২০১৩ সালের ৫ মে- ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত, ব্লগারদের বিরুদ্ধে শাস্তির দাবি এবং নারী নীতির বিরোধিতাসহ ১৩ দফা দাবিতে ঢাকার শাপলা চত্বরে অবস্থান নেয় কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক সংগঠন হেফাজতে ইসলাম। তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার হেফাজতকে শাপলা চত্বর থেকে সরে যাওয়ার আহ্বান জানায়। ওইদিন দিনভর উত্তেজনা ও সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে মতিঝিল এলাকায়। শেষ পর্যন্ত মধ্যরাতে চলা যৌথ অভিযানে শাপলা চত্বর ছাড়তে বাধ্য হন হেফাজতের নেতাকর্মীরা।
সেই রাতের অভিযানে হেফাজতের কতজন নেতাকর্মীর মৃত্যু হয়েছে তা নিয়ে নানা বির্তক রয়েছে। কারণ এখন পর্যন্ত সংগঠনটির পক্ষ থেকে কতজনের মৃত্যু হয়েছে, তার তথ্য প্রকাশ করা হয়নি।
এদিকে শাপলা চত্বরে ঐতিহাসিক সমাবেশের একযুগ পূর্ণ হলেও সংগঠনের পক্ষ থেকে এ উপলক্ষ্যে কোনো কর্মসূচি ঘোষণা করেনি হেফাজতে ইসলাম।
হেফাজতের কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির মাওলানা মহিউদ্দিন রব্বানী ঢাকা পোস্টকে বলেন, ৫ মে উপলক্ষ্যে সংগঠনের পক্ষ থেকে কোনও কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়নি। তবে, আগামীকাল খিলগাঁও মাদ্রাসায় ৩ মের সমাবেশ পরবর্তী একটি সমাবেশ ডাকা হয়েছে।
২০১৩ সালের সমাবেশ ও তিন বাহিনীর অভিযানে হেফাজতের কতজন নেতাকর্মী মারা গিয়েছে তার সঠিক তথ্য খুঁজে বের করতে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে জানান মহিউদ্দিন রব্বানী।
তিনি বলেন, আশা করছি আগামী কিছুদিনের মধ্যে সেই দিনের মৃত্যুর সঠিক তথ্য জানাতে পারবো।
২০১৩ সালের পর হেফাজতের অনেক নেতা গ্রেপ্তার ও মামলার মুখোমুখি হন। তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের রোষানলে পড়ে সংগঠনটি এক সময় নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ে। পরবর্তীতে হেফাজতের শীর্ষ নেতৃত্ব ও আওয়ামী লীগ সরকারের মধ্যে সখ্য গড়ে উঠেছিল। ২০১৮ সালের নভেম্বরে ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে কওমি মাদ্রাসার ‘শোকরানা মাহফিলে’ হেফাজতের তৎকালীন আমির প্রয়াত আল্লামা শাহ আহমদ শফি ছিলেন। সেই অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনাকে কওমি জননী উপাধি দিয়েছিলেন তৎকালীন কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড গওহরডাঙ্গার চেয়ারম্যান ও গোপালগঞ্জের গওহরডাঙ্গা মাদ্রাসার মহাপরিচালক মুফতি রুহুল আমীন।
শেখ হাসিনার সরকার হেফাজতের চাপের মুখেই কওমি মাদ্রাসার দাওরায়ে হাদিসকে মাস্টার্সের সমমানের স্বীকৃতি দেওয়াসহ বেশ কিছু দাবি দাওয়া মেনে নিতেও বাধ্য হয়েছিল।
২০১৩ সালের ক্ষত শুকাতে-শুকাতে ২০২১ সালে আবার বড় বিপর্যয়ে পড়ে হেফাজতে ইসলাম। ওই বছর বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীতে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ঢাকা সফরের বিরোধিতা নেওয়া কর্মসূচিকে ঘিরে সারাদেশে সহিংসতায় কমপক্ষে ২১ জনের মৃত্যু হয়েছিলো। ওই ব্যাপাক ধরপাকড় করা হয় সংগঠনটির নেতাকর্মীদের। এতে আবারও সংগঠনটি দুর্বল হয়ে পড়ে। তবে, ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর আবারও হেফাজতে ইসলাম সক্রিয় হয়ে উঠে।
২০১০ সালে যাত্রা শুরু করেছিল হেফাজতে ইসলাম। ২০১১ সালে নারী নীতি প্রণয়নের বিরুদ্ধে হরতাল ডেকেছিল। মূলত ২০১৩ সালের ৫ মের কর্মসূচি ঘিরে আলোচনায় আসে হেফাজত।