শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (শাবিপ্রবি) পুলিশ দ্বারা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কর্তৃক সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর বর্বরোচিত হামলা দেশের শিক্ষাঙ্গনে এক খারাপ নজির সৃষ্টি করেছে। বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী হলের ছাত্রীদের অভিযোগ ছিল হলের প্রভোস্ট ও সহকারী প্রভোস্টদের বিভিন্ন অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার বিরুদ্ধে।
ছাত্রীরা অভিযোগে বলেছিলেন, হলের ভেতরে তাদের সঙ্গে ভালো আচরণ করা হয় না। খাবার নিুমানের। তাছাড়া নানাভাবে ছাত্রীদের দমিয়ে রাখার চেষ্টা করা হয়। আর এসব করেন প্রভোস্ট নিজেই। এসব অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার বিরুদ্ধে ছাত্রীরা উপাচার্য বরাবর লিখিত অভিযোগ করেন।
শিক্ষার্থীদের দাবির মধ্যে ছিল-বর্তমান প্রভোস্ট কমিটির পদত্যাগ, ছাত্রীবান্ধব নতুন প্রভোস্ট কমিটি গঠন এবং হলের সব অব্যবস্থাপনা দূর করে সুস্থ ও স্বাভাবিক পরিবেশ নিশ্চিত করা। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন শিক্ষার্থীদের দাবি-দাওয়া মানতে কালক্ষেপণ করে। ফলে শিক্ষার্থীরা তাদের যৌক্তিক দাবি আদায়ে বিক্ষোভ-সমাবেশ করেন।
শান্তিপূর্ণ এ সমাবেশে হামলা চালায় বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ। শিক্ষার্থীদের ওপর এ হামলা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডির সামনেই চালানো হয়। এ সময় প্রক্টরিয়াল বডি নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করে।
প্রশ্ন হলো, সাধারণ শিক্ষার্থীদের দমন-পীড়নের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে কেন ছাত্রলীগকে ব্যবহার করতে হলো? ছাত্রলীগের আদর্শ তো এমন ছিল না। সাধারণ শিক্ষার্থীদের যে কোনো যৌক্তিক আন্দোলনে, অধিকার আদায়ে ছাত্রলীগ সংহতি প্রকাশ করবে-এটাই তো ছাত্রলীগের আদর্শ।
সিরাজুন্নেসা চৌধুরী হলের প্রভোস্টকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু মূল সমস্যা আড়াল করে রাখা হয়; অর্থাৎ প্রভোস্টকে অসুস্থতাজনিত ছুটিতে পাঠিয়ে ভারপ্রাপ্ত প্রাধ্যক্ষ নিয়োগ করা হয়। দুই দিন পর ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে সেই প্রভোস্ট তো ঠিকই পদত্যাগ করলেন! তাহলে কেন ছাত্রলীগ ও পুলিশ ডেকে শিক্ষার্থীদের আহত করা হলো?
আন্দোলনের একপর্যায়ে শিক্ষার্থীরা ইট-পাটকেল ছুড়েছে। তাই বলে সাউন্ড গ্রেনেড বা শটগানের মতো অস্ত্র কেন তাদের ওপর প্রয়োগ করা হবে? ঘটনার সময় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া বিভিন্ন ভিডিও ও ছবিতে দেখা গেছে সাউন্ড গ্রেনেড ও শটগানের গুলিতে শিক্ষার্থীরা আহত হয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যদি শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবিগুলো প্রথমেই মেনে নিত, তাহলে পরিস্থিতি এমন হতো না।
দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ দিন দিন বিলীন হয়ে যাচ্ছে। অপরাজনীতি, অপশাসনে ভারাক্রান্ত হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণ হলো শিক্ষার্থী। মধ্যবিত্ত-নিম্নবিত্ত পরিবারের সন্তানরা বড় বড় স্বপ্ন নিয়ে সেখানে পড়তে এসে অনিয়ম, অপশাসন, অব্যবস্থাপনার বেড়াজালে আটকা পড়েন। বিশ্ববিদ্যালয়ে মুক্তচিন্তার চর্চা নেই, মুক্তমতের স্বাধীনতা নেই, নেই সংস্কৃতিচর্চা। মেরুদণ্ডহীন চাটুকারদের দিয়ে চলছে দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো।
পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যরা প্রকৃতপক্ষে উপাচার্য পদের জন্য কতটুকু যোগ্য, এ প্রশ্ন না উঠে পারে না। দেখা যায় রাজনৈতিক ঘনিষ্ঠতা, লবিংয়ের ফলে অনেক অযোগ্য ব্যক্তিই গুরুত্বপূর্ণ এ পদ দখল করে নিচ্ছেন। এক সময় দেখা যেত দেশের কবি, সাহিত্যিক, লেখক, বুদ্ধিজীবী, শিক্ষাবিদসহ বরেণ্য ব্যক্তিরাই উপাচার্য হতেন। আর এখন কারা উপাচার্য হয়ে থাকেন সেটা কারও অজানা নয়। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করতে এ ধারার পরিবর্তন প্রয়োজন।
ইমরান ইমন : গবেষক
emoncolumnist@gmail.com