Site icon The Bangladesh Chronicle

রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতির সংশোধন-অযোগ্যতা

রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতির সংশোধন-অযোগ্যতা – ছবি : নয়া দিগন্ত

বাংলাদেশের সংবিধানের দ্বিতীয় ভাগ রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতিসংক্রান্ত। ১৯৭২ সালে সংবিধান প্রণয়নকালে এ ভাগে অনুচ্ছেদ নং ৮ থেকে ২৫ পর্যন্ত ১৮টি অনুচ্ছেদ ছিল। এ ভাগটি সংবিধান (চতুর্থ সংশোধন) আইন, ১৯৭৫, দ্বিতীয় ঘোষণাপত্র (পঞ্চদশ সংশোধন) আদেশ, ১৯৭৮, সংবিধান (দ্বাদশ সংশোধন) আইন, ১৯৯১ ও সংবিধান (পঞ্চদশ সংশোধন) আইন, ২০১২ সালে চারটি ধারা চারবার সংশোধিত হয়। বর্তমানে এ ভাগটিতে অনুচ্ছেদ সংখ্যা ১৯। উপজাতি, ক্ষুদ্র জাতিসত্তা, নৃ-গোষ্ঠী ও সম্প্রদায় সংস্কৃতি বিষয়ক অনুচ্ছেদ নং ২৩ক সংবিধান (পঞ্চদশ সংশোধন) আইন, ২০১২-এর মাধ্যমে সংযোজিত হয়। তা ছাড়া ধর্মনিরপেক্ষতা ও ধর্মীয় স্বাধীনতা-বিষয়ক অনুচ্ছেদ নং ১২ যা দ্বিতীয় ঘোষণাপত্র (পঞ্চদশ সংশোধন) আদেশ, ১৯৭৮ দ্বার অবলুপ্ত হয়েছিল সে অবলুপ্ত অনুচ্ছেদটিও সংবিধান (পঞ্চদশ সংশোধন) আইন, ২০১২ মাধ্যমে পুনঃ স্থাপিত হয়।

নীতি আইন বা অধিকারের সমার্থক নয়। আইন বা অধিকারের লঙ্ঘন হলে তা আদালতের মাধ্যমে বলবতযোগ্য কিন্তু নীতির ক্ষেত্রে সে সুযোগ অনুপস্থিত।
’৭২-এর সংবিধানে রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি হিসেবে জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র এবং ধর্ম নিরপেক্ষতার উল্লেøখ থাকলেও এ চারটি মূলনীতি থেকে উদ্ভূত দ্বিতীয় ভাগে বর্ণিত অন্য সব নীতি মূলনীতি হিসেবে পরিগণিত হবে মর্মে বলা ছিল।

সংবিধান প্রণয়নকালে ৮ নং অনুচ্ছেদে দু’টি দফা ছিল। দফা নং (১) এ বলা ছিল, জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র এবং ধর্ম নিরপেক্ষতা- এ নীতিসমূহ এবং তদসহ এ নীতিসমূহ থেকে উদ্ভূত এ ভাগে বর্ণিত অন্য সব নীতি রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি বলে পরিগণিত হবে।

দ্বিতীয় ঘোষণাপত্র (পঞ্চদশ সংশোধন) আদেশ, ১৯৭৮ দ্বারা দফা নং (১) প্রতিস্থাপন পূর্বক ওই দফায় ধর্মনিরপেক্ষতার পরিবর্তে মূলনীতি হিসেবে সর্বশক্তিমান আল্লাহর ওপর আস্থা ও বিশ্বাস স্থলাভিষিক্ত হয়। তা ছাড়া ওই আদেশে সমাজতন্ত্র বিষয়ে বলা হয় সমাজতন্ত্র অর্থাৎ অর্থনৈতিক ও সামাজিক সুবিচার। একই আদেশবলে দফা নং (১) এর পর (১ক) দফা সন্নিবেশন পূর্বক বলা হয়, সর্বশক্তিমান আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস হবে যাবতীয় কার্যাবলির ভিত্তি।

