Site icon The Bangladesh Chronicle

সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, সাবেক উপাচার্যসহ ৭ জনের সম্পৃক্ততা খতিয়ে দেখতে বলেছেন আদালত

রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ গত ১৬ জুলাই কোটা সংস্কার আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে তিনি নিহত হন

সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার আন্দোলনে রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ হত্যার ঘটনায় সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য হাসিবুর রশীদসহ সাতজনের বিরুদ্ধে হত্যাকাণ্ডে সম্পৃক্ততার অভিযোগ খতিয়ে দেখতে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তাকে বলেছেন আদালত।

সোমবার বিকেলে রংপুরের মহানগর তাজহাট আমলি আদালতের বিচারক মো. আসাদুজ্জামান বাদীর আবেদনটি বিবৃতি হিসেবে নিয়ে ও প্রাসঙ্গিকতা বিবেচনা করে তদন্ত করার আদেশ দেন।

রংপুরের জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পিপি আফতাব উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, বাদীপক্ষের আবেদন করা সাত ব্যক্তির বিরুদ্ধে করা আবেদন আদালত মঞ্জুর করেছেন।

রংপুর মহানগর আদালত সূত্রে জানা গেছে, ১৪ অক্টোবর সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, সাবেক উপাচার্য হাসিবুর রশীদসহ সাতজনের বিরুদ্ধে আবু সাঈদ হত্যাকাণ্ডে সম্পৃক্ততা খতিয়ে দেখার আবেদন করেন মামলার বাদী আবু সাঈদের বড় ভাই রমজান আলী।

রমজান আলী প্রথম আলোকে বলেন, আবু সাঈদ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় অনেকের সম্পৃক্ততা সিসিটিভির ফুটেজে প্রকাশ পায়। অনেক নির্দেশদাতা ও আলামত গায়েবকারীর নাম আসামির তালিকা থেকে বাদ পড়ে গিয়েছিল। তাই ন্যায়বিচারের প্রয়োজনে তাঁদের নাম যুক্ত করার আবেদন করেছেন তিনি। তাঁর পরিবার ন্যায়বিচার চায়।

আসাদুজ্জামান খান, হাসিবুর রশীদ ছাড়াও বাদী যাঁদের বিরুদ্ধে আবেদন করেছেন, তাঁরা হলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক শরিফুল ইসলাম (ঘটনার সময় প্রক্টরের দায়িত্ব পালন করেছেন), রংপুর মহানগর পুলিশের সাবেক অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার (পুলিশ সুপার পদে পদোন্নতিপ্রাপ্ত) শাহ নূর আলম পাটোয়ারী, রংপুরের সহকারী কমিশনার (ভূমি) আহমেদ সাদাত, কোতোয়ালি থানার এসআই তরিকুল ইসলাম ও বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের চুক্তিভিক্তিক কর্মচারী নুরুন্নবী।

বাদীপক্ষের আইনজীবী রোকনুজ্জামান রোকন প্রথম আলোকে বলেন, আবু সাঈদ হত্যা মামলা দায়েরের পর বিভিন্ন সিসিটিভির ফুটেজ, ভিডিও, স্থিরচিত্র বাদীপক্ষের হাতে আসে। ন্যায়বিচারের স্বার্থে তাঁরা এসব প্রমাণ আদালতে দাখিল করেছেন এই ব্যক্তিদের সম্পৃক্ততা আছে কি না, তা খতিয়ে দেখার স্বার্থে। আদালতের মাধ্যমে তদন্তকারী কর্মকর্তার কাছে এসব ছবি, ভিডিও ও সিসিটিভির ফুটেজ পৌঁছালে তদন্তে তাঁদের সম্পৃক্ততার প্রমাণ পাওয়া যাবে।

আবু সাঈদ হত্যা মামলাটি তদন্ত করছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআই রংপুরের পুলিশ সুপার এ বি এম জাকির হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, বিষয়টি তিনি জেনেছেন।

বাদীপক্ষের আইনজীবীর ভাষ্য, বাদীর বিবৃতিতে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে নির্দেশদাতা, সাবেক উপাচার্য হাসিবুর রশীদ ও তখনকার প্রক্টর শরিফুল ইসলামের বিরুদ্ধে স্থানীয় নির্দেশদাতা ও আলামত গায়েবের অভিযোগ করা হয়েছে।

যোগাযোগ করা হলে হাসিবুর রশীদ প্রথম আলোকে বলেন, তিনি এখনো কাগজপত্র দেখেননি। এ বিষয়ে জানেনও না। আর শরিফুল ইসলাম কোনো মন্তব্য করতে চাননি।

বাদীপক্ষের আইনজীবীর ভাষ্য, শাহ নূর আলম পাটোয়ারী ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন। আহমেদ সাদাত ও তরিকুল যথাক্রমে আবু সাঈদের সুরতহাল প্রতিবেদনের প্রতিস্বাক্ষরকারী ও সুরতহাল প্রতিবেদন প্রস্তুতকারী। আহমেদ সাদাতের সঙ্গে মুঠোফোনে ও হোয়াটসঅ্যাপে যোগাযোগ করেও বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

কোটা সংস্কারের দাবিতে রংপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক ছিলেন আবু সাঈদ। আন্দোলন চলাকালে গত ১৬ জুলাই পুলিশের গুলিতে তিনি নিহত হন। গত ১৮ আগস্ট পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন, রংপুর রেঞ্জের সাবেক উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) আবদুল বাতেন, রংপুর মহানগর পুলিশের সাবেক কমিশনার মো. মনিরুজ্জামানসহ ১৭ জনের নাম উল্লেখ করে ও অজ্ঞাতনামা ৩০-৩৫ বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করা হয়।

prothom alo

Exit mobile version