Site icon The Bangladesh Chronicle

রাস্তার ইট তুলে বিক্রি করলেন চেয়ারম্যান

রাস্তার ইট তুলে বিক্রি করলেন চেয়ারম্যান

কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার নাওডাঙ্গা ইউপি চেয়ারম্যান এবং দুই ইউপি সদস্যের বিরুদ্ধে বালারহাটের রাস্তার ইট তুলে বিক্রি করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এ বিষয়ে হাট ইজারাদার ফুলবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে গত সোমবার মৌখিকভাবে অভিযোগ করেছেন।

বালারহাটের ইজারাদার ও এলজিইডির ফুলবাড়ী কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) অধীনে বালারহাটের শেড মেরামত ও হাটের রাস্তা পাকাকরণের জন্য প্রায় ৫৫ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। ফুলবাড়ী উপজেলার বরেন্দ্র কনস্ট্রাকশন নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজটি পায়।

চলতি মাসে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান হাটের রাস্তা পাকাকরণ কাজ শুরু করে। গত সোমবার নাওডাঙ্গা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও ওই ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি হাছন আলী এবং ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য শহিদুল ইসলাম ও ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মো. মহির উদ্দিন বাজারের রাস্তা থেকে উন্নয়নমূলক কাজ করার কথা বলে প্রায় ২০ হাজার ইট তুলে নিয়ে যান। দুই দিন পর তাঁরা দুই হাজার ইট ভেঙে খোয়া করে ইউপির গুদাম সংস্কারের জন্য রেখে বাকি ইট বিক্রি করে দেন।

বালারহাট ইজারাদার মো. আনিছুর রহমান বাবু বলেন, ‘হাট উন্নয়নের কাজ শুরু হলে ইউপি চেয়ারম্যান বাজারের ২০০ ফুট রাস্তা থেকে প্রায় ২০ হাজার ইট তুলে নিয়ে যান। এ সময় আমি চেয়ারম্যানকে ইট তুলে নিয়ে যাওয়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি নিজেকে হাট কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে দাবি করে ইট ইউনিয়নের উন্নয়নের কাজে ব্যবহার হবে বলে জানান। কিন্তু দুই দিন পর ইউপি কার্যালয়ে গিয়ে দেখি, হাটের রাস্তা থেকে তুলে নেওয়া ইট থেকে ২ হাজার ইট খোয়া করে বাকি ইট দুজন ইউপি সদস্যের যোগসাজশে তিনি বিক্রি করে দিয়েছেন।’

বরেন্দ্র কনস্ট্রাকশনের স্বত্বাধিকারী সহিদার রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘এলজিইডির সঙ্গে চুক্তির সময় হাটের রাস্তা থেকে ইট তুলে নেওয়ার কথা উল্লেখ ছিল না। কাজ শুরু করার পর স্থানীয় ইউপি সদস্য ও চেয়ারম্যান এসে হাটের রাস্তার ইট তুলে নিয়ে যান। এতে রাস্তায় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এখন ওই গর্তে প্রায় ২০ হাজার টাকার বালু ফেলতে হবে। আমি চেয়ারম্যানকে ইট তুলে নিয়ে যেতে বাধা দিলে ইউনিয়নের উন্নয়নের জন্য তুলে নেওয়া হচ্ছে বলে তিনি জোর করে সব ইট নিয়ে যান।’

রাস্তার ইট তুলে নিয়ে বিক্রি করে দেওয়ার অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ইউপি সদস্য মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘ঠিকাদার রাস্তার ইট না তুলে বালু দিয়ে ঢেকে দিচ্ছিল। এত টাকার সম্পদ মাটির নিচে চাপা পড়ছে দেখে তাঁরা ইউনিয়ন পরিষদের গুদাম সংস্কারের জন্য প্রায় ১২ হাজার ইট তুলে নিয়ে এসেছেন। সেগুলো বিক্রি করা হয়নি। খোয়া করে ইউনিয়ন পরিষদের মাঠে রাখা হয়েছে।’

অভিযোগের বিষয়ে অপর ইউপি সদস্য মো. মহির উদ্দিন বলেন, ‘ঠিকাদারের লোকজন বালু দিয়ে ইট ঢেকে দিচ্ছিল। তাই আমরা সেখান থেকে ১৪ হাজার ইট তুলে নিয়ে এসেছি। এ জন্য ঠিকাদারকে ২০ হাজার টাকা দিতে হয়েছে। এর মধ্যে আট হাজার ইট ভেঙে খোয়া করা হয়েছে। বাকি ইট বিক্রি করে ঠিকাদারের টাকা ও খোয়া ভাঙার  শ্রমিকদের ৬ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া প্রায় আট হাজার টাকা এখনো চেয়ারম্যানের কাছে রয়েছে। সেটি দিয়ে সিমেন্ট কিনে ইউপির উন্নয়নমূলক কাজ করা হবে।’

এ বিষয়ে নাওডাঙ্গা ইউপির চেয়ারম্যান মো. হাছেন আলী প্রথম আলোকে বলেন, হাটের ইট ইউনিয়নের কেউ তুলে নেননি। ঠিকাদার ইট কী করেছে, সেটা ঠিকাদার বলতে পারবে। তিনি এ বিষয়ে কিছু জানেন না।

ফুলবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রেহেনুমা তারান্নুম প্রথম আলোকে বলেন, হাটের ইট কোনো ইউপি চেয়ারম্যান তুলে নিলাম ছাড়া বিক্রি করতে পারেন না। এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Prothom alo

Exit mobile version