Site icon The Bangladesh Chronicle

শর্ত মেনে আইএমএফ’র ঋণ না নেয়ার পরামর্শ এফবিসিসিআই’র

অর্থনৈতিক রিপোর্টার

৬ নভেম্বর ২০২২, রবিবার

ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বারস অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন বলেছেন, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) তাদের ঋণ প্রদানের ক্ষেত্রে শর্ত দেবে, তবে দক্ষতার সঙ্গে আমাদের নেগোসিয়েশন করতে হবে। অবশ্যই আমাদের বৈদেশিক মুদ্রার ঘাটতি মেটানোর দরকার আছে। তার মানে   এ নয়, সবকিছু জলাঞ্জলি দিয়ে আইএমএফ’র কাছ থেকে ঋণ নিয়ে আসতে হবে। বাংলাদেশের অবস্থা এতটা বেগতিক নয় যে, সব শর্ত মেনে ঋণ নিতে হবে।

গতকাল ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) আয়োজিত ‘ইআরএফ ডায়ালগ’-এ সাংবাদিকের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তরে তিনি এ মন্তব্য করেন। ইআরএফ সাধারণ সম্পাদক রাশিদুল ইসলামের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন- সংগঠনের সহ-সভাপতি ও বার্তা সংস্থা এএফপি’র ব্যুরো চিফ এম শফিকুল আলম।
আইএমএফ’র ঋণ নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে জসিম উদ্দিন বলেন, আইএমএফ তাদের ঋণ প্রদানের ক্ষেত্রে শর্ত দেবে। তবে আমাদের নেগসিয়েশন করতে হবে দক্ষতার সঙ্গে। সেই সক্ষমতা আমাদের থাকতে হবে। বৈদেশিক মুদ্রার ঘাটতি মেটাতে আইএমএফ থেকে ঋণ নিতে হবে। যে গ্যাপ আছে সেটা মিনিমাইজ করতে হবে। তার মানে এই নয় যে, আমাদের সবকিছু জলাঞ্জলি দিয়ে তাদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে আসতে হবে।

বাংলাদেশের অবস্থা এতটা বেগতিক নয় যে, সব শর্ত মেনে ঋণ নিতে হবে। তিনি বলেন, তাদের ঋণে তো তারা শর্ত দেবেন। তবে যে শর্ত আমেরিকার জন্য প্রযোজ্য হবে, একই শর্ত বাংলাদেশের জন্য প্রযোজ্য হবে কিনা। যে শর্ত ভারতের জন্য প্রযোজ্য হবে, সেই একই শর্ত বাংলাদেশের জন্য প্রযোজ্য হবে কিনা। সেই সক্ষমতা আমাদের থাকতে হবে তাদের সঙ্গে নেগোসিয়েশন করার।

এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, যেসব পণ্য আমদানির প্রয়োজন বেশি তা দেশে উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব হলে আমদানিতে ডলারের ব্যয় কমে যাবে। তাতে ডলার ঘাটতি কিছুটা লাঘব হবে। এ দিকে নজর দেয়া প্রয়োজন।
বিদ্যমান ঋণের সুদহার বাড়ালে দেশীয় শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হবে উল্লেখ করে এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, দেশে বিনিয়োগ সম্প্রসারণ এবং শিল্প সচল রাখতে ব্যাংক ঋণের সুদহার বাড়ানো যাবে না। সুদহার ৯% তুলে দিলে শিল্প তার সক্ষমতা হারাবে।

জসিম উদ্দিন বলেন, ঋণের সুদহার উঠিয়ে দেয়ার কথা অনেকেই বলছেন। সুদহার না বাড়িয়ে ব্যাংকের সক্ষমতা বাড়ানোর পক্ষে জোরালো মত তুলে ধরেন তিনি। সুদহার বাড়ানো হলে সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে, এমনটা বিশ্বাস করেন না ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠনের সভাপতি।

তিনি বলেন, যখন সুদহার কমানো হয়েছে, তখন দেশে অনেক বিনিয়োগ বেড়েছে। ঋণের সুদহার বাড়ানোর বিষয়ে গবেষণা সংস্থাগুলোর বিভিন্ন ধরনের এজেন্ডা থাকে। তারা একেক জনের প্রতিনিধিত্ব করে এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে চায়। বর্তমান অবস্থায় সুদহার বাড়ালে শিল্প কোথায় যাবে? তিনি বলেন, বাড়তি ব্যয় কমিয়ে ব্যাংকের সক্ষমতা বাড়ানো দরকার।
এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ডলার শক্তিশালী করতে সুদহার বাড়িয়েছে। তাদের ফর্মুলা আমাদের দেশে বাস্তবায়ন করলে হবে না। দেশের শিল্পের কথা বিবেচনা করেই নীতি গ্রহণ করতে হবে।

