Site icon The Bangladesh Chronicle

লু হাওয়া

লু হাওয়া

মানে মরুর তপ্ত হওয়া। মরুভূমিতে হঠাৎ করেই এ হাওয়া আসে। আবার উপমহাদেশের উত্তর-পশ্চিম অংশে প্রবাহিত ধূলিঝড়ও লু হাওয়া বলে পরিচিত। লু বায়ুপ্রবাহ বা লু হাওয়া পশ্চিম থেকে প্রবাহিত একটি শক্তিশালী, ধুলাবালিযুক্ত, গরম ও শুকনো গ্রীষ্মের বাতাস যা পাকিস্তান এবং উত্তর ভারতের পশ্চিম গাঙ্গেয় সমভূমি অঞ্চলে প্রবাহিত হয়। সাধারণত মে-জুন মাসে এর প্রভাব সবচেয়ে বেশি হয়। বাংলাদেশে ঠিক এই সময়ে অন্য ধরনের লু হাওয়া প্রবাহিত হয়ে গেল। এই লু হাওয়া ঝড়ঝঞ্ঝার ছিল না। এ ছিল এক নতুন বার্তা। সরকার এ বার্তাকে শতভাগ তাদের স্বার্থে ব্যাখ্যা করছে। আবার ভিন্নমতও আছে। বলছিলাম, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া-বিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লুর কথা। লু হাওয়ার মতো আকস্মিকই ছিল তার এই সফর। তিন দিনের সফরে তিনি ১৪ মে ঢাকা আসেন। সরকারের নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ে ও সুশীলসমাজের প্রতিনিধিদের সাথে আলোচনার পর তিনি ১৬ মে ঢাকা ত্যাগ করেন। বাংলাদেশের বেশ কটি গণমাধ্যম লু হাওয়া নামেই এই সফরকে অভিহিত করেছে। মরুঝঞ্ঝা বা ঝড়ের মতো তেমন কিছু ঘটেনি। তবে সফরটি ছিল বেশ তাৎপর্যপূর্ণ।

বিগত জাতীয় নির্বাচন ঘিরে বর্তমান বাংলাদেশ সরকারের সাথে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের তিক্ততা তৈরি হয়েছিল। দৃশ্যত মনে হয়েছিল, ওয়াশিংটন হাসিনা সরকারের অবসান চায়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেও কোনোরকম রাখঢাক না করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে অভিযুক্ত করেছেন অনেকবার। তার সরকারের ওপর বিপদ ঘটার সম্ভাবনা ছিল। বিপদ ঘটেনি। কিন্তু প্রান্তিক পর্যায়ে এসে ‘কি হতে কী হয়ে গেল’। আসলে যেকোনো রাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতির মূল কথা হলো জাতীয় স্বার্থ। একবার ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী পামার স্টোন (পরবর্তীকালে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী) বলেছিলেন, ব্রিটেনের চিরমিত্র চিরশত্রু কেউ নেই। আছে চিরস্বার্থ। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অবশেষে তাদের চিরস্বার্থের অনুকূলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বাংলাদেশের মানুষও তাদের স্বার্থের সমীকরণ দ্বারা মার্কিন সিদ্ধান্তের প্রশংসা অথবা সমালোচনা করেছে। আরেকটু খোলামেলা বললে বলতে হয়ে, সরকার মার্কিন সিদ্ধান্তে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছে। অপরদিকে, বিরোধী জোট হতাশা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। তাদের হয়তো আশা ছিল, বোগাস নির্বাচনের পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কম্পুচিয়ার মতো নিষেধাজ্ঞা আরোপ করবে। সে আশার গুড়ে বালি ঢেলেছে মার্কিনিরা।

একটি কূটনৈতিক পর্যবেক্ষণে বলা হয়, ‘ভারতের হস্তক্ষেপের কারণে বাংলাদেশে সুষ্ঠু, অবাধ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানে যুক্তরাষ্ট্রের লক্ষ্য পূরণ হয়নি। কেননা, বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের যতটুকু স্বার্থ রয়েছে, ভারতের রয়েছে তার চেয়েও অনেক বেশি। আর এ কারণে বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে ভারতের সাথে সঙ্ঘাতে যেতে চায়নি যুক্তরাষ্ট্র। এখন বাস্তবতা মেনে নিয়ে অতীতের অস্বস্তিকর বিষয়গুলোকে পেছনে ফেলে ইতিবাচক দিকগুলো নিয়ে বাংলাদেশের সাথে সম্পর্ক এগিয়ে নিতে চায় যুক্তরাষ্ট্র।’ তবে বহুল আলোচিত যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের বিষয়গুলো যেহেতু তাদের চিরস্থায়ী নীতিমালার অন্তর্ভুক্ত, সেহেতু এসব বিষয়ে তাদের দৃষ্টিভঙ্গি অপরিবর্তিত থাকবে।

