Site icon The Bangladesh Chronicle

সরকার নিহতের সংখ্যা কেন বলছে না

সরকার নিহতের সংখ্যা কেন বলছে না

মুক্তাদির রশীদ

কোটা সংস্কার আন্দোলন সময়ে কতজন মানুষ বিশেষত ছাত্র মারা গেছে তার সঠিক পরিসংখ্যান এখনো পাওয়া যায়নি। সরকারের এ বিষয় পরিষ্কার করে কিছু বলছে না। এমনকি তার পক্ষ থেকে এ সপ্তাহব্যাপী নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযান ও  পরিসংখ্যান নিরূপনে কোনো নিরপেক্ষ সংস্থাকে দায়িত্ব দেবার খবর পাওয়া যায়নি। সরকার নিহতের হিসাবের পরিবর্তে বিক্ষোভের সময় কী ধরনের ভাংচুর হয়েছে সে বিষয়ে বর্ননা দিচ্ছে এবং এর জন্য প্রধান বিরোধী দল বিএনপির নেতৃত্বের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ ও কথিত জঙ্গিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলছে। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অবশ্য অভিযোগ করেছেন, শত শত মানুষকে হত্যা এবং আহতদের পুরোপুরি বাদ দিয়ে সরকার দেশবাসীকে ভ্রান্ত ধারনা দিতে শুধু সরকারি স্হাপনাগুলোর (ওপর হামলার) কথা সামনে আনছে।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, বাংলাদেশ পুলিশের প্রধান চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুনকে সাংবাদিকরা কয়েকবার জিজ্ঞেস করলেও তারা কোনে সদুত্তর দেননি।

তবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কেবল তার বাহিনী পুলিশের তিন জন মৃতের খবরটি নিশ্চিত করেছেন। বলেছেন, আরো ১১০০ জন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন।

রাজধানীর ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কেবলমাত্র সেখানে নিয়ে যাওয়া মানুষের মৃত্যু সংখ্যা নিশ্চিত করতে পেরেছে।

গত সোমবার ঢামেক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলেছে, সেখানে ৬০ জনকে মৃত অবস্থায় সে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে আর ১৯ জন ভর্তির পর বা চিকিৎসা নেবার সময় মৃত্যু বরন করেন। আর চিকিৎসা নেবার তথ্য আছে ১০৭১ জনের। আর গতকাল বুধবার চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান আরো তিনজন।  ৮২ জনের মৃত্যুর খবর সেখান থেকে মিলেছেন।

আর দৈনিক প্রথম আলো যে টালি করেছে তা থেকে পাওয়া যাচ্ছে এক সপ্তাহে ( মঙ্গলবার থেকে বুধবার)  ২০১ জনের মৃত্যু নিশ্চিত হবার খবর।

যার ৮৪ জনই নিহত হয়েছেন গেল শুক্রবার।

কোটা সংস্কার মঞ্চ বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের সর্বশেষ সংবাদ সম্মেলনেও তারা স্পষ্ট করে কোন সংখ্যা বলেননি।

বাংলা আউটলুকের পক্ষ পুলিশ সদরদপ্তরে যোগাযোগ করে এর কোন সদুত্তর পাওয়া যায়নি।

জাতীয় মানবাধিকার কমিশন এর চেয়ারম্যান কামাল উদ্দিন আহমেদ বৃহস্পতিবার বলেন, কমিশনের পক্ষ থেকে সরকারের সাথে যোগাযোগ করা হয়েছে। তবে মৃত্যুর হিসাব নিয়ে তারা এখনো কোন পরিষ্কার ধারনা পাননি।

তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, ‘আমরা এখনো খবর নিচ্ছি প্রকৃত পক্ষে মৃত্যুর মুখে পতিত হয়েছেন। কতগুলো প্রান গিয়েছে।  এবং তার কারণ কী?’

