Site icon The Bangladesh Chronicle

রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে সরকারের পাওনা বেড়েছে ৬৩,৫৯২ কোটি টাকা


রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে সরকারের পাওনা ক্রমেই বেড়ে চলেছে। এক বছরের ব্যবধানে পাওনা বৃদ্ধির হার ১৮ শতাংশ। টাকার অঙ্কে যার পরিমাণ ৬৩ হাজার ৫৯২ কোটি টাকা। অর্থ মন্ত্রণালয়ের সাম্প্রতিক এক পরিসংখ্যানে এ তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।

পরিসংখ্যানে দেখানো হয়েছে, গত বছর (২০২২ সাল) জুন শেষে সরকারের কাছে ১৩২টি রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানের মোট দেনার পরিমাণ ছিল ৪ লাখ ১৮ হাজার ২২ কোটি টাকা। এর আগের বছর অর্থাৎ ২০২১ সালের জুন শেষে সরকারের কাছে এই দেনার পরিমাণ ছিল প্রায় ৩ লাখ ৫৪ হাজার ৪৩০ কোটি টাকা। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর সার্বিক দেনা বেড়েছে ৬৩ হাজার ৫৯২ কোটি টাকা। এর মধ্যে মেয়াদ উত্তীর্ণ বকেয়া ঋণ বেড়েছে ২২ হাজার ৪১৮ কোটি টাকা।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের একটি সূত্র জানিয়েছে, সরকার বিভিন্ন স্বায়ত্তশাসিত, আধা-স্বায়ত্তশাসিত ও স্থানীয় সরকার (স্ব-শাসিত) সংস্থাগুলোকে তাদের উন্নয়ন প্রকল্প ও অনুন্নয়নমূলক কাজে অর্থায়ন করে থাকে। এ অর্থের উৎস দুটি- একটি সরকারের নিজস্ব অর্থায়ন এবং অন্যটি হচ্ছে উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে প্রাপ্ত প্রকল্প সহায়তা বাবদ বরাদ্দ। উভয় ক্ষেত্রেই সরকার চুক্তির মাধ্যমে ঋণ হিসেবে এ অর্থ সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকে দিয়ে থাকে। ঋণ গ্রহণকারী সংস্থাকে চুক্তির শর্তানুসারে পরিশোধসূচি অনুযায়ী কিস্তিভিত্তিক সুদসহ বা সুদ ব্যতীত এ অর্থ সরকারকে ফেরত দিতে হয়। সংক্ষেপে এটাকে বলা হয় ‘ডেট সার্ভিস লায়াবিলিটি’ (ডিএসএল)।

পরিসংখ্যান অনুসারে, ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত বিভিন্ন রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানের ঋণের মধ্যে অনুত্তীর্ণ চলতি ঋণের পরিমাণ ছিল প্রায় ২ লাখ ৩৪ হাজার ৮৫২ কোটি টাকা। অন্য দিকে, সুদাসলে মেয়াদ উত্তীর্ণ বকেয়া ঋণের পরিমাণ ছিল ১ লাখ ৮৩ হাজার ১৭০ কোটি টাকা। এই ঋণ খেলাপি হয়ে গেছে এবং তা আদায় করা বেশ কষ্টসাধ্য বলে সূত্র জানায়।

অন্য দিকে, ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত মেয়াদ অনুত্তীর্ণ চলতি ঋণের পরিমাণ ছিল প্রায় ১ লাখ ৯৩ হাজার ৬৭৮ কোটি টাকা এবং সুদাসলে মেয়াদ উত্তীর্ণ বকেয়া ঋণের স্থিতি ছিল ১ লাখ ৬০ হাজার ৭৫১ কোটি ৭৭ লাখ টাকা।

রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর ডিএসএল হিসাব পর্যালোচনা করে দেখা যায়, মূল ঋণের চেয়ে পরিশোধযোগ্য সুদের পরিমাণ বেশি। সুদসহ মেয়াদ উত্তীর্ণ মোট বকেয়া ১ লাখ ৮৩ হাজার ১৭০ কোটি টাকার মধ্যে মূল ঋণের পরিমাণ হচ্ছে ৭৮ হাজার ৭৮৯ কোটি ৪১ লাখ টাকা এবং সুদের পরিমাণ হচ্ছে প্রায় ১ লাখ ৪ হাজার ৩৮১ কোটি টাকা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে অর্থ বিভাগের একটি সূত্র জানায়, প্রতিষ্ঠানগুলো কর্তৃক বছরের পর বছর সুদ পরিশোধ না করায় মূল ঋণের চেয়ে সুদের পরিমাণ কলেবরে বেড়ে গেছে। বার বার তাগাদা দেয়া সত্ত্বেও মূল ঋণ ও সুদ আদায় করা সম্ভব হচ্ছে না।

পর্যালোচনায় দেখা যায়, সুদসহ মেয়াদ উত্তীর্ণ মোট বকেয়া ঋণের পরিমাণ সবচেয়ে বেশি বিদ্যুৎ খাতের প্রতিষ্ঠানে। একক প্রতিষ্ঠান হিসেবে বকেয়া দেনার শীর্ষে রয়েছে ‘বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড’ (বিপিডিবি)। প্রতিষ্ঠানটির মোট বকেয়া দেনার পরিমাণ হচ্ছে ৬৫ হাজার ২৩১ কোটি ৫২ টাকা (এর মধ্যে মূল ঋণ ২৪,৫৪৯.৮৪ কোটি টাকা ও সুদ ৪০,৬৮১.১৭ কোটি টাকা)।

অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে- ঢাকা ওয়াসার সুদসহ পুঞ্জীভূত বকেয়ার পরিমাণ হচ্ছে ২৪ হাজার ৩৯ কোটি ৮৪ লাখ টাকা (এর মধ্যে মূল ঋণ ১৫,০৮৫.৮৮ কোটি টাকা ও সুদ ৮,৯৫৩.৯৫ কোটি টাকা)। ‘বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন’ (বিপিসি)-এর সুদসহ পুঞ্জীভূত বকেয়ার পরিমাণ হচ্ছে ১৬ হাজার ৭২৫ কোটি ২৯ লাখ টাকা (এর মধ্যে মূল ঋণ ৭,০৭০.৮০ কোটি টাকা ও সুদ ৯,৬৫৪.৪৯ কোটি টাকা)। ‘বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশন’ (বিসিআইসি)-এর সুদসহ পুঞ্জীভূত বকেয়ার পরিমাণ হচ্ছে ১১ হাজার ৯০৪ কোটি ৬৯ লাখ টাকা (এর মধ্যে মূল ঋণ ৪,৮০১.১৯ কোটি টাকা ও সুদ ৭,১০৩.৫০ কোটি টাকা)। ‘পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ (পিজিসিবি) লিমিটেড’-এর সুদসহ পুঞ্জীভূত বকেয়ার পরিমাণ হচ্ছে ৯ হাজার ৯৭২ কোটি ১৬ লাখ টাকা (এর মধ্যে মূল ঋণ ২,৭৫৩.৭৫ কোটি টাকা ও সুদ ৭,২১৮.৪১ কোটি টাকা)। ‘বাংলাদেশ তেল, গ্যাস ও খনিজ করপোরেশন’ (পেট্রোবাংলা)-এর সুদসহ পুঞ্জীভূত বকেয়ার পরিমাণ হচ্ছে ৯ হাজার ৫৪১ কোটি ১৮ লাখ টাকা (এর মধ্যে মূল ঋণ ৩,২৩৭.৭৩ কোটি টাকা ও সুদ ৬,৩০৩.৪৪ কোটি টাকা)।

ঋণ ও সুদ আদায়ের বিষয়ে জানতে চাইলে অর্থ বিভাগের এক কর্মকর্তা জানান, আমরা তাগাদা দেয়া ছাড়া রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানের কাছে ঋণ আদায়ে তেমন কোনো পদক্ষেপ নিতে পারি না। সরকারি প্রতিষ্ঠান হওয়া এখানে আইনগত ব্যবস্থাও নেয়া যায় না। তাই ঋণ আদায় করার পরিসংখ্যান সন্তোষজনক নয়।

Exit mobile version