দলটির নেতারা বলছেন, ঢাকায় বড় ধরনের শোডাউনের মধ্য দিয়ে সরকারের প্রতি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিতে চায় বিএনপি। এ ছাড়া বিরোধী দলের সমর্থনকে আরও বড় আকারে দেশে-বিদেশে তুলে ধরতে চাইছেন তারা। তাই যে কোনো মূল্যে মহাসমাবেশে আসার জন্য সারাদেশের নেতাকর্মীকে কঠোর বার্তা দেওয়া হয়েছে। এখান থেকেই পরবর্তী লাগাতার কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে, যার বেশির ভাগ হবে ঢাকাকেন্দ্রিক। তবে মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে সরকার কঠোর হলে ঘেরাও ও অবরোধের মতো কর্মসূচি আসতে পারে।
মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীকে উজ্জীবিত করতে হাইকমান্ডের বার্তা নিয়ে ইতোমধ্যে তৃণমূল সফর করছেন কেন্দ্রীয় নেতারা। সেখানে দলীয় নেতাকর্মীকে সতর্ক থেকে কর্মসূচি সফলের পাশাপাশি গ্রেপ্তার এড়াতে নানা দিকনির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে। শান্তিপূর্ণ এ কর্মসূচিতে আগ বাড়িয়ে সরকারের সঙ্গে কোনো সংঘাতে না যাওয়ারও পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। তবে আঘাত এলে পাল্টা প্রতিরোধ গড়ে তোলার মৌখিক নির্দেশনা রয়েছে।
কর্মসূচিতে সরকারের বাধা, গণপরিবহন ধর্মঘট, পথে পথে তল্লাশিসহ অন্যান্য প্রতিবন্ধকতা মাথায় রেখে পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। প্রচারণা এগিয়ে নিতে নেওয়া হচ্ছে একগুচ্ছ কর্মসূচি। সমাবেশের কর্মপরিকল্পনা ঠিক করতে গতকাল রোববার নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলের যৌথ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে দায়িত্বশীল প্রত্যেক নেতাকে সমাবেশ সফল করতে সর্বোচ্চ ভূমিকা পালন করতে বলা হয়েছে। ওই দিন শুধু দলের নেতাকর্মী নন, সাধারণ মানুষের উপস্থিতিকেও প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে।বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, এই আন্দোলন ক্ষমতার লড়াই নয়; দেশটাকে বাঁচানোর লড়াই, মানুষের মুক্তির লড়াই। এ ধরনের স্বৈরাচারী সরকার কী কী করতে পারে, তা তারা জানেন। ক্ষমতায় টিকে থাকতে তাদের শেষ ভরসা হচ্ছে গ্রেপ্তার, সাজা। কিন্তু কত লোককে তারা গ্রেপ্তার করবে? এসব করেও এবার সরকারের শেষ রক্ষা হবে না। জনগণের অংশগ্রহণে গণতন্ত্রের বিজয় আসবেই।
টার্গেট নয়াপল্টন
নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এ মহাসমাবেশ করার সর্বোচ্চ চেষ্টা করবে বিএনপি। ২৮ অক্টোবর সরকারি ছুটির দিন হওয়ায় যান চলাচল কম থাকে। ফলে জনদুর্ভোগ কম হবে। এ ছাড়া একই স্থানে গত ২৮ জুলাই মহাসমাবেশ হয়েছে। ১৮ অক্টোবরও জনসমাবেশ হয়েছে। তাই সরকারের কোনো অজুহাত তারা শুনবেন না। এরই মধ্যে গত শনিবার মহাসমাবেশের অনুমতি চেয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কাছে লিখিত আবেদনও করেছে দলটি। এদিন রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে দুপুর ২টায় এ সমাবেশ করতে চান তারা।
জেলা ও বিভাগে ছুটছেন কেন্দ্রীয় নেতারা
শুধু মহাসমাবেশে উপস্থিতি বাড়ানোর জন্যই নয়, আন্দোলন নিয়ে দলের বার্তা পৌঁছে দিতে প্রতিটি জেলা ও বিভাগীয় শহরে ছুটছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা। ২৮ অক্টোবর সমাবেশে হাজির হতে এখানে যেমন কড়া বার্তা রয়েছে, তেমনি আগামীতে যে কোনো কর্মসূচি পালনে সর্বোচ্চ ভূমিকা পালনেরও কঠোর হুঁশিয়ারি রয়েছে। জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের নেতাকর্মীকে যে কোনো সময়ের যে কোনো কর্মসূচির জন্য প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে বলা হচ্ছে। বিএনপির হাইকমান্ডের নির্দেশ পাওয়ামাত্রই যাতে নেতাকর্মী কর্মসূচিতে অংশ নিতে পারেন, তেমন প্রস্তুতি নিতে বলা হচ্ছে। নেতাকর্মী যার যার জেলাতেই অবস্থান করবেন।
ঢাকামুখী নেতাকর্মী
