Site icon The Bangladesh Chronicle

সেন্টমার্টিন পরাশক্তি আমেরিকা-চীনের কাছে কেন এত গুরত্বপূর্ণ!

সেন্টমার্টিন পরাশক্তি আমেরিকা-চীনের কাছে কেন এত গুরত্বপূর্ণ!

বিগত স্বৈরাচার শেখ হাসিনার আমল থেকেই গুঞ্জন রটে সেন্টমার্টিনে ঘাঁটি গাড়বে আমেরিকা। কিন্তু কেন সেন্টমার্টিন পরাশক্তিগুলোর কাছে এত জনপ্রিয়?জানা গেল কারণ?

আমেরিকা যাকে বলা হয় বিশ্ব মোড়ল অর্থাৎ বিশ্বে যা কিছু হচ্ছে তার সবই অথবা সব না হলেও বেশিরভাগই হচ্ছে আমেরিকার মদদে বা মৌন সম্মতিতে ।তাদের আজকের এই অবস্থান ওভারনাইট তৈরি হয়নি। এই অবস্থায় আসতে বহু সময় প্রচেষ্টা সুনির্দিষ্ট প্ল্যান, প্রচণ্ড ইচ্ছাশক্তি, কঠোর পরিশ্রম আর ভাগ্যের প্রয়োজন হয়েছে। সবচেয়ে বেশি যেটি সহায়তা করেছে তা হল আমেরিকার ভৌগোলিক অবস্থান।

ভৌগোলিকভাবে আমেরিকার একদিকে আটলান্টিক আরেক দিকে প্রশান্ত মহাসাগর, যার ফলে মহাসাগরের মতো এত বিশাল দুর্গম জলপথ পাড়ি দিয়ে বহিরাগত কোনও শক্তি স্বাধীনতার পরে তাদের উপর কখনই বলপ্রয়োগ করতে আসেনি অথবা পারেনি। কিন্তু আমেরিকা ঠিকই সারা বিশ্বের বহু বছর ধরেই ছড়ি ঘুরিয়ে দাপট দেখিয়ে আসছে।

বিশেষ করে ইউরোপ ধ্বংস হওয়ার সুযোগে বিশ্বযুদ্ধে অক্ষত ও চাঙ্গা অর্থনীতির দেশ আমেরিকা বিশ্ব সিংহাসন দখল করে নেয়। যুদ্ধের প্রাথমিক ভাবে নিরপেক্ষ থাকলেও কিছুদিন পর তারা কিছু কৌশলগত ভূমিকা পালন করে।

”ক্যাশ অ্যান্ড ক্যারি নীতি” নামে মিত্রশক্তিকে অর্থের বিনিময়ে অস্ত্র সরবরাহ এবং ল্যান্ড লিস্ট আইন নামে সামরিক সহায়তা করে, যা আমেরিকাকে ইউরোপের উপর কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠায় সহায়তা করে। যুদ্ধ পরবর্তী সময়ে তারা প্রথমে ইউরোপকে আর্থিক সহায়তা দেয় এবং পরবর্তী কোনও যুদ্ধ পরিস্থিতি তৈরি হলে সামরিক প্রতিরক্ষা হিসেবে ন্যাটো নামক সামরিক সংগঠন প্রতিষ্ঠা করে। যার মূল চালক আমেরিকা।

এরপর ধীরে ধীরে তারা তাদের সামরিক শক্তিকে সম্প্রসারণ করতে সারা দুনিয়ার গুরুত্বপূর্ণ জায়গাগুলোতে সামরিক ঘাঁটি তৈরির কাজ হাতে নেয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ব্রিটিশদেরকে পঞ্চাশটি যুদ্ধজাহাজ ধার দেওয়ার বিনিময়ে আমেরিকা ব্রিটিশদের সারা বিশ্বে প্রতিষ্ঠিত সব নৌ ঘাঁটিতে প্রবেশ অধিকার নেয়। ফলে অনেকটা রেডি টু ইট এর মতো করে সহজেই ব্রিটিশদের ঘাঁটিগুলোতে তাদের সামরিক শক্তি প্রতিষ্ঠা করে বিশ্ব মোড়ল হওয়ার দৌড়ে আরও অনেক বেশি এগিয়ে যায় আমেরিকা।

এ ভাবেই সারা বিশ্বের প্রায় প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চলে এই মার্কিনিদের নৌ ও সামরিক ঘাঁটি প্রতিস্থাপিত হলেও দক্ষিণ এশিয়ার পিক পয়েন্ট বঙ্গোপসাগরে তাঁদের কোন নৌ এবং সামরিক ঘাঁটি নেই। একারণেই সাম্প্রতিক কালে বিশেষ করে বিগত সরকার শেখ হাসিনার সময়ে বারবার সেন্ট মার্টিন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। সেন্টমার্টিনে আমেরিকার ঘাঁটি তৈরির অপচেষ্টা, গুঞ্জনও ঘনীভূত হয় ।

বলা বাহুল্য, সেন্টমার্টিনে আমেরিকা ঘাঁটি তৈরি করতে পারলে তাদের সবচেয়ে বড় প্রতিদ্বন্দ্বী এবং বিশ্বের উদীয়মান পরাশক্তি চীনকে টেক্কা দেওয়া খুবই সহজ হয়ে যাবে। পাশাপাশি আরেক উদীয়মান পরাশক্তি ভারতকেও নজরে রাখা যাবে।

এদিকে চীন মনে করে বিশ্বকে নিয়ন্ত্রণ করতে হলে সামরিক শক্তির চেয়ে ভবিষ্যতে অর্থনৈতিক শক্তির বেশি প্রয়োজন হবে। ফলে তারা তাদের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করতে মেড ইন চায়না ও বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ নামে পলিসি গ্রহণ করেছেন।

মেড ইন চায়না এর আওতায় পণ্য উৎপাদন করবে আর বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের আওতায় সেগুলোকে সারা বিশ্বে রফতানি করবে। যেহেতু তাদের প্রচুর পরিমাণ উৎপাদন করতে হবে, সেহেতু তাদের প্রচুর বিদ্যুৎ শক্তির প্রয়োজন হয়।

চীনের নিজস্ব জ্বালানি শক্তি নেই বললেই চলে। ফলে জ্বালানির জন্য তাদেরকে আমদানির উপরে নির্ভর করতে হয়। আর এই জ্বালানি আমদানির প্রায় সবটাই আসে ইরান থেকে।ইরান থেকে তাদের এই জ্বালানি চীনে পৌঁছায় আরব সাগর ও বঙ্গোপসাগর দিয়ে আরব সাগর দিয়ে পাকিস্তান হয়ে কারাকোরাম পর্বতের নীচ দিয়ে তাঁরা দীর্ঘ পাইপলাইন তৈরি করেছে। অন্যদিকে বঙ্গোপসাগর হয়ে মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশ দিয়েও তাদের সুবিশাল পাইপলাইন রয়েছে। সুতরাং পরবর্তী বিশ্ব পরাশক্তি ও আমেরিকার সবচেয়ে বড় প্রতিদ্বন্দ্বী চীনকে প্রতিহত করতে বঙ্গোপসাগরে আমেরিকার আধিপত্য প্রতিষ্ঠা এখন অবশ্যম্ভাবী হয়ে পড়েছে।আর বঙ্গোপসাগরে আমেরিকার আধিপত্য স্থাপনের এখন সবচেয়ে বড় যে অনুষঙ্গের প্রয়োজন তা হল সেন্ট মার্টিন।

Exit mobile version