ডোনাল্ড লুর এই সংক্ষিপ্ত সফরের পর গণমাধ্যমের প্রতিবেদন পর্যালোচনা করার পর এই মন্তব্য করা যায়, বাংলাদেশের চলমান সরকারের সাথে বিশ্বাসের ঘাটতি দূর করে সম্পর্ক দৃঢ় করতে চায় যুক্তরাষ্ট্র। স্বয়ং লুর ভাষায়- ‘বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও অহিংস নির্বাচনের জন্য যুক্তরাষ্ট্র অনেক পরিশ্রম করেছিল। এটি কিছুটা উত্তেজনাও সৃষ্টি করেছিল। আমাদের সম্পর্কের ক্ষেত্রে এটি স্বাভাবিক। এখন আমরা সামনে দেখতে চাই, পেছনে নয়। সম্পর্ক জোরালো করার উপায় বের করতে চাই।’ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে ডোনাল্ড লু বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের জনগণের মধ্যে নতুন করে আস্থার জায়গা সৃষ্টি করার জন্য আমি গত দু’দিন ঢাকায় কাজ করেছি। দুই দেশের মধ্যে অনেক কঠিন ইস্যু রয়েছে। যেমন- র্যাবের উপর নিষেধাজ্ঞা, শ্রম অধিকার, মানবাধিকার, ব্যবসার পরিবেশ সংস্কারসহ অন্যান্য ইস্যু।’ মার্কিন দূতাবাসের ভাষ্যে বলা হয়, সমৃদ্ধ, নিরাপদ ও গণতান্ত্রিক ভবিষ্যৎ নির্মাণে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের পাশে রয়েছে। এতে আরো বলা হয়, দ্বিপক্ষীয় আলোচনায় অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, কর্মশক্তি বৃদ্ধি, নিরাপত্তা সহযোগিতা, জলবায়ু সঙ্কট মোকাবেলা এবং গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকার মূল্যবোধ শক্তিশালী করার জন্য মার্কিন বাংলাদেশ যৌথ অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করা হয়েছে। এছাড়া বাংলাদেশের কর ব্যবস্থার আধুনিকায়ন ও কর ফাঁকির পথ বন্ধে যুক্তরাষ্ট্র সহযোগিতা করতে চায় বলে জানা গেছে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ হ্রাসের পরিপ্রেক্ষিতে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে সহায়তা করতে চায় বলে বার্তা সংস্থার খবরে বলা হয়। বাংলাদেশ মার্কিন সম্পর্কের সাম্প্রতিক তিক্ততার কারণ ৭ জানুয়ারির নির্বাচন। স্বাভাবিকভাবেই আশা করা হয়েছিল, পারস্পরিক আলোচনায় বিষয়টি উত্থাপিত হতে পারে।
গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, এ বিষয়ে কোনো আলাপ-আলোচনা হয়নি। দৃশত দেখা যাচ্ছে, বিবৃতকর কোনো বিষয় নিয়ে কোনো পক্ষই আলোচনা করেনি।

নির্বাচনের বিষয়টি উত্থাপিত হলে ডোনাল্ড লু বলেন, ‘নির্বাচনে সহিংসতা ও ভোটারদের ওপর বলপ্রয়োগ করায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তাদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল। উভয় পক্ষকে সংলাপে বসার ব্যাপারে পরামর্শ দেয়া হয়েছিল।’ সরাসরি নির্বাচনের বিষয়টি এড়িয়ে গিয়ে তিনি বলেন, ‘এসব মূল্যবোধ বজায় রাখতে আমরা কাজ করে যাবো।’ তবে র্যাবের ওপর ইতঃপূর্বে আরোপিত নিষেধাজ্ঞা বহাল আছে বলে জানিয়েছিলেন লু। পরবর্তীকালে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতরের নিয়মিত সংবাদ ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার হচ্ছে না। উল্লেখ্য, বাংলাদেশের একজন উপদেষ্টা বলেছিলেন, র্যাবের ওপর থেকে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে যুক্তরাষ্ট্র বেশ আন্তরিক। তিনি আরো বলেছিলেন, এ নিয়ে হোয়াইট হাউজ ও পররাষ্ট্র দফতর কাজ করছে। এর জবাবে মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর থেকে বলা হয়, এসব দাবি মিথ্যা। যুক্তরাষ্ট্র র্যাবের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করছে না। নিষেধাজ্ঞার উদ্দেশ্য হলো র্যাবের আচরণের পরিবর্তন ও জবাবদিহিতে উৎসাহিত করা। বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধুর খুনি রাশেদ চৌধুরীকে ফেরত আনার ব্যাপারে মার্কিন সরকারের হস্তক্ষেপ জানতে চাইলে জবাবে বলা হয়, বিষয়টি বিচার আদালতের বিবেচ্য বিষয়। এতে সরকারের কিছুই করার নেই।

