মানবজমিন ডিজিটাল
৫ জুলাই ২০২৩, বুধবার
বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য এবং বিদেশ বিষয়ক কমিটির (ফরেন অ্যাফেয়ার্স) চেয়ারম্যান আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী সমসাময়িক নানা বিষয় নিয়ে সম্প্রতি ভয়েস অফ আমেরিকাকে একটি সাক্ষাৎকার দিয়েছেন। মানবজমিনের পাঠকদের জন্য সাক্ষাৎকারটির অংশবিশেষ তুলে ধরা হলো:
প্রশ্ন: বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু এবং শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের লক্ষ্যে যুক্তরাষ্ট্র যে ভিসা নীতি নিয়েছে আপনারা তাকে স্বাগত জানিয়েছেন। এই নতুন ভিসা নীতির প্রয়োগ এখন থেকেই শুরু করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে কারণ ওরা বলছে যে, একটি অবাধ এবং সুষ্ঠু নির্বাচন কেবল নির্বাচনের দিনের ব্যাপার নয়। আমরা এও জানি যে, যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসের কর্মকর্তাদের সংখ্যা সীমিত এবং তাদের মাধ্যমে যথাযথ ডকুমেন্টেশন জোগাড় করে এই নীতির পূর্ণ বাস্তবায়ন করা কঠিন ব্যাপার। এ অবস্থায় বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীদের ওপর দমন-পীড়ন, তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা বা রাজনৈতিক মামলা দেয়া, গ্রেপ্তার, সমাবেশে বাধা, হামলা, মতপ্রকাশে বাধা, গুম, খুন, পুলিশের গুলি চালানো, আদালতে সঠিক ও ন্যায়বিচার না পাওয়া- এই ধরনের যে বিষয়গুলো একটি সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করে সেগুলোর ব্যাপারে বিএনপি যুক্তরাষ্ট্র সরকারকে যথাযথ তথ্য প্রমাণসহ সহায়তা করার কি কি উদ্যোগ নিয়েছে?
আমীর খসরু: বিষয়টি কিন্তু বিএনপি’র একার নয়। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এখানে গণতান্ত্রিক পরিবেশ অনুপস্থিত, নির্বাচন ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রিত এবং মানবাধিকার লঙ্ঘিত। এ ছাড়া দুর্নীতিসহ আরও অনেকগুলো বিষয় আছে। এই বিষয়গুলো অনেকগুলো দেশ, অনেকগুলো এজেন্সি মিলে নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। সুতরাং এটা শুধু বিএনপি’র একার বিষয় নয়। জনগণের মৌলিক ভোটাধিকারের বিষয়ে বাংলাদেশ এবং বাংলাদেশের বাইরে সকলেই চিন্তিত।
সুতরাং, দেশের ও বিদেশের মানবাধিকার সংগঠনগুলো এবং কর্মীরা বাংলাদেশের ওপর খুব নিবিড়ভাবে চোখ রাখছে। বিদেশি দূতাবাসগুলোও বাংলাদেশের বিষয়গুলো শুধু পর্যবেক্ষণই করছেন না; গুরুত্বসহকারে চোখ রাখছেন। দেশের ভেতরে এখনো যেসব গণমাধ্যম কথা বলার সাহস রাখে কিংবা জনগণের স্বার্থে কথা বলার চেষ্টা করে, তারাও সজাগ রয়েছে। এ ছাড়াও বিদেশি অনেক গণমাধ্যম বাংলাদেশের ওপর চোখ রাখছে। আর রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজ- এরা তো রাখছেনই। আসলে এই নির্বাচনটা নিয়ে দেশে ও বিদেশে বাংলাদেশের ওপর পর্যবেক্ষণটা খুব নিবিড়ভাবে চলছে। এটা শুধু বিএনপি’র একার বিষয় নয়। সমস্ত দেশের স্বার্থে সবাই এদিকটায় মনোযোগী হচ্ছেন।
প্রশ্ন: বিএনপি কি সাংগঠনিকভাবে যুক্তরাষ্ট্র সরকারকে এ বিষয়ে সরাসরি সহযোগিতা করার কোনো উদ্যোগ নিয়েছে?
