ানুম মারসুস’ : পাকিস্তান অত্যন্ত ধৈর্য ও সংযমের সাথে পুরো পরিস্থিতি মোকাবেলা করছিল। অপারেশন ‘সিঁদুরের’ প্রতিউত্তরে তারা অত্যন্ত ক্ষিপ্র এবং ভয়ঙ্কর প্রতিরক্ষা যুদ্ধ করে ভারতীয় আক্রমণের জবাব দেয়। সেই সাথে পাল্টা আক্রমণের জন্য প্রস্তুতি নিতে থাকে। ভারতের সিন্ধু চুক্তি বাতিলকে পুরো পাকিস্তানবাসী জীবন-মরণ সমস্যা হিসেবে দেখে এবং ঐক্যবদ্ধ হয়ে পড়ে। রাতের গভীরে বেসামরিক লক্ষ্যবস্তুতে আক্রমণ চালিয়ে ভারত ঘুমন্ত নারী-শিশু হত্যা করায় তাদের মধ্যে প্রতিশোধের আগুন জ্বলে উঠে। ফলে পাকিস্তান পরিপূর্ণ প্রস্তুতি নিয়ে ১০ মে সকালে ভারতের বিভিন্ন সামরিক স্থাপনায় ব্যাপক হামলা চালায়। জেএফ-১৭ বিমান দিয়ে ফাতাহ-১, ফাতাহ-২, ফাতাহ-৩ এবং বাবর ক্রইজ মিসাইল আঘাত হানে। এসব হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র ভারতের এস-৪০০ আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এবং ‘ব্রহ্মোস’ নামক ক্ষেপণাস্ত্র মজুদগারে ব্যাপক ক্ষতি সাধন করে।

সাইবার ও ড্রোন যুদ্ধ : পাকিস্তানের সাইবার আক্রমণ এবং ড্রোন যুদ্ধ ছিল অত্যন্ত ফলপ্রসূ। অপারেশন ‘সিঁদুরের’ মোকাবেলায় এবং পরবর্তীতে অপারেশন ‘বুনইয়ানুম মারসুস’ আক্রমণ শুরুর প্রাক্কালে পাকিস্তান সাইবার জ্যামিং সৃষ্টি করে ভারতীয় বিমানগুলোকে অন্ধ করে দিয়েছিল। সেই সাথে ভারতের পাওয়ার গ্রিড, বিজেপির ওয়েবসাইট ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ সিস্টেমগুলো অবস করে দিতে সক্ষম হয়েছিল পাকিস্তান। এই সময় ইতিহাসের ভয়াবহ ড্রোন যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছিল দুই দেশ। উভয় দেশের প্রায় তিন শতাধিক ড্রোন এই চার দিনের যুদ্ধে ‘মোরগ লড়াইয়ে’ লিপ্ত হয়েছিল।

পাকিস্তানের ‘পারমাণবিক হুমকি’ কৌশল : পাকিস্তানের একটি বড় কৌশল ছিল সংঘর্ষের শুরু থেকে পারমাণবিক হামলার হুমকি দেয়া। ভারতের একের পর এক আগ্রাসী তৎপরতায় পাকিস্তান সামরিক প্রস্তুতি নেয়। সেই সাথে পারমাণবিক যুদ্ধের প্রস্তুতির কথা প্রচার করে মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধ পরিচালনা করেছে। এতে সারাবিশ্ব আতঙ্কিত হয়ে পড়ে এবং এই পরিস্থিতির জন্য ভারতের উসকানিকেই দায়ী করছিল। ফলে ভারত সন্ত্রাসী রাষ্ট্র ইসরাইল ছাড়া আর কোনো দেশের দৃশ্যমান সমর্থন থেকে বঞ্চিত হয়। পশ্চিমারা ছিল একেবারেই নির্বিকার। অন্য দিকে চীনসহ বেশ কিছু দেশ পাকিস্তানকে সমর্থন দিয়েছিল। ফলে কৌশলগতভাবে ভারত কোণঠাসা হয়ে পড়েছিল।

মার্কিন হস্তক্ষেপ : চার দিনের যুদ্ধের শেষ ধাপে পাক ‘বুনইয়ানুম মারসুস’ অভিযানের ভয়াবহতার গোয়েন্দা তথ্য মার্কিন মুলুকে পৌঁছে যায়। মার্কিন নেতৃত্ব খুব দ্রুতই তাদের এশীয় মিত্র ভারতের সম্ভাব্য চরম বিপর্যস্ত অবস্থা অনুধাবন করতে সক্ষম হয়। অন্য দিকে ভারতও যুক্তরাষ্ট্রকে যুদ্ধ বন্ধের ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ জানায় (আমার দেশ, ২১ মে ২০২৫)। ফলে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প পাক-ভারতের দুই প্রধানমন্ত্রীকেই যুদ্ধ থামাতে বলেন। অন্য দিকে পাকিস্তান যথেষ্ট প্রতিশোধ নেয়া শেষ এবং মুখ রক্ষা হয়েছে বুঝে যুদ্ধ থামিয়ে দেয়।

