মানবজমিন ডেস্ক
(১ দিন আগে) ১৫ আগস্ট ২০২৩, মঙ্গলবার, ১১:৩০ পূর্বাহ্ন
সর্বশেষ আপডেট: ১২:০২ পূর্বাহ্ন
জামায়াতে ইসলামীর নেতা মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী হার্ট অ্যাটাকে ৮৩ বছর বয়সে মারা যাওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই সোমবার হাজারো ক্ষুব্ধ প্রতিবাদী সরকার বিরোধী স্লোগান দিয়েছে। এক দশক আগে যুদ্ধাপরাধ আদালতের দেয়া রায়ে দেশের ইতিহাসে ভয়াবহ রাজনৈতিক সহিংসতা দেখা দেয়। সোমবার রাতে বন্দি অবস্থায় একটি হাসপাতালে (প্রিজন হাসপাতাল) জামায়াতে ইসলামীর এই ভাইস প্রেসিডেন্ট মারা যান। তার মৃত্যুর পর হাসপাতালটির বাইরে হাজার হাজার শোকার্ত সমর্থক ‘আল্লাহু আকবর’ স্লোগান দেন। তারা চিৎকার করে বলতে থাকেন, সাঈদীর রক্ত বৃথা যেতে দেবো না। তাদের অনেকে এই মৃত্যুর জন্য বর্তমান সরকারকে দায়ী করেছেন। বার্তা সংস্থা এএফপি, তুরস্কের অনলাইন টিআরটি, লুঙ্মেবার্গের অনলাইন টিআরএল টুডে’তে প্রকাশিত রিপোর্টে এসব কথা বলা হয়েছে।
এতে আরও বলা হয়, এই সরকার আগামী জানুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন করার প্রস্তুতি নিচ্ছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, রাজধানী ঢাকার বাইরে রোববার বন্দি অবস্থায় হার্ট অ্যাটাক হয় সাঈদীর। তারপর তাকে হাসপাতালে এনে ভর্তি করা হয়েছিল।
ওদিকে তুরস্কের অনলাইন টিআরটি লিখেছে, কমপক্ষে এক দশক জেলে থাকার পর ৮৩ বছর বয়সে বাংলাদেশে বিরোধী দল জামায়াতে ইসলামীর ভাইস প্রেসিডেন্ট মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী সোমবার রাতে মারা গেছেন। যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে তাকে দোষী সাব্যস্ত করে সাজা দেয়া হয়েছিল।
কিন্তু তার দল এ রায়কে প্রত্যাখ্যান করেছে। মাওলানা সাঈদী বাংলাদেশে একজন সুপরিচিত ইসলামিক স্কলার ও বক্তা। রোববার বিকেলে হার্টএটাক করার পর তাকে ঢাকায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) নেয়া হয়। তিনি ১৩ বছর ধরে জেলে ছিলেন। বহুবিধ শারীরিক জটিলতায় ভুগছিলেন। বিএসএমএমইউয়ের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. রেজাউর রহমান মিডিয়ার কাছে নিশ্চিত করেছেন যে, চিকিৎসাধীন অবস্থায় হাসপাতালে তিনি মারা গেছেন। এর পরপরই জামায়াতে ইসলামীর হাজার হাজার নেতাকর্মী ওই হাসপাতালে সমবেত হন। তারা এ সময় ‘মিথ্যা’ মামলা ও ‘উদ্দেশ্যমূলক’ রায়ে তাকে জেলখানায় আটকে রাখার অভিযোগ করে স্লোগান দিতে থাকেন। এতে আরও বলা হয়, বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে যাবজ্জীবন সাজা ভোগ করছিলেন সাঈদী। তবে তার দল রায়কে বিতর্কিত বলে দাবি করেছে। তারা বলেছে, রাজনৈতিক উদ্দেশে তাদের নেতাদের বিচার করা হয়েছে। দলের পক্ষ থেকে তার মৃত্যুতে শোক জানিয়ে বলা হয়েছে, একটি মিথ্যা ও বানোয়াট মামলায় তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়ে জেলে রাখার মধ্য দিয়ে ভয়াবহ অবিচার করা হয়েছে। রিপোর্টে আরও বলা হয়, স্থানীয়ভাবে গঠিত ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইমস ট্রাইব্যুনাল ২০১৩ সালে মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের জন্য শাস্তি হিসেবে দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে মৃত্যুদণ্ড দেয়। এ রায়ের পর পরই দেশজুড়ে পুলিশ ও আইন শৃংখলা রক্ষাকারী এজেন্সির সঙ্গে সহিংস সংঘাত সৃষ্টি হয়। এতে কমপক্ষে ৭৮ জন নিহত হন। ২০১৪ সালে সুপ্রিম কোর্ট তার শাস্তি লঘু করে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়। তবে বিশেষ ওই আদালতে সুষ্ঠু বিচার নিয়ে বৈশ্বিক মানবাধিকার বিষয়ক গ্রুপগুলোর সমালোচনা আছে। এর পর কমপক্ষে ৫০টি মামলায় কমপক্ষে ১৫০ জনের বিরুদ্ধে রায় দিয়েছে আদালত। ১৯৭১ সালে রক্তক্ষীয় এক যুদ্ধে স্বাধীনতা অর্জন করে বাংলাদেশ। যুদ্ধের সময় পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে সহযোগিতা করার জন্য সমালোচনা আছে জামায়াতে ইসলামীর বিরুদ্ধে।
ওদিকে লুঙ্মেবার্গভিত্তিক অনলাইন আরটিএল টুডে লিখেছে, ৮৩ বছর বয়সে জেলে থাকা শক্তিধর একজন ইসলামপন্থি বিরোধী দলীয় নেতার মৃত্যুতে হাজার হাজার ক্ষুব্ধ মানুষ ঢাকায় সরকার বিরোধী বিক্ষোভ করেছে। বিরোধী দল জামায়াতে ইসলামীর ভাইস প্রেসিডেন্ট মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী সোমবার সন্ধ্যায় কারান্তরীণ অবস্থায় একটি হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেছেন। তার মৃত্যুর খবরে শোকার্ত হাজারো সমর্থক হাসপাতালে ছুটে যান। তারা ‘আল্লাহু আকবর’ স্লোগান দেন। সেখানে বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছিল। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলেছে, ঢাকার অদূরে কাশিমপুর কারাগারে রোববার হার্টএটাক করার পর তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল রেজাউর রহমান বলেছেন, সোমবার স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৬টা ৪৫ মিনিটের সময় তিনি আরেকবার হার্ট অ্যাটাক করে এবং রাত ৮টা ৪০ মিনিটে মারা যান। এর আগে থেকেই তার হার্টে ৫টি রিং পরানো ছিল। জামায়াতে ইসলামী ফেসবুক পেইজে সাঈদীর মৃত্যুর খবর ঘোষণা করে। এতে চিকিৎসায় ধীরগতির মাধ্যমে তাকে ধীরে ধীরে শহীদান করা হয়েছে বলে তারা অভিযোগ করেছে।
১৯৮০র দশকে দেশের শীর্ষ মসজিদগুলোতে ইসলামী বক্তব্য দেয়া শুরু করেন সাঈদী। তখন থেকেই তিনি বিখ্যাত হতে শুরু করেন। যখন খ্যাতির শিখরে তখন তার মাহফিল শুনতে লাখ লাখ মানুষের সমাগম হতো। তার ওয়াজের সিডি ছিল টপ সেলার। জামায়াতে ইসলামীকে সমর্থন করতেন না এমন মানুষও তার কোরআনের মাহফিলে যোগ দিতেন।