Site icon The Bangladesh Chronicle

শুক্রবারের সহিংসতায় সারা দেশে ৫৬ জন নিহত, তিনদিনে শতাধিক মৃত্যু

দেশ জুড়ে কারফিউ ও সেনা মোতায়েন- এভাবে প্রধান শিরোনাম করেছে ইত্তেফাক।

খবরে বলা হচ্ছে প্রথম ধাপে শুক্রবার রাত ১২টা থেকে শনিবার দুপুর ১২টিা পর্যন্ত কারফিউ চলবে। দ্বিতীয় ধাপে শনিবার দুপুর ২টা থেকে রবিবার সকাল ১০টা পর্যন্ত জারি থাকবে এই কারফিউ।

শুক্রবার রাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৪ দলীয় জোটের নেতাদের সাথে ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ঊর্ধতন কর্মকর্তাদের সাথে বৈঠক শেষে সেনা মোতায়েনের সিদ্ধান্ত নেন।

সমকালের প্রধান শিরোনাম সহিংসতায় নিহত ৫৬, কারফিউ জারি। খবরে উঠে এসেছে বুধবার তিনদিন ধরে চলা সহিংসতায় সারা দেশে অন্তত ১০০ জন মারা গেছে।

এর মধ্যে শুক্রবার শুধু ঢাকায় সহিংসতায় মারা গেছে অন্তত ৪৪ জন।

শুক্রবার রাত থেকে যে কারফিউ জারি করা হয়েছে, সেটি কতদিন চলবে, এমন প্রশ্নের জবাবে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার হাবিবুর রহমান বলেছেন যতদিন পরিস্থিতি শান্ত না হয় ততদিন কারফিউ চলবে।

সমকালের আরেকটি শিরোনাম, ‘জেলায় জেলায় অসংখ্য সরকারি স্থাপনায় আগুন’। প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, কোটা সংস্কার আন্দোলন নিয়ে চলমান বিক্ষোভকে কেন্দ্র করে শুক্রবারও অসংখ্য সরকারি অফিস ও যানবাহনে হামলা, ভাঙচুর ও আগুন দেয়া হয়েছে।

বিভিন্ন স্থানে পুলিশ-বিজিবির সঙ্গে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী এবং বিএনপি-জামায়াত নেতাকর্মীর সংঘর্ষ হয়েছে। এ সময় যারা আহত হয়েছেন তাদের মধ্যে পুলিশ, র‍্যাব, বিজিবি সদস্য ও সাধারণ মানুষ রয়েছেন।

নিউ এজের খবরের শিরোনাম Hospitals overwhelmed by patients with gunshot wounds.

নিউ এজের এই খবরে বলা হচ্ছে শুক্রবার সারা দেশে সহিংসতায় মারা গেছে ৬৭ জন। এছাড়া দেশের বিভিন্ন জায়গায় সারাদিনব্যাপী চলা সংঘাতে বিভিন্ন হাসপাতালে কয়েক হাজার মানুষ আহত হয়েছে। আহতদের অধিকাংশই হাসপাতালে এসেছেন গুলিবিদ্ধ হয়ে।

মানবজমিনের প্রথম পাতার খবর, ‘ঢামেকে মিনিটে মিনিটে আসছেন গুলিবিদ্ধ ব্যক্তি’। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রক্তমাখা দেহগুলো নিয়ে অ্যাম্বুলেন্সের দীর্ঘ সারি।

মিনিটে মিনিটে সাইরেন বাজিয়ে দ্রুতগতিতে এসে থামছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে।

অ্যাম্বুলেন্স ছাড়াও রিকশা ছাড়াও সিএনজিতেও আসছেন কেউ কেউ। সবাই চলমান কোটা বিরোধী আন্দোলনকে ঘিরে সংঘর্ষে ঢাকার বিভিন্ন এলাকা থেকে গুলিবিদ্ধ হয়ে চিকিৎসা নিতে আসা।

হাসপাতালে আসার পর কাউকে মৃত ঘোষণা করছেন আবার কারো জরুরি চিকিৎসার ব্যবস্থা করছেন।

আহতদের মধ্যে রয়েছে শিশু থেকে শুরু করে নারী, বয়স্ক-যুবক। খবর পেয়ে প্রিয় মানুষকে খুঁজে পেতে হাসপাতালে ছুটে আসেন স্বজনরা।

