Site icon The Bangladesh Chronicle

সংস্কার কমিশনে নাখোশ বিএনপিসহ কয়েক দল

সংস্কার কমিশনে নাখোশ বিএনপিসহ কয়েক দল

সংবিধান ও রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান সংস্কারে গঠিত কমিশনগুলোর কয়েক সদস্যের অতীত ভূমিকা নিয়ে আপত্তি বিএনপির। আলোচনা ছাড়াই ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার ছয়টি কমিশনের প্রধান ও পরে সদস্য ঠিক করায় নাখোশ ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া অধিকাংশ রাজনৈতিক দল। এমন পরিস্থিতিতে আজ শনিবার বিএনপি, জামায়াতে ইসলামীসহ কয়েকটি দলের সঙ্গে সংলাপে বসছেন ড. ইউনূস।

সরকারি ভাষ্য অনুযায়ী, সংস্কারে গঠিত কমিশনের বিষয় ছাড়াও আলোচনা হবে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে। দলগুলো আধাঘণ্টা করে সময় পাবে আলোচনা করার। এ নিয়ে অখুশি দলগুলো।
বেলা আড়াইটায় বিএনপি, ৩টায় জামায়াত, সাড়ে ৩টায় গণতন্ত্র মঞ্চ, বিকেল ৪টায় বাম গণতান্ত্রিক জোট, সাড়ে ৪টায় হেফাজতে ইসলাম, ৫টায় ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ও সাড়ে ৫টায় এবি পার্টিকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে প্রধান উপদেষ্টার সরকারি বাসভবন যমুনায়। বিএনপির নেতৃত্ব দেবেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

সংলাপে কতগুলো দলকে ডাকা হয়েছে, তা গতকাল রাত পর্যন্ত জানা যায়নি। তবে ডাক পায়নি আওয়ামী লীগ আমলে সরকারের সুরে কথা বলে গৃহপালিত বিরোধী দলের তকমা পাওয়া জাতীয় পার্টি (জাপা)। আবার হেফাজত রাজনৈতিক দল না হলেও আমন্ত্রণ পেয়েছে। তাদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নিবন্ধিত খেলাফত মজলিসের দুই অংশ, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম এবং অনিবন্ধিত দলগুলোকে পৃথকভাবে ডাকা হয়নি।
গত ১১ সেপ্টেম্বর জাতির উদ্দেশে ভাষণে ড. ইউনূস নির্বাচন ব্যবস্থা, পুলিশ, বিচার বিভাগ, দুর্নীতি দমন কমিশন, জনপ্রশাসন এবং সংবিধান সংস্কারে ছয়টি কমিশন গঠন ও কমিশনপ্রধানদের নাম ঘোষণা করেন। ১ অক্টোবর থেকে কমিশনগুলোর কাজ শুরুর কথা থাকলেও তা হয়নি। গত বৃহস্পতিবার রাতে কমিশনগুলোতে সদস্য নিয়োগ করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।
রাজনৈতিক সূত্রগুলো জানিয়েছে, কমিশনের প্রধান ও সদস্য নিয়োগের ক্ষেত্রে সরকার মতামত নেয়নি। এ কর্মপদ্ধতিকে কালক্ষেপণ বলে মনে করছে কয়েকটি রাজনৈতিক দল। আমন্ত্রণ পাওয়া দলের নেতারা জানিয়েছেন, তারা প্রধান উপদেষ্টার কথা শুনবেন। রাষ্ট্র সংস্কার ও নির্বাচনের রোডম্যাপ বিষয়ে সরকারের মনোভাব জানতে চাইবেন।

জেসমিন টুলী ও আব্দুল আলীমে আপত্তি
সূত্র জানিয়েছে, নির্বাচন কমিশন (ইসি) সংস্কারে গঠিত কমিশনের দুই সদস্য নিয়ে আপত্তি রয়েছে বিএনপির। ইসির  সাবেক অতিরিক্ত সচিব জেসমিন টুলী ও সাবেক সচিব আব্দুল আলীমের অতীত ভূমিকার কারণে এ আপত্তি।

কয়েকটি দলের নেতাদের ভাষ্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রোকেয়া হলের ছাত্রলীগ নেতা ছিলেন জেসমিন টুলী। ২০০১ সালের নির্বাচনে তৎকালীন উপসচিব হিসেবে তাঁর ভূমিকা ছিল বিএনপির বিরুদ্ধে। দলটির প্রার্থী মির্জা আব্বাস, প্রয়াত সাদেক হোসেন খোকা, বগুড়ার হেলালুজ্জামান তালুকদার লালু, মেজর মান্নানসহ গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের আসনে ভৌতিক ভোটার তালিকা করা হয়েছিল। ভোটকেন্দ্রের নথি গায়েবেও জড়িত ছিলেন টুলী। প্রধান নির্বাচন কমিশনারের নির্দেশের পর তাঁর কক্ষ থেকে নথিগুলো পাওয়া যায় বলে দাবি কয়েক নেতার।
নির্বাচনী আসন অসামঞ্জস্যপূর্ণ পুনর্বিন্যাসের জন্য জেসমিন টুলীকে দায়ী করেছেন কয়েক নেতা। তাদের ভাষ্য, ২০১৪ সালের বিতর্কিত ও একতরফা নির্বাচন আয়োজনে সাবেক এই অতিরিক্ত সচিবের ভূমিকা ছিল। সাবেক সচিব আব্দুল আলীমের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ ঘনিষ্ঠতার অভিযোগ রয়েছে। সূত্র জানিয়েছে, এসব অভিযোগ সংলাপে প্রধান উপদেষ্টাকে জানানো হবে।

আলী ইমাম মজুমদার ও আহসান কিবরিয়ায় ক্ষোভ
অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদার ও প্রধান উপদেষ্টা কার্যালয়ের মহাপরিচালক (প্রশাসন) আহসান কিবরিয়া সিদ্দিকীর কার্যক্রম নিয়েও বিভিন্ন দলের নেতারা ক্ষোভের কথা জানিয়েছেন। তাদের বিষয়ও সংলাপে নেতারা তুলবেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে। শেখ হাসিনার আমলে নিয়োগ পাওয়া এক বিচারপতিকে কমিশনের সদস্য করায় আপত্তি রয়েছে একটি ধর্মভিত্তিক দলের।

রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার এটি হবে তৃতীয় দফা সংলাপ। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, ‘ড. ইউনূসের আমন্ত্রণে আমরা যাব। এর চেয়ে বেশি কিছু বলার নেই।’

গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘সরকারের প্রধান কী বলতে চান তা শুনব।’ ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমান বলেন, ‘আমাদের প্রধান উপদেষ্টা ডেকেছেন। দেখি তিনি কী বলেন।’

সংলাপে জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান, বাম গণতান্ত্রিক জোটের (সিপিবি, বাসদ খালেকুজ্জামান, বাসদ (মার্কসবাদী), গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টি, বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগ, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক পার্টি) সমন্বয়ক মাসুদ রানা, গণতন্ত্র মঞ্চের (জেএসডি, নাগরিক ঐক্য, বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, ভাসানী অনুসারী পরিষদ, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন) মাহমুদুর রহমান মান্না, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের চেয়ারম্যান চরমোনাই পীর মাওলানা সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম, হেফাজতে ইসলামের মহাসচিব মাওলানা সাজেদুর রহমান, এবি পার্টির এএফএম সোলায়মান চৌধুরী নিজ নিজ দলের নেতৃত্ব দেবেন।

samakal

Exit mobile version