Site icon The Bangladesh Chronicle

সাকিবের হতাশার বিশ্বকাপ

 

সাকিব আল হাসান সবকিছু মেনে নেওয়ার মতো মানুষ কোনো দিনই ছিলেন না। অতীতে অনেক বিষয় নিয়েসংবাদ সম্মেলনে দ্বিমত করতে দেখা গেছে তাঁকে। তিনিই কিনা গতকাল ভালো ছেলের মতো সংবাদ সম্মেলনে বেশির ভাগ প্রশ্নের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করলেন। সাদরে অনেক কিছু মেনেও নিলেন।

সাকিবের এই পরিবর্তন এমনি এমনি আসেনি। বিশ্বকাপে দলের ভরাডুবি শান্ত করে দিয়েছে তাঁকে। কলকাতায় গতকাল নেদারল্যান্ডসের কাছে পরাজয় হতবাক করে দিয়েছে তাঁকে। বাংলাদেশ দলের সবচেয়ে বাজে হার হিসেবে আখ্যাও দিলেন। অথচ এই বিশ্বকাপ নিয়ে আশার ঝাণ্ডা উড়িয়ে ছিলেন সাকিব নিজেই। তাঁর চোখে সেমিফাইনাল খেলার স্বপ্ন দেখেছিল দেশের মানুষ। সেই স্বপ্নের মৃত্যু ঘটাল নেদারল্যান্ডসের কাছে পরাজয়।

বিশ্বকাপের শুরুটা যেভাবে হয়েছিল, তাতে ভালো কছু আশা করা অন্যায় ছিল না। ধর্মশালায় ইংল্যান্ডের কাছে বড় পরাজয়ের পরও আশার প্রদীপ জেলে রেখেছিল পুরো দল। কখনও মুস্তাফিজুর রহমান, কখনও সাকিব আল হাসান, কখনওবা তাসকিন আহমেদ বলেছেন– জিততে শুরু করলে ধারাবাহিক জিতবেন। কিন্তু তাসকিনরা জানেনই না, তারা জিততে ভুলে গেছেন। ইংল্যান্ড, নিউজিল্যান্ড, ভারত, দক্ষিণ আফ্রিকা বড় বড় পরাজয়ের স্বাদ দিয়ে ভুলিয়ে দিয়েছে জয়ের উষ্ণতা।

গতকাল সংবাদ সম্মেলনে সাকিবের কাছে জানতে চাওয়া হলো বিশ্বকাপের আগে আর বিশ্বকাপের পারফরম্যান্সে এত গরমিল কেন? টাইগার দলপতির সরল স্বীকারোক্তি, ‘আমরা টুর্নামেন্টজুড়েই সংগ্রাম করছি, উত্থান-পতনের মধ্য দিয়ে এগোচ্ছি। এই ফল হজম করা কঠিন। যদিও ক্রিকেটে এটা হয়। খেলোয়াড়দের মধ্যে আত্মবিশ্বাস বলে কিছু নেই। ব্যাটিং-বোলিং কোনো কিছুতে ভালো করতে পারছি না। আজ (গতকাল) বোলিং খুব ভালো হয়েছে। কিন্তু আমরা ব্যাটাররা হতাশ করেছি। একটি দলকে এভাবে হারতে দেখা খুবই হতাশার।’

নেদারল্যান্ডসকে ২২৯ রানে বেঁধে ফেলার পর জয় দেখতে পাচ্ছিল বাংলাদেশ। বিদেশ-বিভুঁইয়েও স্লোগানে মুখরিত হয়েছে গ্যালারি। লাল-সবুজ জার্সি পরে বিশ্বকাপে প্রিয় দলকে সমর্থন দিতে এসেছিলেন দর্শকরা। সাকিবদের কাছ থেকে তারা উপহার পেলেন হতাশার পরাজয়। কলকাতাতেও নিজ সমর্থকদের কাছে শুনতে হলো দুয়ো। সমালোচনা আর বিতর্ক মেনে নিয়ে সাকিব জানান, এটা তাদের প্রাপ্য।

তাঁর মতে, ‘আমি এটাকে মেনে নিই। কারণ, আমাদের কাছে তাদের প্রত্যাশা অনেক। সেটা যখন পূরণ হবে না, তখন সমালোচনা করবে– এটাই স্বাভাবিক।’

বাংলাদেশের বিশ্বকাপ শেষ হবে ১১ নভেম্বর। এ সময়ের ভেতরে আর তিনটি ম্যাচ খেলতে হবে তাদের– পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা ও অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে। নেদারল্যান্ডসের কাছে হারের পর এখন আর ঘুরে দাঁড়ানোর কথাও বলতে পারছেন না। সাকিবের মতে, ‘সেমিফাইনাল খেলার আর কোনো সম্ভাবনা নেই। বরং এখান থেকে ঘুরে দাঁড়ানো কঠিন। আজকের দিনকে যত দ্রুত ভুলে যেতে পারব, ততই মঙ্গল।’

বাংলাদেশ দল বিতর্ক মাথায় নিয়ে বিশ্বকাপে এসেছে। তামিম ইকবালকে বাদ দেওয়া, টিভিতে এক সাক্ষাৎকারে সাবেক অধিনায়ককে তুলাধুনা করার নেতিবাচক প্রভাব বিশ্বকাপে ফেলতে পারে বলে স্বীকার করেন বাঁহাতি এ অলরাউন্ডার। তবে সবচেয়ে বড় স্বীকার বাংলাদেশের সবচেয়ে হতাশার বিশ্বকাপ এটি।

Exit mobile version