ইংরেজি দৈনিক দ্য ডেইলি স্টারের শিরোনাম At least 66 more lives lost. অর্থাৎ আরো অন্তত ৬৬ প্রাণ ঝরে গেল।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে শুক্রবার নজিরবিহীন সহিংসতায় রাত পর্যন্ত সারাদেশে অন্তত ৬৬ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। আহত হয়েছেন কয়েক হাজার। আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের সংঘর্ষে এই হতাহতের ঘটনা ঘটে।

এ নিয়ে গত চার দিনের সহিংসতায় অন্তত ১০১ জন মারা গেছেন।

ডেইলি স্টারের পক্ষে শহরের অনেক হাসপাতালের খোঁজ নেয়া সম্ভব হয়নি। ফলে মৃতের সংখ্যা আরো বেশি হতে পারে বলে উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবেদনে।

ইত্তেফাকের প্রথম পাতার খবর, ‘আলোচনায় বসতে ৯ দফা মানার প্রতিশ্রুতি চায় আন্দোলনকারীরা’।

প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, নয় দফা দাবি মানার প্রতিশ্রুতি দেওয়া ও দেশব্যাপী ইন্টারনেট চালু করা হলে তারা সরকারের সাথে আলোচানায় বসবে।

আন্দোলনকারীদের অন্যতম সমন্বয়ক আব্দুল কাদের সাংবাদিকদের বলেছেন, আমরা সমন্বয়করা মিলে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

তাদের নয় দফা দাবির মধ্যে রয়েছে, ছাত্র হত্যার দায় নিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে জাতির কাছে ক্ষমা চাইতে হবে। ছাত্র হত্যার দায়ে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে নিজ নিজ মন্ত্রণালয় ও দল থেকে পদত্যাগ করতে হবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ও বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও প্রক্টরকে পদত্যাগ করতে হবে।

নিহত ও আহত শিক্ষার্থীদের ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। ছাত্র হত্যার দায়ে অভিযুক্ত পুলিশ ও ক্ষমতাসীন দলের সন্ত্রাসীদের আটক করে হত্যা মামলা দায়ের করতে হবে।

দলীয় লেজুরবৃত্তির ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করতে হবে এবং ছাত্র সংসদ চালু করতে হবে। অবিলম্বে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও হল খুলে দিতে হবে।

আন্দোলনে অংশ নেয়া সব শিক্ষার্থী যেন অ্যাকাডেমিক ও প্রশাসনিক কোন ধরনের হয়রানির শিকার না হয় তার নিশ্চয়তা প্রদান করতে হবে।

বণিক বার্তার খবরের শিরোনাম প্রধানমন্ত্রীর স্পেন ও ব্রাজিল সফর বাতিল। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলমান পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রীর পূর্ব নির্ধারিত ২১শে জুলাইয়ের স্পেন সফর ও ২৩ থেকে ২৫শে জুলাই হতে যাওয়া ব্রাজিল সফর বাতিল করা হয়েছে।

নয়া দিগন্তের খবরের শিরোনাম নরসিংদীর কারাগার ভেঙে পালিয়েছে ১২০০ কয়েদি। নরসিংদীর ভেলানগরে দুপুর তিনটার পর লোকজন জড়ো হয়ে জেলখানার সামনে দু’টি ট্রাকে আগুন ধরিয়ে দেয়।

খবরে বলা হচ্ছে সেসময় জেলখানার ভেতরে অল্প সংখ্যক কারারক্ষী ছিলেন। বিপুল সংখ্যক বিক্ষোভকারীদের সামনে নরসিংদীর কারাগারে থাকা কারারক্ষীরা নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ে এবং সেসময় জেল ভেঙে শত শত কয়েদি জেল থেকে বের হয়ে যায় বলে উঠে এসেছে এই খবরে।

‘শেখ হাসিনা কোনো দিনও পালাবেন না – আওয়ামী লীগের সমাবেশে কাদের’ এটি দৈনিক আজকের পত্রিকার প্রথম পাতার একটি শিরোনাম।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, “গুজবে গুজবে আকাশ ভারী হয়ে গেছে। শেখ হাসিনা নাকি স্পেন চলে গেছেন। তিনি লড়াই করতে করতে মরে যাবেন, কিন্তু কোনো দিনও পালিয়ে যাবেন না। একটু আগেও তার নির্দেশনা নিয়ে গায়েবানা জানাজায় এসেছি। তিনি তার বাসভবনে আছেন। তবে ২১শে জুলাই তার স্পেন যাওয়ার কথা রয়েছে।”