হেফাজতের মৃত্যুর আজও তথ্য নেই

সাম্প্রতিক বছর গুলোতে এতো অল্প সময় এতো মানুষের এধরণের সংঘর্ষে মৃত্যু হবার ঘটনা কম। সর্বশেষ ২০১৩ সালের মে মাসে হেফাজত ইসলাম বাংলাদেশের সঙ্গে নিরাপত্তা বাহিনীর সংঘর্ষে বহু হতাহতের খবর পাওয়া যায়। সরকার সেসময় কোন তদন্ত ছাড়াই তথ্য সরবরাহ করে। তা নিয়ে আজও সংশয় রয়েছে। আর নিজস্ব ফ্যাট ফাইন্ডিং এর উপর ভিত্তি করে প্রাথমিক তালিকা নিয়ে আলোচনায় আসে সংগঠন অধিকার। সরকার কোন তথ্য প্রকাশ না করলেও অধিকারের তথ্য কে বিভ্রান্তিমূলক বলে মামলা ঠুকে দেয় আর তাতে দীর্ঘ বছর পর ২০২৩ সালে শেষের দিকে এসে এসে কারাদণ্ড পান অধিকারের সেক্রেটারি আদিলুর রহমান খান এবং তার সহকর্মী এস এম নাসির উদ্দিন খান এলান। আজও সরকারের পক্ষ থেকে পরিষ্কার করে বা প্রশ্ন দিয়ে তৎকালীন সময়ের হত্যাকাণ্ডের তালিকা প্রকাশ করা হয়নি।

এত মৃত্যু গত জাতীয় নির্বাচনেও হয়নি

২০২৪ সালের জানুয়ারি মাসের বিরোধীদল ব্যতিরেখে দামি প্রার্থীর মধ্য দিয়ে যে নির্বাচন হয় তাতে তার পূর্বে এবং পরে নির্বাচনের দিনে অনেক সহিংসতার খবর পাওয়া যায়।  সে সময় বিরোধীদলের পক্ষ থেকে প্রায় পঁচিশ হাজার নেতাকর্মীকে গ্রেফতারের দাবি করা হয় ফলে অনেকটা আওয়ামী লীগের সঙ্গে তাদের ডামি প্রার্থীদের মধ্যে সহিংসতার খবর সর্বশেষ জাতীয় নির্বাচনে।  এই নির্বাচনেও এত পরিমান মানুষ মারা যায়নি। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে মৃত্যুর খবর প্রকাশ করা হয়নি। পুলিশ সদর দপ্তরও মৃত্যুর পরিসংখ্যান দিতে অপারগতা প্রকাশ করে। মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটি জানায় দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন কেন্দ্রীক কমপক্ষে ৭৭৬ টি ঘটনায় ২৩ জন নিহত ও কমপক্ষে ২৫৬৮ জন আহত।মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান মনে করেন সরকার চাইলে ছয়টি হত্যাকাণ্ড নিয়ে যে বিচার বিভাগীয় তদন্ত দল গঠন করা হয়েছে তার কার্যকরী বাড়িয়ে বাকি ঘটনাগুলো তদন্ত করে দেখতে পারে।

পুলিশের গুলি তদন্ত পুলিশই করবে?

নিহতদের বড় অংশই পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছেন। সে সময় যথাযুক্ত ভাবে গুলি চালানো হয়েছে কিনা কিম্বা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে ঘটনাগুলো ঘটেছে কিনা তা নিরূপণ করার জন্য তদন্ত হওয়া প্রয়োজন বলে মনে করছেন মানবাধিকার কর্মীরা।

মানবাধিকার কর্মী নূর খান লিটন বলছেন ন্যায় বিচারের স্বার্থে নিহত ও আহতদের প্রকৃত সংখ্যা পক্ষ থেকে বিস্তারিত আকারে প্রকাশ করা অত্যন্ত জরুরী।  এবং এ সমস্ত ঘটনার জন্য কিভাবে হয়েছে জনগণের জানা প্রয়োজন রয়েছে এবং এর মধ্য দিয়ে ভবিষ্যতে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা হবে কি না তা প্রকাশ পাবে।

পুলিশের পাশাপাশি পুলিশেরই অন্যান্য ইউনিট বিশেষত র‍্যাব মাঠে থেকে ছাত্রদের আন্দোলনকে প্রতিহত করে।  এর পাশাপাশি সরকার দলের পক্ষ থেকে যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদেরকে আগ্নেয় অস্ত্র ব্যবহার করতে দেখা যায়।

Bangla Outlook

Exit mobile version