বাংলাদেশে প্রত্যক্ষ বিদেশী বিনিয়োগে এমন মন্দা ভাব আগে কখনো দেখা যায়নি। এমনকি কভিডের সময়ও দেশে বিদেশী বিনিয়োগের ধারাবাহিকতায় ছন্দপতন ঘটেনি। কিন্তু বাংলাদেশের একটি প্রতিষ্ঠান ও কিছু ব্যক্তির ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা আরোপের ঘটনা বৈশ্বিক বিনিয়োগকারীদের মাঝে হলুদ সংকেত দেয়। আর রিজার্ভের ধারাবাহিক পতনের পর বাংলাদেশে বিদেশী বিনিয়োগকারীরা অনেকটাই থমকে যায়। বাংলাদেশ ব্যাংকের গতকাল প্রকাশিত ‘ফরেন ডিরেক্ট ইনভেস্টমেন্ট অ্যান্ড এক্সটার্নাল ডেট, জুলাই-ডিসেম্বর ২০২৩’ প্রতিবেদনের তথ্যে দেখা গেছে, ২০২২ ও ২০২৩ পঞ্জিকাবর্ষে বাংলাদেশে বিদেশী বিনিয়োগের মজুদ (পুঞ্জীভূত বিদেশী বিনিয়োগ বা এফডিআই স্টক) হ্রাস পেয়েছে।
বিভিন্ন বহুজাতিক কোম্পানি ও ফরেন চেম্বারগুলোর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মুনাফা প্রত্যাবাসনে জটিলতা, রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের বকেয়া পরিশোধ এবং ধারাবাহিকভাবে রিজার্ভের পতন বাংলাদেশ থেকে বিদেশী বিনিয়োগকারীদের বিমুখ করে তুলছে। বাংলাদেশ নিয়ে তাদের উচ্ছ্বাস এখন অনেকটাই কমে গেছে। গত সোমবারও ফিচ রেটিং বাংলাদেশের রেটিং অবনমন করেছে। সংস্থাটির বক্তব্যের পুনরাবৃত্তি করে ফরেন চেম্বারগুলো বলছে, রিজার্ভ পরিস্থিতির উন্নয়ন না হলে বাংলাদেশে শিগগিরই বিদেশী বিনিয়োগ পরিস্থিতিরও উন্নতি হবে না।
বাংলাদেশ ব্যাংকের স্ট্যাটিস্টিকস ডিপার্টমেন্টের এফআইইডি ম্যানেজমেন্ট সেলের তথ্য অনুযায়ী, ২০১০ সালে দেশে এফডিআই স্টক ছিল ৬০৭ কোটি ডলারের কিছু বেশি। ২০১৩ সালের মধ্যেই তা ৮৫৯ কোটি ডলার অতিক্রম করে যায়। এরপর ক্রমাগত বাড়তে বাড়তে দেশে এফডিআই স্টকের পরিমাণ প্রথমবারের মতো ২০ বিলিয়ন ডলারের মাইলফলক অতিক্রম করে ২০২১ সালে। সেবার বছর শেষে দেশে পুঞ্জীভূত বিদেশী বিনিয়োগের পরিমাণ দাঁড়ায় ২ হাজার ১৫৮ কোটি ডলারের কিছু বেশিতে। এরপর গত দুই পঞ্জিকাবর্ষে তা টানা হ্রাস পেয়েছে। ২০২২ সাল শেষে দেশে এফডিআই স্টক দাঁড়ায় ২ হাজার ৭৫ কোটি ৫১ লাখ ডলারে। এরপর ২০২৩ সাল শেষে তা নেমে আসে প্রায় ২ হাজার ৫৪ কোটি ৯১ লাখ ডলারে।
দেশে বিদেশী বিনিয়োগের সবচেয়ে বড় উৎস যুক্তরাষ্ট্র। দেশটি থেকে নতুন বিনিয়োগ আকর্ষণ নিয়ে আশঙ্কা তৈরি হয় ২০২১ সালের ডিসেম্বরে। ওই সময় দেশের একটি আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও এর কয়েক কর্মকর্তার ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করে মার্কিন ট্রেজারি বিভাগ। দুই দেশের সম্পর্কে দেখা দেয় টানাপড়েন, যা চলতি বছরের ৭ জানুয়ারির জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে আরো তীব্রতা পায়। এর মধ্যেই আবার বাংলাদেশে নির্বাচন ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করার অভিযোগ তুলে গত বছর কয়েক ব্যক্তিকে মার্কিন ভিসা নীতির আওতায় আনার ঘোষণা দেয়া হয়। সর্বশেষ দেশের এক সাবেক সেনাপ্রধান ও তার পরিবারের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়।