বাংলাদেশ সরকার ও বিরোধী দলের জন্য ডোনাল্ড লুর সফরটি ছিল তাৎপর্যপূর্ণ। সরকারের তরফ থেকে আনন্দ-উচ্ছ্বাসের সাথে সাথে নেতিবাচক মন্তব্যও ছিল। মনে করা হচ্ছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ভারত ও চীনের সাথে সম্পর্ক নির্ণয়ে ত্রিশঙ্কু অবস্থানে রয়েছে ক্ষমতাসীনরা। এ অবস্থায় বেসামাল মন্তব্য করা তাদের জন্য অসম্ভব কিছু নয়। ওবায়দুল কাদের বলেন, বিদেশী শক্তির পরোয়া করেন না শেখ হাসিনা। এ দ্বারা পরোক্ষভাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিই ইঙ্গিত করা হয়। পররাষ্ট্রমন্ত্রীও এরকম উষ্মা প্রকাশ করেছেন। এরপর লুর সফরের ফলাফল কী হলো? তাহলে কী বলা যায়, যথা পূর্বং তথা পরং। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে এর আগেও বলা হয়েছে, তারা গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের ক্ষেত্রে পরিবর্তন দেখতে চায়। গুণগত পরিবর্তন না হলে শুধু কথামালা দিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অনুসৃত নীতিমালার পরিবর্তন ঘটানো যাবে না বলেই কূটনৈতিক মহল মনে করে।

ডোনাল্ড লু সফরের পরিপ্রেক্ষিতে কিছু বিব্রতকর প্রশ্নও উত্থাপিত হয়। ভারতের মধ্যস্থতায় প্রভাবিত হয়ে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র তাদের অবস্থান নরম করেছে- এরকম ভাষ্যের বিষয়ে ডোনাল্ড লু বলেন, ‘অভিযোগটি হাস্যকর। আমরা বড় দেশ। সারা বিশ্বেই আমরা নিজেদের স্বার্থ নিয়ে কাজ করার চেষ্টা করি। যুক্তরাষ্ট্র কী করবে, সে বিষয়ে কেউ আমাদের পরামর্শ দেয় না। ঠিক তেমনি বাংলাদেশকেও কী করতে হবে সেটিও আমরা বলি না। কাজেই অন্য দেশ যেভাবে বলেছে বা যেভাবে চেয়েছে, সেভাবে আমরা কাজ করেছি বলে যে ধারণা, সেটি একেবারেই সত্যি নয়। বাংলাদেশের জনগণের স্বার্থে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। একটি শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের কথাও আমরা বলেছিলাম। তাদের উদ্বুদ্ধ করতে গত বছর আমরা বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছিলাম। নির্বাচনে সহিংসতা ও ভোটারদের ওপর বলপ্রয়োগ করায় আমরা পুলিশ, সরকারি ও বিরোধীদলের নেতাদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিলাম। আমরা আওয়ামী লীগ ও বিএনপিকে অর্থপূর্ণ সংলাপে বসতে বলেছিলাম। আমরা সভা-সমাবেশ ও বাকস্বাধীনতার পক্ষে উচ্চকণ্ঠ ছিলাম। এটি খুবই স্বাভাবিক। এ অঞ্চলে আমরা এটি করি। বাংলাদেশে এসব মূল্যবোধ সমুন্নত রাখতে আমাদের চেষ্টা অব্যাহত থাকবে।’

