Site icon The Bangladesh Chronicle

শেষটা রাঙাতে পারলো না বাংলাদেশ

সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডে ম্যাচে জয় পেয়েছে আফগানিস্তান। – ছবি : নয়া দিগন্ত


তিনবার জীবন পেলেন রহমানুল্লাহ গুরবাজ। ব্যাট হাতে খেললেন ১০৬ রানের দারুণ অপরাজিত ইনিংস। সাথে রহমতউল্লার দায়িত্বশীল ইনিংস। সব মিলিয়ে তৃতীয় ওয়ানডেতে দুরন্তরূপেই দেখা গেল আফগানদের।

বল হাতে বাংলাদেশকে ২০০ রানের নিচে গুটিয়ে দেয়ার পর ব্যাট হাতেও চমক সফরকারীদের। ৭ উইকেটের দারুণ জয়ে হোয়াইটওয়াশ এড়ালো আফগানিস্তান।

টানা দুই ম্যাচ জেতা বাংলাদেশের শেষটা রাঙানো হলো না। হারতে হলো বাজেভাবে। এই হারে র‌্যাঙ্কিংয়ে ছয়েও উঠা হলো না তামিমদের।

সোমবার চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে আগে ব্যাট করতে নেমে ৪৫.৫ ওভারে মাত্র ১৯২ রানে গুটিয়ে যায় বাংলাদেশ। জবাবে আফগানিস্তান লক্ষ্যে পৌঁছায় তিন উইকেট হারিয়ে, ৫৯ বল হাতে রেখে।

তিন ম্যাচ সিরিজে ২-১ ব্যবধানে জিতল বাংলাদেশ।

সেঞ্চুরির সুবাদে ম্যাচ সেরার পুরস্কার জেতেন আফগান ওপেনার রহমানউল্লাহ গুরবাজ।

বড় লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে উদ্বোধনী জুটিতে আফগানদের হয়ে দারুণ শুরু করেন রহমানুল্লাহ গুরবাজ ও রিয়াজ হোসেন। শেষ পর্যন্ত এই জুটি ভাঙেন সাকিব আল হাসান দলীয় ৭৯ রানের মাথায়। ৪৯ বলে ৩৫ রান করে স্টাম্পিংয়ের শিকার হন রিয়াজ হাসান। এরপরের গল্পটা আফগানদেরই। দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে দলকে প্রায় জয়ের কাছাকাছি নিয়ে যান গুরবাজ ও রহমত।

৫৩ বলে ওয়ানডে ক্যারিয়ারের প্রথম ফিফটির দেখা পান গুরবাজ। এরপর শরিফুলের তিন ওভারে তিনবার জীবন পান গুরবাজ। আউট করার সুযোগ নষ্ট করেন দুইবার মুশফিক, একবার মাহমুদউল্লাহ। গুরবাজ ও রহমত শাহের শতরানের জুটি শেষ পর্যন্ত ভাঙেন মেহেদী হাসান মিরাজ। তার বলে রহমতশাহকে স্টাম্পিং করেন মুশফিক। ফিফটি থেকে ৩ রান দূরে থাকতে বিদায় নেন রহমত। ৬৭ বলে ৩ চারে ৪৭ রান করেন রহমত।

দলীয় স্কোরে ৪ রান যোগ হতে আফগান শিবিরে আবার মিরাজের আঘাত। এলবির ফাদে ফেলেন আফগান অধিনায়ক হাসমতউল্লাহকে। রিভিউ নিয়েও কাজ হয়নি। ৭ বলে ২ রান করে ফেরেন তিনি। শেষের দিকে সেঞ্চুরি করতে একটু বেগ পেতে হয়েছে রহমানুল্লাহকে। ১০৩ বলে তিনি স্পর্শ করেন তিন অঙ্কের ম্যাজিক ফিগার। ওয়ানডে ক্যারিয়ারে তৃতীয় শতক এটি তার। নেই কোনো ফিফটি। তার মানে ফিফটি করা মানেই তা শতকে রূপ দেয়া রহমানউল্লাহর কাজ।

শেষ পর্যন্ত রহমানউল্লাহ অপরাজিত থাকেন ১১০ বলে ১০৬ রান করে। তার ইনিংসে ছিল ৭টি চার ও ৪টি ছক্কার মার। নাজিবুল্লাহ জাদরান ৮ বলে থাকেন ১ রানে অপরাজিত।

বল হাতে বাংলাদেশের ইনিংসটা বড়ই বিবর্ণ। মিরাজ দুটি ও সাকিব পান এক উইকেট। আগের দুই ম্যাচে দাপট দেখানো তিন পেসার তাসকিন, মোস্তাফিজ ও শরিফুল পাননি উইকেটের দেখা।