বিধিনিষেধ-নিষেধাজ্ঞা নিয়ে এ টানাপড়েনের মধ্যেই দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ নিয়েও আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) স্বীকৃত বিপিএম৬ পদ্ধতিতে হিসাবায়নের ভিত্তিতে বাংলাদেশ ব্যাংক এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, দেশে বৈদেশিক মুদ্রার গ্রস রিজার্ভ ২০২২ সালের জুন শেষেও ছিল ৩ হাজার ৩৩৮ কোটি ডলার। ২০২৩ সালের জুন শেষে তা আরো কমে ২ হাজার ৪৭৫ কোটি ডলারে দাঁড়ায়। ডিসেম্বর শেষে তা আরো কমে নেমে আসে প্রায় ২ হাজার ১৮৭ কোটি ডলারে। এ নিম্নমুখিতা অব্যাহত আছে এখনো। সর্বশেষ গত ২১ মে পর্যন্ত হালনাগাদকৃত তথ্য অনুযায়ী দেশের গ্রস রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৮৬১ কোটি ডলারে। তবে দেশের ব্যবহারযোগ্য নিট রিজার্ভের পরিমাণ আরো কম। যদিও বাংলাদেশ ব্যাংক কখনই সে তথ্য প্রকাশ করে না।
রিজার্ভ তথা ডলার সংকটের কারণে দেশে পরিচালনাধীন বিদেশী ও বহুজাতিক কোম্পানিগুলো এখন লভ্যাংশ প্রত্যাবাসন করতে গিয়ে ব্যাপক সমস্যায় পড়ছে। এছাড়া রয়্যালটি ফি পরিশোধসহ সংশ্লিষ্ট বিদেশী পক্ষগুলোর সঙ্গে লেনদেন করতে গিয়েও বিপাকে পড়তে হচ্ছে প্রতিষ্ঠানগুলোকে। এর মধ্যে দেশের পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর বিভিন্ন প্রতিবেদনেও এ সংকটের কথা উঠে এসেছে। বিভিন্ন বহুজাতিকের পাশাপাশি বিদেশী এয়ারলাইনসগুলোও এখন বাংলাদেশে কার্যক্রম চালাতে গিয়ে বিপাকে পড়ছে। সর্বশেষ গত সপ্তাহেই বৈশ্বিক আকাশ পরিবহন সংস্থাগুলোর সংগঠন ইন্টারন্যাশনাল এয়ার ট্রান্সপোর্ট অ্যাসোসিয়েশন (আইএটিএ) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বাংলাদেশে বিভিন্ন এয়ারলাইনস সংস্থার আটকে থাকা অর্থ ছাড়ে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সরকারের প্রতি অনুরোধ জানায়। ওই বিজ্ঞপ্তিতেও এ পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার জন্য বাংলাদেশে চলমান ডলার সংকটকে দায়ী করা হয়।
মোটা দাগে স্যাংশন ও রিজার্ভ পরিস্থিতিই এখন দেশের বিদেশী বিনিয়োগ আকর্ষণের সক্ষমতাকে চ্যালেঞ্জে ফেলছে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা। পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বণিক বার্তাকে বলেন, ‘গত কয়েক বছর ধরে আমাদের দেশে গ্রিনফিল্ড বা নতুন বিনিয়োগ হচ্ছে না। হলেও যৎসামান্য। আবার এফডিআই স্টকের মধ্যে পুনর্বিনিয়োগও আছে অনেক। এক্ষেত্রেও দেখা গেছে অনেক বিদেশী বিনিয়োগকারী অর্থ প্রত্যাবাসন করতে না পেরে পুনরায় বিনিয়োগ করছেন। কভিডপরবর্তী সময়ে আমাদের অভ্যন্তরীণ সংকট বিদেশী বিনিয়োগ আকৃষ্ট না করার পেছনে বড় ভূমিকা রাখছে। আমাদের রিজার্ভ সংকট ও এর কারণে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার রেটিং কমে যাওয়ার পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার মতো বিষয়গুলো এখানে কাজ করেছে।’