আমীর খসরু: ভিসা নীতি প্রয়োগের ক্ষেত্রে তথ্যের প্রয়োজনে যুক্তরাষ্ট্র বিএনপি’র কাছে সাহায্য চাইলে আমরা সাহায্য করতে পারি। সেটা অন্য কথা। আমি যেটি বলেছি- যুক্তরাষ্ট্র সরকার যে ভিসা নিষেধাজ্ঞাটি দিয়েছে, এটা মনিটরিংয়ে তারা নিশ্চিতভাবেই কাজ করছে বলে আমার বিশ্বাস। আর আমি ইতিমধ্যে বলেছি যে, বিশ্বের মানবাধিকার সংস্থাগুলো দেশের ভেতরে-বাইরে খুব নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। দূতাবাসগুলোও এখানে কাজ করছে। কারণ, তাদের তো হেডকোয়ার্টারে রিপোর্ট করতে হচ্ছে। শুধু ভিসা নীতি দিলে তো হবে না, তারা সেটা বাস্তবায়ন করার জন্যও কাজ করছে। মনে রাখতে হবে যে, এখানে গণমাধ্যমগুলো কাজ করছে, সোশ্যাল মিডিয়াগুলোও গুরুত্বপূর্ণ কাজ করছে। অনেক বিষয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, পত্র-পত্রিকায় আপনি কোথাও দেখতে পাবেন না কিন্তু প্রতিনিয়তই সেগুলো সোশ্যাল মিডিয়ায় আলোচিত হচ্ছে। নেটিজেনরা প্রতিনিয়ত এগুলো ছবি তুলে, রেকর্ডিং করে পোস্ট করছে। এগুলোও কিন্তু বিবেচনায় নেয়ার বিষয় আছে।
প্রশ্ন: যুক্তরাষ্ট্রের এই ভিসা নীতির ঘোষণা আসার পর গাজীপুর ও বরিশালে সিটি করপোরেশন নির্বাচন হয়েছে এবং আরও কিছু নির্বাচন হতে যাচ্ছে- যেখানে বিএনপি এবং সরকারবিরোধী আন্দোলনে যুক্ত দলগুলো অংশ নেয়নি বা নিবে না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ফলে এই নির্বাচনগুলো দিয়ে নির্বাচন প্রক্রিয়াকে কতোটা বাধা দেয়া হচ্ছে তা হয়তো পুরোপুরি বোঝা যাবে না। তবুও গত কয়েক সপ্তাহে এই ভিসা নীতি ঘোষণা আসার পর আপনারা কি পরিস্থিতির কোনো উন্নতি লক্ষ্য করেছেন?
আমীর খসরু: নির্বাচনের পুরো বিষয়টি আসলে সরকারের নিয়ন্ত্রণে। সিটি নির্বাচনগুলোর ফলাফল সরকারের সিদ্ধান্তের প্রতিফলন ছাড়া আর কিছু না। সেটা ‘পিক অ্যান্ড চুজ’ অর্থাৎ কোনো সময়ে মনে করলো একটা সিট ছেড়ে দিবে তো ছেড়ে দিলো। অর্থাৎ নিয়ন্ত্রণটা মূলত তাদের হাতেই। সার্বিকভাবে সুষ্ঠু দেখানোর জন্য তারা এটাকে একটা অজুহাত দেখিয়ে আগামী নির্বাচনটা তাদের অধীনে করার জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছে। কিন্তু নির্বাচনের ইলেক্টারাল ইনটেগ্রিটি বলতে যেটা বোঝায় সেখানে কোনো পরিবর্তন নাই। আছে কেবল বিশ্বাসযোগ্যতা দেখানোর একটা চেষ্টা এবং চালাকি। আমার মনে হয় না বাংলাদেশের জনগণ এসবে বিশ্বাস করে। যারা সত্যিকার অর্থে নির্বাচন কমিশনসহ নির্বাচনী প্রক্রিয়াটিকে অনুসরণ করছে, তাদের মধ্যে বর্তমান নির্বাচন ব্যবস্থার ওপর কোনো আস্থা নাই। সুতরাং আমার মনে হয় না এই বিষয়ে আস্থা ফিরে আসার কোনো সুযোগ আছে। এটা এখন সবাই জানে যে, সরকার মাঝেমধ্যে একটা দুইটা সিট এদিক- সেদিক করতে থাকে। মূলত: এটা তাদের ভোট চুরি প্রকল্পের অংশ। অন্যদিকে গায়েবি মামলা, গ্রেপ্তার, ভয়ভীতির পরিবেশ- এগুলোর কোনো বড় ধরনের পরিবর্তন হয়নি। তাছাড়া নির্বাচন প্রক্রিয়া তো শুধু নির্বাচনের দিন হয় না; এটা একটা পরিবেশের ব্যাপার। একটা ডেমোক্রেটিক অর্ডার থাকতে হয়, একটা লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড থাকতে হয়। সেটার কোনো পরিবেশ বাংলাদেশে এখনো সৃষ্টি হয়নি।
প্রশ্ন: যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ চারটি দেশের রাষ্ট্রদূতের চলাফেরার সময় অতিরিক্ত যে পুলিশ এসকর্ট ছিল সরকার তা প্রত্যাহার করে নিয়েছে। সরকার বলছে যে, এই সুবিধা নিতে হলে সরকারকে ফি হিসেবে নির্দিষ্ট অঙ্কের টাকা দিয়ে আনসারের গার্ড রেজিমেন্ট থেকে নিতে হবে। এ বিষয়টি আপনারা কীভাবে দেখছেন এবং আপনারা ক্ষমতায় গেলে এই ব্যবস্থাটিকে পুনর্বহাল করবেন কিনা?