জ্বালানি সংকট নিরসনে তিনি বলেন, কয়লাভিত্তিক জ্বালানিতে যেতে হবে। আমাদের নিজস্ব কয়লা ব্যবহার করতে হবে। দেশের উন্নয়নে শিল্পে বিনিয়োগ বাড়ানোর পাশাপাশি পরিবেশবান্ধব জ্বালানির সহযোগিতা লাগবে। বাংলাদেশ বিশ্বের নবম ভোক্তা বাজার হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই বাজার ঘিরে দেশে বিদেশি বিনিয়োগ আসবে। বিদ্যমান বিনিয়োগের সঙ্গে আরও নতুন বিনিয়োগ এলে তাদের ধরে রাখতে জ্বালানি সহযোগিতা বাড়াতে হবে।

জ্বালানি স্বল্পতার বিষয়ে তিনি বলেন, গ্যাস ও বিদ্যুৎ এখন বড় ইস্যু। করোনাকালে সিদ্ধান্ত ছিল শিল্প বন্ধ করা যাবে না। এটা ছিল সাহসী সিদ্ধান্ত। চলমান সংকটেও তেমন সিদ্ধান্ত নেয়া প্রয়োজন। কারণ গত বছর ৫২ বিলিয়ন ডলারের রপ্তানি হয়েছে। তখন ৩৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি বলা হলেও বাস্তবে এটা ছিল না। বিশ্ববাজারে কাঁচামালের দাম বাড়ার কারণে আমাদের এ প্রবৃদ্ধি হয়েছিল। সুতরাং গত বছরের প্রবৃদ্ধির সঙ্গে এ বছরের প্রবৃদ্ধি মেলানো যাবে না।

জসিম উদ্দিন বলেন, এখন গ্যাস-বিদ্যুৎ না পেলে বিদেশি ক্রেতার অর্ডার অনুযায়ী পণ্য দিতে ব্যর্থ হবো আমরা। এর ফলে ক্রেতারা একবার ফিরে গেলে আর পাওয়া যাবে না। এক্ষেত্রে অবৈধ গ্যাস সংযোগ বন্ধ করাসহ অন্যান্য পদক্ষেপ নিয়ে শিল্পে গ্যাস চালু রাখতে হবে।

জ্বালানি সরবরাহের বিষয়ে তিনি প্রস্তাব তুলে ধরে বলেন, বিশ্ববাজারে জ্বালানির দাম বেড়েছে। তাই গ্যাস বেশি দামে আমদানি করতে হবে। সেক্ষেত্রে ব্যবসায়ীরা শিল্প কারখানায় নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস নিশ্চিত করার জন্য বেশি দাম দিতে রাজি আছে।
জসিম উদ্দিন বলেন, সরকার গ্যাসে ভর্তুকি যা দিচ্ছে এর চেয়ে বেশি ট্যাক্স নিচ্ছে। এলএনজিতে ৪৭% কর এবং ডিজেলে প্রতিলিটারে ২৪ টাকা কর নিচ্ছে। এই কর হার কমিয়ে বাড়তি দাম সমন্বয় করে নতুন করে যৌক্তিক দাম ঠিক করা যেতে পারে।

সংলাপে এক প্রশ্নের জবাবে এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, প্রধানমন্ত্রী কৃচ্ছ্র সাধনের কথা বলেছেন। দুর্ভিক্ষ হলে সারা বিশ্বে হবে। বাংলাদেশ এর বাইরে নয়। এক্ষেত্রে আমাদের মিতব্যয়ী হতে হবে। এজন্য কৃষি উৎপাদন বাড়াতে পারি, পাশাপাশি শিল্পের উৎপাদন সক্ষমতা বাড়ানো দরকার। ব্যয় কমাতে দক্ষতার সঙ্গে কাজ করতে পারলে আমরা ভালো করবো।

অর্থপাচার বিষয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক যেহেতু বলেছে, আমদানির আড়ালে ২০০ শতাংশ পর্যন্ত অতিরিক্ত মূল্য দেখানোর প্রমাণ পেয়েছে তারা। আন্ডার ইন ভয়েস ও ওভার ইন ভয়েসের মাধ্যমে অর্থ পাচার হচ্ছে। তাদের উচিত জড়িতদের আইনের আওতায় আনা। তা না হলে শুধু বাহবা নেয়ার জন্য মুখরোচক কথা বলা উচিত নয়।

Exit mobile version