Site icon The Bangladesh Chronicle

রেকর্ড ঋণখেলাপি: আরও বেড়েছে আ. লীগ সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের খেলাপি ঋণ

বাংলাদেশ ব্যাংক, খেলাপি ঋণ, ব্যাংক কোম্পানি আইন,

আওয়ামী লীগ সমর্থিত ব্যবসায়িক গোষ্ঠীগুলোর বিশাল পরিমাণ খেলাপি ঋণ দেশের ব্যাংকিংখাতকে আগেই চাপে ফেলেছিল। রাজনৈতিক দলটির পতনের পর এসব প্রতিষ্ঠানে অনিয়মের মাধ্যমে দেওয়া ঋণ আরও দ্রুত খেলাপিতে পরিণত হয়েছে।

যার ফলে সেপ্টেম্বরের শেষে দেশের ব্যাংকিংখাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ রেকর্ড দুই লাখ ৮৪ হাজার ৯৭৭ কোটি টাকায় পৌঁছেছে। ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর মাত্র দুই মাসের মধ্যে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য থেকে জানা গেছে, এর মধ্যে গত তিন মাসেই ৭৩ হাজার ৫৮৬ কোটি টাকা খেলাপি হয়েছে। জুলাই থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৩৪ দশমিক ৮ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে ।

গত বছরের সঙ্গে তুলনা করলে আরও ভয়াবহ চিত্রটি দেখা যায়। গত বছরের একই সময়ের চেয়ে এ বছর খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়েছে ৮৩ দশমিক ৪ শতাংশ।

এস আলম গ্রুপ, বেক্সিমকো গ্রুপ ও বসুন্ধরা গ্রুপসহ কিছু বড় ঋণগ্রহীতা আওয়ামী লীগের পতনের পর ব্যাপক ঋণখেলাপি করেছে, যা মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ রেকর্ড পরিমাণে বাড়িয়ে দিয়েছে।

জনতা ব্যাংকের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, ব্যাংকটি থেকে নেওয়া বেক্সিমকো গ্রুপের ২৩ হাজার কোটি টাকার ঋণের মধ্যে ১৯ হাজার কোটি টাকা জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে খেলাপিতে পরিণত হয়েছে।

বেক্সিমকো গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমান ছিলেন শেখ হাসিনার শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা।

জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে জনতা ব্যাংক থেকে এস আলম গ্রুপের নেওয়া ঋণের মধ্যে প্রায় আট হাজার কোটি টাকা খেলাপিতে পরিণত হয়েছে।

ফলে সেপ্টেম্বর শেষে জনতা ব্যাংকের খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৬০ হাজার কোটি টাকা, যা ব্যাংকিংখাতে সর্বোচ্চ।

বসুন্ধরা গ্রুপের দুটি প্রতিষ্ঠান আইএফআইসি ও রূপালী ব্যাংক থেকে নেওয়া ঋণের মধ্যে ৪১৬ কোটি টাকা খেলাপি হয়েছে।

আগস্টের মাঝামাঝি সময়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর হিসেবে আহসান এইচ মনসুর দায়িত্ব নেওয়ার পর শরিয়াহভিত্তিক কিছু ব্যাংকসহ যেসব ব্যাংকের বোর্ড পুনর্গঠন করা হয়েছে, সেগুলোর বেশিরভাগেই খেলাপি ঋণ বেড়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র হুসনে আরা শিখা বলেন, খেলাপি ঋণ বৃদ্ধির আরেকটি কারণ হলো, কেন্দ্রীয় ব্যাংক খেলাপি ঋণ হিসাবে জন্য নতুন একটি পদ্ধতি ব্যবহার করছে, যেটি বিশ্বব্যাপী সর্বোত্তম পদ্ধতি বলে গৃহীত হয়েছে।

নতুন পদ্ধতিতে মেয়াদি ঋণের গ্রেস পিরিয়ড আগের ছয় মাস থেকে কমিয়ে তিন মাস করা হয়েছে।

তিনি বলেন, ‘আমরা ধরে নিচ্ছি যে জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে খেলাপি ঋণ বৃদ্ধির পিছনে এটি একটি কারণ।’

এ ছাড়া, কিছু প্রতিষ্ঠান তাদের খেলাপি ঋণ নিয়ে হাইকোর্টে রিট আবেদন করেছিল। এসব ঋণের একটি অংশ খেলাটি হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।

হুসনে আরা শিখা বলেন, ‘এটাও আরেকটি কারণ হতে পারে।’

সেপ্টেম্বর শেষে মোট বিতরণকৃত ১৬ লাখ ৮২ হাজার ৮২১ কোটি টাকা ঋণের ১৬ দশমিক ৯ শতাংশই খেলাপি ঋণ।

মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ মাহবুবুর রহমান মনে করেন, বিভিন্ন কারণে খেলাপি ঋণের পরিমাণ বাড়বে।

তার ভাষ্য, অপর্যাপ্ত বিদ্যুৎ ও গ্যাস সরবরাহের মতো চ্যালেঞ্জের কারণে জুলাই-আগস্টের আগে ঋণগ্রহীতারা ইতোমধ্যেই সমস্যার মধ্যে রয়েছেন, কারণ তাদের উৎপাদন ও রপ্তানি কমেছে। বৈদেশিক মুদ্রার সংকট, উচ্চ মূল্যস্ফীতি ও স্থানীয় বিনিয়োগের প্রতিকূল পরিবেশের কারণে এটি আরও জটিল হয়েছে।

তিনি বলেন, এর সঙ্গে বৃহত্তর স্বচ্ছতার জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনায় ব্যাংকগুলো তাদের পূর্বে গোপন করা খেলাপি ঋণসহ আরও অনেক সঠিক পরিসংখ্যান প্রকাশ করতে বাধ্য হচ্ছে।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন বলেন, যদি বরাদ্দকৃত ঋণসহ অন্যান্য স্ট্রেসড অ্যাসেট বিবেচনায় নেওয়া হতো, তাহলে খেলাপি ঋণের প্রকৃত পরিমাণ আরও বেশি হতো।

তিনি বলেন, ‘দুর্ভাগ্যবশত, বড় অংকের এসব খেলাপি ঋণ কমানোর কোনো শর্টকাট নেই। বেশিরভাগ বড় খেলাপিরা পালিয়ে বেড়াচ্ছে।’

সম্প্রতি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিচালক হিসেবে নিয়োগ পাওয়া ফাহমিদা অর্থ ঋণ আদালতকে পরিমাণগত ও গুণগতভাবে শক্তিশালী করার পরামর্শ দেন।

খেলাপি ঋণের জন্য মামলা করা উচিত উল্লেখ করে তিনি বলেন, অ্যাটর্নি জেনারেল বড় ঋণ খেলাপি মামলা নিষ্পত্তির জন্য একটি বিশেষ বেঞ্চ গঠন করতে পারেন।

Daily Star bangla

Exit mobile version