অনুচ্ছেদ নং ৮ এর (২) এ মূলনীতির অন্তর্নিহিত লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে ধারণা দেয়া হয়েছে। এ দফাটিতে বলা হয়েছে, এ ভাগে বর্ণিত নীতিসমূহ বাংলাদেশ পরিচালনার মূলসূত্র হবে, আইন প্রণয়নকালে রাষ্ট্র তা প্রয়োগ করবেন, এ সংবিধান ও বাংলাদেশের অন্যান্য আইনের ব্যাখ্যাদানের ক্ষেত্রে তা নির্দেশক হবে এবং তা রাষ্ট্র ও নাগরিকদের কার্যের ভিত্তি হবে, তবে এ সব নীতি আদালতের মাধ্যমে বলবৎযোগ্য হবে না। (২) নং দফাটি কখনো কোনো ধরনের সংশোধনীর আওতায় না আসায় এর বিষয়বস্তু সংবিধান প্রণয়ন থেকে অদ্যাবধি অক্ষত রয়েছে।

দ্বিতীয় ঘোষণাপত্র (পঞ্চদশ সংশোধন) আদেশবলে জাতীয়তাবাদ বিষয়ক অনুচ্ছেদ নং ৯ এবং সমাজতন্ত্র ও শোষণমুক্তি-বিষয়ক অনুচ্ছেদ নং ১০ অবলুপ্ত করে স্থানীয় শাসন সংক্রান্ত প্রতিষ্ঠানসমূহের উন্নয়ন-বিষয়ক অনুচ্ছেদ নং ৯ এবং জাতীয় জীবনে মহিলাদের অংশগ্রহণ বিষয়ক অনুচ্ছেদ নং ১০ স্থলাভিষিক্ত করা হয়।
দ্বিতীয় ভাগের ১১ নং অনুচ্ছেদটি গণতন্ত্র ও মানবাধিকার বিষয়ক। এ অনুচ্ছেদ থেকে সংবিধান (চতুর্থ সংশোধন) আইন, ১৯৭৫-এর মাধ্যমে ‘এবং প্রশাসনের সকল পর্যায়ে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মাধ্যমে জনগণের কার্যকর অংশগ্রহণ নিশ্চিত হবে’ এ বাক্যটি অবলুপ্ত করা হয় যা পরবর্তীতে সংবিধান (দ্বাদশ সংশোধন) আইন, ১৯৯১-এর দ্বারা পুনঃস্থাপিত হয়।

দ্বিতীয় ভাগের সর্বশেষ অনুচ্ছেদ নং ২৫ আন্তর্জাতিক শান্তি, নিরাপত্তা ও উন্নয়ন সংক্রান্ত। সংবিধান দ্বিতীয় ঘোষণাপত্র (পঞ্চদশ সংশোধন) আদেশবলে ২৫ নং অনুচ্ছেদকে ওই অনুচ্ছেদের (১) দফারূপে পুনঃসংখ্যাত করা হয় এবং পুনঃসংখ্যাত (১) দফার পর নতুন (২) দফা সংযোজন করে বলা হয়- রাষ্ট্র ইসলামী সংহতির ভিত্তিতে মুসলিম দেশসমূহের মধ্যে ভ্রাতৃত্ব সম্পর্ক সংহত, সংরক্ষণ এবং জোরদার করতে সচেষ্ট হবে। অতঃপর সংবিধান (পঞ্চদশ সংশোধন) আইন, ২০১২-এর মাধ্যমে ২৫ নং অনুচ্ছেদ থেকে (১) সংখাটি বন্ধনীসহ এবং দফা (২) অবলুপ্ত করে ’৭২-এর সংবিধানের পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে নেয়া হয়।

