Site icon The Bangladesh Chronicle

রাষ্ট্রীয় অনাচারে মরছে আমাদের মেয়েরা

আহমেদ খিজির

দিন তিনেকের মধ্যে বাংলাদেশের দুই প্রান্তে দুইজন তরুনীর অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে যা সংবাদ ও সামাজিক মাধ্যমের খবর হয়েছে। অনুর্ধ ১৯ দলের হয়ে সাফজয়ী ফুটবলার রাজিয়া সুলতানা সন্তান জন্ম দিতে মারা গিয়েছেন অন্যদিকে সহপাঠী ও সহকারী প্রক্টরের বিরুদ্ধে যৌণ নিপীড়নের অভিযোগ এনে সুইসাইড নোট লেখার পর আত্নহনন করেছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের ছাত্রী ফাইরুজ অবন্তিকা।

দুইটি ঘটনার স্থান, কাল, প্রেক্ষাপট ভিন্ন হলেও এগুলোতে নিদারুন কিছু মিল আছে। সমাজে মোটামুটি ভালো অবস্থায় থাকলেও দুইজন তরুনীর নির্মম মৃত্যু হয়েছে একেবারে মধ্যযুগীয় কায়দায়, যার দায় রাষ্ট্র ও সমাজের।

জানা যায়, রাজিয়া সন্তানসম্ভবা হলেও তাঁকে শুরুতে হাসপাতালে নেয়া হয়নি। সন্তান জন্মদানের পর কিছুক্ষন সুস্থ থাকলেও জটিলতা বাড়তে থাকায় তাঁকে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে নেয়ার চেষ্টা করা হয়। পথে তিনি মারা যান। যেই তরুনী কিছুদিন আগেই রাজধানী শহরে খোলা বাসের সংবর্ধনা পেলেন, প্রধানমন্ত্রীর থেকে পুরস্কার নিলেন, তিনিই চিকিৎসা পেলেন না?

প্রশ্ন আসবে, নিজের পরিবারের মানুষই তো তাঁকে শুরুতে হাসপাতালে নেননি। কিন্তু, দেশের উন্নয়নের এতো গল্পের পরেও উপজেলা বাদ দিয়ে জেলা শহরের হাসপাতালে যে শেষতক নিতে হলো এই প্রশ্নটা তাঁতে বাদ দেয়া যাবে না। স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়ন কেন অন্তত উপজেলা পর্যায়ে পৌছায়নি এই আলাপটা তোলা জরুরী।

আর সামাজিক নিরাপত্তাহীনতার আলাপে চলে আসবে ফাইরুজের নাম। প্রতিবাদী একজন শিক্ষক, যিনি নির্বাচনে কারচুপি বাঁধা দিতে গিয়ে মারধরের শিকার হয়ে কয়েক বছর আগে মারা যান, তারই প্রতিবাদী কন্য ফাইরুজ। জড়িত ছিলেন বহু সামাজিক সাংস্কৃতিক কার্যক্রমে।

অথচ, তিনিও অসহায়ের মতো দেখলেন সহপাঠীর বিরুদ্ধে আনা যৌন নিপীড়নের অভিযোগে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তাঁর বিপক্ষে। দলীয় পৃষ্ঠপোষকতায় নিয়োগ পাওয়া শিক্ষক উলটো তাকেই হয়রানী করেন। এই চাপটা তরুনী নিতে না পেরে, আত্নহননের পথ বেছে নেন।

এই তরুনীর মৃত্যু আবার প্রমাণ করে যে, এই আমলে আমাদের মেয়েরা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো স্থানেও নিরাপদ না। কিছুদিন আগেই আমরা দেখি জাহাংগীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ধর্ষণের ঘটনা। ছাত্রলীগের এক নেতা এর আগের আমলে ধর্ষণের সেঞ্চুরী করেছিলেন বলেও আমরা জানি।

এমনিতেই এক শ্রেনীর মানুষ আমাদের নারীদের শিক্ষা ও অগ্রগতির বিরুদ্ধে। শিক্ষাংগনে নারীদের নিরাপত্তাহীনতা সেই আকাংখাকেই উস্কে দিচ্ছে। রাজিয়ার মতো মেয়েদের ঘরে রেখে বিপদজনকভাবে প্রসব করানোর মানসিকতা থেকেও বের করা যাচ্ছে না এইসব নিরাপত্তাহীনতার গল্পকে সামনে রেখে।

রাষ্ট্রীয় অনাচার আমাদের মেয়েদের জীবনকে করে তুলছে অনিশ্চিত।

বাংলা আউটলুক

Exit mobile version