বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে বিদেশি কূটনীতিকদের মন্তব্য সরকার পছন্দ করছে না জানিয়ে তিনি বলেন, অনেক দিন ধরেই এ চর্চা চালু আছে বলেই অনেকে সুযোগটা নিচ্ছেন। সরকার চায় ‘এই কালচার’ বন্ধ করতে। আশা করি তা বন্ধ হবে। বাংলাদেশের সিদ্ধান্ত বাংলাদেশই নেবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হিসেবে সৌদি আরব থেকে বুধবারই দেশে ফেরেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী। বিকালে মন্ত্রণালয়ে প্রবেশের মুহূর্তে উপস্থিত গণমাধ্যমের মুখোমুখি হন তিনি। সেখানে বিদেশি কূটনীতিকদের বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি নিয়ে প্রতিনিয়ত মন্তব্যের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করেন সাংবাদিকরা। সরকার অনেকবার ভিয়েনা কনভেনশনের প্রসঙ্গ টেনে রাষ্ট্রদূতদের তাদের সীমার মধ্যে দায়িত্ব পালন করার কথা মনে করিয়ে দিয়েছেন।
তারপরও তারা অবাধে বিচরণ করছেন। যেকোনো কিছুতে বিবৃতি দিচ্ছেন। ২৮শে অক্টোবর বিএনপি’র মহাসমাবেশের বিষয়ে তাদের চিঠি পাঠানো এবং ব্রিফ করার পরও তাদের পক্ষ থেকে বক্তৃতা-বিবৃতি দেয়া হচ্ছে। সরকার এটাকে চাপ মনে করছে কিনা? আর রাষ্ট্রদূতদের সীমার মধ্যে থাকার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে নতুন করে কোনো ব্রিফিং, ডেকে পাঠানো বা চিঠি দেয়া হবে কিনা? এমন প্রশ্নে শাহরিয়ার আলম বলেন, এটিকে তো আমরা চাপ কখনোই বলি না। অতীতের উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, ২০১৪ এবং ১৮ সালের নির্বাচনের আগের এবং পরের পরিস্থিতি আমরা জানি। এটা খুবই দুঃখজনক হলেও সত্যি। কিন্তু এবার বিএনপি এবং জামায়াত এবং আরও অনেক রাজনৈতিক দল আছে যারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে আশা করে তিনি বলেন, আশা করি বিএনপিও নির্বাচন করবে। জামায়াতের বিষয়টি একটি কারিগরি ও আইনি বিষয় আছে। দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে কূটনীতিকদের তৎপরতায় সরকারের অসন্তোষ পুনর্ব্যক্ত করে তিনি বলেন, এটা আমাদের জন্য আনন্দের বা মর্যাদাকর নয়।
বিশ্বের অনেক দেশ বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ ইস্যুগুলোতে চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছেন (টিরিবলি ফেইলড) মন্তব্য করে প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমি আরেকটু ক্রিটিক্যাল হওয়ার চেষ্টা করি। এসব রাষ্ট্রই বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে গবেষণা করে দেখেছেন যে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গ্রহণযোগ্যতা আছে ৭০ শতাংশ কিংবা তারও বেশি। তো এত ক্রিটিক্যাল! তাদেরই পয়সায় তো চালানো জরিপ! আবার সেই সব রাষ্ট্রে এ সংস্থাগুলো জরিপ করে দেখছে যে তাদের দেশের (যে বা যারা বাংলাদেশের সমালোচনায় মুখর) অভ্যন্তরীণ গণতান্ত্রিক কাঠামো ভেঙে পড়ছে বলে মনে করছে প্রায় ৭০ শতাংশ মানুষ। এমন পরিসংখ্যানও কিন্তু উঠে এসেছে। তো এখানে যে (তাদের) নৈতিক ভিত্তি (মোরাল গ্রাউন্ড) নেই, সেটা পরিষ্কারভাবেই বলা যায়। প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমি তারপরও বলবো নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা প্রায় হয়েই যাবে যেকোনো সময়ে। বিএনপি’র ভাষায় এটা তাদের আন্দোলনেরও চূড়ান্ত মুহূর্ত। সুতরাং এই সময়ে তাদের (বিদেশি রাষ্ট্রদূত) একটু ধৈর্য ধরার প্রয়োজন আছে বলে মনে করি।
তিনি বলেন, রাষ্ট্রদূত যারা আছেন তারা আমাদের অতিথি। তারা যদিও ভিয়েনা সনদ মানেন না। কিন্তু রাষ্ট্র হিসেবে আমাদের একটা দায়িত্ব আছে। আমি অনুরোধ করবো সকলকে তারা যেন আমাদের কাজে সহায়তা করেন। তাদের এমন কোনো মন্তব্য করা ঠিক নয়। আমরা কথা বলি দায়িত্ব নিয়ে। এবং আমাদের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে তাদের (রাষ্ট্রদূতদের) ব্যত্যয়গুলো ধরিয়ে দেয়ার। তাদের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়ন করার। কিছুতে সমস্যা হলে আলোচনা করার। আমরা প্রক্রিয়াটা জানি। কিন্তু একজন সাধারণ রাজনৈতিক কর্মী বা নেতা কিন্তু এ বিষয়গুলো পরিষ্কার বুঝবেন না বা জানবেন না। পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, কোনো রাষ্ট্রদূতই যত সীমা লঙ্ঘন করুক না কেন, আমি জানি যে রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য এটা জটিল কিন্তু সবার আচরণ কথাবার্তা প্রতিক্রিয়া এমনকি লেখালেখিও একটু সহনীয় হওয়া প্রয়োজন আছে।
এক প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী বলেন, জেনেভায় জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশনের শুনানিতে অধিকারের কোনো তথ্য-উপাত্ত গ্রহণ করবে না বাংলাদেশ। নিবন্ধনহীন এই এনজিও’র সরবরাহ করা কোনো তথ্যের রেফারেন্স দিয়ে জাতিসংঘ অধিবেশনে কোনো প্রশ্ন উত্থাপিত হলে বাংলাদেশ তার জবাব দিতে বাধ্য নয়। তবে অন্যদের তথ্যকে স্বাগত জানাবে ঢাকা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে বৃটেনের টাইম ম্যাগাজিনের যে প্রচ্ছদ রচনা করেছে তার ইতিবাচক অংশগুলো সরকার গ্রহণ করবে জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ওই প্রতিবেদনে কিছু অসত্য তথ্যও রয়েছে। এটা অবশ্যই গ্রহণযোগ্য নয়। এ সময় ঢাকাস্থ মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস্-এর বিরুদ্ধে ওয়াশিংটনে সরকারের তরফে কোনো অভিযোগ করা হয়েছে কিনা? জানতে চাইলে প্রতিমন্ত্রী বলেন, না, এমন কোনো কিছু আমার জানা নেই।
মানব জমিন