দ্বিতীয় ঘোষণাপত্র (পঞ্চদশ সংশোধন) আদেশ দ্বারা ৬ নং অনুচ্ছেদে বিবৃত বাঙালি জাতীয়তার ক্ষেত্রে এ দেশের নাগরিকদের পরিচিতি বাঙালি থেকে বাংলাদেশীতে পরিবর্তন করায় মূলনীতি থেকে জাতীয়তাবাদসংক্রান্ত অনুচ্ছেদ নং ৯-এর অবলুপ্তি অত্যাবশ্যক ছিল। পরবর্তীতে সংবিধান (পঞ্চদশ সংশোধন) আইন,২০১২-এর মাধ্যমে জাতীয়তা বিষয়ে বাংলাদেশীর পরিবর্তে পুনঃ বাঙালি স্থলাভিষিক্ত হলে একই সংশোধনীর মাধ্যমে দ্বিতীয় ঘোষণাপত্র (পঞ্চদশ সংশোধন) আদেশ বলে পূর্বের অবলুপ্ত জাতীয়তাবাদবিষয়ক অনুচ্ছেদটিতে প্রতিস্থাপন করা হয়। প্রতিস্থাপনের পর এ অনুচ্ছেদটি ’৭২-এর সংবিধানে যেভাবে বিবৃত ছিল হুবহু সেভাবে বিবৃত হয়। এ অনুচ্ছেদটিতে বলা হয়েছে, ভাষাগত ও সংস্কৃতিগত একক সত্তাবিশিষ্ট যে বাঙালি জাতি ঐক্যবদ্ধ ও সংকল্পবদ্ধ সংগ্রাম করে জাতীয় মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব অর্জন করেছে, সে বাঙালি জাতির ঐক্য ও সংহতি হবে বাঙালি জাতীয়তাবাদের ভিত্তি।

জাতীয়তা দেশ ভিত্তিক না হয়ে জাতিভিত্তিক হলে তা একটি দেশে বসবাসরত অন্য যেকোনো জাতি বা উপজাতি বা ক্ষুদ্র জাতিসত্তা বা নৃ-গোষ্ঠী বা সম্প্রদায় যত ক্ষুদ্রই হোক না কেন এগুলোকে একযোগে বহির্ভূক্ত করে। এ ধরনের বহির্ভূক্তি উপরোক্ত যেকোনো শ্রেণীর মধ্যে অসন্তোষ ও নিরাপত্তাহীনতা উভয়ের জন্ম দিতে পারে যা যেকোনো দেশের শান্তি, অগ্রগতি ও স্থিতিশীলতার জন্য সহায়ক নয়।

দ্বিতীয় ঘোষণাপত্র (পঞ্চদশ সংশোধন) আদেশ দ্বারা মূলনীতি হিসেবে বিবৃত সমাজতন্ত্র এর অর্থকরণে অর্থনৈতিক ও সামাজিক সুবিচার সংযুক্ত করায় সমাজতন্ত্র ও শোষণমুক্তি সংক্রান্ত অনুচ্ছেদ নং ১০ এর কার্যকারিতা অনেকটা গুরুত্বহীন হয়ে পড়ে। সে নিরিখে তা অবলুপ্ত করা হয়। অতঃপর সংবিধান (পঞ্চদশ সংশোধন) আইন, ২০১২-এর মাধ্যমে ৮ নং অনুচ্ছেদে মূলনীতি হিসেবে সমাজতন্ত্র কোনোরূপ অর্থকরণ ব্যতিরেকে বিবৃত হলে একই সংশোধনীর মাধ্যমে দ্বিতীয় ঘোষণাপত্র (পঞ্চদশ সংশোধন) আদেশ দ্বারা পূর্বের অবলুপ্ত ১০ নং অনুচ্ছেদ প্রতিস্থাপন করা হয়। সমাজতন্ত্র ও শোষণমুক্তি বিষয়ক ১০ নং অনুচ্ছেদটিতে বলা হয়েছে, মানুষের ওপর মানুষের শোষণ থেকে মুক্ত ন্যায়ানুগ ও সাম্যবাদী সমাজ লাভ নিশ্চিত করার উদ্দেশ্যে সমাজতান্ত্রিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা হবে।

