বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে বিভিন্ন মতাদর্শের রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্য প্রায় অকল্পনীয়। তবে সৌভাগ্যক্রমে জুলাই-আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানের পর জাতীয় ঐক্যের একটি আবহ তৈরি হয়েছে। বেশ কয়েক মাস ধরে রাষ্ট্র সংস্কারের বিষয়ে ফ্যাসিবাদবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো ঐকমত্যে পৌঁছাতে নিরলস কাজ করে যাচ্ছে। বাংলাদেশের ইতিহাসে এ ধরনের রাজনৈতিক সংলাপ ইতঃপূর্বে ঘটেনি। দেশের জাতীয়তাবাদী, ইসলামী, ডান, বাম সব ধারার রাজনৈতিক দল যেভাবে জাতীয় স্বার্থ প্রাধান্য দিয়ে এক টেবিলে বসে আলোচনা করে ঐকমত্যে পৌঁছার চেষ্টা করছে তা এক কথায় অভূতপূর্ব। রাজনৈতিক দলগুলো জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের ডাকে সাড়া দিয়ে বেশ আন্তরিকতার সাথে বিভিন্ন সংস্কার ইস্যু নিয়ে খোলামেলা আলোচনা করছে। সবাই যথেষ্ট হোমওয়ার্ক ও পড়াশোনা করে জাতীয় ইস্যুগুলো নিষ্পত্তির চেষ্টা করছেন। জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সাথে রাজনৈতিক দলগুলোর আলোচনা বিটিভিতে সরাসরি সম্প্রচারিত হচ্ছে যা সমগ্র জাতি জানতে পারছে। আবার আলোচনা শেষে দলীয় নেতারা প্রেস ব্রিফিং করছেন যা আলোচনার স্বচ্ছতা নিশ্চিত করছে।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সাথে সংলাপে রাজনৈতিক দলগুলোর সক্রিয় অংশগ্রহণ ও আলোচনার ফলের দিকে দেশবাসী তাকিয়ে আছে। অন্তর্বর্তী সরকার বিভিন্ন খাতে রাষ্ট্রব্যবস্থা সংস্কারের লক্ষ্যে এক ডজন সংস্কার কমিশন গঠন করেছে। প্রথমে গঠিত ছয়টি সংস্কার কমিশন নির্ধারিত সময়ে প্রতিবেদন দাখিল করে। এগুলো হচ্ছে : সংবিধান সংস্কার কমিশন, নির্বাচন সংস্কার কমিশন, বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন, দুর্নীতি দমন বিভাগ সংস্কার কমিশন, জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন ও পুলিশ সংস্কার কমিশন।
এসব কমিশনের প্রতিবেদন ও সুপারিশ পাওয়ার পরে সরকার প্রধানত দুটো পদক্ষেপ নিয়েছে। প্রথমত স্বল্পসময়ে যেগুলো বাস্তবায়ন করা যায় তা চিহ্নিত করে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ এবং দ্বিতীয়ত অবশিষ্টগুলোর মধ্য থেকে যেগুলো রাজনৈতিকভাবে অপেক্ষাকৃত বেশি গুরুত্বপূর্ণ সেগুলো নিয়ে রাজনৈতিক দলসমূহ ও নাগরিক সমাজের সাথে মতবিনিময় করে জাতীয় ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে একটি জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গঠন করা। এ কমিশন প্রথম পর্যায়ে বিভিন্ন কমিশনের মোট ১৬৬টি গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ বাছাই করে সে সম্পর্কে ৩৮টি রাজনৈতিক দল ও জোটের কাছে মতামত চায়। মাত্র কয়েকটি ব্যতীত সব রাজনৈতিক দল একটি স্পেডশিটে লিখিত মতামত ও মন্তব্য জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের কাছে জমা দেয়। এরপর কমিশন রাজনৈতিক দল ও জোটের সাথে পৃথকভাবে আলোচনায় মিলিত হয়। কোনো কোনো দলের সাথে একাধিকবার আলোচনা করে। এছাড়া কমিশন বিভিন্ন নাগরিক ও পেশাজীবী সংগঠনের সাথে সভা করে। কমিশন রাজনৈতিক দল ও জোটের সাথে আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বিভিন্ন বিষয়ে কতটুকু ঐকমত্যে পৌঁছানো সম্ভব হয়েছে তার একটি তুলনামূলক চিত্র তৈরি করে। এরপরে