Site icon The Bangladesh Chronicle

সিঙ্গাপুরে সবচেয়ে বড় অ্যান্টি-মানি লন্ডারিং অপারেশন, বাজেয়াপ্ত ১ বিলিয়ন মূল্যের সম্পদ

মানবজমিন ডিজিটাল

(১০ ঘন্টা আগে) ১৬ আগস্ট ২০২৩, বুধবার, ১০:৩২ অপরাহ্ন

সর্বশেষ আপডেট: ১১:৫৮ অপরাহ্ন

দেশের  সবচেয়ে বড় অ্যান্টি-মানি লন্ডারিং অপারেশন বা অর্থ  তছরূপ সংক্রান্ত অভিযান চালাতে গিয়ে  প্রায় ১বিলিয়ন ডলার  মূল্যের সম্পদ বাজেয়াপ্ত করলো সিঙ্গাপুর পুলিশ ফোর্স (এসপিএফ)।  অভিযান চালানোর সময় একদল বিদেশীকে আটক করা হয়েছে। বিদেশিদের এই দলটি বিলাসবহুল বাংলোয় বসবাস করতো  এবং একাধিক গাড়ির মালিক ছিল  ।পুলিশ বলেছে যে তারা এই দলটির সঙ্গে অবৈধ কার্যকলাপের যোগসূত্র পেয়েছে।  যার মধ্যে রয়েছে সিঙ্গাপুরের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের  সন্দেহভাজন জাল নথি।   পুলিশ সন্দেহভাজনদের মধ্যে কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করতে একযোগে সিঙ্গাপুর জুড়ে বিলাসবহুল এপার্টমেন্টগুলিতে তল্লাশি চালায়।  যে এলাকায় অভিযান চালানো হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে ট্যাংলিন, বুকিত টিমাহ, অর্চার্ড রোড, সেন্টোসা এবং রিভার ভ্যালি।বুধবার রাতে এক নারীসহ ১০ জনকে গ্রেপ্তার করে মামলা রুজু করা হয়েছে। এদের গড় বয়স ৩১  থেকে ৪৪ এর মধ্যে।  অভিযুক্তরা  জালিয়াতি, অর্থ তছরূপের সঙ্গে  জড়িত বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। দলটির মধ্যে ১২  জন তদন্তে সহায়তা করছে,  আরও আটজন বর্তমানে পলাতক রয়েছে এবং তাদের ওয়ান্টেড তালিকায় রাখা হয়েছে।বুধবার এক বিবৃতিতে পুলিশ বলেছে যে   অপরাধ তদন্ত বিভাগ, বাণিজ্যিক বিষয়ক বিভাগ (সিএডি), স্পেশাল অপারেশন কমান্ড   এবং পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ মিলিয়ে মোট ৪০০ জন কর্মকর্তা বিষয়টির তদন্তের সঙ্গে জড়িত ।বিদেশী নাগরিকদের দলটি বিদেশে তাদের সংগঠিত অপরাধ কার্যক্রম থেকে অপরাধের অর্থ পাচারে জড়িত। সেইসঙ্গে অনলাইন জুয়া খেলার সাথেও  তাদের যোগসূত্র রয়েছে।বিভিন্ন  আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলিতে তাদের সন্দেহজনক লেনদেন দেখে গোয়েন্দাদের সন্দেহ হয়।

এরপর ব্যাপক তদন্তের মাধ্যমে পুলিশ তাদের শনাক্ত করেছে। 

বুধবার সন্ধ্যায়, সিঙ্গাপুরের মনিটারি অথরিটি (MAS ) বলেছে যে   তহবিল তছরূপ সংক্ৰান্ত মামলায় তদন্ত করতে  দেশের বাণিজ্যিক বিষয়ক বিভাগ  বা  CAD অনেক সহযোগিতা করছে। পাশাপাশি সন্দেহজনক নগদের  প্রবাহ, সম্পদ বা তহবিলের উত্সের সন্দেহজনক ডকুমেন্টেশন এবং প্রদত্ত তথ্যে অসঙ্গতি বা ফাঁকি দেওয়া আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলি STR দাখিল করেছে।  সিঙ্গাপুরের মনিটারি অথরিটি বলেছে যে  সন্দেহজনক  তহবিলগুলি চিহ্নিত করা হয়েছে, এবং আইনের লঙ্ঘন পাওয়া গেলে দৃঢ় ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে ।পুলিশ বলেছে যে ৯৪ টি সম্পত্তি এবং ৫০টি গাড়ির বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞার আদেশ জারি করা হয়েছে, যার মোট আনুমানিক মূল্য ৮১৫ মিলিয়নেরও বেশি এবং একাধিক অলঙ্কার , মদ ও মদের বোতল বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে । এই আদেশের অর্থ সন্দেহভাজন ব্যক্তিরা   সম্পত্তি এবং গাড়ি বিক্রি করতে পারবেন না।তদন্তের জন্য এবং সন্দেহভাজন অপরাধমূলক অর্থ স্থানান্তর রোধ করার জন্য পুলিশ ৩৫টিরও বেশি সম্পর্কিত ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট বাজেয়াপ্ত করেছে যার আনুমানিক মোট ব্যালেন্স ১১০ মিলিয়নেরও বেশি।