আমীর খসরু: ভিয়েনা কনভেনশন অনুযায়ী, বিদেশি কূটনীতিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা স্বাগতিক দেশের দায়িত্ব। এক্ষেত্রে এক দূতাবাসের সঙ্গে অন্য দূতাবাসের মাঝে কিছুটা পার্থক্য থাকে। এটা নির্ভর করে কোন দেশের কূটনীতিকদের নিরাপত্তা বেশি দরকার, কোন দেশের জন্য একটু কম তার ওপর। কোনো কোনো দেশের কূটনীতিকদের জন্য নিরাপত্তার প্রয়োজনীয়তা একটু বেশি হতে পারে। আর এটা যাচাই-বাছাই করার দায়িত্ব স্বাগতিক দেশের ওপরে বর্তায়। এখন যাদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা সম্প্রতি তুলে নেয়া হয়েছে, তাদের কাছে নিরাপত্তার ইস্যুটা একটু বেশি গুরুত্বপূর্ণ বলেই মনে করা হয়। সুতরাং তাদের সঙ্গে আলোচনা না করেই এটা করা হয়তো তাদের কাছে গ্রহণযোগ্য নাও হতে পারে। সবচেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে, এটা নিয়ে যে বিতর্কের অবতারণা হয়েছে সেটার গুরুত্ব অন্য জায়গায়। সরকার যেটা বলছে, সেটা জনগণ এবং রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের কাছে গ্রহণযোগ্য বলে মনে হচ্ছে না। তারা মনে করছেন, সরকার মূলত এটাকে রাজনৈতিক অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করতে চাচ্ছে। ভোটবিহীন ও অবৈধভাবে ক্ষমতাকে টিকিয়ে রাখার স্বার্থেই তারা এটা করছে। আমরা মনে করি, যে দেশের কূটনীতিকদের জন্য যতটুকু নিরাপত্তা দেয়া প্রয়োজন সেটা গুরুত্ব দিয়েই দেখতে হবে এবং নিশ্চিত করতে হবে। সেটাকে কোনো ভাবেই ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার জন্য বা ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য রাজনৈতিক অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা ঠিক হবে না। এতে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হবে।
প্রশ্ন: এবারে র্যাব প্রসঙ্গ। র্যাবের বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ রয়েছে। আপনারা ক্ষমতায় এলে কি র্যাবের বিরুদ্ধে বিচার বহির্ভূত যত কর্মকাণ্ড- হত্যা, গুম, খুন ও নির্যাতনের যত অভিযোগ রয়েছে- সেগুলোর দ্রুত বিচার নিশ্চিত করবেন?
