বাজারে চাল, ডাল ও সয়াবিনের মতো নিত্যপণ্যের দাম অনেক দিন ধরে চড়ে আছে। নতুন করে বেড়েছে মাছ ও কিছু সবজির দাম।
ঢাকা
বাজারে মুরগি, গরু, খাসিসহ সব ধরনের মাংসের দাম মাসখানেক ধরে চড়ে আছে। দেড় মাস আগেও বাজারে ব্রয়লার মুরগির দাম ছিল ১৪০–১৫০ টাকা। সেই দাম এখন বেড়ে হয়েছে ২৩০ থেকে ২৪০ টাকা। হঠাৎ ব্রয়লার মুরগির দাম বেড়ে যাওয়ায় নিম্নমধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্তদের অনেকে মুরগির চেয়ে সস্তা দামের মাছের প্রতি ঝুঁকেছিলেন। তাঁদের জন্য দুঃসংবাদ—বাজারের সস্তা মাছ হিসেবে পরিচিত তেলাপিয়া ও পাঙাসের দামও চড়েছে নতুন করে।
ঢাকার একাধিক বাজারে তেলাপিয়া ও পাঙাশ মাছের দাম এখন প্রতি কেজি ২২০ থেকে ২৫০ টাকা। এক সপ্তাহ আগেও এ দাম ছিল ২০০ থেকে ২২০ টাকা। অন্য মাছের মধ্যে মাঝারি ও বড় আকারের রুইয়ের দাম প্রতি কেজি ৩০০ থেকে ৪৫০ টাকা। এ মাছের দামও এক সপ্তাহে কেজিতে ২০ টাকা বেড়েছে। এ ছাড়া পাবদা, বোয়াল, চিতল, আইড় ও ইলিশ মাছের যে দাম, তা নিম্নবিত্ত তো বটেই, নিম্নমধ্যবিত্তেরও নাগালের বাইরে। সপ্তাহের ব্যবধানে এসব মাছের দামও কেজিতে ৩০ থেকে ৫০ টাকা বেড়েছে।
বাড়তি দাম শুনতে শুনতে একরকম ক্লান্ত। মাছ-মাংস তো বটেই, সবজি-ডিমের দামও অস্বাভাবিক। কোনোভাবেই সরকার বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। আর তার ভুক্তভোগী হতে হচ্ছে আমাদের।
ইকবাল হোসেন, বেসরকারি চাকরিজীবী
মোহাম্মদপুর কৃষি বাজারের মাছ বিক্রেতা দীন মোহাম্মদ বলেন, এই সময় হাওর-বিল শুকনা থাকে, তাই বাজারে মাছের সরবরাহ থাকে কম। তাই দাম একটু বাড়তি। বাজারে সব জিনিসের দাম বাড়তি। মাছের দামও তার বাইরে নয়।
বাড়তি দামের কারণে আমিষজাতীয় খাবার বাদ দিয়ে যাঁরা সবজির প্রতি ঝুঁকছেন, তাঁদের জন্যও কোনো সুসংবাদ নেই বাজারে। শীতের সবজির সরবরাহ কমছে। তাতে বেশ কিছু সবজির দাম বাড়ছে। করলা, পটোল, ঢ্যাঁড়স, বরবটি, ধুন্দুল ও ঝিঙে প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকার বেশি দামে। মোহাম্মদপুর কৃষি বাজার ও টাউন হল বাজারে গতকাল প্রতি কেজি বেগুন ৬০ থেকে ১০০ টাকা ও শিম ৪০ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি হয়।
শীতের সবজির মধ্যে ফুলকপি ও বাঁধাকপি প্রতি পিস ২৫ থেকে ৪০ টাকা, লাউ ৭০ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি হয়। সবজি বিক্রেতারা জানান, বছরের এ সময়ে বিভিন্ন সবজির যে দাম থাকে, এবার বেশি। তবে কাঁচা মরিচের ঝাল গত সপ্তাহের চেয়ে সামান্য কিছুটা কমেছে। প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১২০ টাকায়। সবজির মধ্যে বর্তমানে বাজারে টমেটো, শসা ও গাজরের দামই তুলনামূলক কম। প্রতি কেজি ৩০ থেকে ৪০ টাকা।
মোহাম্মদপুর টাউন হল বাজারের সবজি বিক্রেতা জাকির হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, শীতের শেষ ও গ্রীষ্মের শুরুর এই সময়ে শীতের সবজির দাম কম থাকে। এবার শীতের সবজির দাম মৌসুমজুড়ে বেশি ছিল। এখনো কমেনি।নতুন যেসব সবজি আসছে, সেগুলোর দামও তাই বাড়তি।
এদিকে চাল, ডাল, সয়াবিন, আটা-ময়দা, চিনিসহ অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম উচ্চমূল্যে স্থিতিশীল হয়ে আছে। তাতে বাজারে গিয়ে স্বস্তি পাচ্ছেন না ক্রেতারা। বেশির ভাগ পণ্যের দাম তো কমছেই না, উল্টো প্রতি সপ্তাহে কোনো না কোনো পণ্যের দাম বেড়েই চলেছে।
ব্রয়লার মুরগি ছাড়া সোনালি মুরগির দাম এখন ৩১০ থেকে ৩৩০ টাকা কেজি। গরুর মাংসের কেজি ৭২০ থেকে ৭৫০ টাকা। আর খাসির মাংসের দাম মাসখানেক আগেই হাজার টাকা ছাড়িয়েছে। এক মাস আগে সব ধরনের মাংসের দাম যে বেড়েছে, তা আর কমার কোনো লক্ষণ নেই। ডিমের দামও ১৩০ থেকে ১৪০ টাকা ডজন।
কয়েক মাস আগে থেকেই চড়ে আছে চালের বাজার। বাজার ও মানভেদে প্রতি কেজি মোটা চাল ৫০ থেকে ৫৫ টাকা, মাঝারি মানের চাল ৬০ টাকার আশপাশে বিক্রি হয়। মিনিকেট ও নাজিরশাইল নামে বিক্রি হওয়া সরু চালের কেজি ৭০ থেকে ৮৫ টাকা। প্যাকেটজাত আটার কেজি ৬৫ থেকে ৭০ টাকা।
নতুন করে আর দাম বাড়েনি সয়াবিন তেল ও চিনির। কারণ, এ দুই পণ্যের দাম সরকারই বেঁধে দেয়। তাই বাজারে সয়াবিন ও চিনির দামের খুব বেশি হেরফের হওয়ার সুযোগ কম। তা সত্ত্বেও বাজারে সংকট থাকায় চিনি সরকার বেঁধে দেওয়া দামের চেয়ে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। প্রতি কেজি চিনি বিক্রি হচ্ছে ১১০ থেকে ১২০ টাকায়। আর সয়াবিন তেলের দাম প্রতি লিটার ১৯০ টাকার আশপাশে।
মোহাম্মদপুর টাউন হলে বেসরকারি চাকরিজীবী ইকবাল হোসেন বলেন, ‘বাজারে এলে কোনো জিনিসের দাম কমার কথা শুনি না। প্রতি সপ্তাহেই কোনো না কোনো পণ্যের দাম বাড়ে। এ বাড়তি দাম শুনতে শুনতে একরকম ক্লান্ত। মাছ-মাংস তো বটেই, সবজি-ডিমের দামও অস্বাভাবিক। কোনোভাবেই সরকার বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। আর তার ভুক্তভোগী হতে হচ্ছে আমাদের।’