আরো একটি বিষয়ে লুর দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়। বাংলাদেশে একটি প্রচলিত ধারণা রয়েছে, ঢাকার প্রতি পদক্ষেপকে ওয়াশিংটন দিল্লির চোখ দিয়ে দেখে। ভারতের একজন কূটনীতিকও এরকম দাবি করেছেন। এ প্রশ্নের জবাবে ডোনাল্ড লু বলেন, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে তার স্বার্থ যুক্তরাষ্ট্রের দৃষ্টিকোণ দিয়ে দেখে। চীন, ভারত কিংবা রাশিয়ার স্বার্থের দৃষ্টিকোণ থেকে নয়। বাংলাদেশে আমাদের গুরুত্বপূর্ণ স্বার্থ রয়েছে। তবে এটিও সত্য, যুক্তরাষ্ট্র ও ভারত আলোচনা করছে। তারা সবসময় আলোচনা করে। এ অঞ্চলের পরিস্থিতি নিয়ে আমরা কথা বলি। সেই আলোচনায় শ্রীলঙ্কা, নেপাল, মালদ্বীপ কখনো কখনো বাংলাদেশ প্রসঙ্গও থাকে। আরেকটি সংবেদনশীল বিষয় চীন-বাংলাদেশ মৈত্রী। পৃথিবীর এ অঞ্চলে চীন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রভাববলয়ের রাজনীতি করছে। আবার অপরদিকে, ভারত বাংলাদেশের ঘনিষ্ঠ মিত্র। চীনের প্রভাব খর্ব করার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভারতকে দিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বী চীনকে রুখে দেবে, এটিই স্বাভাবিক। এই ত্রিশঙ্কু অবস্থায় আমেরিকা যেমন বাংলাদেশকে পাশে চাইবে, তেমনি চীনও বাংলাদেশকে আয়ত্ত করতে চাইবে। এই দুই স্বাভাবিকতার মধ্যে অস্বাভাবিকতার ঘটনা ঘটছে বাংলাদেশকে নিয়ে। চীন বাংলাদেশের সাথে ইতোমধ্যে বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ-বিআরআই স্মারক স্বাক্ষর করেছে। বাংলাদেশকে আরো আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে নেয়ার জন্য এখন চীন চাচ্ছে তাদের গ্লোবাল ডেভেলপমেন্ট ইনিশিয়েটিভ-জিডিআইতে সংশ্লিষ্ট করতে। অপরদিকে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব নিয়ে উদ্বিগ্ন। যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা এই অঞ্চলে একটি নিরাপত্তাবলয় তৈরি করতে চায়। তারা চায় বাংলাদেশ তাদের নিরাপত্তাবলয়ে প্রবেশ করুক। এ ধরনের জটিল ও কুটিল ভৌগোলিক ও নিরাপত্তা প্রশ্নে বাংলাদেশ সঙ্কটে রয়েছে।

ডোনাল্ড লুর এই সফরে এসব বিষয় উত্থাপিত হয়নি। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাথে যে দূরত্ব তৈরি হয়েছে সেটি কমানোই ছিল লক্ষ্য। কিন্তু পূর্ব অবস্থার বিন্দুমাত্র পরিবর্তন হয়েছে বলে কূটনীতিক মহল মনে করে না। ওয়াশিংটনের প্রতিক্রিয়া বা ভাষ্যে প্রকৃত কোনো অগ্রগতির নমুনা দেয় না। অপরদিকে, আওয়ামী লীগের উষ্মা যে কমেনি তা তাদের মন্ত্রীদের কথায় স্পষ্ট। সুতরাং গোল হয়নি। ফলাফল শূন্য। আমাদেরকে টাইব্রেকারের জন্য আরো কিছু সময় অপেক্ষা করতে হবে। মনে রাখতে হবে, বিষয়টি আসলেই জটিল ও কুটিল।
ভারত এখন নিজেই একক আঞ্চলিক কর্তৃত্বের দাবিদার মনে করে। বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন সরকার তাদের অঙ্গুলি হেলনে চলবে, এমনটি তারা মনে করে। তারা চাইবে না মার্কিন পক্ষপুটে আশ্রয় পাক বাংলাদেশ। এতে ভারতীয়দের কর্তৃত্বের ঘাটতি পড়তে পারে। চীন তার সম্প্রসারণবাদী নীতির মাধ্যমে শ্রীলঙ্কা ও মালদ্বীপ করায়ত্ত করেছে। উভয় দেশই এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের অংশ। সুতরাং আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ একটি কঠিন সঙ্কটময় সময় অতিক্রম করছে। জনগণসম্পৃক্ত একটি দৃঢ়প্রতিজ্ঞ নেতৃত্বই পারে বাংলাদেশকে এই সমূহ সঙ্কট থেকে উদ্ধার করতে।

nayadiganta

Exit mobile version