বাংলাদেশে ১ বিলিয়ন বা শতকোটি ডলারের বেশি এফডিআই স্টকের উৎস দেশের তালিকায় রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ কোরিয়া, চীন, নেদারল্যান্ডস ও হংকং। এর মধ্যে শীর্ষ উৎস দেশ যুক্তরাষ্ট্র থেকে এফডিআই স্টক এখন ধারাবাহিকভাবে কমছে।
তথ্যমতে, ২০২২ সালের ডিসেম্বর শেষে দেশের মোট এফডিআই স্টকে যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগকারীদের অবদান ছিল ৪১০ কোটি ৩৪ লাখ ১০ হাজার ডলারে। সেখান থেকে কমে গত বছর শেষে দেশে মার্কিন এফডিআই স্টকের পরিমাণ নেমে এসেছে ৩৯৩ কোটি ৫৩ লাখ ৯০ হাজার ডলারে।
সাবেক কূটনীতিকরাও মনে করছেন, রিজার্ভ সংকটের পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র আরোপিত বিধিনিষেধও দেশটিসহ বিদেশী বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করার ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ বাড়িয়ে তুলছে। যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত এম হুমায়ুন কবির এ প্রসঙ্গে বণিক বার্তাকে বলেন, ‘বিদেশী বিনিয়োগকে আমরা শুধু অর্থনৈতিক বিষয় হিসেবে মনে করে থাকি। কিন্তু একজন বিনিয়োগকারীর অন্য একটি দেশে বিনিয়োগের সিদ্ধান্তে শুধু অর্থনৈতিক নয়, অন্যান্য বিষয়েরও প্রভাব থাকে। যেমন যেখানে বিনিয়োগ করা হবে সেখানকার ভাবমূর্তি কেমন, সেখানকার গভর্ন্যান্স (সুশাসন) কেমন, রুল অব ল (আইনের শাসন) পরিস্থিতি কেমন ইত্যাদি। এর যেকোনো একটি নিয়ে নেতিবাচক ধারণা তৈরি হলেও তা বিনিয়োগকারীর সিদ্ধান্তে প্রভাব ফেলতে পারে। স্যাংশনের মতো ঘটনা কিন্তু এসব নিয়েও বিদেশী বিনিয়োগকারীদের কাছে নেতিবাচক বার্তা দেয়। আমাদের এখানে সরাসরি না বলা গেলেও অতীতে দেখা গেছে; যখনই এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে, তখন তা বিদেশী বিনিয়োগেও প্রভাব ফেলেছে। আবার আমাদের এখানে রিজার্ভ সংকটের কারণে বিদেশীরা প্রয়োজনমতো মুনাফা প্রত্যাবাসনও করতে পারছে না। এ বিষয়টি যখন একজন বিনিয়োগকারী আরেকজন বিনিয়োগকারীকে বলছে, তখন সেটি তার বিনিয়োগ সিদ্ধান্তেও প্রভাব ফেলছে। আমাদের দেশে আমরা বিদেশী বিনিয়োগ হিসেবে যা পাই, তা খুবই নগণ্য। এমনকি আমাদের প্রতিবেশী মিয়ানমারেও বিদেশী বিনিয়োগ আমাদের চেয়ে অনেক বেশি।’
দুই দেশের বাণিজ্য খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, গোটা বিশ্বেই এফডিআই প্রবাহ এখন ধীর হয়ে এসেছে। বাংলাদেশে নতুন মার্কিন বিনিয়োগ না আসার পেছনে বড় একটি কারণ এখানকার অভ্যন্তরীণ সংকট। ডলারের বিনিময় হার বা করসংক্রান্ত জটিলতাগুলোও এখানে বড় প্রভাব ফেলছে।