এর আগে টস জিতে আগে ব্যাট করতে নামা বাংলাদেশের শুরুটা খুবই ধীরলয়ের। লিটন রানে থাকলেও তামিম ছিলেন ছন্দহীন। ১১তম ওভারে ভাঙে উদ্বোধনী জুটি। টানা তিন ম্যাচে আফগান পেসার ফজলহক ফারুকির বলে আউট হন তামিম। প্রথম দুই ম্যাচে এলবির শিকার হলেও তৃতীয় ম্যাচে দুর্দান্ত ইনসুইঙ্গারে হয়ে যান বোল্ড। ২৫ বলে ১ চারে তামিম করেন ১১ রান। বাংলাদেশ সিরিজ জিতলেও তিন ম্যাচ মিলে তামিমের রান ৩১, যা বড়ই হতাশার।

তামিমের বিদায়ের পর সাকিবের সাথে রানের চাকা সচল রাখেন লিটন দাস। ৫০তম ওয়ানডে ক্যারিয়ারে তিনি পেয়ে যান চতুর্থ ফিফটি। সাথে পূর্ণ করেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে চার হাজার রান। ফিফটি করতে লিটন বল খরচ করেন ৬৩টি। যার মধ্যে ছিল ৫টি চারের মার।

দলীয় ১০৪ রানে ভাঙে দ্বিতীয় জুটি। বিদায় নেন সাকিব আল হাসান। আজমতউল্লাহ ওমারজাইয়ের বলে বোল্ড হয়ে ফেরেন তিনি। ৩৬ বলে ৩ চারে ৩০ রান করে তারকা এই অলরাউন্ডার।

সাকিবের বিদায়ের পর দ্রুত আরো দুটি গুরুত্বপূর্ণ উইকেট হারায় বাংলাদেশ। দলীয় ১২১ রানে সাজঘরে ফেরেন মুশফিকুর রহিম। রশিদ খানের বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন তিনি। ১৫ বল খেলে তিনি করেন ৭ রান। বাউন্ডারি নেই একটিও। দলীয় স্কোরে ৩ রান যোগ হতেই হতাশ করেন তরুণ ইয়াসির আলী। তিনিও রশিদ খানের শিকার। ৪ বলে তিনি করেন ১ রান। ওয়ানডে ক্রিকেটে প্রথম রানের খাতা খুললেন তিনি। প্রথম ম্যাচে অভিষেক হয় তার। আউট হয়েছিলেন শূন্য রানে। দ্বিতীয় ম্যাচে ব্যাট করার সুযোগ পাননি। তৃতীয় ম্যাচে কিছু করার সুযোগ ছিল। কিন্তু পারলেন না তিনি।

মাহমুদউল্লাহর সাথে লিটনের জুটি জমতে শুরু করলেও দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। টানা দ্বিতীয় ম্যাচে সেঞ্চুরির আভাস দিয়েও হতাশ করেন লিটন। দলীয় ১৫৩ রানে বিদায় নেন লিটন। মোহাম্মদ নবীর বলে তিনি ক্যাচ দেন গুলবাদিন নাইবের হাতে। যাওয়ার আগে করে যান ১১৩ বলে ৭ চারে সর্বোচ্চ ৮৬ রান।

এরপর একপ্রান্ত আগলে রেখে মাহমুদউল্লাহ খেলতে থাকলেও অপর প্রান্তে ছিল উইকেট যাওয়ার মিছিল। দলকে ভীষণ হতাশ করে একে একে বিদায় নেন আফিফ হোসেন (৬ বলে ৫ রান), মেহেদী হাসান মিরাজ (১২ বলে ৬ রান, রান আউট), তাসকিন আহমেদ (৬ বলে ০), শরিফুল ইসলাম (৯ বলে ৭ রান, রান আউট)। শেষ ব্যাটার মোস্তাফিজ হন রান আউট, করেন ২ বলে ১ রান। মাহমুদুল্লাহ থাকেন ২৯ রানে অপরাজিত। ৫৩ বলের ইনিংসে তিনি হাঁকাতে পারেননি একটি বাউন্ডারিও।

বল হাতে আফগানিস্তানের হয়ে রশিদ খান তিনটি, নবী দুটি, ফারুকি ও ওমারজাই একটি করে উইকেট নেন।

তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ শেষ। আগামী ৩ মার্চ মিরপুরে অনুষ্ঠিত হবে প্রথম টি-টোয়েন্টি। দ্বিতীয় ও শেষ টি-টোয়েন্টি ৫ মার্চ।

Exit mobile version