Site icon The Bangladesh Chronicle

রাষ্ট্রপতি প্রসঙ্গে আলাপ-আলোচনা

  • ড. আবদুল লতিফ মাসুম

রাষ্ট্রপ্রধানকে রাষ্ট্রপতি বলে। তবে সব দেশে রাষ্ট্রের প্রধান রাষ্ট্রপতি বা প্রেসিডেন্ট হিসেবে অভিহিত হন না। এখানে শাসনতান্ত্রিক বিভাজন ও বিভেদ আছে। রাজা-বাদশাহর যুগ সে বাসি হয়েছে কবে! সম্রাটদের আমল তো অনেক আগেই শেষ হয়েছে। কিন্তু এখনো পৃথিবীর কোনো কোনো দেশে রাজা-বাদশাহ এমনকি সম্রাটও আছে। তবে মজার ব্যাপার হচ্ছে- বর্তমান বিশ্বে কেবল জাপানেই ‘সম্রাট’ পদবি রয়েছে। জাপানের রাজপরিবারই বিশ্বের সবচেয়ে পুরোনো রাজকীয় পরিবার। শাসনতান্ত্রিক বিভাজন মানে ক্ষমতার বিভাজন। কোনো কোনো দেশে রাজা-বাদশাহ বা রানী শুধুই আলঙ্কারিক। রাষ্ট্রবিজ্ঞানে আছে- ‘ব্রিটেনে রাজা বা রানী রাজত্ব করেন, শাসন করেন না।’ তার মানে হলো- তিনি শুধুই ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের প্রতীক। সব ক্ষমতা জনপ্রতিনিধিত্বশীল ব্রিটিশ পার্লামেন্টে নিহিত। সেখানে রাজা বা রানী আভিজাত্যের বাহক এবং মর্যাদার ধারক। ব্রিটেনের বাইরেও রাজা বা রানী আছেন এ রকম দেশ আছে।

দ্য রিপোর্টের প্রতিবেদন মোতাবেক, ব্রিটেনের রাজা তৃতীয় চার্লস এখন যুক্তরাজ্য, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ডসহ আরো ১২ সার্বভৌম রাষ্ট্রের রাজা ও রাষ্ট্রপ্রধান। দেশগুলো হলো- জ্যামাইকা, বারবাডোজ, বাহামাস, গ্রানাডা, পাপুয়া নিউগিনি, সলোমান আইসল্যান্ড, টুভালু, সেন্ট লুসিয়া, সেন্ট ভিনসেন্ট অ্যান্ড দ্য গ্রেনাদিনেস, অ্যান্টিগুয়া অ্যান্ড বার্বুডা, বেলিজ, সেন্ট কিটস অ্যান্ড নেভিস। এই দেশগুলো ছাড়াও জাপান, থাইল্যান্ড, ভুটান, কম্বোডিয়াতে রয়েছে সাংবিধানিক রাজতন্ত্র। ডেনমার্ক, নরওয়ে, সুইডেন, নেদারল্যান্ডস, বেলজিয়াম, এন্ডোরা, লেসোথো, টোংগা, লোক্সেমবার্গ ও স্পেনেও এ ধরনের রাজতন্ত্র বিদ্যমান। এসব দেশের রাজারা সাংবিধানিকভাবে প্রতিষ্ঠিত সরকারের সাথে ক্ষমতা ভাগ করেন। রাজারা আনুষ্ঠানিক কিছু দায়িত্ব পালন করেন, তবে রাজার কোনো রাজনৈতিক ক্ষমতা থাকে না। উদাহরণস্বরূপ, যুক্তরাজ্যের রাজাকে অবশ্যই তাদের সব আইনে স্বাক্ষর করে স্বীকৃতি দিতে হয়। তার স্বাক্ষর ছাড়া সেটি আইনে পরিণত হবে না। তবে নতুন আইন পরিবর্তন বা প্রত্যাখ্যান করার ক্ষমতা নেই রাজা চার্লসের। সাংবিধানিক রাজতন্ত্রের দেশ থাইল্যান্ডের রাজা মহা ভাজিরা-লং-কর্ন, প্রায় ৮০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের সমপরিমাণ সম্পত্তির মালিক। তিনিই বিশ্বের সবচেয়ে ধনী রাজা।

