Site icon The Bangladesh Chronicle

রিজার্ভ আরও কমে গেছে, ডলার ১২৩ টাকার ওপরে

ব্যাংকগুলো ডলারের আনুষ্ঠানিক দাম কমালেও বাস্তব অবস্থা ভিন্ন। এখন ডলার–সংকট আরও তীব্র হয়েছে, দামও বেড়েছে। সপ্তাহের শেষ দিনে গতকাল প্রবাসী আয়ে প্রতি ডলারের দাম ১২৩ টাকা ছাড়িয়েছে। যদিও ঘোষণায় প্রবাসী আয়ে ডলারের দাম ১০৯ টাকা ৭৫ পয়সা।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক কিছু ব্যাংককে বেশি দামে ডলার কেনার সুযোগ দিচ্ছে। এর ফলে প্রবাসী আয় বাড়ছে। সদ্য বিদায়ী নভেম্বর মাসে প্রবাসী আয় ১৯০ কোটি মার্কিন ডলার হতে পারে।

অন্যদিকে এসব ব্যাংক থেকে ডলার কিনে কেন্দ্রীয় ব্যাংক রিজার্ভ বাড়ানোর চেষ্টা করলেও তা বরং কমছে। গত এক সপ্তাহে রিজার্ভ কমেছে ১২ কোটি ডলার। ফলে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) হিসাবপদ্ধতি অনুযায়ী গত বুধবার রিজার্ভ কমে ১ হাজার ৯৪০ কোটি বা ১৯ দশমিক ৪০ বিলিয়ন ডলারে নেমেছে। তবে প্রকৃত বা নিট রিজার্ভ ১৬ বিলিয়নের কম।

ডলারের দাম কমছে, তাহলে সংকট কি কেটে গেল—এমন প্রশ্নের জবাবে বেসরকারি খাতের মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘দাম যেহেতু কমছে, সংকট তো মনে হয় কেটে যাচ্ছে। তবে ১২২-১২৩ টাকার নিচে প্রবাসী আয় পাওয়া যাচ্ছে না। এ জন্য আমরা ডলার কিনতে পারছি না। গত মাসের চেয়ে প্রবাসী আয় বেশ কমে গেছে। এর ফলে চাহিদামতো ঋণপত্র খুলতে পারছি না। আমাদের মতো আরও অনেক ব্যাংকের অবস্থা একই রকম।’

সংকটের মধ্যে ডলারের দাম দুই দফায় ৭৫ পয়সা কমিয়েছে ব্যাংকগুলো। ফলে প্রবাসী ও রপ্তানি আয় কেনায় ডলারের দাম হয়েছে ১০৯ টাকা ৭৫ পয়সা। আর আমদানির ক্ষেত্রে দাম ১১০ টাকা ২৫ পয়সা। তবে নির্ধারিত দামে ডলার কেনাবেচা হচ্ছে কম। গতকাল বৃহস্পতিবারও ব্যাংকগুলো ১২৩ টাকার বেশি দামে প্রবাসী আয় কিনেছে। বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলারস অ্যাসোসিয়েশন (বাফেদা) ও অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ (এবিবি) গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় এক সভায় এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ডলারের নতুন এ দাম কার্যকর হবে আগামী রোববার থেকে। আগে আনুষ্ঠানিক দাম ২৫ পয়সা বেশি ছিল।

এদিকে বেশি দামে প্রতিযোগিতা করে প্রবাসী আয় কিনছে শরিয়াহভিত্তিক ও প্রচলিত ধারার কিছু ব্যাংক। ফলে চলতি মাসের প্রথম ২৯ দিনে (১-২৯ নভেম্বর) প্রবাসী আয় এসেছে ১৮৩ কোটি ডলার, যা গত বছরের একই সময়ে ছিল ১৫২ কোটি ডলার।