এছাড়াও জব্দ করা হয়েছে ২৩মিলিয়ন ডলারের বেশি নগদ, ২৫০টিরও বেশি বিলাসবহুল ব্যাগ এবং ঘড়ি, ১২০টিরও বেশি ইলেকট্রনিক ডিভাইস যেমন কম্পিউটার এবং মোবাইল ফোন, ২৭০টিরও বেশি গহনা, দুটি সোনার বার এবং ভার্চুয়াল সম্পদের তথ্য সহ ১১টি নথি।গ্রেপ্তার হওয়া বিদেশী নাগরিকদের মধ্যে একজন ৪০-বছর-বয়সী সাইপ্রিয়ট নাগরিক ছিলেন যিনি বুকিত তিমাহের ইওয়ার্ট পার্কে বিলাসবহুল আবাসনে  বসবাস করছিলেন  ।পুলিশ  অফিসাররা তাকে তার বেডরুম পর্যন্ত পৌঁছে গিয়েছিলো। বিপদ বুঝতে পেরে ওই ব্যক্তি আবাসনের দ্বিতীয় তলার বারান্দা থেকে লাফিয়ে পড়ে এবং আহত অবস্থায় একটি ড্রেনে লুকিয়ে পড়েছিল বলে অভিযোগ।তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। তার কাছে চীন এবং কম্বোডিয়া সহ একাধিক  বিদেশী পাসপোর্ট ছিল বলে অভিযোগ।পুলিশ ওই ব্যক্তির কাছ থেকে ২.১ মিলিয়ন ডলারের বেশি নগদ অর্থ জব্দ করেছে এবং ১১৮ মিলিয়ন ডলারের বেশি মূল্যের ১৩ টি সম্পত্তি এবং পাঁচটি গাড়ির ওপর  নিষেধাজ্ঞার আদেশ জারি করেছে।

CAD  ডিরেক্টর ডেভিড চিউ বলেন, সিঙ্গাপুরকে এই ধরনের অপরাধীদের হাত থেকে রক্ষা করতে  পুলিশ আইন প্রয়োগকারী সংস্থা এবং আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিটের সাথে কাজ করবে।তিনি বলেন: “সিঙ্গাপুরকে অপরাধীদের বা তাদের পরিবারের জন্য নিরাপদ আশ্রয়স্থল হিসেবে ব্যবহার করার সুযোগ দেয়া হবে না। এই অপরাধীদের প্রতি আমাদের বার্তা সহজ – আমরা যদি আপনাকে ধরতে পারি  আমরা গ্রেপ্তার করব। আমরা যদি আপনার  অবৈধ সম্পত্তি  খুঁজে পাই, আমরা সেগুলি বাজেয়াপ্ত করব। আমরা আমাদের আইন মেনে আপনার সাথে মোকাবিলা করব।” MAS-এর ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর হো হার্ন শিন বলেছেন যে ”সিঙ্গাপুর আন্তর্জাতিক অর্থ-পাচারের কেন্দ্র হয়ে উঠেছে ।এই মামলাটি  আমাদের দেখিয়ে দিয়েছে যে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলির  সতর্কতা এবং দ্রুত STR ফাইল করা আইন প্রয়োগকারী কর্তৃপক্ষকে অবৈধ কার্যকলাপ চালানোর জন্য সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের সনাক্ত করতে সাহায্য করেছে৷” সেইসঙ্গে শিন  এও বলেন যে , একটি বৈশ্বিক আর্থিক কেন্দ্র হিসাবে  সিঙ্গাপুরে ট্রান্সন্যাশনাল মানি-লন্ডারিং -এর ঝুঁকি রয়েছে।   এই ঝুঁকিগুলির বিরুদ্ধে দেশের  প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে আরো শক্তিশালী  এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলিকে এগিয়ে আসার  আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

সূত্র : straitstimes

Exit mobile version