কমিশন গুরুত্বপূর্ণ সংস্কারগুলোর বিষয়ে জাতীয় ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে যৌথভাবে আলোচনার উদ্যোগ নেয় এবং পারস্পরিক আলোচনার মাধ্যমে বিভিন্ন বিষয়ে মতপার্থক্য কমিয়ে আনা বা পূর্ণ ঐকমত্যে পৌঁছার উদ্যোগ গ্রহণ করে। এ লক্ষ্যে বিগত ২ জুন প্রধান উপদেষ্টা সব রাজনৈতিক দলের নেতাদের সাথে মিলিত হয়ে দ্বিতীয় দফার আলোচনার উদ্বোধন করেন। ঈদুল আজহার ছুটির পরে ১৭ জুন থেকে পুনরায় ধারাবাহিক আলোচনা শুরু হয়েছে।
প্রশ্ন হচ্ছে, কোন কোন বিষয় নিয়ে রাজনৈতিক সংলাপ চলছে? যেসব বিষয় নিয়ে ইতোমধ্যে বিভিন্ন মিডিয়ায় প্রদত্ত ব্রিফিং থেকে যা প্রতীয়মান হয়েছে তা হলো :
১. বিদ্যমান সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী কোনো সংসদ সদস্য জাতীয় সংসদে নিজ দলের সিদ্ধান্তের বাইরে ভোট দিতে পারেন না। এর ফলে সংসদ সদস্যরা স্বাধীনভাবে তাদের মতামত বা ভোট দিতে পারেন না। তিনি বলতে গেলে তার দলের কাছে দাস হিসেবে থাকতে বাধ্য হন। বিস্তারিত আলোচনা শেষে রাজনৈতিক দলগুলো ঐকমত্যে উপনীত হয়েছে, সংসদে অর্থ বিল ও প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আস্থা ভোট প্রদান ব্যতীত অন্য সব বিষয়ে সংসদ সদস্যরা স্বাধীনভাবে ভোট দিতে পারবেন এ মর্মে সংবিধান সংশোধন করা হবে। অবশ্য বিএনপি আরো দুটো বিষয় অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব দিয়েছে। সে দু’টি হচ্ছে সংবিধান সংশোধন ও রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা পরিস্থিতি বিশেষত যুদ্ধসংক্রান্ত বিষয়। প্রথমটির সাথে জামায়াতে ইসলামীও একমত।
২. বিদ্যমান ব্যবস্থায় জাতীয় সংসদের বিভিন্ন স্থায়ী কমিটিগুলোর সভাপতির পদ প্রধানত সরকারি দল থেকে মনোনীত করা হয়; ফলে জবাবদিহি নিশ্চিতে বিরোধী দলগুলো বিশেষ কোনো ভূমিকা পালন করতে পারে না। জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সাথে আলোচনায় সব দল একমত হয়েছে, সংসদের পাবলিক অ্যাকাউন্টস কমিটি, পাবলিক আন্ডারটেকিং কমিটি, এস্টিমেট কমিটি ও প্রিভিলেজ কমিটির সভাপতির পদগুলো বিরোধী দলগুলো থেকে মনোনয়ন করা হবে। এ ছাড়া বিভিন্ন মন্ত্রণালয়সংক্রান্ত স্থায়ী কমিটিসমূহের সভাপতি পদের অন্তত ৫০ শতাংশ বিরোধী দলগুলো থেকে মনোনয়ন করা হবে।
৩. বিদ্যমান ব্যবস্থায় জাতীয় সংসদে সাধারণ আসন সংখ্যা ৩০০টি এবং ৫০টি সংরক্ষিত নারী আসন রয়েছে। রাজনৈতিক দলগুলোর প্রায় সবাই নারী আসন ১০০টিতে বাড়ানোর বিষয়ে ঐকমত্যে উপনীত হয়েছে। তবে ওই ১০০টি আসনের নির্বাচন পদ্ধতি কী হবে তা নিয়ে আলোচনা অব্যাহত রয়েছে। এজন্য কয়েকটি বিকল্প প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা চলছে। এক. সংসদ নির্বাচনে যে দল যত ভাগ ভোট পাবে তার সমানুপাতিক হারে নারী আসন পাবে। দুই. সংসদ নির্বাচনে যে দল যত আসন পাবে তার সমানুপাতিক হারে নারী আসন পাবে। তিন. সংসদের তিনটি আসন নিয়ে একটি নারী আসন হবে এবং সেখানে শুধু নারী প্রার্থীরা প্রত্যক্ষ ভোটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে জিতে আসবেন। রাজনৈতিক নেতারা প্রতিটি প্রস্তাবের পক্ষে-বিপক্ষে যুক্তি দিয়েছেন। এখন দেখা যাক তারা ঐকমত্যে কতটা পৌঁছাতে পারেন।