দ্বিতীয় ঘোষণাপত্র (পঞ্চদশ সংশোধন) আদেশবলে মূলনীতি হিসেবে ৮ নং অনুচ্ছেদের (১) দফায় ধর্মনিরপেক্ষতার স্থলে সর্বশক্তিমান আল্লাহের ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস প্রতিস্থাপিত এবং সংযোজিত (১ক) দফায় সর্বশক্তিমান আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাসই হবে যাবতীয় কার্যাবলির ভিত্তি বাক্যটি সন্নিবেশিত হওয়ায় ধর্মনিরপেক্ষতা ও ধর্মীয় স্বাধীনতা-বিষয়ক ১২ নং অনুচ্ছেদটি অবলুপ্ত হয়। অতঃপর সংবিধান (পঞ্চদশ সংশোধন) আইন, ২০১২-এর দ্বারা সর্বশক্তিমান আল্লøাহের ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাসের স্থলে ধর্মনিরপেক্ষতা পুনঃপ্রতিস্থাপিত হলে এবং ৮ নং অনুচ্ছেদ হতে (১ক) দফা অবলুপ্ত করা হলে একই সংশোধনীর মাধ্যমে পূর্বের অবলুপ্ত অনুচ্ছেদ নং ১২ প্রতিস্থাপন করা হয়। অনুচ্ছেদ নং ১২-এর ধর্মনিরপেক্ষতাকে কার্যকরণে গৃহীত ব্যবস্থাদির ওপর আলোকপাত করা হয়েছে। এ অনুচ্ছেদটিতে বলা হয়েছে- ধর্মনিরপেক্ষতা নীতি বাস্তবায়নের জন্য- (ক) সর্ব প্রকার সাম্প্রদায়িকতা, (খ) রাষ্ট্র কর্তৃক কোনো ধর্মকে রাজনৈতিক মর্যাদা দান, (গ) রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ধর্মীয় অপব্যবহার, (ঘ) কোনো বিশেষ ধর্ম পালনকারী ব্যক্তির বৈষম্য বা তার ওপর নিপীড়ন- বিলোপ করা হবে।

গণতন্ত্র আমাদের রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি হলেও স্বাধীনতার ৪২ বছর পরও দুঃখজনকভাবে তা প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পায়নি। সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার পরিবর্তন গণতন্ত্রের মূল শক্তি। কিন্তু আমাদের দেশের পরিপ্রেক্ষিতে দলীয় সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত নির্বাচনগুলো সুষ্ঠু হয়েছে এমন দাবি করার কোনো অবকাশ আছে কি? দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন সুষ্ঠু না হওয়ার কারণেই ব্যাপক জনমতের প্রতিফলনে নির্বাচনকালীন সময়ের জন্য নির্দলীয় সরকার ব্যবস্থার প্রবর্তন। এ ব্যবস্থাটির প্রতি এখনো দেশের বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগোষ্ঠীর সমর্থন থাকলেও কোনো ধরনের রাজনৈতিক ঐকমত্য ব্যতিরেকে হীন দলীয় স্বার্থ চরিতার্থের উদ্দেশ্যে এ ব্যবস্থাটির বিলোপ সাধন করা হয়। এভাবে গণতন্ত্র অবমূল্যায়িত হলে কী করে বলা যায় গণতন্ত্র আমাদের রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি?