মালয়েশিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাতে রয়েছে ফেডারেল সুলতানের শাসন। একটি দেশের বিভিন্ন রাজ্য নিয়ে একজন রাজার রাজত্বকেই মূলত ফেডারেল রাজতন্ত্র বলা হয়ে থাকে। এই রাজতন্ত্রের অঙ্গরাজ্যগুলোর নিজস্ব সরকারব্যবস্থা থাকে, আবার কেন্দ্রীয় সরকারও থাকে। রাষ্ট্রের প্রধান হিসেবে থাকেন রাজা। মালয়েশিয়ার রাজ্য প্রধানরা প্রতি পাঁচ বছর পরপর একজন রাজা নির্বাচন করে থাকেন। সৌদি আরব, ভ্যাটিকান সিটি, ওমান, সোয়াজিল্যান্ড ইত্যাদি দেশে পূর্ণ রাজতন্ত্রের চর্চা হয়। এসব দেশে পূর্ণ রাজতন্ত্র ও নিরঙ্কুশ রাজনৈতিক ক্ষমতা রয়েছে। তারা আইন সংশোধন, প্রত্যাখ্যান বা তৈরি করতে পারে, বিদেশে দেশের স্বার্থের প্রতিনিধিত্ব করতে পারে, রাজনৈতিক নেতাদের নিয়োগ করতে পারে। এসব দেশের রাজবংশীয়রা অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় গোপন করে, যা তারা প্রজাদের সামনে প্রকাশ করতে বাধ্য নয়। মরক্কো, জর্দান, মোনাকো, লিচেনস্টাইন ও কাতারে প্রচলিত আছে মিশ্র রাজতন্ত্র। এটি এমন একটি শাসনব্যবস্থা, যেখানে নিরঙ্কুশ ক্ষমতাধর একজন রাজা দেশের জন্য নির্দিষ্ট উপায়ে ক্ষমতা ভাগ করে দেন ও তাদের মাধ্যমে দেশ পরিচালনা করেন। বর্তমান সময়ে কেউ কেউ অবশ্য দাবি করেন যে, আধুনিক দিনে রাজতন্ত্রের কোনো কার্যকারিতা নেই এবং রাজতন্ত্রের বিপুল সম্পদ ও ক্ষমতার উপভোগের অভিযোগ রয়েছে ব্যাপক।

সাংবিধানিকভাবে রাষ্ট্রপতি বা প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা নিয়েও কথা রয়েছে। কোনো কোনো প্রেসিডেন্ট প্রবল ক্ষমতাধর। আবার কোনো কোনো প্রেসিডেন্ট ব্রিটেনের রাজার মতো আলঙ্কারিক মাত্র। মার্কিন প্রেসিডেন্টকে বলা হয় পৃথিবীর সবচেয়ে ক্ষমতাধর শাসক। কারণ, তিনি নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট। আর তার দেশটিও পৃথিবীর সবচেয়ে সমৃদ্ধ দেশ। আমেরিকা নামক রাষ্ট্রটি ৫০টি স্টেট বা প্রদেশ নিয়ে গঠিত। বিশাল এই আয়তন ও বৈশিষ্ট্যকে নিয়ন্ত্রণের জন্য ফেডারেল শাসনব্যবস্থায় ক্ষমতাধর রাষ্ট্রপ্রধান প্রয়োজন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাদেও অনেক দেশ আছে যেখানে প্রেসিডেন্ট সর্বেসর্বা।