৪. বিদ্যমান সংবিধান অনুযায়ী পার্লামেন্টের একটিমাত্র কক্ষ রয়েছে যা জাতীয় সংসদ নামে পরিচিত। পার্লামেন্টে ছোট-বড় সব দলের প্রতিনিধিত্ব থাকা, সরকারের কার্যক্রম এবং আইন প্রণয়নে অধিকতর প্রজ্ঞা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট আইনসভা গঠনের সুপারিশ করা হয়েছিল। বিষয়টি জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিধায় এ নিয়ে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সভায় রাজনৈতিক দলসমূহের প্রতিনিধিরা তাদের মতামত তুলে ধরেন। এতে দেখা যায় যে, অল্প কয়েকটি দল ব্যতীত প্রায় সবাই দ্বিকক্ষবিশিষ্ট আইনসভা গঠনের পক্ষে সম্মতি দিয়েছে। উচ্চকক্ষ ১০০ সদস্যবিশিষ্ট হতে পারে সে ব্যাপারেও তাদের সম্মতি রয়েছে। উচ্চকক্ষ গঠনের প্রক্রিয়া নিয়ে ভিন্ন মত লক্ষ করা গেছে। তবে অনেক দল নিম্নকক্ষের নির্বাচনে প্রাপ্ত ভোটের সমানুপাতিক হারে উচ্চকক্ষে প্রতিনিধি পাঠাতে পারে বলে মত দিয়েছে। আবার এরূপ প্রস্তাবও রয়েছে যে উচ্চকক্ষের ৫০ শতাংশ আসন বিভিন্ন শ্রেণীপেশা ও সুবিধাবঞ্চিত গোষ্ঠী থেকে নেয়া এবং অন্তত ৩০ শতাংশ আসন নারীদের জন্য সংরক্ষিত করা। বিষয়টি এখনো অমীমাংসিত রয়েছে। এ নিয়ে আরো আলোচনার কথা রয়েছে।
৫. বিদ্যমান সংবিধান অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি জাতীয় সংসদের সদস্যদের ভোটে নির্বাচিত হন। যে দল সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে সরকার গঠন করে তারাই রাষ্ট্রপতি পদে মনোনয়ন দেয় এবং সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে তাদের প্রার্থী নির্বাচিত হন। সরকারি দল সুনাম ও যোগ্যতার বিষয়টি গুরুত্ব না দিয়ে যাকে মনোনয়ন দেয় তিনি নিশ্চিতভাবে নির্বাচিত হন। বর্তমান রাষ্ট্রপতির নির্বাচন নিয়ে নানারূপ আলোচনা নাগরিক সমাজে আছে। তাই সংবিধান সংস্কার কমিশন সুপারিশ করেছে, রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের বিদ্যমান ব্যবস্থার পরিবর্তন প্রয়োজন। এ প্রস্তাবে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য লক্ষ করা গেছে। এরূপ প্রস্তাব রয়েছে, যদি উচ্চকক্ষ গঠিত হয় তাহলে উভয় কক্ষের সদস্যদের গোপন ব্যালটে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ সংশোধন করা হলে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে সংসদ সদস্যরা স্বাধীনভাবে ভোট দিতে পারবেন। আরও দুটো প্রস্তাব রয়েছে, উপজেলা পরিষদ ও পৌরসভা চেয়ারম্যানদের নিয়ে একটি জেলা সমন্বয় পরিষদ গঠন করে তাদের ভোটে প্রতি জেলার জন্য এক ভোট ধরে নির্বাচকমণ্ডলী গঠন করা এবং সিটি করপোরেশনগুলো নিয়ে আরেকটি নির্বাচকমণ্ডলী গঠন করে তাদেরও রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে ভোটার করা। এর ফলে উভয় কক্ষের ৫০০টি, জেলা সমন্বয় পরিষদের ৬৪টি এবং সিটি করপোরেশনের ১২টি অর্থাৎ মোট ৫৭৬ ভোটার রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন। আরেকটি প্রস্তাব হচ্ছে, ইউনিয়ন পরিষদের সদস্যদেরও নির্বাচকমণ্ডলীতে অন্তর্ভুক্ত করা। সেক্ষেত্রে প্রায় ৭০ হাজার ভোটার রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে অংশ নেবেন। এ প্রস্তাব সমালোচনার সম্মুখীন হয় এ যুক্তিতে যে, এটা পাকিস্তান আমলের আইয়ুব খানের মৌলিক গণতন্ত্রের অনুরূপ হতে পারে। সেখানে দুর্নীতির সুযোগ সৃষ্টি হতে পারে। যাই হোক, রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের পদ্ধতিগত বিষয় নিয়ে আরো আলোচনা হবে বলে জানানো হয়েছে।