আমেরিকান চেম্বার অব কমার্স ইন বাংলাদেশের (অ্যামচেম) সভাপতি সৈয়দ এরশাদ আহমেদ বণিক বার্তাকে বলেন, ‘দেশে এফডিআই আসে ইকুইটি ক্যাপিটাল, রি-ইনভেস্টমেন্ট আর্নিং ও ইন্ট্রাকোম্পানি লোন হিসেবে। দেখা যাচ্ছে গত এক বছর ডলারের বিনিময় হারের অস্থিতিশীলতার কারণে ইন্ট্রাকোম্পানি লোন অনেক কমে গেছে। এছাড়া দেশের অভ্যন্তরীণ কিছু সমস্যা বা করসংক্রান্ত জটিলতা রয়েছে, যেগুলোর কারণে মার্কিন বড় বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান যেমন কোকা-কোলা বিনিয়োগ থেকে বিরত রেখেছে। এ ধরনের সমস্যাগুলো মিটে গেলে আমরা যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে পারব বলে আশা করি। বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগ প্রত্যাহার না করলেও লাভ কম হওয়ায় পুনরায় বিনিয়োগ করেনি তেমন ঘটনাও ঘটেছে। যেমন শেভরন লাভ করতে পারছে না, ডিভিডেন্ড পাঠাতে পারছে না, এসব ঘটনার প্রভাবও পড়েছে। আবার নতুন বিনিয়োগে নিষেধাজ্ঞা বিষয়ক আলোচনাগুলোর প্রভাব পড়েছে।’
দেশে বিদেশী বিনিয়োগের দ্বিতীয় শীর্ষ উৎস দেশ যুক্তরাজ্য। গত বছর ডিসেম্বর শেষে দেশে ব্রিটিশ এফডিআই স্টকের পরিমাণ ছিল ৩০৪ কোটি ১৪ লাখ ২০ হাজার ডলার, যা ২০২২ সালের ডিসেম্বর শেষে ছিল ২৭১ কোটি ২১ লাখ ১০ হাজার ডলার।
শীর্ষ উৎস দেশ যুক্তরাষ্ট্রের মতো সিঙ্গাপুর থেকে আসা এফডিআই স্টকও এখন কমতির দিকে। গত ডিসেম্বর শেষে দেশে সিঙ্গাপুর থেকে আসা এফডিআই স্টকের পরিমাণ ছিল ১৫৫ কোটি ৮২ লাখ ৩০ হাজার ডলার, যা ২০২২ সালের ডিসেম্বর শেষে ছিল ১৮৪ কোটি ৩ লাখ ৮০ হাজার ডলার।
দক্ষিণ কোরিয়া থেকে আসা এফডিআই স্টক ২০২৩ সালের ডিসেম্বর শেষে ছিল ১৪৯ কোটি ৩০ লাখ ৪০ হাজার ডলার, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ১৪৫ কোটি ৮৩ লাখ ৫০ হাজার ডলার।
অন্যদিকে বৈদেশিক বাণিজ্যে বাংলাদেশের শীর্ষ অংশীদার দেশ চীনের এফডিআই স্টক ২০২৩ সালের ডিসেম্বর শেষে ছিল ১৩৭ কোটি ৪০ লাখ ২০ হাজার ডলার। এর আগে ২০২২ সালের ডিসেম্বর শেষে দেশটির এফডিআই স্টকের পরিমাণ ছিল ১৩৪ কোটি ৫৮ লাখ ডলার।
দেশে চীনা এফডিআই প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাংলাদেশ-চায়না চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (বিসিসিসিআই) সেক্রেটারি জেনারেল আল মামুন মৃধা বণিক বার্তাকে বলেন, ‘চীনারা মূলত যেসব দেশে তাদের নিজস্ব রাষ্ট্রীয় নীতির সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নীতি আছে, সেখানে বিনিয়োগ করতেই বেশি স্বাচ্ছদ্য বোধ করে। এর প্রতিফলন হিসেবে ভিয়েতনাম, ফিলিপাইন, কম্বোডিয়া, লাওস—এসব দেশে চীনের বিনিয়োগ প্রকল্প স্থানান্তর এখন বেড়েছে। আবার যেসব দেশ আরসিইপি বা আসিয়ান জোটের সদস্য; সেসব দেশেও চীনের বিনিয়োগ বেড়েছে। আবার যে দেশগুলোর সঙ্গে চীনের এফটিএ আছে, সেগুলোয়ও চীনের বিনিয়োগ বেড়েছে। আমরা আশাবাদী দেশে চলমান চীনা অর্থনৈতিক অঞ্চলের কাজ যথাযথ সময়ে শেষ হলে এখানেও চীনের বিনিয়োগ উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বাড়বে এবং সেগুলো অনেক বৈচিত্র্যপূর্ণ বিনিয়োগ হবে।’