পাঁচ দিন বাকি থাকতেই বিভিন্ন জেলার নেতাকর্মী ঢাকামুখী হয়েছেন। পূজার ছুটির মধ্যেই একটি বড় অংশ কর্মসূচি পালনে ঢাকায় আসতে শুরু করেছে। সরকারের বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা মাথায় রেখেই আগেভাগে তারা এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে জানান। তৃণমূল পর্যায়ের একাধিক নেতাকর্মী জানান, তাদের কর্মসূচি ঘিরে প্রতিবার সরকার ইচ্ছা করেই উত্তেজনা সৃষ্টি করে। সারাদেশে নেতাকর্মীকে গণগ্রেপ্তার থেকে শুরু করে বাড়ি বাড়ি তল্লাশি, সরকারি দলের হুমকি ও হামলা বেড়ে যায়। কিন্তু এসবকে পরোয়া না করে তাদের মাঠে নামতে হয়। এবারও এর ব্যতিক্রম হবে না। এরই মধ্যে গ্রেপ্তারের ভয়ে তারা বাড়িছাড়া; তবে মাঠছাড়া হবেন না। যে কোনো মূল্যে তারা কর্মসূচি বাস্তবায়ন করবেন। জেলা-উপজেলা পর্যায়ের নেতাকর্মীও বিভিন্ন উপায়ে যথাসময়ে ঢাকায় আসার পরিকল্পনা করছেন।
সরকারের ফাঁদে পা দেবে না নেতাকর্মীরা
কর্মসূচি ঘিরে সরকারের হুঙ্কার, প্রতিবন্ধকতা কিংবা হামলা-মামলাকে গুরুত্ব না দিয়ে নীরবে নিজেদের মতো করে কর্মসূচি সফল করার আয়োজন চলছে। সরকারের ফাঁদে পা না দিয়ে যে কোনো উপায়ে স্মরণকালের সবচেয়ে বড় সমাবেশ করতে বদ্ধপরিকর দলের হাইকমান্ড। গত বছরের ১০ ডিসেম্বর ঢাকা বিভাগীয় গণসমাবেশ উপলক্ষে যেভাবে দলীয় কার্যালয়ের সামনে আগেভাগে এবং দিনরাত নেতাকর্মীর শোডাউন, কার্যালয়ের নিচে রান্নার ব্যবস্থাসহ অন্যান্য আনুষঙ্গিক বিষয়কে এবার কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হবে; যাতে সমাবেশে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে কোনো সুযোগ না পায়। এ ছাড়া বক্তব্য-বিবৃতিতেও যাতে কোনো উত্তেজনা সৃষ্টি না হয়, সেদিকেও সতর্ক রয়েছে দলের হাইকমান্ড। শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি অনুষ্ঠানে সব আয়োজনই থাকছে এবারের মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে।
বিএনপি নেতারা জানান, ২৮ অক্টোবর সরকার পতনে বিশেষ কোনো দিন-তারিখ নয়; এখান থেকে তাদের পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। তাদের চলমান গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে একটি চূড়ান্ত রূপ দিতে ঢাকায় গণজমায়েত করা হবে। এতে কয়েক লাখ লোক জড়ো করে শোডাউনের মধ্য দিয়ে নিজেদের সক্ষমতা জানান দেওয়াই হচ্ছে তাদের প্রধান লক্ষ্য। পরিকল্পনা অনুযায়ী এই গণজমায়েত কর্মসূচিতে নিজেদের শক্তির জানান দেওয়ার পাশাপাশি এক দফা আন্দোলনের নতুন দিকনির্দেশনা থাকবে।
ঢাকার প্রস্তুতি
মহাসমাবেশে সর্বোচ্চ সাংগঠনিক শক্তি দেখাতে প্রায় প্রতিদিনই প্রস্তুতি সভা করছেন দলটির ঢাকার নেতাকর্মীরা। সমাবেশ সফল করতে ঢাকা বিভাগের প্রতিটি সাংগঠনিক জেলাকে নানা নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে। বিএনপির পাশাপাশি অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীর জন্যও রয়েছে নানাবিধ দিকনির্দেশনা। সর্বোচ্চ লোকসমাগম ঘটাতে নেওয়া হচ্ছে প্রস্তুতি। সমাবেশকে সফল করতে মহানগরীর প্রতিটি ওয়ার্ড ও থানায় নেতাকর্মীকে সংগঠিত করা হচ্ছে; তাদের নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে। এরই মধ্যে প্রতিটি এলাকায় বিএনপির নেতাকর্মীর মধ্যে দেখা দিয়েছে প্রাণচাঞ্চল্য। ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপির নেতাকর্মীরা দলের হাইকমান্ডকে ‘আলাদা’ কিছু করে দেখাতে এবার মরিয়া। বিএনপির বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের নেতারাও শুরু করেছেন মহাসমাবেশের প্রস্তুতি সভা। গতকাল কেন্দ্রীয় ছাত্রদল ও যুবদলের প্রস্তুতি সভা হয়েছে। স্বেচ্ছাসেবক দলসহ অন্যান্য অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর প্রস্তুতিও চলছে সমানতালে।
বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, মহাসমাবেশের মধ্য দিয়ে মহাযাত্রা শুরু হবে; দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত যা চলমান থাকবে। এমন প্রেক্ষাপটে সরকারের পক্ষ থেকেও এই সমাবেশ ঘিরে নানা বক্তব্য, পাল্টা কর্মসূচি আমলে নিচ্ছেন না দলটির হাইকমান্ড। যে কোনো মূল্যে কর্মসূচি বাস্তবায়ন করতে এরই মধ্যে তৃণমূলে নানা নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।