গতকাল বিদেশি রেমিট্যান্স হাউসগুলো ১২১-১২২ টাকা দামে প্রবাসী আয় সংগ্রহ করেছে। এর চেয়ে বেশি দামে তাদের কাছ থেকে ডলার কিনেছে দেশের ব্যাংকগুলো। এমন একটি ব্যাংকের ট্রেজারি বিভাগের কর্মকর্তা প্রথম আলোকে জানান, কেন্দ্রীয় ব্যাংক কোনো পদক্ষেপ নেবে না, এমন আশ্বাস পাওয়ার পরই বেশি দামে ডলার কেনা হচ্ছে। এর মাধ্যমে পুরোনো কিছু আমদানি দায় শোধ করা সম্ভব হয়েছে।

রিজার্ভ আরও কমল

এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ আরও কমেছে। এক সপ্তাহে কমেছে ১২ কোটি ডলার। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) হিসাবপদ্ধতি অনুযায়ী গত বুধবার রিজার্ভ কমে ১ হাজার ৯৪০ কোটি ডলার বা ১৯ দশমিক ৪০ বিলিয়ন বিলিয়নে নেমেছে। আগের সপ্তাহের বুধবারে রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ১৯ দশমিক ৫২ বিলিয়ন ডলার। তবে দায়হীন বা প্রকৃত রিজার্ভ এখন ১৬ বিলিয়নের কম। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে গতকাল যে সাপ্তাহিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, তাতে রিজার্ভ কমার এই তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে।

জানা গেছে, গত বুধবার মোট রিজার্ভ ছিল ২ হাজার ৫০২ কোটি ডলার। তবে রিজার্ভ থেকে গঠন করা রপ্তানি উন্নয়ন তহবিল বা ইডিএফ, লং টার্ম ফান্ড (এলটিএফ) ও গ্রিন ট্রান্সফরমেশন ফান্ড (জিটিএফ), বাংলাদেশ বিমানকে উড়োজাহাজ কিনতে সোনালী ব্যাংককে রিজার্ভ থেকে দেওয়া অর্থ এবং পায়রা বন্দরের রাবনাবাদ চ্যানেলের খনন কর্মসূচিতে রিজার্ভ থেকে দেওয়া ডলার বাদ দিলে আইএমএফের হিসাব পদ্ধতি বিপিএম ৬ অনুযায়ী রিজার্ভ দাঁড়ায় ১ হাজার ৯৪০ কোটি ডলার। তবে এর পুরোটাই দায়হীন নয়। এর মধ্যে সাড়ে তিন বিলিয়ন ডলারের ওপর দায় রয়েছে, যার মধ্যে আইএমএফের সদস্য দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে দেওয়া ২ বিলিয়নের কিছু বেশি ঋণ রয়েছে। আবার ব্যাংকগুলোর বৈদেশিক দায় পরিশোধের জন্য এক বিলিয়নের কিছু বেশি ডলার রয়েছে। পাশাপাশি এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) বিল পরিশোধের জন্য রয়েছে প্রায় ৫০ কোটি ডলার। ফলে নিট বা প্রকৃত রিজার্ভ ১৬ বিলিয়ন ডলারের কম হবে।

এদিকে যুগপৎ ডলার ও টাকার সংকটে থাকা ইসলামী ব্যাংক বেশি দামে কিনে কম দামে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে বিক্রি করছে। বাংলাদেশ ব্যাংক রিজার্ভ বাড়াতে এসব ডলার কিনছে। তবে সরকারি আমদানির দায় মেটাতে এর চেয়ে বেশি পরিমাণ বিক্রি করছে। ফলে রিজার্ভে টান পড়ছে।

এদিকে ডলার–সংকট কাটাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে ব্যাংকগুলোকে বিদেশ থেকে উচ্চ সুদে আমানত সংগ্রহের সুযোগ দিয়েছে। এতে বলা হয়েছে, তিন মাস থেকে পাঁচ বছর মেয়াদি ডলার রেখে ৭ থেকে ৯ শতাংশের বেশি সুদ দিতে পারবে ব্যাংকগুলো। অন্য দেশের সুদের হার এর চেয়ে কম।

Prothom Alo

Exit mobile version