দেশে নেদারল্যান্ডসের এফডিআই স্টক ২০২৩ সালের ডিসেম্বর শেষে ছিল ১৩২ কোটি ৯২ লাখ ৬০ হাজার ডলার। ২০২২ সালের ডিসেম্বর শেষে দেশটির এফডিআই স্টকের পরিমাণ ছিল ১২৫ কোটি ৫৩ লাখ ৮০ হাজার ডলার।
ডাচ্-বাংলা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিবিসিসিআই) প্রেসিডেন্ট মো. আনোয়ার শওকত আফসার বণিক বার্তাকে বলেন, ‘অনেকেই গত বছর থেকে বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচন পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে আসছিল। অনেকের মধ্যে বিনিয়োগ নিয়ে দোদুল্যমানতাও দেখা দেয়। বলতে গেলে এ পরিস্থিতি এখনো আছে। এখন বাংলাদেশে নির্বাচন শেষ। কিন্তু বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার যে উদ্যোগগুলো নেয়া হয়েছিল, বিশেষ করে প্রচারণামূলক কর্মকাণ্ডগুলো পূর্ণ গতিতে এখনো শুরু হয়নি বা আগের উদ্যোগগুলোর ফলোআপও এখন তেমন একটা হচ্ছে না। এ কাজগুলো করা হলে বিনিয়োগ আকর্ষণ ও বৃদ্ধির সম্ভাবনা এখনো রয়েছে। কূটনৈতিক উদ্যোগগুলো সে সম্ভাবনা বাস্তবায়নে বড় ভূমিকা রাখতে পারে। রিজার্ভের পরিমাণ বিদেশী বিনিয়োগ আকর্ষণে বড় ভূমিকা রেখেছে বলে আমার মনে হয় না। নিষেধাজ্ঞার আলোচনাগুলোর প্রভাব কিছুটা পড়বেই। কারণ যুক্তরাষ্ট্রের অনেক বন্ধু দেশ আছে বা জোট আছে। এক্ষেত্রেও সরকার, ব্যক্তি খাতের সংগঠন এবং কূটনৈতিক মিশনগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে বলে আমি মনে করি।’
দেশে চীনের বিশেষায়িত প্রশাসনিক অঞ্চল হংকং থেকে আসা এফডিআই স্টক ২০২৩ সালের ডিসেম্বর শেষে ছিল ১২৭ কোটি ৫২ লাখ ২০ হাজার ডলার, যা ২০২২ সালের ডিসেম্বর শেষে ছিল ১২৬ কোটি ৮৯ লাখ ৯০ হাজার ডলার।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের খাতভিত্তিক পরিসংখ্যান পর্যালোচনায় দেখা যাচ্ছে, ২০২৩ সালের ডিসেম্বর শেষে দেশে যেসব খাতে বিদেশী বিনিয়োগের মজুদ কমেছে, সেগুলোর মধ্যে রয়েছে বিদ্যুৎ-গ্যাস-পেট্রোলিয়াম, ম্যানুফ্যাকচারিং, ট্রেড অ্যান্ড কমার্স এবং ট্রান্সপোর্ট-স্টোরেজ অ্যান্ড কমিউনিকেশন খাত। বিদ্যুৎ-গ্যাস-পেট্রোলিয়াম খাতের এফডিআই স্টক ২০২২ সাল শেষে ছিল ৬৩৩ কোটি ডলার, যা ২০২৩ সালের ডিসেম্বর শেষে হয়েছে ৬৩০ কোটি ডলার। ম্যানুফ্যাকচারিং খাতের এফডিআই স্টক ২০২২ সালের ডিসেম্বর শেষে ছিল ৭৬৩ কোটি ডলার। ২০২৩ সালের ডিসেম্বর শেষে তা নেমে এসেছে ৭৫১ কোটি ডলারে। ট্রেড অ্যান্ড কমার্স খাতে এফডিআই স্টক ২০২২ সালের ৪১১ কোটি ডলার থেকে কমে ২০২৩ সাল শেষে দাঁড়িয়েছে ৩৮০ কোটি ডলারে। ট্রান্সপোর্ট, স্টোরেজ অ্যান্ড কমিউনিকেশন খাতে ২০২২ সালের ডিসেম্বর শেষে এফডিআই স্টকের পরিমাণ ছিল ১৪৬ কোটি ডলার। তা ২০২৩ সালের ডিসেম্বর শেষে হয়েছে ১৩৭ কোটি ডলার।
bonik barta