আমীর খসরু: গুম, খুন ও হত্যার সঙ্গে আসলে অনেকেই জড়িত। র্যাব এসব জড়িতদের একটা অংশ। আমরা মনে করি, জড়িতদের সকলেরই বিচার হতে হবে। এটা এ কারণে হতে হবে, যাতে এসব ঘটনার পুনরাবৃত্তি আর না হয়। তাছাড়া এর সঙ্গে কেবল দেশীয় মানবাধিকারের বিষয়ই নয়; বরং দেশের ভাবমূর্তির ব্যাপারও জড়িত রয়েছে। এগুলো খুবই স্পর্শকাতর ইস্যু। আমরা মনে করি, অধিকতর তদন্তের খাতিরে প্রয়োজনে আন্তর্জাতিক সংস্থাসমূহকেও এর সঙ্গে জড়িত করা যেতে পারে। একটি সভ্য দেশে এ ধরনের ঘটনা চলতে পারে না।
প্রশ্ন: মির্জা ফখরুলসহ অনেকেই বর্তমান সরকারের একটা ‘সেইফ এক্সিটের বিষয় বলে থাকেন। এই সেইফ এক্সিটটা কি? এর মানে কি, বর্তমান সরকার যদি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে রাজি হয়, তাহলে তাদের নেতৃবৃন্দের নামে যে ব্যাপক দুর্নীতি, অপশাসন, নিপীড়ন, এমনকি গুম, খুনের অভিযোগ আপনারা করে থাকেন সেসব বিষয়ে ইনডেমনিটি দিবেন বা তাদেরকে বিচারের মুখোমুখি করবেন না?
আমীর খসরু: দেখুন, দেশে ‘রুল অব ল’, ‘ডিউ প্রসেস অব ল’ বলে কিছু বিষয় আছে। নাগরিকদের সুরক্ষার জন্য, দেশের সুরক্ষার জন্য এই বিষয়গুলো সংবিধানে লিপিবদ্ধ রয়েছে। সুতরাং এগুলোতে কারও হস্তক্ষেপ করার ব্যাপার নেই। গুম, খুনের সঙ্গে জড়িতদের তাই ইনডেমনিটি দেয়ার বিষয়টি নিয়ে আমাদের তেমন চিন্তার কিছু নেই। বরং দেশে যাতে আইনশৃঙ্খলার কোনো বিঘœ না ঘটে, নাগরিকরা যাতে সুবিচার পায়- সেই বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। সকল বিচার ‘ডিউ প্রসেস অব ল’ অনুযায়ী হবে। বিএনপি তো দলীয়ভাবে কারও বিচার করতে পারে না। বরং বর্তমানে যে আইনের শাসনের অনুপস্থিতি রয়েছে সেটাকে ফিরিয়ে এনে সুবিচার নিশ্চিত করতে হবে। বাংলাদেশে এখন যেটা হচ্ছে সেটা হলো, সরকারই বিচার করে ফেলছে। তারা গুম করছে; খুন করছে; গায়েবি মামলা দিচ্ছে। কিন্তু এভাবে তো চলতে দেয়া যায় না।
প্রশ্ন: তাহলে সেইফ এক্সিটের অর্থ আপনাদের কাছে কি?
আমীর খসরু: ‘সেইফ এক্সিট’ এর অর্থ হচ্ছে, দেশে আইনের শাসন ফিরিয়ে আনতে হবে। আজকে কিন্তু দেশের বিচার ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। আমেরিকার দেয়া ভিসা নীতিতে বিচার বিভাগের কথা উল্লেখ করা হয়েছে, যেটা খুবই লজ্জাজনক। দেশে যদি আইনের শাসনই না থাকে তাহলে ‘সেইফ এক্সিট’ কীভাবে দেয়া হবে? সুতরাং এজন্য সবার আগে দেশে আইনের শাসন ফিরিয়ে আনতে হবে। সবাইকেই ‘ডিউ প্রসেস অব ল’ বিচারের মুখোমুখি হতে হবে।
প্রশ্ন: আপনারা ক্ষমতায় গেলে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন রাখবেন না বাতিল করবেন?
আমীর খসরু: আমরা ইতিমধ্যে ‘ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন’ বাতিল করার ঘোষণা দিয়েছি। একটি আইন যদি দেশের জনগণের নিরাপত্তা ও অধিকারকে বিপন্ন করে, সেটা তো দেশে থাকতে পারে না। আইনের উদ্দেশ্য হচ্ছে, দেশের জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। সুতরাং এ রকম একটি কালো আইন দেশে চলতে পারে না। এটা জনগণের এবং গণমাধ্যমের কণ্ঠ রোধ করার প্রকল্প। একই সঙ্গে এটা ভোট চুরির প্রকল্প। অর্থাৎ তারা আপনাকে কথা বলতে দিবে না। আপনি কথা বললেই তারা আপনাকে এটা দিয়ে ঘায়েল করছে। মানুষকে কথা বলতে না দিয়ে যাতে একচেটিয়াভাবে একটি একদলীয় শাসনকে টিকিয়ে রাখা যায়, এই আইনটি তারই একটি বন্দোবস্ত। একটি সভ্য দেশে এটি চলতে পারে না। সুতরাং দেশে গণতান্ত্রিক পদ্ধতি ফিরিয়ে এনে এবং এর আন্তর্জাতিক মানদ- ও গ্রহণযোগ্যতা বিবেচনায় নিয়ে এটা নিয়ে আমাদেরকে চিন্তা করতে হবে।
প্রশ্ন: আপনাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমান কেন দেশে এসে আইনি লড়াই করছেন না? কোনো বিশেষ কারণ আছে?
