Site icon The Bangladesh Chronicle

সরকারের ব্যাংকঋণ নির্ভরতা কমছে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার
প্রকাশ : ১১ নভেম্বর ২০২৫, ০৮: ৫৬
আপডেট : ১১ নভেম্বর ২০২৫, ০৮: ৫৯

উন্নয়ন প্রকল্পের কাজে ধীরগতি ও রাজস্ব আয় প্রবৃদ্ধির কারণে ব্যাংকঋণ নির্ভরতা কমিয়েছে সরকার। চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে (জুলাই-অক্টোবর) ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে সরকারের ঋণ কমেছে প্রায় এক হাজার কোটি টাকা। এ সময় শুধু কেন্দ্রীয় ব্যাংকই নয়, বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকেও সরকারের ঋণ কমেছে। অর্থাৎ, সরকারের আয়ের তুলনায় ব্যয় কম হওয়ায় ব্যাংকঋণের প্রয়োজন কমে এসেছে।

অর্থনীতিবিদসহ সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরকারের ঋণ কমা স্বল্পমেয়াদে ইতিবাচক হলেও উন্নয়ন ব্যয়ে ধীরগতি তথা বড় প্রকল্পগুলোর কাজ যদি দ্রুত অগ্রসর না হয়, তবে অর্থনীতি প্রত্যাশিত গতি পাবে না। বিশেষ করে অবকাঠামো, জ্বালানি ও যোগাযোগ খাতে ধীরগতি বেসরকারি বিনিয়োগকেও প্রভাবিত করতে পারে।

চলতি অর্থবছরের বাজেটে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে নিট এক লাখ চার হাজার কোটি টাকার ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে সরকার। এটি বাজেটে প্রক্ষেপিত মোট ঘাটতির প্রায় ৪৬ শতাংশ এবং গত অর্থবছরের সংশোধিত ব্যাংকঋণের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে প্রায় পাঁচ হাজার কোটি টাকা বেশি।

জানা গেছে, রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর থেকে সরকারের উন্নয়নকাজে ধীরগতি চলছে। অনেক মন্ত্রণালয় ও বিভাগের প্রকল্প বাস্তবায়নের হার তলানিতে রয়েছে। চলতি অর্থবছরে এক হাজার ১৯৮ প্রকল্প চলমান রয়েছে। এর মধ্যে এক হাজার ১৫টি বিনিয়োগ প্রকল্প। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি) সর্বশেষ প্রতিবেদন বলছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) বিভিন্ন প্রকল্পে খরচ হয়েছে মাত্র ১২ হাজার ১৫৮ কোটি টাকা। এটি এ খাতে মোট বরাদ্দ অর্থের মাত্র পাঁচ দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ। অন্যদিকে আলোচ্য তিন মাসে সরকারের রাজস্ব আয়ে ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি হয়েছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে গত বছরের একই সময়ের তুলনায় রাজস্ব আদায় বেড়েছে ২০ দশমিক ৪৫ শতাংশ। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত অর্থবছরের ৩০ জুন শেষে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো থেকে সরকারের মোট ঋণের পুঞ্জীভূত স্থিতি ছিল পাঁচ লাখ ১৭ হাজার ৯৮৬ কোটি টাকা। এটি চলতি অর্থবছরের ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত কমে হয়েছে পাঁচ লাখ ১৫ হাজার ৪৪৫ কোটি টাকা। ফলে অর্থবছরের প্রথম চার মাসে বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে সরকারের ঋণ নেওয়ার পরিমাণ কমেছে প্রায় দুই হাজার ৫৪০ কোটি টাকা। গত অর্থবছরের একই সময়ে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো থেকে সরকারের নেওয়া ঋণের পরিমাণ ছিল ৫৫ হাজার ২১০ কোটি টাকা।

অন্যদিকে গত অর্থবছরের ৩০ জুন শেষে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে নেওয়া সরকারের ঋণের স্থিতি ছিল ৯৮ হাজার ৪২৩ কোটি টাকা, যা চলতি অর্থবছরের ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত কমে হয়েছে ৯৭ হাজার ৫২৪ কোটি টাকা। ফলে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে এই চার মাসে সরকারের ঋণ কমেছে প্রায় ৮৯৯ কোটি টাকা। গত অর্থবছরের প্রথম চার মাসে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে সরকারে ঋণ কমেছিল প্রায় ৪০ হাজার ৬৮৩ কোটি টাকা।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত ৩০ অক্টোবর শেষে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে সরকারের নেওয়া নিট ব্যাংকঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে পাঁচ লাখ ৫০ হাজার ৪০১ কোটি টাকা। গত অর্থবছরের ৩০ জুন শেষে সরকারের নিট ব্যাংকঋণের স্থিতি ছিল পাঁচ লাখ ৫০ হাজার ৯০৪ কোটি টাকা। ফলে চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে সরকারের নিট ঋণ কমেছে প্রায় ৫০৩ কোটি টাকা। গত অর্থবছরের প্রথম চার মাসে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে সরকারের নিট ঋণ নেওয়ার পরিমাণ ছিল ১৫ হাজার ৪৫০ কোটি টাকা।

তবে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে সরকারের নিট ঋণ কমলেও ব্যাংকবহির্ভূত খাত (নন-ব্যাংক) থেকে বেড়েছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত অর্থবছরের ৩০ জুন শেষে নন-ব্যাংকিং উৎস থেকে সরকারের ঋণের স্থিতি ছিল এক লাখ ৪০ হাজার ৬১২ কোটি টাকা, যা চলতি অর্থবছরের ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত বেড়ে হয়েছে এক লাখ ৫০ হাজার ১৭৮ কোটি টাকা।

Exit mobile version