Site icon The Bangladesh Chronicle

রেমিট্যান্স বাড়লেও কমেছে রিজার্ভ

রেমিট্যান্স বাড়লেও কমেছে রিজার্ভ

চলতি বছরের প্রথম মাস জানুয়ারিতে প্রবাসীরা ২১০ কোটি ডলার সমপরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা দেশে পাঠিয়েছেন। গত ৭ মাসের মধ্যে যা সর্বাধিক। রেমিট্যান্স বাড়লেও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে ২০ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমেছে। জরুরি আমদানিতে সহায়তা দিতে ব্যাংকগুলোর কাছে বিক্রির কারণে মূলত রিজার্ভ কমেছে। যদিও আমদানি নিয়ন্ত্রণে রাখার নানা পদক্ষেপ চলমান।

বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আগের চেয়ে বেশি দর পাওয়ার কারণে রেমিট্যান্স বেড়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের হস্তক্ষেপে ব্যাংকগুলো ডলারের যে দর ঘোষণা করছে, তার চেয়ে বাস্তবে বেশি। ডলারের সংকট থাকায় বাংলাদেশ ব্যাংক এ বিষয়ে তেমন কড়াকড়ি করছে না। এতে করে ব্যাংকিং চ্যানেলের দিকে আগ্রহ বাড়ছে বিদেশে কর্মসংস্থানে থাকা বাংলাদেশিদের। অবশ্য বিদেশে কর্মী যাওয়ার হার যেভাবে বেড়েছে, সে তুলনায় রেমিট্যান্স আরও বেশি আসার কথা। ফলে একটি বড় অংশ  হুন্ডির মাধ্যমে আসছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম ৭ মাসে রিজার্ভ থেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিক্রি করেছে ৮ বিলিয়ন ডলার। মূলত সরকারের সার, জ্বালানি ও খাদ্য আমদানির বিপরীতে এ ডলার দেওয়া হয়েছে। আর ২০২১ সালের আগস্ট থেকে এ পর্যন্ত বিক্রি করা হয়েছে ২৯ দশমিক ২০ বিলিয়ন ডলার। গত বুধবার আইএমএফের হিসাব পদ্ধতি অনুযায়ী রিজার্ভ ১৯ দশমিক ৯৪ বিলিয়ন ডলারে নেমেছে। আগের দিন যা ছিল ২০ বিলিয়ন ডলারের ওপরে। এর আগে ২০২১ সালের আগস্টে রিজার্ভ উঠেছিল সর্বোচ্চ ৪৮ দশমিক শূন্য ৪ বিলিয়ন ডলার।

সংশ্লিষ্টরা জানান, বাংলাদেশ ব্যাংক রিজার্ভ থেকে বড় অঙ্কের ডলার বিক্রি করলেও সাম্প্রতিক সময়ে কিছু কিনেছে। বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ এবং এডিবির কিছু ঋণ রিজার্ভে যোগ হয়েছে। তবে আগে নেওয়া বিদেশি ঋণ পরিশোধের চাপ বেড়েছে। এ ছাড়া বিদেশি বিনিয়োগ কম আসছে। প্রত্যাহারের ঘটনাও রয়েছে। সবকিছু মিলিয়ে এখনও সংকটময় পরিস্থিতি বিরাজমান।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মধ্যস্থতায় ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন এবিবি এবং বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনকারী ব্যাংকগুলোর সমিতি বাফেদা মিলে বর্তমানে রেমিট্যান্স কেনায় ১০৯ টাকা ৫০ পয়সা এবং আমদানিতে ১১০ টাকা নির্ধারণ করে রেখেছে। তবে ব্যাংকগুলো বিদেশি এক্সচেঞ্জ হাউস থেকে ১২২ টাকা পর্যন্ত দরে রেমিট্যান্স কিনছে। আমদানিকারকদের কাছে বিক্রি করছে ১২৪ টাকা পর্যন্ত দরে। বাড়তি দর দিয়েও এলসি খুলতে সমস্যায় পড়ছেন ব্যবসায়ীরা।