যুদ্ধবিদ্যায় কী শিক্ষা রেখে গেল : চার দিনের পাক-ভারত যুদ্ধ খুব সংক্ষিপ্ত কিন্তু অত্যন্ত ‘উচ্চ তীব্রতার’ যুদ্ধ হয়েছে। ব্যাপক হতাহত না হলেও এই যুদ্ধের বৈশিষ্ট্য এবং আধুনিকতা সামরিক বিজ্ঞান ও কৌশলে অনেক অভিনবত্ব রেখে গেছে।

ক. সর্বপ্রথম শিক্ষা সেই পুরনো যুদ্ধনীতি পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করেছে। যেটি হলো যৌক্তিক কারণ। ভারতের পক্ষে যুদ্ধের কারণটি ছিল অপেক্ষাকৃত দুর্বল। কিন্তু পাকিস্তানের জন্য সিন্ধুর পানি জীবন-মরণ সমস্যা। তদুপরি তারা আগে আক্রান্ত হওয়ায় তাদের জাতীয় ঐক্য অত্যন্ত মজবুত ছিল।

খ. সম্ভাব্য প্রতিপক্ষ বিবেচনায় রেখে সার্বক্ষণিক যুদ্ধ প্রস্তুতি নেয়ায় পাকিস্তানকে ভারতের হঠাৎ আক্রমণের মুখে পিছু হটতে হয়নি; বরং আক্রমণকারী ভারতকে প্রতিআক্রমণে তারা হকচকিত করে দিয়েছে। ১৯৯৯ সালে কারগিলে পিছু হটার পর পাকিস্তান তাদের কৌশলকে নতুনভাবে সাজিয়েছে। ভারতের পশ্চিমা অস্ত্রসম্ভার সংগ্রহের বিপরীতে পাকিস্তান ততোধিক শাণিত চীনা অস্ত্র মজুদ করেছে।

গ. ধৈর্য এবং সংযমের সাথে প্রতিআক্রমণের উপযুক্ত সময়ের জন্য অপেক্ষা করেছে পাকিস্তান। নিজেরা আক্রান্ত হওয়ার পর বৈশ্বিক সহমর্মিতা অর্জন করে এবং ব্যাপকভাবে হামলা চালিয়ে ভারতকে পর্যুদস্ত করেছে।

ঘ. ‘প্রকৃত সময়’ গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহের দ্বারা পাকিস্তান আগে থেকেই প্রস্তুত ছিল। ফলে হঠাৎ রাতের গভীরে ভারতের আক্রমণের দ্বিগুণ দক্ষতা ও ক্ষিপ্রতার সাথে জবাব দিয়ে উল্টো ভারতকেই কিংকর্তব্যবিমূঢ় করে ফেলেছে।

ঙ. পাকিস্তান পাল্টা আক্রমণে ১০ মে সকালে ভারতের অত্যন্ত মূল্যবান দুটো সামরিক লক্ষ্যবস্তুর ক্ষতি করে শক্তির মেরুদণ্ড ক্ষয় করে দিয়েছিল। ওই আক্রমণে ভারতের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এস-৪০০ এবং ‘ব্রহ্মোস’ ক্ষেপণাস্ত্র মজুদাগারে সফল আক্রমণে সমর্থ হয়েছিল পাকিস্তান।

চ. কৌশলগত পাঁয়তারা পাকিস্তানকে এই যুদ্ধে ভারতকে কুপোকাত করতে সহায়ক শক্তি হিসেবে কাজ করেছে। পাকিস্তান সংঘর্ষ শুরুর প্রথম দিন থেকেই পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের হুমকি দিয়ে আসছিল। এতে একটি বৈশ্বিক আতঙ্ক দেখা দিয়েছিল। ফলে পাকিস্তানের পাল্টা আক্রমণ শুরুর সাথে সাথেই পশ্চিমারা পারমাণবিক যুদ্ধের আশঙ্কায় শঙ্কিত হয়ে পড়ে এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সক্রিয় হন।

ছ. ‘সাইবার’ শ্রেষ্ঠত্ব আধুনিক যুদ্ধে জয়লাভের একটি বড় উপাদান। এই চার দিনের যুদ্ধে পাকিস্তান সাইবার আক্রমণের মাধ্যমেই ভারতকে বিপর্যস্ত করতে সমর্থ হয়েছে। ইলেকট্র্রনিক জ্যামিংয়ের মাধ্যমে ভারতের জঙ্গি বিমানগুলোকে অন্ধ করে ফেলা এবং ভারতের পাওয়ার গ্রিডসহ, বিভিন্ন ওয়েবসাইট নিষ্ক্রিয় করে ফেলার মাধ্যমে ভারত এই যুদ্ধে পেছনে পড়ে গিয়েছিল বলে বিশ্লেষকরা মনে করেন।

লেখক : নিরাপত্তা বিশ্লেষক
Email : 
maksud2648@yahoo.com

Exit mobile version