Site icon The Bangladesh Chronicle

রেমিট্যান্স আহরণে হঠাৎ শীর্ষ উৎস যুক্তরাষ্ট্র

রেমিট্যান্স আহরণে হঠাৎ শীর্ষ উৎস যুক্তরাষ্ট্র.

ব্যাংকিং চ্যানেলে প্রবাসী বাংলাদেশিদের পাঠানো অর্থ বা রেমিট্যান্স আহরণে হঠাৎ শীর্ষ উৎস দেশ হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটি থেকে সেপ্টেম্বরে প্রবাসী আয় এসেছে প্রায় ৩৯ কোটি ডলার। গত মাস পর্যন্ত শীর্ষে থাকা সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে এসেছে ৩৬ কোটি ডলার। যুক্তরাষ্ট্র থেকে আগের মাস আগস্টে এসেছিল ২৯ কোটি এবং জুলাইয়ে ছিল ২৪ কোটি ডলার। যুক্তরাষ্ট্র থেকে এমন সময়ে রেমিট্যান্স বাড়ল যখন সে দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক নীতি সুদহার কমিয়েছে। আবার বাংলাদেশে বন্যার মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঘটনা ঘটেছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, যুক্তরাষ্ট্র থেকে রেমিট্যান্স বৃদ্ধির নানামুখী কারণ থাকতে পারে।  বড় কারণ হতে পারে– গত ১৯ সেপ্টেম্বর দেশটি এক ধাপে নীতি সুদহার শূন্য দশমিক ৫০ শতাংশীয় পয়েন্ট কমিয়েছে। এর বিপরীতে বাংলাদেশে সুদহার বাড়ছে। আবার বৈদেশিক মুদ্রায় সঞ্চয়ের বিভিন্ন নীতিমালা সহজ হয়েছে। আবার সাম্প্রতিক বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য সাহায্য, সরকার পরিবর্তনের পর হুন্ডি কমাসহ বিভিন্ন কারণে রেমিট্যান্স বাড়তে পারে। এ ছাড়া বিদেশি এক্সচেঞ্জ হাউসগুলো বিভিন্ন দেশ থেকে ডলার কেনে। তবে ব্যাংকের কাছে বিক্রির সময় অনেক ক্ষেত্রে যে দেশের এক্সচেঞ্জ হাউস ওই দেশের রেমিট্যান্স হিসেবে বিক্রি করে। এটিও অন্যতম কারণ হতে পারে। এ ছাড়া সরকার পরিবর্তনের পর গোপনে দর বেশি দিয়ে ডলার কেনার প্রবণতা কমেছে।

মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান সমকালকে বলেন, প্রবাসী আয় বৃদ্ধির কারণে বৈদেশিক মুদ্রাবাজারে স্বস্তি রয়েছে। বেশ কিছু দিন ডলারের দর স্থিতিশীল আছে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের উন্নতি হচ্ছে। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র থেকে রেমিট্যান্স বৃদ্ধির নানা কারণ থাকতে পারে। তবে একটি কারণ হলো– যে দেশের এক্সচেঞ্জ হাউস রেমিট্যান্স কেনে সাধারণত ওই দেশের রেমিট্যান্স হিসেবে বাংলাদেশে আসে। ফলে ঢালাওভাবে বলা যাবে না, এর সবই যুক্তরাষ্ট্র থেকে এসেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, অনেকদিন ধরে শীর্ষ রেমিট্যান্স আহরণকারী দেশ ছিল সৌদি আরব। তবে সাম্প্রতিক সময়ে সংযুক্ত আরব আমিরাত শীর্ষে উঠে আসে। গত সেপ্টেম্বরে যুক্তরাষ্ট্র থেকে সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স আসার পরও চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসের হিসাবে শীর্ষ রেমিট্যান্স আহরণকারী দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাত। তিন মাসে আমিরাত থেকে এসেছে ১০৩ কোটি ডলার। দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা যুক্তরাষ্ট্র থেকে এসেছে ৯২ কোটি ডলার। পর্যায়ক্রমে সৌদি আরব থেকে ৮৬ কোটি ডলার, মালয়েশিয়া থেকে ৬২ কোটি এবং যুক্তরাজ্য থেকে ৫৬ কোটি ডলার এসেছে। সব মিলিয়ে প্রথম তিন মাসে দেশে মোট ৬৫৪ কোটি ডলার রেমিট্যান্স দেশে এসেছে। আগের অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে যা ৩৩ দশমিক ৩৩ শতাংশ বেশি। প্রথম তিন মাসের রেমিট্যান্সের মধ্যে ৪০০ কোটি ডলার বা প্রায় ৬২ শতাংশ এসেছে শীর্ষ  পাঁচ দেশ থেকে।

করোনা-পরবর্তী অর্থনীতিতে বাড়তি চাহিদা এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর মূল্যস্ফীতি অনেক বেড়ে যায়। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে বৈশ্বিক সুদহার অনেক বাড়লেও ব্যবসায়ীদের সুবিধা দিতে গত বছরের জুন পর্যন্ত বাংলাদেশে ৯ শতাংশ সুদহারের সীমা দেওয়া ছিল। কম সুদে টাকা নিয়েই পাচারের অভিযোগও রয়েছে। ২০২১ সালের শুরুর দিকে যুক্তরাষ্ট্রের নীতি সুদহার ছিল ২ শতাংশের নিচে। বাড়াতে বাড়াতে তা ৫ দশমিক ২৫ থেকে ৫ দশমিক ৫০ শতাংশ করা হয়। দীর্ঘদিন পর গত ১৯ সেপ্টেস্বর এক ধাপে শূন্য দশমিক ৫০ শতাংশীয় পয়েন্ট ৪ দশমিক ৭৫ শতাংশ থেকে ৫ শতাংশের মধ্যে নামিয়ে আনা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের আগে যুক্তরাজ্য, চীনসহ আরও কয়েকটি দেশ সুদহার কমালেও বাংলাদেশে এখন ঘটছে উল্টোটা। গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর এরই মধ্যে দুই দফায় ৫০ বেসিস পয়েন্ট করে বাড়িয়ে রেপোর সুদ নির্ধারণ করা হয়েছে ৯ দশমিক ৫০ শতাংশ। চলতি মাসে আরও এক দফা সুদ বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন গভর্নর। ফলে বাজারে সুদহার বাড়ছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, অর্থ পাচারের প্রবণতা কমে আসায় এখন খোলাবাজারের সঙ্গে ব্যাংকের ডলার দরে পার্থক্য কমেছে। ফলে ডলারের দর স্থিতিশীল হয়ে এসেছে। এতে করে রেমিট্যান্স দ্রুত বাড়ছে। ফলে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বেড়ে গত বুধবার ১৯ দশমিক ৮৩ বিলিয়ন ডলারে উঠেছে। আগের মাস একই সময়ে যা কমে ১৯ দশমিক ৩৮ বিলিয়ন ডলারে নেমেছিল। এর আগে ২০২১ সালের আগস্টে সর্বোচ্চ যা ৪৮ বিলিয়নের ওপরে ওঠে।

samakal

Exit mobile version