চলমান কোটাবিরোধী আন্দোলনকে যৌক্তিক আখ্যা দিয়ে দেশের বুদ্ধিজীবী শ্রেণির পাশাপাশি শিক্ষকদেরও সমর্থন পাচ্ছে শিক্ষার্থীরা। যে কারণে আন্দোলন সফলতার মুখ দেখবে বলে শিক্ষার্থীরা মনে করছেন। এদিকে চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে আগামীকাল বুধবার (১০ জুলাই) সারা দেশে অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলন থেকে এই কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’–এর সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচির আওতায় আগামীকাল সকাল ১০টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে সবাই সমবেত হবেন। সেখান থেকে মিছিল করে শাহবাগ মোড়ে গিয়ে সড়ক অবরোধ করা হবে। সূর্যাস্ত পর্যন্ত এই অবরোধ চলবে।
এদিকে মাঠের আন্দোলনের পাশাপাশি বিষয়টিকে আইনীভাবেও মোকাবিলা করছেন শিক্ষার্থীরা। এরই অংশ হিসেবে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি বাতিলের সিদ্ধান্ত অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে মঙ্গলবার আপিল করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থী। বুধবার এই আপিলের শুনানি হবে।
হাইকোর্ট থেকে কাঙ্ক্ষিত রায় না এলে সর্বাত্মক ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচি দিয়ে সারাদেশ অচল করারও পরিকল্পনা করছেন শিক্ষার্থীরা।
এদিকে দুই দিনের ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচির পর মঙ্গলবার সারাদিন শিক্ষার্থীরা এ আন্দোলনের যৌক্তিকতা জনগণের কাছে তুলে ধরতে নানামুখী ক্যাম্পেইন করে। এর মধ্যে সামাজিক মাধ্যমে তারা বেশি সক্রিয় ছিল। এছাড়া আন্দোলনের পাশাপাশি আইনীভাবেও বিষয়টি মোকাবিলা করতে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা।
কোটা আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের একটি সূত্র জানিয়েছে, দুই দিনের ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচিতে তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষকের সমর্থন পেয়েছেন। কট্টর আওয়ামী পন্থী বাদে অনেক শিক্ষকই তাদের বিভিন্নভাবে পাশে থাকছেন। অনেকে ফেসবুকে কোটার বিপক্ষে পোস্ট দিচ্ছেন। এটি আমাদের আন্দোলনের জন্য সহায়ক হচ্ছে। কেননা যৌক্তিক বিষয়গুলো শিক্ষকদের বলতে হয় না।
এছাড়া দেশের বেশ কয়েকজন বুদ্ধিজীবী শ্রেণির লোক ইতিমধ্যে ফেসবুকে কোটা নিয়ে তাদের অবস্থান স্পষ্ট করে পোস্ট দেওয়ায় চলমান আন্দোলন জনগণের মধ্যে বৈধতা পেয়েছে বলে মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্র বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী ও বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সংগঠন আয়শা রহমান।
তিনি বলেন, আমরা রাজপথে আন্দোলন করছি। সাধারণ মানুষ অনেক ভোগান্তিতে পড়েছেন। কিন্তু আমাদের আন্দোলনের ব্যাপারে তাদের কোনো ক্ষোভ দেখিনি। বরং তারা আমাদের উৎসাহ জোগান। তারাও বোঝেন ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা অযৌক্তিক। অথচ এটি আমরা সরকারকে বোঝাতে পারছি না।
এদিকে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের গতি বিবেচনা করে সরকারের মধ্যেও এক ধরনের প্রস্তুতি চলছে বলে জানিয়েছে সূত্র। সরকারের নীতি নির্ধারকরাও একটি সমাধান চাইছেন।
এছাড়া দেশের সার্বিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে আওয়ামী লীগের কোনো নেতা-কর্মীকে শিক্ষকদের পেনশন আন্দোলন ও শিক্ষার্থীদের কোটাবিরোধী আন্দোলনে কোনো প্রকার উস্কানি না দিতে সতর্ক করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী বর্তমানে চার দিনের চীন সফরে রয়েছেন। সেখান থেকে তিনি আন্দোলনের বিষয়ে সার্বক্ষণিক খোঁজখবর রাখছেন বলে মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের জানান।
এসময় তিনি বলেন, সরকার কোটা আন্দোলনকারীদের বিষয়ে আন্তরিক। প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়ে নিয়মিত খোঁজখবর রাখছেন।
এর আগে গত সোমবার দুপুরে ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের চার মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী নিয়ে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন। সেখানে শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত, শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী বেগম শামসুন্নাহার চাপা ও আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া অংশ নেন। ওই বৈঠকে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের চলমান দুটি আন্দোলনের বিষয়েই বিস্তারিত আলোচনা হয় বলে জানা গেছে।
Bangla Outlook