অবাধ, সুষ্ঠু, এবং শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠানে সরকারের তরফে দফায় দফায় অঙ্গীকার ব্যক্ত করা হলেও যুক্তরাষ্ট্র কেন আশ্বস্ত হতে পারছে না? এমন প্রশ্নে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, এটা যুক্তরাষ্ট্রই ভালো বলতে পারবে। এ বিষয়ে মার্কিন প্রতিনিধিদের সরাসরি জিজ্ঞাসা করতে পরামর্শ দেন সচিব। স্মরণ করা যায়, দু’দিন আগে নির্বাচন ও বিদ্যমান রাজনৈতিক সংকট সমাধানে গঠনমূলক ও উন্মুক্ত সংলাপের পরামর্শ দেয় সদ্য ঢাকা সফর করে যাওয়া যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক-নির্বাচন পর্যবেক্ষক দল। যুক্তরাষ্ট্রের দুই প্রধান রাজনৈতিক দল রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাট পার্টির থিঙ্ক ট্যাঙ্ক হিসেবে পরিচিত ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইনস্টিটিউট (আইআরআই) এবং ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক ইনস্টিটিউটের (এনডিআই) ৬ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল গত ৮ থেকে ১১ই অক্টোবর ঢাকায় ছিল।
ওয়শিংটনে ফিরে তারা তাদের সফরের ফাইন্ডিংস বা পর্যবেক্ষণ তুলে ধরে। বাংলাদেশের বিদ্যমান রাজনৈতিক বাস্তবতায় জরুরি সংলাপ আয়োজনসহ ৫ দফা সুপারিশ সংবলিত যৌথ ওই রিপের্টে বলা হয়, এদেশে শক্তিশালী গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের রীতি রয়েছে। আছে গতিশীল মিডিয়া, সক্রিয় নাগরিক সমাজ, রাজনীতিতে যুক্ত নাগরিকরা। বাংলাদেশ কয়েক দশকে শক্তিশালী অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। ২০৪১ সালের মধ্যে এ দেশের উন্নত হওয়ার ভিশন রয়েছে। তা সত্ত্বেও বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক যাত্রা চ্যালেঞ্জের মুখে। বিশেষত বিদ্যমান রাজনৈতিক পরিবেশ নির্বাচনী সততার প্রতি বড় রকমের বাধা সৃষ্টি করছে। এর মধ্যে আছে আপসহীন এবং জিরো-সাম (সবকিছু অথবা কিছুই না) রাজনীতি। উচ্চমাত্রায় বাগাড়ম্বরতা, রাজনৈতিক সহিংসতা, অনিশ্চয়তা ও ভীতির বিস্তৃত আবহ, নাগরিক সমাজ ও স্বাধীনভাবে মত প্রকাশের স্থান সংকুচিত হয়ে আসা। এ ছাড়া আছে নাগরিক, রাজনৈতিক নেতা এবং এর অংশীদারদের মধ্যে আস্থার সংকট। নারী, যুবশ্রেণি ও অন্য প্রান্তিক গ্রুপগুলো অংশগ্রহণের উল্লেখযোগ্য বাধাও বর্তমান, যা গণতান্ত্রিক মূলনীতির প্রতি চ্যালেঞ্জ বা হুমকি। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্র মনে করে নির্বাচনের গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু হতে পারে পরিমিত কথাবার্তা, উন্মুক্ত এবং গঠনমূলক সংলাপ। বলা হয়, মত প্রকাশের স্বাধীনতা এবং নাগরিক সমাজের কথা বলার স্থান নিশ্চিত করতে হবে, যেখানে ভিন্নমতাবলম্বীদের প্রতি সম্মান দেখানো হবে। সবাইকে অহিংস থাকার প্রতিশ্রুতি দিতে হবে এবং রাজনৈতিক সহিংসতাকারীদের জবাবদিহিতায় আনতে হবে। সব দলকে অর্থবহ রাজনৈতিক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। এর মধ্যে থাকবে স্বাধীন নির্বাচন ব্যবস্থাপনাকে শক্তিশালী করা।
পর্যবেক্ষক দলের বিস্তৃত ওই রিপোর্ট বিষয়ে সোমবার পররাষ্ট্র সচিবসহ সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপে মার্কিন উপ-সহকারী মন্ত্রী আফরিন আখতার জানান, বাইডেন প্রশাসন রিপোর্টটি ‘এনডোর্স’ করেছে। এটি বাংলাদেশ সরকার এনডোর্স করে কি-না? এমন প্রশ্নে সিনিয়র সচিব সচিব মাসুদ বিন মোমেন বলেন, আমরা তা এখানো বিচার বিশ্লেষণ করছি। নির্বাচন কমিশনও এটা দেখছে।
উল্লেখ্য, বৈঠক শেষে মার্কিন দূতাবাস যে বিবৃতি দিয়েছে তাতে জানানো হয়, বাংলাদেশে একটি অবাধ, সুষ্ঠু এবং শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের তাগিদ পুনর্ব্যক্ত করেছেন ঢাকা সফররত যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক ব্যুরোর অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি আফরিন আখতার। সোমবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেনের সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি। বিবৃতিতে বলা হয়, বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্র উভয়েই শান্তিপূর্ণভাবে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন চায়। পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন ও মহাপরিচালক খন্দকার মাসুদুল আলমের সঙ্গে বৈঠক করে আমরা (মার্কিন প্রতিনিধিদল) আনন্দিত। বৈঠকে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার শক্তিশালী বহুমুখী দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক এবং এর অনেক দিক নিয়ে আলোচনা হয়েছে জানিয়ে বিবৃতিতে আরও বলা হয়, মার্কিন প্রত্যক্ষ বিনিয়োগ ও বাণিজ্য, দুই দেশের দীর্ঘস্থায়ী উন্নয়ন অংশীদারিত্ব, মধ্যপ্রাচ্য, মার্কিন নির্বাচনী পর্যবেক্ষক দলের সামপ্রতিক সফর, রোহিঙ্গা শরণার্থী ইত্যাদি ইস্যু আলোচনায় স্থান পেয়েছে। দূতাবাসের অফিসিয়াল ফেসবুকে প্রচারিত ওই পোস্টে বৈঠকের বেশ কয়েকটি ছবি যুক্ত করেছে মার্কিন দূতাবাস। বৈঠকে ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস্ উপস্থিত ছিলেন।
মানবজমিন