বাঙালি জাতীয়তাবাদ ও ধর্মনিরপেক্ষতা দীর্ঘ প্রায় ৩৪ বছর পর সংবিধানে ফিরে এলেও তা কি বৃহৎ জনগোষ্ঠী ও ধর্মীয় গোষ্ঠী বহির্ভূত অন্যদের সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পেরেছে? আমাদের পাশের রাষ্ট্রটির রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতিতে ধর্মনিরপেক্ষতা থাকলেও সে দেশের সংখ্যালঘু বৃহৎ সম্প্রদায় তাদের জনসংখ্যার সংখ্যানুপাতে রাষ্ট্রীয় জীবনের সর্বক্ষেত্রে কি প্রতিনিধিত্ব পাচ্ছে? সেখানে জনসংখ্যার সংখ্যানুপাতে প্রতিনিধিত্ব যে অনেক নিম্নে এ বিষয়টি স্পষ্টভাবে প্রতিভাত হলে ধর্মনিরপেক্ষতা কিভাবে গণতন্ত্রের আবরণে একটি সম্প্রদায়কে অবদমিত করে রাখছে তার প্রমাণ পাওয়া যায়।
সংবিধানের ৮ নং অনুচ্ছেদে রাষ্ট্র পরিচালনার অন্যতম চারটি মূলনীতি বর্ণিত রয়েছে। ৮ নং অনুচ্ছেদটি ’৭২-এর সংবিধানের বিধান অনুযায়ী সংবিধানের অন্য যেকোনো অনুচ্ছেদের মতো সংসদের দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটের সমর্থনে সংশোধনযোগ্য ছিল। দ্বিতীয় ঘোষণাপত্র (পঞ্চদশ সংশোধন) আদেশ দ্বারা ৮ নং অনুচ্ছেদসহ অপর কিছু অনুচ্ছেদের সংশোধন বিষয়ে সংসদের দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটের সমর্থনের অতিরিক্ত গণভোটের মাধ্যমে সংখ্যাগরিষ্ঠ সমর্থনের বিধান করা হয়। সর্বশেষ সংবিধান (পঞ্চদশ সংশোধন) আইনের মাধ্যমে ৮ নং অনুচ্ছেদে বর্ণিত রাষ্ট্র পরিচালনার চারটি মূলনীতিসহ দ্বিতীয় ভাগে বর্ণিত রাষ্ট্র পরিচালনার সব মূলনীতি সংশোধন অযোগ্য করা হয়।

পৃথিবীর যেকোনো দেশে সমাজের গতিশীলতার সাথে আইনের সংশোধন সময় ও যুগের চাহিদানুযায়ী চলমান প্রক্রিয়া হওয়ায় সংবিধানের মৌলিক বিষয়ের সংশোধন পদ্ধতি সাধারণ আইনের সংশোধন পদ্ধতির চেয়ে কিছুটা জটিলতর করা হয়ে থাকে। কিন্তু সংশোধন একেবারে বারিত করা শুধু আমাদের দেশ নয়, যেকোনো দেশের প্রেক্ষাপটে বাস্তবতার নিরিখে সুদূরপরাহত। সংবিধান (পঞ্চদশ সংশোধন) আইনের মাধ্যমে ৮ নং অনুচ্ছেদের সংশোধন অযোগ্যতা সংবিধানের মৌলিক বিষয়াবলি বিধায় জনগণের অভিপ্রায়ের অভিব্যক্তিতে করা হয়েছে এ কথাটি বলার সুযোগ আছে কি? আর সুযোগ না থেকে থাকলে বলতেই হয়, একেবারে সংশোধন অযোগ্যতার চেয়ে সংসদের দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের সমর্থনের পর গণভোটের সংখ্যাগরিষ্ঠ সমর্থনে সংশোধন জন আকাঙ্ক্ষার বহিঃপ্রকাশ নয় কি?

যেকোনো দেশের রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি সে দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগোষ্ঠীর সংস্কৃতি, কৃষ্টি, ঐতিহ্য ও ধর্মীয় মূল্যবোধের ভিত্তিতে পরিগণিত হওয়া আবশ্যক। এর অন্যথা হলে মূলনীতিগুলোকে তার নিজ অবস্থানে অনড় রাখা যাবে না। আর অনড় রাখা যাবে না বলেই আমরা ইতোমধ্যে রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি বিষয়ে চারবার সংশোধনীর সম্মুখীন হয়েছি। সর্বশেষ সংশোধনী মূলনীতি বিতর্কের অবসান নাকি পুনঃসূত্রপাত ঘটিয়েছে তা আগামী দিনের ঘটনাপ্রবাহ বলে দেবে।

লেখক : সাবেক জজ, সংবিধান, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বিশ্লেষক

E-mail: iktederahmed@yahoo.com

Exit mobile version