রাজধানীর গুলিস্তানে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের সামনে শুক্রবার ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ আয়োজিত সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন ওবায়দুল কাদের।

‘সংঘর্ষে তিন দিনে নিহত ১০৩’ শিরোনামে প্রধান খবর করেছে দৈনিক প্রথম আলো। শুধুমাত্র শুক্রবারের সহিংসতায়ই ৫৬ জনের নিহত ও শত শত মানুষ হওয়ার খবর দিচ্ছে প্রথম আলো।

এই খবরে বলা হয়, নিহত ও আহতদেরে মধ্যে বিক্ষোভকারী, শিক্ষার্থী, সাংবাদিক, পথচারি, রাজনৈতিক দলের কর্মী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য রয়েছেন।

পত্রিকাটির খবরে বলা হয়েছে, সবচেয়ে বেশি নিহতের ঘটনা ঘটেছে বৃহস্পতি ও শুক্রবার এই দুই দিনের সহিংসতায়। এই দুই দিনে নিহত হয়েছে অন্তত ৯৭ জন। আর মঙ্গলবার ৬ জন মারা গেলেও বুধবার সহিংসতায় কারো প্রাণ যায় নি।

খবরে বলা হয় শুক্রবারের সহিংসতায় সারাদেশে যে ৫৬ জন মারা গেছে তার মধ্যে ৪৪ জনই মারা গেছে রাজধানী ঢাকায়।

‘ঢাকা বিছিন্ন চরম দুর্ভোগ’ শিরোনামে দেশ রুপান্তরের খবরে বলা হয়েছে, সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারী ‘শিক্ষার্থীদের কমপ্লিট শাটডাউনে’ সড়ক ও রেলপথে সারা দেশের সঙ্গে ঢাকার যোগাযোগ বিছিন্ন হয়ে গেছে।

এতে বলা হয়, গতকাল শুক্রবার রাজধানী ঢাকা প্রায় বিছিন্ন ছিল। এর আগের দিন বৃহস্পতিবার ঢাকা থেকে কিছু বাস ছেড়ে গেলেও গতকাল কোন বাস চলেনি। ঢাকার সায়েদাবাদ, মহাখালী, গাবতলীসহ বিভিন্ন বাসস্টান্ড থেকে কোন বাস চলতে দেখা যায় নি।

বাসের পাশাপাশি বন্ধ ছিল রেল যোগাযোগ। পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত রেল চলাচলের সম্ভাবনা কম বলে জানিয়েছে রেলওয়ে কর্মকর্তারা।

নয়া দিগন্তের প্রথম পাতার খবর, ‘পুলিশের হেলিকপ্টার থেকে গুলি, শিকার পথচারীরাও’।

প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, বৃহস্পতিবার মেরাদিয়া বাজার এলাকায় আন্দোলনকারীদের সাথে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দফায় দফায় সংঘর্ষ চলে।

বিকেলের দিকে আন্দোলনকারীদের দমাতে অনেক হিমশিম খেতে হয় পুলিশ সদস্যদের। এ সময় আন্দোলনকারীদের নিবৃত্ত করতে বিকেল সাড়ে পাঁচটা থেকে ছয়টা পর্যন্ত পুলিশের হেলিকপ্টার থেকে গুলি ছোড়া হয়।।

হেলিকপ্টার থেকে গুলি ছোড়ার এই দৃশ্যের ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে।

এর আগে বেলা ১১টায় মালিবাগ রেল গেট এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, কোটা সংস্কার আন্দোলনে সমর্থকরা রাস্তা অবরোধের চেষ্টা করছেন।

অপরদিকে পুলিশ তাদের সরিয়ে দিতে পুলিশ টিয়ার শেল ও রাবার বুলেট ছুড়ছে। আন্দোলনকারীরাও পুলিশের ওপর ইট পাটকেল ছোড়ে।

Source: BBC Bangla

Exit mobile version