রাষ্ট্রপতিশাসিত শাসনব্যবস্থা অথবা একক-নির্বাহী শাসনব্যবস্থা হলো একটি গণতান্ত্রিক ও গণপ্রজাতন্ত্রী সরকার ব্যবস্থা, যেখানে সরকারপ্রধান একটি নির্বাহী শাখায় নেতৃত্ব দেন। যা আইনসভা অথবা বিধানসভা বা সংসদসভা থেকে আলাদা হয়ে থাকে। সরকারের এই প্রধান বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই রাষ্ট্রেরও প্রধান হয়ে থাকেন এবং তিনি রাষ্ট্রপতি হিসেবে পরিচিত হন। সে হিসেবেই এই ব্যবস্থাকে রাষ্ট্রপতিশাসিত শাসনব্যবস্থা বলা হয়। রাষ্ট্রপতিশাসিত দেশে নির্বাহীরা নির্বাচিত হয়ে থাকেন। পৃথিবীর অনেক দেশেই রাষ্ট্রপতিশাসিত গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা বহাল রয়েছে। তবে পৃথিবীর সবচেয়ে জনপ্রিয় শাসনব্যবস্থা সংসদীয় গণতন্ত্র। ব্রিটেনকে সংসদীয় গণতন্ত্রের সূতিকাগার বলা হয়। আমরা যেহেতু ব্রিটেনের গোলাম ছিলাম প্রায় ২০০ বছর, সে কারণে আমরা শাসনব্যবস্থা হিসেবে ওয়েস্ট মিনিস্টার ডেমোক্র্যাসি বা সংসদীয় গণতন্ত্রকে বেছে নিয়েছি। এই ব্যবস্থায় সংসদ নেতা বা প্রধানমন্ত্রীই সরকারের পরিচালক। ব্রিটেনের রাজা বা রানীর আদলে আমাদের প্রেসিডেন্ট আলঙ্কারিক মাত্র। ১৯৭২ সালে প্রণীত রাষ্ট্রপতির স্থানও অনুরূপ।

বাংলাদেশের সংবিধানের চতুর্থ ভাগের নির্বাহী বিভাগ শিরোনামে রাষ্ট্রপতির বিষয় লিপিবদ্ধ আছে। ৪৮ থেকে ৫৪ পর্যন্ত রাষ্ট্রপতি-বিষয়ক বিধিব্যবস্থা বিধৃত। রাষ্ট্রপতি যেহেতু রাষ্ট্রের প্রধান সেভাবেই তাকে সংবিধানে বিধিবদ্ধ করা হয়েছে। যেহেতু তিনি আলঙ্কারিক প্রধান, সেহেতু তিনি জনগণ কর্তৃক সরাসরি ভোটে নির্বাচিত নন। তিনি সংসদ সদস্য কর্তৃক আইন অনুযায়ী নির্বাচিত হবেন। ৪৮ এর ২ ধারায় বলা হয়েছে- ‘রাষ্ট্রপ্রধানরূপে রাষ্ট্রপতি রাষ্ট্রের অন্য সব ব্যক্তির ঊর্ধ্বে স্থান লাভ করিবেন এবং এই সংবিধান ও অন্য কোনো আইনের দ্বারা তাহাকে প্রদত্ত ও তাহার উপর অর্পিত সকল ক্ষমতা প্রয়োগ কর্তব্য পালন করিবেন।’ আশেপাশের দেশগুলোতে রাষ্ট্রপতিকে যথেষ্ট ক্ষমতায়িত করা হয়েছে। যেমন- পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা ও নেপাল। কিন্তু বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিকে বাস্তবেই ক্ষমতাহীন করা হয়েছে। ৪৮ এর ৩ ধারায় বলা হয়েছে- ‘এই সংবিধানের ৫৬ অনুচ্ছেদের (৩) দফা অনুসারে কেবল প্রধানমন্ত্রী ও ৯৬ অনুচ্ছেদে (১) দফা অনুসারে প্রধান বিচারপতি বিয়োগের ক্ষেত্র ব্যতীত রাষ্ট্রপতি তাহার সকল দায়িত্ব পালনে প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ অনুযায়ী কার্য করিবেন : তবে শর্ত থাকে যে, প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রপতিকে আদৌ কোনো পরামর্শ দান করিয়াছেন কিনা এবং করিয়া থাকিলে কি পরামর্শ দান করিয়াছেন, কোনো আদালত সেই সম্পর্কে কোনো প্রশ্নে তদন্ত করিতে পারিবেন না।’ এই অনুচ্ছেদই প্রমাণ করে, বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি কত অসহায়। বিচারপতি সাহাবুদ্দীন যখন রাষ্ট্রপতি ছিলেন, তখন তিনি এই অসহায়ত্ব প্রকাশ করেছিলেন। বদরুদ্দোজা চৌধুরী বলতেন, জিয়ারত ও জানাজা ব্যতীত তার কোনো কাজ নেই।