সাধারণভাবে শ্রমিক যাওয়া বাড়লে রেমিট্যান্স বাড়ে। জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে বিদেশে গেছেন রেকর্ড ১৩ লাখ ৫ হাজার ৫৪৩ কর্মী। আগের বছর যা ছিল ১১ লাখ ৩৫ হাজার ৮৭৩ জন। এর আগে এক বছরে ২০১৭ সালে সর্বাধিক ১০ লাখ ৮ হাজার ৫২৫ জন কর্মী যান।  কর্মী গমনে বড় প্রবৃদ্ধি থাকলেও ২০২৩ সালে ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স এসেছে ২ হাজার ১৯২ কোটি ডলার, যা আগের বছরের তুলনায় যা মাত্র ২ দশমিক ৮৮ শতাংশ বেশি। এর আগে ২০২১ সালে রেমিট্যান্স এসেছিল ২২ দশমিক শূন্য ৭ বিলিয়ন ডলার।

ব্যাংকাররা জানিয়েছেন,  হুন্ডিতে ব্যাপক চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় ব্যাংকিং চ্যানেলের চেয়ে দর বেশি দেওয়া হচ্ছে। আবার ব্যাংকের মাধ্যমে রেমিট্যান্স পাঠাতে গড়ে ৪ শতাংশের মতো খরচ হয়। হুন্ডিতে এখন ১২৫ টাকা পর্যন্ত দেওয়া হচ্ছে। আবার বাড়তি কোনো চার্জ লাগে না। এসব কারণে ব্যাংকিং চ্যানেলে আশানুরূপ হারে রেমিট্যান্স বাড়ছে না। মূলত অর্থ পাচার এবং মিথ্যা ঘোষণায় কম দর দেখিয়ে কেনা পণ্যের বাকি অর্থ পরিশোধের জন্য বিদেশেই প্রবাসীর রেমিট্যান্স কিনে দেশে তার সুবিধাভোগীর কাছে টাকা পৌঁছে দেয় হুন্ডি কারবারিরা। আবার রপ্তানিতে অনেক প্রবৃদ্ধি দেখানো হলেও আয় আসছে অনেক কম।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম ৭ মাসে রেমিট্যান্স এসেছে ১ হাজার ২৯০ কোটি ডলার। আগের বছরের একই মাসে এর পরিমাণ ছিল ১ হাজার ২৪৫ কোটি ডলার। এর মানে প্রথম ৭ মাসে রেমিট্যান্স বেড়েছে প্রায় ৪৫ কোটি ডলার যা ৩ দশমিক ৫৯ শতাংশ। এর আগে গত ডিসেম্বর মাসে ১৯৯ কোটি ডলার রেমিট্যান্স এসেছিল। আগের বছরের জানুয়ারিতে এসেছিল ১৯৬ কোটি ডলার।

সংকট মেটাতে আইএমএফ থেকে ৪৭০ কোটি ডলার ঋণের প্রথম দুই কিস্তি পেয়েছে সরকার। বাকি ঋণের জন্য বিভিন্ন শর্ত মানতে হচ্ছে। সংস্থাটি প্রথমে গত ডিসেম্বরে নিট রিজার্ভ রাখার লক্ষ্যমাত্রা দিয়েছিল ২৬ দশমিক ৮১ বিলিয়ন ডলার। পরে পরিস্থিতি বিবেচনায় বাংলাদেশের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তা কমিয়ে ১৭ দশমিক ৭৮ বিলিয়ন ডলার রাখতে বলা হয়। এ জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক কয়েকটি ব্যাংক থেকে ডলার কেনার পরও ডিসেম্বর শেষে রিজার্ভ দাঁড়ায় ১৭ দশমিক ২০ বিলিয়ন। আগামী মার্চে নিট রিজার্ভ ১৯ দশমিক ২৬ বিলিয়ন এবং জুনে ২০ দশমিক ১০ কোটি বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করার শর্ত রয়েছে। বর্তমানে বিপিএম৬ অনুযায়ী রিজার্ভ ১৯ দশমিক ৯৪ বিলিয়ন ডলার। নিট রিজার্ভ হিসাবের ক্ষেত্রে এখান থেকে সাড়ে ৪ বিলিয়ন ডলারের মতো বাদ যাবে।

samakal

Exit mobile version