Site icon The Bangladesh Chronicle

রোহিঙ্গাদের জন্য দাতাদের সাহায্য দিনদিন কমছে

Over 15,000 Rohingyas have fled their burning villages each day. Image: Adam Dean | The New York Times

বাহিনী

মিয়ানমারে সামরিক বাহিনীর বল প্রয়োগে বাস্তুচ্যুত হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের জন্য দাতাদের সাহায্যের পরিমাণ দিনদিন কমে আসছে। তাদের জন্য দাতাদের কাছে ১০০ টাকা চাওয়া হলে দেওয়া হচ্ছে ৪৫ টাকা। অনুদানের পরিমাণ কমে আসায় প্রায় সাড়ে ১১ লাখ রোহিঙ্গা নাগরিকের পেছনে ব্যয় নিয়ে বিপাকে পড়বে বাংলাদেশ। তবে সরকার বলছে, বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গা নাগরিক উদ্বাস্তু হয়ে এখানে আছেন এবং তাদের থাকা-খাওয়ার বিষয়ে বিশ্ব সম্প্রদায় সচেতন। একটা ব্যবস্থা হবেই।

তিনি আরও জানান, বর্তমানে প্রায় সাড়ে ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গা নাগরিক বাংলাদেশে অবস্থান করছেন। প্রথমদিকে আমরা ৯ লাখের বেশি কিছু রোহিঙ্গা নাগরিককে গ্রহণ করি। কারণ তাদের বার্ষিক জন্ম-বৃদ্ধির হার শতকরা ২৮ থেকে ৩৩ শতাংশ। তাদের আশ্রয় দেওয়া হয়েছে বিশ্বনেতাদের অবগত করেই। তাই হতাশ হওয়ার কিছু নেই। আর যদি সমাধান বলেন, তাহলে একমাত্র সমাধান হচ্ছে মিয়ানমারের উচিত তাদের নাগরিকদের সসম্মানে ফিরিয়ে নেওয়া এবং বিশ্ব সম্প্রদায় তাদের সেভাবে চাপ দেওয়া উচিত।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে জয়েন্ট রিস্পন্স প্ল্যান (জেআরপি) কাছে উদ্বাস্তুদের জন্য বার্ষিক খরচের পরিকল্পনা পেশ করা হয়। তাদের জন্য সবচেয়ে বেশি সাহায্য দিচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। এছাড়া ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ), যুক্তরাজ্য (ইউকে), জাপান ও অস্ট্রেলিয়া উদ্বাস্তুদের জন্য সাহায্য দিয়ে থাকে। ২০১৭ সালে প্রথম বছর সাহায্য পাওয়া গেছে ৩১৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। ২০১৮ সালে চাওয়া হয়েছে ৯৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং পাওয়া গেছে ৬৮৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। ২০১৯ সালে চাহিদা দেওয়া হয় ৯১৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং সাহায্য এসেছে ৬৯১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।