সাংবিধানিকভাবে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপ্রধান সেনাবাহিনীর সর্বাধিনায়ক। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আনুষ্ঠানিক চ্যান্সেলর তিনি। তবে এর পদায়নে তার কোনো হাত নেই। তিনি স্বাক্ষর করেন মাত্র। এখন দেশ যখন সাংবিধানিক সংস্কারের দিকে যাচ্ছে বিদ্বজনমহল বলছে, তিনটি বিষয় রাষ্ট্রপতির এখতিয়ারে সম্পূর্ণ ছেড়ে দিয়ে রাষ্ট্রপতিকে ক্ষমতায়িত করা যায়। এগুলো হচ্ছে- প্রতিরক্ষা, উচ্চশিক্ষা ও বিচার বিভাগ।

আজকে রাষ্ট্রপতিকে নিয়ে বাংলাদেশে যে উষ্ণ বিতর্ক চলছে তার কারণ স্থান-কাল-পাত্রভেদে রাষ্ট্রপতি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছেন। ৩৬ জুলাইয়ের গৌরবময় বিপ্লবের পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এই রাষ্ট্রপতির অধীনে শপথ নেয়ায় এই জটিলতা। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা মনে করেন, প্রধান উপদেষ্টা যদি শহীদ মিনারে অথবা জাতীয় স্মৃতিসৌধে শপথ গ্রহণ করতেন তাহলে রাষ্ট্রপতির বিষয়টি গুরুত্ব অর্জন করত না। এখন কোনো কোনো রাজনীতিবিদ বা শিক্ষার্থী নেতা বলে বেড়াচ্ছেন, সেদিন যদি জনশ্রোত গণভবনমুখী না হয়ে বঙ্গভবনমুখী হতো তাহলে দুজনকেই পালিয়ে যেতে হতো। এখন আমাদের এই আপদ নিয়ে বিপদ হতো না। উত্থিত রাষ্ট্রপতি বিতর্কটি স্বাভাবিক নাকি অস্বাভাবিক সেটির প্রশ্নও এসেছে। রাষ্ট্রপতির সাক্ষাৎকারটি আনুষ্ঠানিক অথবা অনানুষ্ঠানিক সেই প্রশ্নও করা যায়।

রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ নিয়ে আবেগ উত্তেজনা এখনো ক্রিয়াশীল রয়েছে। তিন পক্ষ তিন রকম অবস্থানে রয়েছে। প্রথমত, ৩৬ জুলাইয়ের সারথিরা একরকম উত্তেজনায় ভুগছেন। দ্বিতীয়ত, জাতীয়তাবাদী শক্তি সন্দেহ প্রবণতায় আক্রান্ত। তৃতীয়ত, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের একজন উপদেষ্টা গরম গরম কথা বলে এখন স্বর নরম করেছেন।

রাষ্ট্রপতির পদত্যাগের বিষয়টি চারটি মোটা দাগে বিশ্লেষণ করা যায় : প্রথমত, নৈতিক দৃষ্টিভঙ্গিতে : যদি রাষ্ট্রপতি ইচ্ছাকৃতভাবে অথবা অনিচ্ছাকৃতভাবে অসত্য কথা বলে থাকেন তাহলে তিনি রাষ্ট্রপতি থাকার নৈতিক অধিকার হারিয়েছেন। নিজ বিবেচনায়, বিবেকের তাড়নায় তিনি পদত্যাগ করবেন।

দ্বিতীয়ত, সাংবিধানিক ব্যাখায় : আগেই বলা হয়েছে- বাংলাদেশ সংবিধানের ৪৮ থেকে ৫৪ পর্যন্ত রাষ্ট্রপতি-বিষয়ক। এখানে রাষ্ট্রপতির বিভিন্ন অধিকার, দায়মুক্তি, অভিশংসন, অপসারণ এবং অনুপস্থিতির বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। প্রতিটি ক্ষেত্রেই আলোচ্য বিষয় জাতীয় সংসদ। জাতীয় সংসদ তাকে অভিশংসন করতে পারে, অপসারণ করতে পারে। তিনি যদি পদত্যাগ করেন, সেই অধিকার তার আছে। তবে তা করতে হবে স্পিকারের কাছে। বর্তমান বাস্তবতায় স্পিকার পদত্যাগ করেছেন। তাহলে তিনি পদত্যাগ করবেন কোথায়- প্রশ্ন উত্থাপিত হয়েছে। একবার এরশাদের চাটুকার মন্ত্রী শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন এই প্রশ্নই উত্থাপন করেছিলেন। তিনি জিজ্ঞাসা করেছিলেন, রাষ্ট্রপতি কোথায় পদত্যাগ করবেন-জিরো পয়েন্টে? তবে ইচ্ছা থাকলেই উপায় হয়। এরশাদ পদত্যাগ করেছিলেন তার নিয়োগকৃত ঐকমত্যের ভিত্তিতে নির্ধারিত প্রার্থী প্রধান বিচারপতি সাহাবুদ্দীনের কাছে। যখন সরকারের দু’জন উপদেষ্টা প্রধান বিচারপতির সাথে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করলেন, তখন মনে হয়েছে প্রধান বিচারপতিই রাষ্ট্রপতি হচ্ছেন। অদৃশ্য কারণে তা হয়নি।