আমীর খসরু: যে দেশে আইনের শাসন নাই, যে দেশে জীবনের নিরাপত্তা নাই, যে দেশের বিচার বিভাগকে ভিসা নীতির আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে সেখানে আইনি ব্যবস্থা কীভাবে ফেস করবেন? এখানে তো জীবনেরই নিরাপত্তা নাই। জেলখানাতে মানুষ মেরে ফেলছে। পুলিশের কাস্টডিতে মানুষ মেরে ফেলছে। গুলি করে লোক মেরে ফেলছে। জনগণের কোনো নিরাপত্তা নাই। সুতরাং যেখানে ন্যূনতম বিচার নাই সেখানে বিচারব্যবস্থা কীভাবে ফেস করবেন?
প্রশ্ন: তত্ত্বাবধায়ক সরকার বা নিরপেক্ষ নির্বাচন নিশ্চিত করার জন্য যেকোনো আলোচনা বা সমঝোতার পূর্বশর্ত হিসেবে বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং আগামী নির্বাচনে তার নেতৃত্বে অংশ নিতে পারাটা বিএনপি’র কাছে কতোটা গুরুত্বপূর্ণ? আপনি মনে করেন কিনা যে, বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং তার নির্বাচনে অংশ নেয়ার সকল বাধা অপসারণ ছাড়া বাংলাদেশে একটি সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হওয়া সম্ভব।
আমীর খসরু: এটা শর্তের ব্যাপার না। বেগম খালেদা জিয়ার মতো একজন জনপ্রিয় নেত্রীকে যে একটা মিথ্যা মামলা দিয়ে কারাবন্দি রাখা হয়েছে, এটা তো প্রতিটি মুহূর্তেই ওদেরকে বুঝিয়ে দিতে হবে। প্রতি দিন, সপ্তাহ, মাস, বছরে বুঝিয়ে দিতে হবে। জনগণের কাছে এর জন্য জবাবদিহি করতে হবে। দ্বিতীয়ত শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ১৩টি মামলা ছিল। এ মামলাগুলো উধাও হয়ে গিয়েছে। অন্যদিকে বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মামলা ছিল ৫টি। এটা আশ্চর্যের যে, একজনের বিরুদ্ধে দুর্নীতির ১৩টি মামলা উধাও হয়ে যেতে পারে; অথচ যার বিরুদ্ধে ৫টি মামলা তিনি আজ জেলে রয়েছেন! বেগম খালেদা জিয়াকে এমনিতেই মুক্তি দিতে হবে। এটার সঙ্গে নিরপেক্ষ সরকারের কোনো সম্পর্ক নেই। উনার মুক্তি, দেশনায়ক তারেক রহমান সাহেবের দেশে ফিরে আসার মাধ্যমে একটা লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড যখন তৈরি হবে এবং একটি নিরপেক্ষ সরকার যখন প্রতিষ্ঠিত হবে, কেবল তখনই একটি সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে। দেশের জনগণ তাদের সংসদ নির্বাচিত করতে পারবে; এমন সরকার নির্বাচন করতে পারবে জনগণের কাছে যাদের জবাবদিহিতা থাকবে। এই প্রেক্ষাপটেই বাংলাদেশে আন্দোলন চলছে। এই আন্দোলন ততক্ষণ চলবে, যতক্ষণ না এই অনির্বাচিত, অবৈধ, দখলদার, ফ্যাসিস্ট সরকার বিদায় নিবে। যতক্ষণ না নিরপেক্ষ সরকারের বিষয়টির মীমাংসা হবে ততক্ষণ এই আন্দোলন চলবে।