Site icon The Bangladesh Chronicle

রিজার্ভে ধরে রাখতে কঠোর হচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক

শুক্রবার সেপ্টেম্বর ২৯, ২০২৩ ১২:১৩ অপরাহ্ন
সর্বশেষ আপডেট: শুক্রবার সেপ্টেম্বর ২৯, ২০২৩ ১২:১৩ অপরাহ্ন

আগামী বছরের জানুয়ারিতে অনুষ্ঠেয় জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বাংলাদেশ ব্যাংক কোনো ধরনের নীতিগত পরিবর্তন আনবে না। এই সময়ে বাংলাদেশ ব্যাংক বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ধরে রাখতে ও সরকারকে ঋণ দেওয়ার জন্য অর্থ ছাপানো থেকে বিরত থাকবে।

তবে নির্বাচনের পর নতুন সরকারের অধীনে রিজার্ভ ম্যানেজমেন্ট ও ব্যাংকিং খাত সংস্কারে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা হাতে নেবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের ভাইস চেয়ারম্যান সাদিক আহমেদ ও নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বুধবার এ সুপারিশ করেন।

রিজার্ভ কমে যাওয়া এবং উচ্চ মূল্যস্ফীতির দ্বৈত চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় অর্থনীতিবিদ এবং অন্যান্য অংশীদারদের কাছ থেকে মতামত নিতে শুরু করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক ও অর্থ মন্ত্রণালয়। গত সপ্তাহে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদের সঙ্গে বৈঠক করেছিল বাংলাদেশ ব্যাংক।

বৈঠকের পর আহসান এইচ মনসুর দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘আমরা যা বলেছি তার সঙ্গে তারা মূলত একমত। তারা বলেছে, নির্বাচনের আগে বেশি কিছু করতে পারবে না, যা আমরা বুঝি। কিন্তু নির্বাচনের পর বড় ধরনের পরিবর্তন আনতে হবে- এটা কোনো বিকল্প নয়- এবং তারা এজন্য প্রস্তুতি নিতে চায়।’

তিনি জানান, তাত্ক্ষণিক কাজগুলো হলো রিজার্ভ হ্রাস রোধ করা এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে সরকারি ঋণের ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করা।

বৈঠকে অর্থসচিব মো. খায়রুজ্জামান মজুমদার বলেন, সরকার কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ঋণ নেবে না এবং তারা ইতোমধ্যে সরকারি ব্যয় কমানোর উদ্যোগ নিয়েছে।

তারপরও রিজার্ভ ধরে রাখা যেন একটি অপ্রতিরোধ্য লড়াইয়ে পরিণত হয়েছে।

কারণ বেশ কয়েকটি উদ্যোগ নেওয়া সত্ত্বেও, রিজার্ভ কমে যাওয়া অব্যাহত আছে। মার্কিন ক্রেডিট রেটিং এজেন্সি ফিচের হিসাব অনুযায়ী, বছরের প্রথম নয় মাসে মোট রিজার্ভ ১৯ শতাংশ কমেছে।

গত ২৬ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, মোট বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ২১.১৫ বিলিয়ন ডলারে, যা চার মাসের আমদানি বিল মেটানোর জন্য যথেষ্ট।

চলতি সপ্তাহের শুরুতে এক প্রতিবেদনে ফিচ বলেছে, ‘আমদানি বৃদ্ধি এবং বৈদেশিক মুদ্রায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হস্তক্ষেপের কারণে রিজার্ভ চাপের মধ্যে থাকবে বলে আমরা পূর্বাভাস দিচ্ছি।’

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সাবেক অর্থনীতিবিদ আহসান এইচ মনসুর বলেন, রিজার্ভ আর কমতে দেওয়া যাবে না।

তিনি আরও বলেন, ‘রিজার্ভ নিয়ে স্বল্পমেয়াদী ও দীর্ঘমেয়াদী উভয় ধরনের সমস্যা আছে। স্বল্পমেয়াদে অর্থাৎ নির্বাচনের আগ পর্যন্ত- খুব নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করতে হবে এবং এটিকে খুব কমতে দেওয়া যেতে পারে না। প্রয়োজনে সকাল ও সন্ধ্যায় মনিটরিংয়ের জন্য টিম পাঠাতে হবে।’

এদিকে আইএমএফের কাছ থেকে ৪.৫ বিলিয়ন ডলার ঋণের দ্বিতীয় কিস্তি পেতে সরকার ইতোমধ্যে জুনের শেষে ন্যূনতম ২৪.৪৬ বিলিয়ন ডলারের আন্তর্জাতিক রিজার্ভ ধরে রাখতে ব্যর্থ হয়েছে।

ব্র্যাক ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান আহসান এইচ মনসুর বলেন, নির্বাচনের আগে খুব বেশি কিছু করা সম্ভব না হলেও নির্বাচনের পর ব্যাংকিং খাত, বিশেষ করে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর সংস্কারে বিভিন্ন উদ্যোগ নিতে হবে।

‘কেন্দ্রীয় ব্যাংককে যেন নতুন করে টাকা ছাপানোর প্রয়োজন না হয়, সেজন্য সরকারকে ব্যয় কমাতে হবে,’ যোগ করেন তিনি।

গত অর্থবছরে সরকারি কার্যক্রম পরিচালনার জন্য সরকার বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছ থেকে রেকর্ড ৯৮ হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়েছিল।

উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন অর্থ হিসেবে পরিচিত এই ধরনের ঋণ মূল্যস্ফীতির চাপ বাড়ায় এবং এ কারণে ইতোমধ্যে বাংলাদেশ উচ্চ মূল্যস্ফীতিতে পড়েছে।

খাদ্য মূল্যস্ফীতির কারণে আগস্টে মূল্যস্ফীতি ২৩ বেসিস পয়েন্ট বেড়ে ৯ দশমিক ৯২ শতাংশে দাঁড়িয়েছে, যা ১২ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ।

আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা আমাদের জানিয়েছেন, তারা ইতোমধ্যে নতুন নোট ছাপিয়ে সরকারকে অর্থায়ন বন্ধ করে দিয়েছে। এছাড়া ব্যাংকিং খাতের উন্নতিতে বাংলাদেশ ব্যাংক বেশ কয়েকটি উদ্যোগ নিতে প্রস্তুত আছে।’

Exit mobile version