তৃতীয়ত, সামাজিকভাবে : রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিনের পদত্যাগ নিয়ে দৃশ্যত সামাজিক ঐক্য সাধিত হয়েছে বলে মনে করা যায়। কারণ সমাজের সব খানে তার পদত্যাগের প্রশ্নে ঐকমত্য লক্ষ করা গেছে।

চতুর্থত, রাজনৈতিক বিচারে : রাষ্ট্রপতির পদত্যাগের প্রশ্নে সব রাজনৈতিক দল একমত হয়েছে এ রকম বলা যাবে না। প্রধান রাজনৈতিক দল যারা সম্ভবত নিশ্চিতভাবেই ক্ষমতায় আসছে তারা রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ চাচ্ছে না। তারা মনে করে, এই সময় সন্ধিক্ষণে আরেকটি বিতর্ক সমস্যার সৃষ্টি করবে। আর তা ছাড়া শক্তির শাসনের ভয় তো আছেই। রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ প্রশ্নে যদিও সব ধরনের চাপ আছে বিএনপির উপর, কতটা চাপ সামলাতে তারা পারবে, সেটিই আলোচ্য বিষয়। এমনো হতে পারে, পরিবেশ পরিস্থিতি শান্ত হলে রাষ্ট্রপতি নিজেই পদত্যাগ করবেন। আর যদি তাকে রেখেই দিতে হয় তাহলে আন্দোলনকারীদের সাথে রাজনৈতিক দূরত্ব সৃষ্টি হতে পারে বলে সদরে-অন্দরে আলোচনা চলছে। আরেকটি মুখরক্ষার সমাধানের কথাও বলা যায়। প্রেসিডেন্ট যদি ত্রæটি স্বীকার করেন এবং অনুশোচনা প্রকাশ করেন, তাহলে আন্দোলনকারীদের ক্ষোভ খানিকটা প্রশমিত হতে পারে। অনেকেই মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে ট্রাম্প কিংবা কমলার জয়-পরাজয়ও আমাদের রাজনৈতিক ভারসাম্যকে প্রভাবিত করতে পারে। সব মিলিয়ে একমাত্র ভবিষ্যৎই বলতে পারে তিনি থাকবেন নাকি চলে যাবেন।

সাংবিধানিকভাবে রাষ্ট্রপতি বাংলাদেশের সর্বোচ্চ মর্যাদায় আসীন হলেও অতীত ইতিহাস খুব সুখকর নয়। সাংবিধানিক সরকার প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি হন আবু সাঈদ চৌধুরী। পরে এই মর্যাদার আসন থেকে তিনি চলে যান অথবা চলে যেতে হয়। পরবর্তী রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদউল্লাহ বাকশালের বাকশাল তোড়ে ভেসে যান। বিএনপি-জামায়াত সরকার আমলে রাষ্ট্রপতি হন বদরুদ্দোজা চৌধুরী। তিনি সরকারের সাথে বিরোধ তৈরি করেন। ফলে তাকে পদত্যাগ করতে হয়। সুতরাং বর্তমান রাষ্ট্রপতিকেও যদি চলে যেতে হয়, তাহলে সেখানেও বিস্ময়ের ব্যাপার ঘটবে না।

পুন… এই লেখাটি যখন প্রেসে যাবে তখন জানা গেল, সব দল নিয়ে কাউন্সিল গঠনের পরামর্শ দেবেন ছাত্রনেতারা। জাতীয় নাগরিক কমিটির পক্ষ থেকে এ কথা জানানো হয়েছে।

nayadiganta

Exit mobile version