২০২০ সালে চাহিদা ছিল ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং পাওয়া গেছে মাত্র ৬৩০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। ২০২১ সালের চাহিদা ছিল ৯৪৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং সাহায্য এসেছে ৬৬৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। ২০২২ সালে চাওয়া হয় ৮৮১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং পাওয়া গেছে ৬৬৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। সবশেষ ২০২৩ সালে চাওয়া হয় ৮৭৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং দেওয়া হয়েছে অর্ধেকেরও কম ৪০৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, এই টাকার মধ্যে রোহিঙ্গাদের জন্য অবকাঠামো তৈরি, পানি সরবরাহের ব্যবস্থা করা, জ্বালানি, চিকিৎসা, খাওয়া, কর্মসংস্থান বিষয়ে প্রশিক্ষণ, লেখাপড়াসহ যাবতীয় খাতে ব্যয় করতে হয়। খাওয়ার জন্য বর্তমানে জনপ্রতি মাসিক ১০ ডলার, গর্ভবতী রোহিঙ্গা মহিলাদের জন্য অতিরিক্ত ৩ ডলার এবং বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের জন্য ৩ ডলার করে দেওয়া হয়। খাওয়ার টাকার সংকট হলে অবকাঠামো খাত থেকে কেটে খাবারের জন্য দেওয়া হয়। একটি ফ্যামিলি কার্ডের মাধ্যমে দাতাদের মনোনীত দেশি ও বিদেশি বেসরকারি সংস্থার (এনজিও) মাধ্যমে এ অর্থ ব্যয় করা হয়। আন্তর্জাতিক ৪৯টি এবং দেশীয় ১৬৬ এনজিও বর্তমানে রোহিঙ্গাদের নিয়ে কাজ করছে।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২০১৭ সালে দেশে প্রায় সাড়ে ৯ লাখ রোহিঙ্গা নাগরিক প্রবেশ করেন। বর্তমানে তাদের সংখ্যা প্রায় সোয়া ১১ লাখ। রোহিঙ্গাদের বার্ষিক জন্ম বৃদ্ধি হার প্রায় ৩৩ শতাংশ। তাদের থাকার জন্য প্রথম কক্সবাজারের কুতুপালং, হাকিমপাড়া, উনচিপ্রাং, সালামপুর, টেকনাফ এবং মায়ানার ঘোরা এলাকার দিকে ৫০০ একর জমি দেওয়া হয়। পরে আরও ৫০ একর বাড়িয়ে তা সাড়ে ৫০০ একর করা হয়। বর্তমানে তাদের রাখার ক্যাম্পের জন্য ৬০০ একর জমি ব্যবহার করা হচ্ছে। এছাড়া ভাসানচরে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর তৈরি করা ক্যাম্পে বর্তমানে ৩৪ হাজার রোহিঙ্গা নাগরিককে থাকতে দেওয়া হচ্ছে। ভাসানচরের ক্যাম্পে থাকা রোহিঙ্গা নাগরিকদের মাছ শিকারের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। তারা দাতাদের সাহায্যের পাশাপাশি মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহে ব্রত। তার মানে হলো রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী দিন দিন বেড়েই চলছে। আর সাহায্যের পরিমাণ কমছে।

তারা আরও জানান, রোহিঙ্গা নাগরিকরা নিজেদের মধ্যে বিয়েশাদি করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। তাদের বিয়ের রেকর্ড একটি কার্ডে লিখে রাখা হয়। রোহিঙ্গারা মোবাইল ফোন ব্যবহার করতে পারে না। তবে তারা গোপনে ক্যাম্পের বাইরে গিয়ে আয়-রোজগার করে। তাদের গেরস্তালি সামগ্রী, সাবান, শ্যাম্পু তৈরির প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। রোহিঙ্গা শিশুদের লেখাপড়া করানো হয় মিয়ানমারের ভাষায়। এছাড়া ইংরেজি শেখানো হয়। তবে এসএসসি পর্যন্ত পড়ার পর তাদের লেখাপড়া বন্ধ হয়ে যায়। কারণ তাদের জন্য কোনো কলেজ নেই। এসএসসি পর্যন্ত পড়ালেখা করলেও তাদের সনদ দেওয়া হয় না। কারণ তাদের কী হিসেবে সনদ দেওয়া হবে।

সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে বলেন, জরুরি ভিত্তিতে রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠাতে না পারলে তারা বড় বিপদের কারণ হবে। তারা এখনই নিজেদের মধ্যে খুনখারাবি করছে। তাদের খাওয়া বন্ধ হয়ে গেলে অর্থাৎ দাতাদের সাহায্য বন্ধ হয়ে গেলে তারা নানা ধরনের অপরাধে জড়িয়ে পড়বে। ক্ষুধার কাছে সবকিছুই অর্থহীন। তাই এখন তাদের বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।

যুগান্তর

Exit mobile version