Site icon The Bangladesh Chronicle

লিসান্দ্রো মার্তিনেজ : আমস্টারডামের কসাই

লিসান্দ্রো মার্তিনেজ – ফাইল ছবি।

একজন ডিফেন্ডারের প্রধান কাজ প্রতিপক্ষের আক্রমণ ঠেকানো, এটিই যেন ডিফেন্ডারদের সবচেয়ে বড় দক্ষতা। স্কিল কিংবা ড্রিবল, পায়ের কারিকুরি ডিফেন্ডারদের তেমন একটা প্রয়োজন পড়ে না। তবে এখানে অন্যদের থেকে একটু ব্যতিক্রম লিসান্দ্রো মার্তিনেজ। তার সম্পর্কে আগে থেকে না জেনে আপনি যদি তার খেলার কৌশল এবং বল পায়ে তার দক্ষতা প্রথমবার দেখে থাকেন, তাহলে আপনি লিসান্দ্রোকে মিডফিল্ডার কিংবা আক্রমণভাগের ফুটবলারও ভাবতে পারেন। তবে এতসব দক্ষতা থাকা সত্ত্বেও তিনি একজন ডিফেন্ডার।

অবশ্য লিসান্দ্রো মার্তিনেজ মিডফিল্ডার না ডিফেন্ডার—এ নিয়ে প্রশ্ন থাকতে পারে। মূলত বাঁ পায়ের এই ডিফেন্ডার বল পায়ে এতটাই দক্ষ যে একাধিক পজিশনে খেলতে পারেন অনায়াসেই। সেন্টারব্যাক হিসেবে ক্যারিয়ার শুরু করা মার্তিনেজ খেলতে পারেন লেফটব্যাক পজিশনেও। আবার গত মৌসুমে আয়াক্স কোচ টেন হাগই বল পায়ে দক্ষতার জন্য তাকে রক্ষণাত্মক মিডফিল্ডার হিসেবেও খেলিয়েছেন।

তাই টেন হাগ আয়াক্স ছেড়ে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড-এ যোগ দেয়ার পর প্রিয় শিষ্যকেও ম্যান ইউনাইটেডে নিয়ে আসেন। ৫ ফুট ৯ ইঞ্চির আর্জেন্টাইন এই ডিফেন্ডার উচ্চতার কারণে একসময় বাতিলের খাতায় ছিলেন। সেই মার্তিনেজ এখন আর্জেন্টিনার সবচেয়ে দামী ডিফেন্ডার। কারণ এমন এক সব্যসাচী খেলোয়াড়কে দলে ভেড়াতে ম্যান ইউনাইটেড খরচ করেছে ৬৪ মিলিয়ন!

প্রিমিয়ার লীগে প্রথম ২ ম্যাচই বাজেভাবে হেরেছিল ম্যান ইউনাইটেড। তখনি ইংলিশ মিডয়ায় ফের আলোচনা উঠে তার উচ্চতা নিয়ে। নিন্দুকেরা সমালোচনার তীর ছুড়তে থাকে, এই উচ্চতা নিয়ে ‘সেন্টার-ব্যাক’ হিসেবে প্রিমিয়ার লীগ নাকি তার জন্য না।

ফুটবলে সেন্টারব্যাকদের জন্য উচ্চতা একটা ফ্যাক্টর। তবে এটিই যে মূল হাতিয়ার নয় কিংবা উচ্চতা যে কখনো খেলায় বাঁধা হতে পারে না, আবারও তার প্রমাণ দিলেন লিসান্দ্রো মার্তিনেজ এবং প্রমান দিতে প্রতিপক্ষ হিসেবে বেছে নিলেন ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড এর চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী লিভারপুলকে!

রেড ডার্বিতে লিভারপুলের বিপক্ষে তার পারফরম্যান্স ছিল অনবদ্য, ৭টা ক্লিয়ারেন্স, ৩টা শট ব্লক, ৩টা রিকোভারি, ১টা ট্যাকল, ৫টা লং বল, ৪১ টাচ, ৮২% সঠিক পাস, ২টি গ্রাউন্ড ডুয়েল জেতা। সবচেয়ে বড় অবদান ম্যাচের ৪০ মিনিটের মাথায় গোললাইন ক্লিয়ারেন্সটা। লিভারপুলের সমতায় ফিরে আসার পথে লিসান্দ্রো মার্তিনেজ তখন বাধা হয়ে না দাঁড়ালে ম্যাচের ফলাফল অন্যরকম হলেও হতে পারতো।

ফুটবল পা দিয়ে খেললেও কিছু কিছু ফুটবলার আছেন সেটা ব্রেইন দিয়েও খেলেন, লিসান্দ্রো মার্তিনেজ তাদেরই একজন। বল পায়ে সে যতটা আত্মবিশ্বাসী, মানসিকভাবেও সে ততটাই আত্মবিশ্বাসী। প্রতিপক্ষ যেই হোক না কেন কিঞ্চিৎ ছাড় না দেয়ার মনোভাব, মাঠে তার লিডারশীপ, গেম রিডিং স্কিল, একইসাথে তার এগ্রোসিভ বিহেভিয়ার, যেটার জন্য তাকে ‘আমস্টারডামের কসাই’ বলা হতো। সেই কসাই রূপটাই যেন রেড ডার্বিতে প্রদর্শন করলেন।

রাফায়েল ভারানের সাথে তার সেন্টার-ব্যাক জুটি বেশ প্রশংসা কুড়াচ্ছে। দুজনের কম্বিনেশন গড়ে উঠলে সবচেয়ে বেশি খুশি হবে রেড ডেভিল সমর্থকেরা। কারণ বিগত মৌসুমগুলোতে যে তাদের কোনো সেন্টার-ব্যাক জুটি গড়ে উঠেনি। তাই ভারান-মার্তিনেজ জুটি নিয়ে তারা স্বপ্ন দেখতেই পারেন।

অন্যদিকে আর্জেন্টাইন সমর্থকেরাও তার পারফরম্যান্সে বেশ খুশি। কারণ তারাও যে রোমেরো-মার্তিনেজ জুটি নিয়ে স্বপ্ন দেখেন।

Exit mobile version