৬. বর্তমানে নির্বাচন কমিশন, পাবলিক সার্ভিস কমিশন, দুর্নীতি দমন কমিশন ও মানবাধিকার কমিশনের মতো সাংবিধানিক বা বিধিবদ্ধ সংস্থার চেয়ারম্যান ও সদস্যদের বাছাই কমিটির সুপারিশক্রমে সরকার নিয়োগ দেবে। অতীতে এসব পদে দলীয় ব্যক্তিদের নিয়োগ দেয়া হতো। তারা দুর্নীতি, দলীয় পক্ষপাতিত্ব ও স্বজনপ্রীতির দৃষ্টান্ত রেখে গেছেন। তাই সংবিধান সংস্কার কমিশন সুপারিশ করেছে, সুশাসন বা ন্যায্যতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ওই সব পদে নিয়োগ দিতে একটি সাংবিধানিক পরিষদ গঠন করা যেতে পারে। রাষ্ট্রপতিকে প্রধান করে প্রধানমন্ত্রী, প্রধান বিচারপতি, স্পিকার, বিরোধীদলীয় নেতা সমন্বয়ে একটি পরিষদ গঠন করার কথা বলা হয়। অধিকাংশ রাজনৈতিক দল এরূপ কমিশন গঠনের পক্ষে। তবে গঠিনপ্রক্রিয়ায় কোনো কোনো দল রাষ্ট্রপতি ও প্রধান বিচারপতিকে বাদ দিয়ে পরিষদ গঠনের প্রস্তাব দিয়েছে। আগামী সপ্তাহের আলোচনায় এ বিষয়ে একটি ঐকমত্য হতে পারে।
৭. রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি হিসেবে সাম্য, সামাজিক সুবিচার, মানবিক মর্যাদা ও গণতন্ত্রকে গ্রহণ করার ব্যাপারে ব্যাপক সংখ্যাগরিষ্ঠের মত রয়েছে। কয়েকটি দল বর্তমান নীতিগুলো বহাল রাখার পক্ষে।
৮. প্রধানমন্ত্রী হিসেবে একজন ব্যক্তি কতবার নির্বাচিত হতে পারবেন। এ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। এক ব্যক্তি একাধারে দীর্ঘ সময় ক্ষমতায় থাকলে তার স্বৈরাচার হয়ে ওঠার আশঙ্কা থাকে বিধায় প্রায় সবাই একমত যে, কোনো ব্যক্তি মোট দুই মেয়াদের বেশি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে থাকবেন না। তবে বিএনপির অভিমত হচ্ছে, দুই মেয়াদের পর এক মেয়াদ বাদ দিয়ে পরে আরো একবার কোনো ব্যক্তি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নির্বাচিত হতে পারেন মর্মে বিধান করা যায়।
উল্লেখ্য, ইতোমধ্যে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সাথে পৃথক আলোচনায় যেসব ক্ষেত্রে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে সেগুলো দ্বিতীয় পর্যায়ের আলোচনায় আনা হয়নি। এর ফলে এটা স্পষ্ট, উপরে উল্লিখিত বিষয়গুলো ছাড়াও আরো অনেক বিষয়ে জাতীয় ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এটা বেশ আশার কথা।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ জানিয়েছেন, কমিশনের পক্ষে জুলাই মাসের মধ্যে ঐকমত্যের ভিত্তিতে একটি জাতীয় সনদ প্রণয়নের কাজ শেষ করা সম্ভব হবে। বিভিন্ন জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ সংস্কারের বিষয়ে নানা মতাদর্শের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা একটি দুরূহ বিষয় সন্দেহ নেই। তবে প্রধান প্রধান বিষয়ে যদি একমত হতে পারে তা হবে জাতির জন্য একটি বড় অর্জন। শেখ হাসিনা ও আওয়ামী ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে সমগ্র জাতি যেভাবে ঐক্যবদ্ধভাবে বিজয়ী হয়েছে, তাতে এটা প্রমাণিত হয়েছে, সবাই গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ, মানবাধিকার ও মানবিক মর্যাদা সমুন্নত রেখে রাষ্ট্র সংস্কারের পক্ষে রয়েছেন। আমরা আশা করতে পারি, আমাদের নানাবিধ সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও রাষ্ট্র সংস্কারে আমরা ঐক্যবদ্ধ হতে পারব। একইসাথে আগামী প্রজন্মের জন্য একটি গর্বিত বাংলাদেশ নির্মাণ করতে পারব।
লেখক : গবেষক ও সাবেক সচিব
ayubmiah@gmail.com